বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১১

আমার বৃষ্টি...


অনেকদিন পর আজ একটু ভিজলাম। বৃষ্টিতে ভিজলাম। এই বৃষ্টি আর বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতি আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কখনো মনে পরে ছোটবেলা কথা যখন বৃষ্টি্তে বাসার সামনে জল বাঁধলে কাগজের নৌকো ভাসাতাম। ভাবতাম বড় হয়ে নৌকোর মাঝি হব। গাঙের মাঝে বসে বৃষ্টিতে ভিজবো, মেঘলা আকাশ দেখবো। মনে পরে ইশকুলের কাঁদা মাখা মাঠে ফুটবল খেলার কথা। তখন এরকম বেঢপ না থাকলেও আমি কখনোই ঠিক শুকনো ছিলাম না। তাই খেলার চাইতে অখেলাটাই বেশি হত। আমার লাথ বলে না পরে পক্ষ-বিপক্ষের গায়ে পরতো। রেফারি না থাকায় ওদের কিছু বলারও ছিলো না। মনেপরে সেই সময়টা যখন ধানমন্ডির মুক্তমঞ্চে বৃষ্টিতে ভিজতাম আর বৃষ্টিকে চাইতাম। আকাশের বুকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে খুঁজতাম। মনে শঙ্কা জাগতোঃ আকাশের বুকে বৃষ্টি থাকবে তো? মনে পরে সেই দিনের কথা যেদিন শহীদ মিনারের সামনে বৃষ্টির সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। তখন আমি প্রেমিক কবি। মনের মাঝে রবি ঠাকুরের গান দোলা দেয়, বাপ্পার 'বৃষ্টি পরে...' নাড়া দিয়ে যায়। আর এখন আমি ভিজতে ভয় পাই। ঘরে বসেই বৃষ্টি দেখি। জানালার শিক ধরে তাকিয়ে থাকি ঐ আকাশের দিকে। আকাশের বুকে বৃষ্টি খুঁজি। ঝাপসা চোখে কিছুই আর ধরা দেয় না। কানে আসে বাপ্পা মজুমদারের গানঃ

বৃষ্টি পড়ে অঝোর ধারায়...
বৃষ্টি পড়ে লজ্জা হারায়...
বৃষ্টি পড়ে জলে ভিজে...
ঐ মেয়েটি কে... কীযে...

রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

কুমড়ো পটাশ ও এর জনক...

ও ভাই 'কুমড়ো পটাশ' টা কী জিনিস?? ছবি দেখে বলুন তো চিনেন কিনা??



আমার ছোট বেলার সবচেয়ে কাছে যা ছিলো তার একটা হল গল্প-কবিতা-ছড়ার বই, এর মাঝে হ-য-ব-র-ল'ই বেশি থাকতো। মজার মজার গল্প-ছড়ার ভেতর দিয়ে অনেক বেশি অদ্ভুতুড়ে জিনিসের জন্ম দেওয়া মানুষই জিন্ম দিয়েছেন এই 'কুমড়ো পটাশ' কে। এবার ছড়াটা একটু পড়ে নিঃ

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ নাচে-
খবরদার এসো না কেউ আস্তাবলের কাছে ;
চাইবে নাকো ডাইনে বাঁয়ে চাইবে নাকো পাছে ;
চার পা তুলে থাকবে ঝুলে হট্টমুলার গাছে !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ কাঁদে-
খবরদার! খবরদার! বসবে না কেউ ছাদে ;
উপুড় হয়ে মাচায় শুয়ে লেপ কম্বল কাঁধে ;
বেহাগ সুরে গাইবে খালি 'রাধে কৃষ্ণ রাধে' !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ হাসে-
থাকবে খাড়া একটি ঠ্যাঙে রান্নাঘরের পাশে ;
ঝাপ্‌সা গলায় ফার্সি কবে নিশ্বাসে ফিস্‌ফাসে ;
তিনটি বেলা উপোস করে থাকবে শুয়ে ঘাসে !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ ছোটে-
সবাই যেন তড়বড়িয়ে জানলা বেয়ে ওঠে ;
হুঁকোর জলে আলতা গুলে লাগায় গালে ঠোঁটে ;
ভুলেও যেন আকাশ পানে তাকায় নাকো মোটে !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ ডাকে-
সবাই যেন শাম্‌লা এঁটে গামলা চড়ে থাকে ;
ছেঁচকি শাকের ঘণ্ট বেটে মাথায় মলম মাখে ;
শক্ত ইঁটের তপ্ত ঝামা ঘষতে থাকে নাকে !

তুচ্ছ ভেবে এ-সব কথা করছে যারা হেলা,
কুম্‌‌ড়োপটাশ জানতে পেলে বুঝবে তখন ঠেলা ।
দেখবে তখন কোন্‌ কথাটি কেমন করে ফলে,
আমায় তখন দোষ দিওনা, আগেই রাখি বলে ।

এবার আসি এর জনকের কথায়। এর জনক হলেন আমার সবচেয়ে প্রিয় ছড়াকার সুকুমার রায়। সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে। তিনি ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের উজ্জ্বল রত্ন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে। সুকুমারের মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে।সুবিনয় রায় ও সুবিমল রায় তাঁর দুই ভাই। এ ছাড়াও তাঁর ছিল তিন বোন।

সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যানুরাগী, যা তাঁর মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ. রয় এন্ড সন্স নামে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে সুকুমার যুক্ত ছিলেন।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও/অথবা পদার্থবিদ্যায় বি.এসসি.(অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কোলকাতাতে ফিরে আসেন। সুকুমার ইংলান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। তিনি একটি ছোটদের মাসিক পত্রিকা, 'সন্দেশ', এই সময় প্রকাশনা শুরু করেন। সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছোটভাই এই কাজে তাঁর সহায়ক ছিলেন এবং পরিবারের অনকে সদস্য 'সন্দেশ'-এর জন্য নানাবিধ রচনা করে তাঁদের পাশে দাঁড়ান।

১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিলনা। তাঁর মৃত্যু হয় একমাত্র পুত্র সত্যজিৎ এবং স্ত্রীকে রেখে। সত্যজিৎ রায় ভবিষ্যতে একজন ভারতের অন্যতম চিত্রপরিচালক রূপে খ্যাতি অর্জন করেন, ও নিজের মৃত্যুর ৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে সুকুমার রায়ের উপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন।


তথ্যসূত্রঃ উইকিপেডিয়া