মোরা বা Mora বোঝাতে গেলে আমাকে সেই বাংলা ছন্দেই ফিরে যেতে হবে। কারণ বাংলা ছন্দে একে ব্যাখ্যা করলেই সবচেয়ে সহজবোধ্য হবে বলে আমার মনে হয়। যদিও বিশেষ কিছু কারণে বাংলা ছন্দ নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু আজ ঘুরেফিরে ওখানেই ফিরতে হচ্ছে। আগে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে এখানে, আজ আরেকটু লেখার চেষ্টা করি।
মোরার সংস্কৃত শব্দ হল মাত্রা, যার থেকে বাংলাতেও এর নাম হয়েছে মাত্রা। বাংলা কবিতায় একটি স্বর উচ্চারণের নিম্নতম কালকে মাত্রা বলে। যেমন: হ্যাঁ, না, কি, বান্, ধান্, তৃ, বৃ, দেশ্ ইত্যাদি। বাংলাতে কখনো কখনো শব্দের এই ক্ষুদ্রতম অংশকে একমাত্রার আবার কখনো কখনো দুই মাত্রার হিসেব করা হয়। সবক্ষেত্রেই মুক্তস্বরকে একমাত্রা ধরা হয়, কিন্তু বদ্ধ্বস্বরকে কোন কোন ক্ষেত্রে একমাত্রার, আবার কখনো কখনো দুই মাত্রার ধরা হয়ে থাকে।
স্বরবৃত্ত ছন্দঃ
মুক্তস্বর - একমাত্রা।
বদ্ধস্বর - একমাত্রা।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ
মুক্তস্বর - একমাত্রা।
বদ্ধস্বর - দুইমাত্রা।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দঃ
মুক্তস্বর - একমাত্রা।
বদ্ধস্বর - কখনো একমাত্রার, কখনো দুই মাত্রার। শব্দের শুরুতে বা মাঝের বদ্ধস্বর একমাত্রার কিন্তু শেষে থাকলে দুইমাত্রার হবে। যেমনঃ শ্রাদ্ধ = শ্রাদ্ + ধো; এখানে শব্দের শুরুতে বদ্ধস্বরটিকে একমাত্রার ধরা হবে কিন্তু শেষে থাকালে দুমাত্রার ধরা হত। যেমনঃ নির্মল = নির্ + মল্; নির্ একমাত্রার, মল্ দুই মাত্রার।
এবার বলুনতো কালপুরুষ শব্দটি কয় মাত্রার??
কালপুরুষ = কাল্ + পু + রুষ
সাধারণ হিসেবে কাল্ কে একমাত্রার ধরতে হলেও ধরা যাবে না, কারণ কালপুরুষ একটা শব্দ হলেও কাল্ নিজেই একটা পূর্ণ শব্দের গুণ রাখে, আর সেভাবেই উচ্চারিত হয়। তাই কাল্ দুইমাত্রার হবে, আর কালপুরুষ ৪ মাত্রার না হয়ে ৫ মাত্রার হবে।
অনেক হল, এবার হাইকুতে ফিরি!
(১)
বাদরো ঝরে
কালো কাকেরো 'পরে,
ভিজে গেলো যে!
(২)
বাদলো মাঝে
ভালোবাসাটা খুঁজি...
কতদূরে সে?
(৩)
ভালোবাসাটা
জলেরি মতো করে
কচু পাতাতে!
(৪)
ক্ষ্যাপাটে হয়ে
সে মেতে ওঠে নাচে
মেঘোলা দিনে!
(৫)
তুমি ও আমি
জলোধারারি মাঝে
মিলে যাবো কি?
বাদরো ঝরে
কালো কাকেরো 'পরে,
ভিজে গেলো যে!
(২)
বাদলো মাঝে
ভালোবাসাটা খুঁজি...
কতদূরে সে?
(৩)
ভালোবাসাটা
জলেরি মতো করে
কচু পাতাতে!
(৪)
ক্ষ্যাপাটে হয়ে
সে মেতে ওঠে নাচে
মেঘোলা দিনে!
(৫)
তুমি ও আমি
জলোধারারি মাঝে
মিলে যাবো কি?
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
জাপানি হাইকুর স্বকীয়তা বজায় রাখবার জন্যই বাদর = বাদরো, বাদল = বাদলো, মেঘলা = মেঘোলা, জলধারা = জলোধারা উচ্চারণ করতে হবে। মাত্রার হিসেব ঠিক রাখবার জন্য ধারারই = ধারারি (র্+ই দ্রুত উচ্চারিত হয়ে রি হবে), একইভাবে জলের
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন