সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১১

ইন্দো-বাংলা সম্পর্ক: সীমান্ত - ০১: ইন্দো-বাংলা যুদ্ধ!!

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ছাগু ও ভাদারা নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। আসলেই গদাম!!
 

অনেকদিন পর এই সিরিজটায় হাত দিলাম। যাদের পড়া হয় নি কিংবা যারা সময়ের স্রোতে ভুলে গিয়েছেন তাদের জন্য এই সিরিজের আগের পর্বের লিঙ্কগুলো তুলে ধরলামঃ

অকৃত্রিম বন্ধু ভারত - ০১ : নদ-নদী - ০১ : ভারতের তিস্তা-মহানন্দা শোষণ
 
অকৃত্রিম বন্ধু ভারত - ০১ : নদ-নদী - ০২ : গঙ্গা-পদ্মা দরকষাকষি ও আমার প্রস্তাবনা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় প্রতিবেশী ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। ভারতের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতাটা অসম্ভব না হলেও এতটা সহজে হত না। ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের পরেও বলবো আমরা খুব কম সময়েই আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই নানা টানাপোড়েনে বন্ধুত্বের পথটা মসৃণ হয় নি। ভারত বরং তার দাদাগিরিই অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে যদিও কোন যুদ্ধ হয় নি, তবে যুদ্ধের কাছাকাছি উত্তপ্ত অবস্থা ঠিকই তৈরি হয়েছে, যদিও তার পরিমাণ হাতে গুণে কয়েকবার। ঐ ঘটনাটাকে যুদ্ধ না বলে সংঘর্ষ বলাই শ্রেয় (তবু কেন শিরোনামে যুদ্ধ শব্দটা ব্যবহার করেছি তা পুরো পোস্ট পড়লেই জানতে পারবেন)। ইন্দো-বাংলার সেই সংঘর্ষ নিয়েই আজকের পর্ব লিখলাম।

ভেতরের ঘটনা যাই হোক, বাহ্যিক ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারকেই 'ভারতের দালাল' অপবাদ সহ্য করতে হয়। আর এই রটনা রটানোর গুরু দায়িত্ব পালন করে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো, এবং দেশের জনসংখ্যার বেশ বড় একটা অংশ তা বিশ্বাসও করে। কিন্তু এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী সরকারের সময়েই এবং তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা!
 
কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় যাই। ঘটনার সময়কাল ২০০১ সালের ১৬ - ২০ এপ্রিল এবং ঘটনাস্থল বাংলাদেশ আর ভারতের আসাম ও মেঘালয় সীমান্ত। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে ওপারের বিএসএফ আমাদের কুড়িগ্রাম এর রৌমারি সীমান্তে টহলরত বিডিআরকে হঠাৎ করেই আক্রমণ করে আর তাই বাংলাদেশ আর্মির সদস্যরা ওদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। আর বিএসএফ তরফ থেকে জানানো হয় বিডিআর বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে এক গ্রাম দখল করার চেষ্টা করে যা মূলত ভারতের জায়গা!!






এই সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ বিডিআর এর ২ জন সদস্য মারা যান। আর বিএসএফ এর ১৬ জন সদস্য মারা যান। বাংলাদেশ বিডিআর শুরুতেই লাশ হস্তান্তর করতে রাজি হয় নি। পরে তারা তা করতে বাধ্য হয়। ভারত সরকার এর তরফ থেকে দাবি করা হয় যে বিএসএফ সদস্যদের হয় অত্যচার করে মারা হয়েছে কিংবা হত্যার পর তাদের লাশ বিকৃত করা হয়েছে। আর এর উত্তরে বিডিআর বলেছে ওদের লাশগুলোতে গরমে পচন ধরেছে। ভারত সরকার বলেছে যুদ্ধকালীন অবস্থায় বিপরীত পক্ষের সেনাদের লাশ বিকৃত করা জেনেভা কনভেনশন বিরোধী। আর দুই প্যরামিলিটারি বাহিনীর সংঘর্ষে বাংলাদেশের সেনার হস্তক্ষেপ নিয়মবিরুদ্ধ। ভারত জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচারও দিতে চেয়েছিল। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারো বাজপেয়ীর আলাপচারিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।


স্বল্প সময়ের এই যুদ্ধে ফলাফল হল 'Status quo ante bellum', যার মানে যুদ্ধের আগের সীমানতে ফিরে যাওয়া। এর দুদিন বাদেই বিএসএফ তথা ভারত দাবী করে যে বাংলাদেশ ঐ সীমান্তে তার সেনা বাড়াচ্ছে এবং তা নাকি ২০০০০ এরও বেশি!! বাংলাদেশ সরকার অথা বিডিআর এর তরফ থেকে তৎক্ষণাৎ জবাব দেওয়া হয় ওখানে তাদের রুটিন ওয়ার্ক চলছে, আর বাংলাদেশের কোথাও কত সেনা থাকবে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার!!



বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ঐ সীমান্তে থাকা কোন বিডিআর সদস্য কিংবা সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল কিংবা সান্সপেন্ড করার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে বাংলাদেশে রাজনীতিতে অনেকেই এটা নিয়ে মিথ্যা কাহিনী প্রচার করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে।

 

জাতীয় নির্বাচনের আগ দিয়ে এই ঘটনা আওয়ামী সরকারকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। লীগ সরকার উভয় সংকটে পরে যায়। এই ঘটনায় যদি সত্যিই বাংলাদেশ আর্মির ঐ মেজরের দোষ হয়ে থাকে তবে তার পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ইন্ধন থাকলে অবাক হব না!!
 

সবশেষে কিছু কথা না বললেই না। ঐটাও আমাদের সেনা, আমাদের বিডিআর ছিল। আর এখন যারা সীমান্ত পাহাড়া দিচ্ছেন তারাও তাই (যদিও বিডিআর এর নাম বদলে বিজিবি হয়েছে), তখনও যিনি প্রধানমন্ত্রী চিলেন, এখনও তিনিই প্রধানমন্ত্রী আছেন। কিন্তু এখন আমাদের সীমান্তে কী ঘটে চলছে??!! কোন এক অজানা জাদুবলে (!!!) আমাদের বিজিবি সদস্যদের হাতে চুড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন