শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

সফেদ বেনসনে মোড়া ভালোবাসা


অশান্ত এ মন,
লাগে গায়ে শীতের পবন,
তবু আমি ঘামি দরদর,
এ হৃদয়ে বাজে শুধু মর্মর।

সেই চেনা পথে হাঁটি,
এই সেই চেনা মাটি,
শুধু তোমায়ই পায় শ্বাস,
নেই কোন মেটো বাস!

চারিদিকে চাই, দেখি তুমি নাই,
বাতাসে ওড়ে সফেদ বেনসনের ছাই।
একটা-দু'টা-তিনটা ফুড়োয়,
বাতাসটা তার ছাই উড়োয়।


হেঁটে চলি, পৌঁছি সেই পুকুর পাড়ে,
তোমায় নিয়ে সময় কাটে যেই ধারে।
আঁধার নামে ঐ আকাশে,
আর আযানের শব্দ ভাসে।


বেনসনের ধোঁয়ায় খোকার মশারা থাকে দূরে,
আর একটু একটু করে বুক যায় ভেঙ্গেচুড়ে।
ধোঁয়ায় ধূমায়িত তুমি আসো,
জড়িয়ে ধরে আমায় ভালোবাসো...


ভালোবাসা! সফেদ বেনসনে মোড়া!
ছ'নম্বরটা হাতে, মনে দেয় নাড়াঃ
"আমি ভাবি তুমি আর তুমি ভাবো রবি,
এই মন কবে ছোঁবে ঐ মনের ছবি??..."

"আমি ভাবি তুমি আর তুমি ভাবো রবি,
এই মন কবে ছোঁবে ঐ মনের ছবি??...
তবু আমি আশায় থাকি পাবো আমি তোমায়
আশা নিয়েই আছি বেঁচে, দিন চলে যায়..."

ভালোবাসা! সফেদ বেনসনে মোড়া!
আমার ভালোবাসায় দিবে কবে সাড়া??

বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১১

কফিতা...





ও রে কফির পোড়া গন্ধ,
আমি যে তোরই প্রেমে অন্ধ।
নাকটা ডুবোই তোরই ধোঁয়ায়,
দেয় সাড়া মন তোরই ছোঁয়ায়,
ওঠে জেগে প্রতি রন্ধ্র।

মগের ভেতর শুধুই যে তুই,
দুধ-চিনি বাদ; একটু গরম পানি।
তোর ধোঁয়ার মাঝে প্রেমের হাতছানি,
দিয়ে সাড়া তোর হাতখানি ছুঁই।
তুইই আমার ভালোবাসা,
তুইই আমার রাণী।

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১১

শাড়ি...

আমি টুকটাক লেখালেখি করি। তবে বেশিরভাগ সময়েই সাহিত্য ঘরানার লেখাগুলো ঠিকমত পরিপক্বতা পায় না। আসলে লেখার গভীরতা বাড়ানোর জন্য অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়। অন্যের লেখা পড়লে, বিশেষ করে ভালো মানের লেখা পড়লে লেখার গুণ, গভীরতা, ব্যপকতা নিশ্চিতভাবেই বাড়ে যদি পড়া লেখাগুলোর কিয়দংশও বোঝা সম্ভব হয়।

আমি আমার আলসেমির দরুন বই পড়াও ছেড়ে দিয়েছি। নানা ব্যস্ততায় ব্লগ পড়াটাও অনেক কমে গেছে। আজ এক বন্ধুর কাছ থেকে পড়ার জন্য একটা বই নিলাম। রাজনৈতিক ভাবে ওপার বাংলার (রাজনৈতিকভাবে দুই বাংলা যতই আলাদা হোক না কেন আমার মনে দুই বাংলা এখনো অভিন্নসত্তা) লেখকের। সুবোধ সরকারের কবিতার বই। এর আগে আমি কখনো সুবোধ সরকার পড়িনি। আমার বন্ধু, সাবিল কবিতাগুলো থেকে কিছু কবিতা আমাকে আবৃত্তি করে শোনালো। তার থেকে একটা কবিতা আমার মাথায় ঘুরছিলো।

বাসায় ফিরে আরো বেশ ক'বার পড়লাম। আমি বাকরুদ্ধ। এই না হল কবিতা! জীবনে এরকম একটা কবিতা লিখতে পারলে লেখালেখির পুরোটাই স্বার্থক। অনেক বেশি মর্মস্পর্শী সে কবিতা। একজন পুরুষ কবি এক হতভাগ্যা-অসহায়া নারীর করুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন সে কবিতায়। আমি মনে মনে নিজেকে সেই নারীর জায়গায় বসানোর চেষ্টা করলাম। যদিও একজনের পক্ষে আরেকজনের দুঃখের পুরোটা কোনভাবেই বোঝা সম্ভব না, তারপর আমি একজন পুরুষ! এরপরও পড়তে পড়তে আমার চোখের কোণাটা ভিজে গেল।

কবিতাটা আপনাদের জন্য তুলে ধরছিঃ

শাড়ি
- সুবোধ সরকার

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।

আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ
দ্বিতীয় থাকে রাখলো সব গোলাপীদের
একটা গোলাপীকে জড়িয়ে সে বলল, তোর নাম অভিমান
তৃতীয় থাকে তিনটা ময়ূর, যেন তিন দিক থেকে ছুটে আসা সুখ
তেজপাতা রঙ যে শাড়িটার, তার নাম দিল বিষাদ।
সারাবছর সে শুধু শাড়ি উপহার পেল
এত শাড়ি কী করে এক জীবনে সে পরবে?

কিন্তু এক বছর যেতে না যেতে ঘটে গেল সেই ঘটনাটা
সব্ধের মুখে মেয়েটি বেরিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, চাইনিজ খেতে
কাপড়ে মুখ বাঁধা তিনিটি ছেলে এসে দাঁড়ালো
স্বামীর তলপেটে ঢুকে গেল বারো ইঞ্চি
ওপর থেকে নীচে। নীচে নেমে ডানদিকে।
পড়ে রইলো খাবার, চিলি ফিশ থেকে তখনো ধোঁয়া উঠছে।
এর নাম রাজনীতি বলেছিল পাড়ার লোকেরা।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
একদিন দুপুরে, শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছ'তলার বারান্দা থেকেউড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে।
শাশুড়ি পরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে, সে একা।

কিন্তু এই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, বাঁচাও
পেছনে তিনজন, সে কি উল্লাশ, নির্বাক পাড়ার লোকেরা।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা।


কবিতাটার ভাষা যতটা সহজ ঠিক ততটাই কঠিন এর বক্তব্য। এর ঘটনাটা কঠিনভাবে বুকের বাম দিকে আঘাত করে। মস্তিষ্কে আঘাত করে, এবং সে আঘাত পৌনঃপুনিকভাবে চলতেই থাকে। আমি সে আঘাত থেকে মুক্তি পাই নি। এলোমেলো ভাবনারা আমাকে আরো কিছুদূর সামনে টেনে নিয়ে গেছে। তাইই তুলে ধরলামঃ

শাড়ি
- দেবাশিস্‌ মুখার্জি

তিনজন দৌড়াচ্ছে, দৌড়াচ্ছে সেই নারীর পেছনে
যে নারীর সিঁথিতে গতকালও সিঁদুর ছিল
নারীদেহ খেতে অনেক মজা, তাই এ সুযোগ ছাড়বে কেন?
সাদা থান কেড়ে নিয়ে হাত বাড়ায় উলঙ্গ বক্ষে
একে একে রক্তাত করে তোলে সারাটা দেহ
নির্বাক পাড়াবাসীর গোচরেই চলে তিন পাষণ্ডের উপভোগ।

তিনজনের পালাবদলে রাতটা পার হয়না সে মেয়ের
ভোরের আলো ফোঁটার আগেই তার জীবন আলোর অস্ত ঘটে
সকাল বেলা হাজির হয় কর্তব্য পরায়ন পুলিশেরা,
একে ওকে জিজ্ঞাস করে, কে এই নারী, ধর্ষিতা নারী!
নির্বাকেরা নির্বাক রয়ে যায়, পুলিশ লাশ নিয়ে ধায়।

আধখাওয়া লাশটার কাটাছেঁড়া চলে, সবশেষে সেলাই,
এর পর মেয়েটার উলঙ্গ দেহে নতুন কাপড় ওঠে, লাশের সাদা কাপড়
পুলিশ লাশটাকে শাশুড়ির কাছে দিয়ে আসে
কিন্তু সে তো একে দিবেনা জায়গা, এ যে অপয়া নারী
একে একে সব নির্বাকেরা সবাক হয়ে ওঠে, বলে, ঠিক ঠিক
সত্যিই ও অপয়া তাই বিয়ের বছর না পেরুতেই স্বামীকে খেলো,
আর কোন ভালো মেয়েকে কি কেউ এভাবে খায়!

এত শাড়ির মালিক হয়েও একটা শাড়ি জোটে না সে মেয়ের
একটা সাদা থানে চিতায় নিতেও নারাজ বুড়ো শাশুড়ি,
কারণ ওর জন্যই যে ওর খোকা মরেছে!
সরকারি কাপড় গায়ে ইলেক্ট্রিক চিতা জলে গঙ্গার ধারে,
কাপড়ের ছায়ারা এখনো ওড়ে রাতের আধাঁরে।


শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১১

মাদকতা!


তুই খেয়ে চল স্কচ, রাম, ভদকা,
আর আমি খাবো তোর মাদকতা।
মাদকতা মাখা ঐ চোখ দুটোতে
আমি যাই চলে প্রেমের শুরুতে...

নতুনের শুরু, হারানো কিছু ভুলে
নাকটা গুঁজি তোর ঐ ছাড়া চুলে,
মাদকতার ঘ্রাণে পাগল এ আমি,
তোকে ঘিরেই ফের পাগলামি...


কোলে নিয়ে চলি ঐ ছাদের 'পরে,
তোর খোলা চুল ওড়ে ধুলি ঝড়ে,
এরপর নামে বৃষ্টি, কাঁদে আকাশ,
তুই আর আমি হই ভেজা কাক...

কাঁপছি, কোন এক শীতল নিশীথে,
ছাদের 'পরে, বসে ঐ ঠাণ্ডা মেঝেতে,
কালপুরুষ খোঁজে দুইজোড়া চোখ,
ভুলে যেতে চায় পেছনের শোক...


তবু থাকে জল চোখের কোণে
আর পুরোনোরা রয় অবচেতনে
মেনি আর হুলো রাখে কাঁধে কাঁধ
ভালোবাসতে জাগে বড় সাধ...

তবু মনে থাকে ভয় পাথর হবার
হবে কি পাথর দুজনায় আবার??
.......................................


১২ আগস্ট, ২০১১; ঢাকা
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১১

ইন্দো-বাংলা সম্পর্ক: সীমান্ত - ০১: ইন্দো-বাংলা যুদ্ধ!!

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ছাগু ও ভাদারা নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। আসলেই গদাম!!
 

অনেকদিন পর এই সিরিজটায় হাত দিলাম। যাদের পড়া হয় নি কিংবা যারা সময়ের স্রোতে ভুলে গিয়েছেন তাদের জন্য এই সিরিজের আগের পর্বের লিঙ্কগুলো তুলে ধরলামঃ

অকৃত্রিম বন্ধু ভারত - ০১ : নদ-নদী - ০১ : ভারতের তিস্তা-মহানন্দা শোষণ
 
অকৃত্রিম বন্ধু ভারত - ০১ : নদ-নদী - ০২ : গঙ্গা-পদ্মা দরকষাকষি ও আমার প্রস্তাবনা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় প্রতিবেশী ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। ভারতের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতাটা অসম্ভব না হলেও এতটা সহজে হত না। ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের পরেও বলবো আমরা খুব কম সময়েই আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই নানা টানাপোড়েনে বন্ধুত্বের পথটা মসৃণ হয় নি। ভারত বরং তার দাদাগিরিই অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে যদিও কোন যুদ্ধ হয় নি, তবে যুদ্ধের কাছাকাছি উত্তপ্ত অবস্থা ঠিকই তৈরি হয়েছে, যদিও তার পরিমাণ হাতে গুণে কয়েকবার। ঐ ঘটনাটাকে যুদ্ধ না বলে সংঘর্ষ বলাই শ্রেয় (তবু কেন শিরোনামে যুদ্ধ শব্দটা ব্যবহার করেছি তা পুরো পোস্ট পড়লেই জানতে পারবেন)। ইন্দো-বাংলার সেই সংঘর্ষ নিয়েই আজকের পর্ব লিখলাম।

ভেতরের ঘটনা যাই হোক, বাহ্যিক ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারকেই 'ভারতের দালাল' অপবাদ সহ্য করতে হয়। আর এই রটনা রটানোর গুরু দায়িত্ব পালন করে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো, এবং দেশের জনসংখ্যার বেশ বড় একটা অংশ তা বিশ্বাসও করে। কিন্তু এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী সরকারের সময়েই এবং তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা!
 
কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় যাই। ঘটনার সময়কাল ২০০১ সালের ১৬ - ২০ এপ্রিল এবং ঘটনাস্থল বাংলাদেশ আর ভারতের আসাম ও মেঘালয় সীমান্ত। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে ওপারের বিএসএফ আমাদের কুড়িগ্রাম এর রৌমারি সীমান্তে টহলরত বিডিআরকে হঠাৎ করেই আক্রমণ করে আর তাই বাংলাদেশ আর্মির সদস্যরা ওদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। আর বিএসএফ তরফ থেকে জানানো হয় বিডিআর বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে এক গ্রাম দখল করার চেষ্টা করে যা মূলত ভারতের জায়গা!!






এই সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ বিডিআর এর ২ জন সদস্য মারা যান। আর বিএসএফ এর ১৬ জন সদস্য মারা যান। বাংলাদেশ বিডিআর শুরুতেই লাশ হস্তান্তর করতে রাজি হয় নি। পরে তারা তা করতে বাধ্য হয়। ভারত সরকার এর তরফ থেকে দাবি করা হয় যে বিএসএফ সদস্যদের হয় অত্যচার করে মারা হয়েছে কিংবা হত্যার পর তাদের লাশ বিকৃত করা হয়েছে। আর এর উত্তরে বিডিআর বলেছে ওদের লাশগুলোতে গরমে পচন ধরেছে। ভারত সরকার বলেছে যুদ্ধকালীন অবস্থায় বিপরীত পক্ষের সেনাদের লাশ বিকৃত করা জেনেভা কনভেনশন বিরোধী। আর দুই প্যরামিলিটারি বাহিনীর সংঘর্ষে বাংলাদেশের সেনার হস্তক্ষেপ নিয়মবিরুদ্ধ। ভারত জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচারও দিতে চেয়েছিল। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারো বাজপেয়ীর আলাপচারিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।


স্বল্প সময়ের এই যুদ্ধে ফলাফল হল 'Status quo ante bellum', যার মানে যুদ্ধের আগের সীমানতে ফিরে যাওয়া। এর দুদিন বাদেই বিএসএফ তথা ভারত দাবী করে যে বাংলাদেশ ঐ সীমান্তে তার সেনা বাড়াচ্ছে এবং তা নাকি ২০০০০ এরও বেশি!! বাংলাদেশ সরকার অথা বিডিআর এর তরফ থেকে তৎক্ষণাৎ জবাব দেওয়া হয় ওখানে তাদের রুটিন ওয়ার্ক চলছে, আর বাংলাদেশের কোথাও কত সেনা থাকবে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার!!



বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ঐ সীমান্তে থাকা কোন বিডিআর সদস্য কিংবা সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল কিংবা সান্সপেন্ড করার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে বাংলাদেশে রাজনীতিতে অনেকেই এটা নিয়ে মিথ্যা কাহিনী প্রচার করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে।

 

জাতীয় নির্বাচনের আগ দিয়ে এই ঘটনা আওয়ামী সরকারকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। লীগ সরকার উভয় সংকটে পরে যায়। এই ঘটনায় যদি সত্যিই বাংলাদেশ আর্মির ঐ মেজরের দোষ হয়ে থাকে তবে তার পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ইন্ধন থাকলে অবাক হব না!!
 

সবশেষে কিছু কথা না বললেই না। ঐটাও আমাদের সেনা, আমাদের বিডিআর ছিল। আর এখন যারা সীমান্ত পাহাড়া দিচ্ছেন তারাও তাই (যদিও বিডিআর এর নাম বদলে বিজিবি হয়েছে), তখনও যিনি প্রধানমন্ত্রী চিলেন, এখনও তিনিই প্রধানমন্ত্রী আছেন। কিন্তু এখন আমাদের সীমান্তে কী ঘটে চলছে??!! কোন এক অজানা জাদুবলে (!!!) আমাদের বিজিবি সদস্যদের হাতে চুড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে!!!

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১১

গোপন ক্যামেরার নজরদারি থেকে বাঁচার উপায় কি জানা আছে??

কিছু ওয়েব-সাইট আর ফেইসবুকের কল্যাণে লাখো মানুষের কাছে একটা তথ্য পৌঁছে গেছে যে সেল ফোন ব্যবহার করে গোপন ক্যামেরা সনাক্ত করা সম্ভব। ঐখানে যেভাবে সনাক্তকরণের কথা বলা হয়েছে সেটা টেলিকম এ পড়াশোনা করা একজন হিসেবে আমাকে বেশ ভাবালো। সেই থেকে আমি, আমার বন্ধু পার্থ আর আবরার মিলে এই লেখাটা দাঁড় করালাম। আশাকরি অনেকের কাজে লাগবে।

ঐ লেখাগুলোতে দেখানো হচ্ছে যে আরএফ ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তারবিহীন ক্যামেরা্র কারণে সেলফোন থেকে ফোন করা যায় না।

ব্যবহৃত তারবিহীন গোপন ক্যামেরাগুলোর অধিকাংশতেই ক্ষেত্রেই ২.৪-২.৫ গিগা হার্জের আর এফ সিগনাল ব্যবহার করা হয় যা সাধারণ সেলফোনের মাধ্যমে সনাক্ত করা সম্ভব হবার কথা না।

বাংলাদেশে (এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশে) প্রচলিত সেলফোনগুলো GSM-900 এবং GSM-1800 ব্যবহৃত হয়। GSM-900 এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডঃ সেলফোন থেকে বেইজ-স্টেশনে পাঠাতে ৮৯০-৯১৫ মেগা হার্জ আর বেইজ-স্টেশন থেকে সেলফোনে ডাটা গ্রহণ করার সময় ৯৩৫-৯১৫ মেগা হার্জ। অন্যদিকে GSM-1800 এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডঃ সেলফোন থেকে বেইজ-স্টেশনে পাঠাতে ১৭১০-১৭৮৫ মেগা হার্জ আর বেইজ-স্টেশন থেকে সেলফোনে ডাটা গ্রহণ করার সময় ১৮০৫-১৮৮০ মেগা হার্জ।

ফলে গোপন ক্যামেরার ফ্রিকোন্সির জন্য সেলফোনের ফ্রিকোয়েন্সি ব্লক হয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, খুব একটা ইন্টারফেয়ারেন্সেরও সুযোগ নেই। তাই ঐভাবে সেলফোন দিয়ে আরএফ ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গোপন ক্যামেরা সনাক্ত করা সম্ভব না।

এভাবে যেখানে সেখানে গোপন ক্যামেরাগুলো কেন বসানো হয়?? কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষার্থে এভাবে নজরদারি করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে খারাপ উদ্দেশ্যে। তাই এগুলো বসানো হয়ে থাকে মেয়েদের বাথরুমে, ট্রায়াল রুমে, হোটেল, এমনকি কখনো কখনো লোকজনের বাসাতেও। মূল উদ্দেশ্য মেয়েদের শরীর আর নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ দৃশ্যগুলো ধারণকরা, সেগুলো নিয়ে কাউকে হেয় করা, ব্যবসা করা।

গুগলে ‘victim by hidden camera’ লিখে খোঁজ করলে তৎক্ষণাৎ পাওয়া যাবে ৩৬ লাখ ওয়েব-সাইট লিঙ্ক, ৩৬৪ টি ভিডিও এর লিঙ্ক। আর ‘hidden camera in girls toilet’ লিখে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ওয়েব-সাইট লিঙ্ক, ২৫৪ টি ভিডিও এর লিঙ্ক। এর থেকেই গোপন ক্যামেরার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।


ছবি - আরএফ ক্যামেরা ও এর রিসিভার

অনেক ধরণের ক্যামেরা আছে যা এসব কাজে ব্যবহৃত হয়। আগেকার দিনের ক্যামেরাগুলোর আকার বড় ছিল বলে অনেক সহজেই তা ধরা যেত। কিন্তু আজকাল ইলেকট্রনিক্স এর বিপ্লবে এদের আকার এত ছোট হয়ে গেছে যে সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব না। তার উপর এখনকার এই ক্যামেরাগুলো সাধারণত তারবিহীন হয়ে থাকে এবং আকার এত বেশি ছোট হয় যে অনেকসময় খালি চোখে এদের অস্তিত্ত্ব নির্ণয় করা অসম্ভব।


ছবি - অতিক্ষুদ্র ক্যামেরা যা চোখে পরা খুব কঠিন

এবার একটু জেনে নিই যে কীভাবে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন আর এর থেকে প্রতিকারে উপায়ই বা কী –

১) অনেক সময় বিশেষ কারো প্রতি নজর রাখতে কারো বাসাতেই গোপন ক্যামেরা বসাতে পারে। সাংবাদিকেরা সেলিব্রেটিদের বাসায় এই কাজ করতে পারে, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কাউকে হেয় করতেও এই কাজ করতে পারে। আবার অনেক সময় সন্দিহান স্বামী/স্ত্রী বাসাতে বসে তার স্ত্রী/স্বামী কী করছে তা জানার জন্যো করে থাকতে পারে।

এ কাজের জন্য ক্যামেরা বাসার যেকোন জায়গাতেই বসানো হতে পারে। তাই সোফার কোণা, ঘড়ি, টেলিভিশন, ফ্যান এর মতন জায়গাও সন্দেহের বাইরে না। এসব জায়গাতে চোখে পরার মতন কালো দাগ দেখলেই তা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।


ছবি - হয়তো এভাবেই আপনা্র উপর লক্ষ রাখা হচ্ছে

বাসার সব কিছু ঠিক জায়গাতে আছে কিনা কিংবা নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা তাও দেখে নেওয়া উচিত। অনেকে অভিনন্দন জানাতে ফুলের বুকির মাঝেও ছোট্ট একটা ক্যামেরা লুকিয়ে রাখতে পারে। তাই সাবধান!!

ঘরের বাতি নিভেয়ে এলইডি থেকে নির্গত হয় এমন ক্ষুদ্র লাল সবুজ আলো খুঁজে দেখা উচিত। বেশিরভাগ ক্যামেরার মাইক্রফোনের পাওয়ার অন করার পরপরই পাওয়ার অন ইনডিকেটর বাতি জ্বলে ওঠে। অনেকে ক্যামেরা স্থাপন করার সময় এই ফিচার বন্ধ করতে ভুলে যায়। এতে সহজে অন্ধকার জায়গায় ক্যামেরা সনাক্ত করা যায়। সাথে রুমে থাকা আয়না এবং জানালার কাঁচ গুলো ফ্ল্যাশ লাইট দিয়ে চেক করে নেয়া উচিত। সম্ভব হলে কিছু দিয়ে স্বচ্ছ কাঁচ ঢেকে দেয়া উচিত।

অনেক ক্যামেরা আছে মোশন সেন্সিটিভ। যখন ক্যামেরা ভিডিও ধারণ করে তখন এর থেকে হালকা শব্দ নির্গত হয়। তাই সতর্কতার সাথে খেয়াল করে দেখা দরকার যে কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কীনা।

২) গেষ্ট হাউস বা আবাসিক হোটেলে ওঠার আগে যদি সম্ভব হয় সাথে একটি আরএফ সিগনাল ডিটেক্টর (RF signal detector) বা ক্যামেরা ডিটেক্টর সাথে কিনে রাখতে পারেন। এটি আকারে ছোট বহন করতে সুবিধা এবং খুব বেশি দামিও না। আরএফ সিগনাল ডিটেক্টর দিয়ে সম্পূর্ণ সার্চ করা যায় এবং কোন ধরনের বিশেষ সিগনাল সনাক্ত হলেই ডিটেক্টর সিগনাল দিয়ে সতর্ক করে দিবে।


ছবি - হোটেলে এভাবেই নজর রাখা হয়

কিছু কিছু হোটেলে ডুয়েল মিরর বসানো থাকে। ডুয়েল মিররের উল্টো পাশ থেকে আয়নার এপাশের সব কিছুই পরিষ্কার দেখায় যায় সাধারণ কাঁচের মতো। কিন্তু এপাশ থেকে দেখলে এটাকে একটা সাধারণ আয়না ছাড়া কিছুই মনে হবে না। অনেক গেস্ট হাউসে এই ডুয়েল মিররের উল্টোপাশে ক্যামেরা বসিয়ে কাপলদের ক্লিপ রেকর্ড করা হয়। তাই হোটলে বা গেষ্ট হাউসে থাকা আয়নাগুলো সঠিকভাবে চেক করে নেয়া উচিত।

আয়নার উপর একটা আঙ্গুল রাখুন। আপনার আঙ্গুল আর আয়নায় আঙ্গুলের প্রতিবিম্বের মাঝখানে যদি কোনো ফাঁক না থাকে (মানে দুটো আঙ্গুলের মাথা যদি একেবারে একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে) তাহলে বুঝবেন এটা ডুয়েল মিরর। আর যদি মূল আঙ্গুল এবং আয়নার আঙ্গুলের মাঝে একটু ফাঁক থাকে (মূলত আয়নার থিকনেসের সমান) তাহলে বুঝবেন এটা একটা সাধারণ আয়না।

৩) মহিলারা যারা জিমে যান তাদেরকে জিমের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় এবং ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহারের আগে সঠিকভাবে চেক করে নেয়া উচিত। আশেপাশে পরে থাকা জিম ব্যাগগুলো চেক করে নিলে ভাল হয়। কারন আজকাল জিম ব্যাগ নামক হিডেন ক্যামেরা বাজারে এসেছে। এতে অতি ক্ষুদ্র ক্যামেরা লাগানো থাকে।

তাছাড়া মেয়েরা যখন কাপড় কিনতে গিয়ে ট্রায়াল রুমে কাপড় বদলে দেখেন কিংবা বাইরের কোথাও অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেটে যান তখন সে জায়গাটি খুব ভালো করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। চারদিকে চোখে লাগার মতন কিছু দেখা যায় কিনা, কোন ছোট কালো কিছু দেখা যায় কিনা। সাথে কাপড় বদলের পূর্বে ট্রায়াল রুমের আয়নাটিও পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।


ছবি - ট্রায়াল রুমে মেয়েদের শরীর ধারণের অপকৌশল

৪) বর্তমান টিনেজারদের মাঝে সাইবার ক্যাফেতে বসে মেইক-আউট করার প্রবণতাও দেখা যায়। অনেক সাইবার ক্যাফের লোকেরা সেখানে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে রাখেন এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ধারণ করে ওয়েব-সাইটে ছেড়ে দেয় কিংবা ব্যাক্মেইলিং এর কি হিসেবে ব্যবহার করে। তাই টিনেজারদের এই ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকা উচিত।

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি এতটা এতটা এগিয়ে যাচ্ছে যে ক্যামেরাগুলো দিনকে দিন সনাক্ত করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। তাই সকলেরই উচিত সাবধানে থাকা। পার্ক কিংবা রেস্টুরেন্টে নিজেদের সংযত রাখা এবং নিজের পোষাক ঠিক আছে কিনা সেইদিকে খেয়াল রাখা। অপরিচিত কাউকে ছবি তুলতে দেওয়া উচিত না। ফেইসবুকে নিজের ছবি গুলো সঠিকভাবে প্রাইভেসি দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।

গোপন ক্যমেরার মাধ্যমে কারো উপর নজর রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো এসব ব্যাপারে অনেক সচেতন হলেও আমাদের মতন দেশে আইন থাকলেও সে আইনের কোন প্রকার প্রয়োগ নেই। তাই নিজের সম্মান বাঁচাতে নিজেকেই যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১১

এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না - তোমার জন্ম অমর হোক


এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না - বিশ্বজগতে আধুনিক বিপ্লবের ঝাণ্ডা বাহক। মানুষ তাকে ভালোবেসে ডাকতো 'চে', এর্নেস্তো চে গেভারা নামে। আর্জেন্টিনায় 'চে' নামটির মানে অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। মার্কিনীরা তাঁর দেহখানি নিথর করে দিয়েছে ৪২ বছর আগেই। কিন্তু তাঁর আত্মা আজও রয়ে গেছে কোটি মানুষের হৃদয়ে।

আজ থেকে ৮৩ বছর আগে এইদিনে এক শুভক্ষণে জন্মেছিলেন এর্নেস্তো। এই এর্নেস্তোই ভবিষ্যতে বিপ্লবের প্রবাদ পুরুষে পরিণত হত। সারাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে যাওয়া পুঁজিবাদের বিষবাষ্পে সাধারণ মানুষ যখন চরমভাবে দারিদ্যে আক্রান্ত, তখন কিছু মানুষ এর প্রতিবাদে মাঠে নামেন। একসময় সেই বিপ্লবীদের পাশে এসে দাঁড়ান এর্নেস্তো। তিনি কখনো বিপ্লবীদের করেছেন উদ্বুদ্ধ, কখনো বা নিজেই অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পরেছেন অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে। তার কারণে মার্কিনীদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। তাই এর্নেস্তোকে মেরে ফেলার জন্য হিংস্র জাল ফেলতে থাকেন। ১৯৬৭ সালে এর্নেস্তো যখন বলিভিয়ার বিপ্লবে যোগ দিতে ছদ্মবেশে দেশটিতে যান, তখন ৭ অক্টোবর সিআই এর লোকেরা তাকে আটক করে আর ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায় অমানবিকভাবে হত্যা করে। হত্যা করবার পর তার লাশটাও গুম করে ফেলা হয়। পরে ১৯৯৭ সালে ভ্যালেগ্রান্দের একটি গণ-কবরে চে ও তাঁর সহযোদ্ধাদের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়।

যারা মানবতার বুলি আওড়ায়, সেই মার্কিনীরাই যখন বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করে তখন কোন মানবাধিকার কমিশন আওয়াজ তোলার সাহস পান না। 'চে' এর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।

'চে' ছিল, আছে থাকবে। 'চে' থাকবে সবার অন্তরে, বিপ্লবী চেতনায়। যতদিন না মানুষের গরিবী না ঘুঁচবে, না ঘুঁচবে পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের নামে দরিদ্র্য নিপীড়ন, ততদিন মানুষ এই জাল থেকে বেড়িয়ে আসতে বিপ্লবের পথে পা দিবেই। সেই ১৯৬৭ থেকে আজ অনেক বছর চলে গেছে, বিশ্বও অনেক বদলে গেছে। কিন্তু সেই সাধারণেরা আজও নিপীড়িত। তাই সেই বিপ্লব আজও চলবে তবে নতুন আদলে। সময়ের সাথে সাথে কৌশল বদলাবে কিন্তু সাধারণ মানুষের বিপ্লব টিকে থাকবে। জয় বিপ্লবের জয়।












বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১১

আমার বৃষ্টি...


অনেকদিন পর আজ একটু ভিজলাম। বৃষ্টিতে ভিজলাম। এই বৃষ্টি আর বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতি আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কখনো মনে পরে ছোটবেলা কথা যখন বৃষ্টি্তে বাসার সামনে জল বাঁধলে কাগজের নৌকো ভাসাতাম। ভাবতাম বড় হয়ে নৌকোর মাঝি হব। গাঙের মাঝে বসে বৃষ্টিতে ভিজবো, মেঘলা আকাশ দেখবো। মনে পরে ইশকুলের কাঁদা মাখা মাঠে ফুটবল খেলার কথা। তখন এরকম বেঢপ না থাকলেও আমি কখনোই ঠিক শুকনো ছিলাম না। তাই খেলার চাইতে অখেলাটাই বেশি হত। আমার লাথ বলে না পরে পক্ষ-বিপক্ষের গায়ে পরতো। রেফারি না থাকায় ওদের কিছু বলারও ছিলো না। মনেপরে সেই সময়টা যখন ধানমন্ডির মুক্তমঞ্চে বৃষ্টিতে ভিজতাম আর বৃষ্টিকে চাইতাম। আকাশের বুকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে খুঁজতাম। মনে শঙ্কা জাগতোঃ আকাশের বুকে বৃষ্টি থাকবে তো? মনে পরে সেই দিনের কথা যেদিন শহীদ মিনারের সামনে বৃষ্টির সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। তখন আমি প্রেমিক কবি। মনের মাঝে রবি ঠাকুরের গান দোলা দেয়, বাপ্পার 'বৃষ্টি পরে...' নাড়া দিয়ে যায়। আর এখন আমি ভিজতে ভয় পাই। ঘরে বসেই বৃষ্টি দেখি। জানালার শিক ধরে তাকিয়ে থাকি ঐ আকাশের দিকে। আকাশের বুকে বৃষ্টি খুঁজি। ঝাপসা চোখে কিছুই আর ধরা দেয় না। কানে আসে বাপ্পা মজুমদারের গানঃ

বৃষ্টি পড়ে অঝোর ধারায়...
বৃষ্টি পড়ে লজ্জা হারায়...
বৃষ্টি পড়ে জলে ভিজে...
ঐ মেয়েটি কে... কীযে...

রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

কুমড়ো পটাশ ও এর জনক...

ও ভাই 'কুমড়ো পটাশ' টা কী জিনিস?? ছবি দেখে বলুন তো চিনেন কিনা??



আমার ছোট বেলার সবচেয়ে কাছে যা ছিলো তার একটা হল গল্প-কবিতা-ছড়ার বই, এর মাঝে হ-য-ব-র-ল'ই বেশি থাকতো। মজার মজার গল্প-ছড়ার ভেতর দিয়ে অনেক বেশি অদ্ভুতুড়ে জিনিসের জন্ম দেওয়া মানুষই জিন্ম দিয়েছেন এই 'কুমড়ো পটাশ' কে। এবার ছড়াটা একটু পড়ে নিঃ

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ নাচে-
খবরদার এসো না কেউ আস্তাবলের কাছে ;
চাইবে নাকো ডাইনে বাঁয়ে চাইবে নাকো পাছে ;
চার পা তুলে থাকবে ঝুলে হট্টমুলার গাছে !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ কাঁদে-
খবরদার! খবরদার! বসবে না কেউ ছাদে ;
উপুড় হয়ে মাচায় শুয়ে লেপ কম্বল কাঁধে ;
বেহাগ সুরে গাইবে খালি 'রাধে কৃষ্ণ রাধে' !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ হাসে-
থাকবে খাড়া একটি ঠ্যাঙে রান্নাঘরের পাশে ;
ঝাপ্‌সা গলায় ফার্সি কবে নিশ্বাসে ফিস্‌ফাসে ;
তিনটি বেলা উপোস করে থাকবে শুয়ে ঘাসে !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ ছোটে-
সবাই যেন তড়বড়িয়ে জানলা বেয়ে ওঠে ;
হুঁকোর জলে আলতা গুলে লাগায় গালে ঠোঁটে ;
ভুলেও যেন আকাশ পানে তাকায় নাকো মোটে !

(যদি) কুম্‌‌ড়োপটাশ ডাকে-
সবাই যেন শাম্‌লা এঁটে গামলা চড়ে থাকে ;
ছেঁচকি শাকের ঘণ্ট বেটে মাথায় মলম মাখে ;
শক্ত ইঁটের তপ্ত ঝামা ঘষতে থাকে নাকে !

তুচ্ছ ভেবে এ-সব কথা করছে যারা হেলা,
কুম্‌‌ড়োপটাশ জানতে পেলে বুঝবে তখন ঠেলা ।
দেখবে তখন কোন্‌ কথাটি কেমন করে ফলে,
আমায় তখন দোষ দিওনা, আগেই রাখি বলে ।

এবার আসি এর জনকের কথায়। এর জনক হলেন আমার সবচেয়ে প্রিয় ছড়াকার সুকুমার রায়। সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে। তিনি ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের উজ্জ্বল রত্ন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে। সুকুমারের মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে।সুবিনয় রায় ও সুবিমল রায় তাঁর দুই ভাই। এ ছাড়াও তাঁর ছিল তিন বোন।

সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যানুরাগী, যা তাঁর মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ. রয় এন্ড সন্স নামে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে সুকুমার যুক্ত ছিলেন।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও/অথবা পদার্থবিদ্যায় বি.এসসি.(অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কোলকাতাতে ফিরে আসেন। সুকুমার ইংলান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। তিনি একটি ছোটদের মাসিক পত্রিকা, 'সন্দেশ', এই সময় প্রকাশনা শুরু করেন। সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছোটভাই এই কাজে তাঁর সহায়ক ছিলেন এবং পরিবারের অনকে সদস্য 'সন্দেশ'-এর জন্য নানাবিধ রচনা করে তাঁদের পাশে দাঁড়ান।

১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিলনা। তাঁর মৃত্যু হয় একমাত্র পুত্র সত্যজিৎ এবং স্ত্রীকে রেখে। সত্যজিৎ রায় ভবিষ্যতে একজন ভারতের অন্যতম চিত্রপরিচালক রূপে খ্যাতি অর্জন করেন, ও নিজের মৃত্যুর ৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে সুকুমার রায়ের উপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন।


তথ্যসূত্রঃ উইকিপেডিয়া

মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১১

আজ রুমীর জন্মদিন...

আজ ২৯ মার্চ, রুমীর জন্মদিন। শফি ইমাম রুমী। নামটা কি চিনতে পারছেন?? আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা কাজে কত কিছুই তো ভুলে যাই। এটা ভুলে গেলেই বা ক্ষতি কী! এই রুমীই শহীদ রুমী। গেরিলা যোদ্ধা রুমী।










শফি ইমাম রুমী (২৯ মার্চ, ১৯৫২ - নিখোঁজ ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি ছিলেন শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমামের জেষ্ঠ্য পুত্র। জাহানারা ইমাম রচিত একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে রুমীকে অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা যায় এবং তাঁর মৃত্যুর জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধি পান।

শফি ইমাম রুমী ১৯৫২ সালের ২৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার শরীফ ইমাম ও জাহানারা ইমাম দম্পতির উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আই. এস. সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৭১‌ সালের মার্চ মাসে রুমী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। তিনি ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সুযোগ পেলেও যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার দরুন আর পড়া হয়ে ওঠেনি।

যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, রুমী ধারাবাহিকভাবে তাঁর মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে রাজি সক্ষম হন। তিনি ২ মে সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাঁকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। তিনি সেক্টর-২ এর অধীনে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই সেক্টরটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন খালেদ মোশাররফ ও রশিদ হায়দার। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন। রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন হামলা করা। এ সময় তাঁকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডি রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য।

ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে কাটান, এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাদের টিকটিকিদের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে বেশ কিছু সংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করে যার মধ্যে ছিলেন বদি, চুন্নু, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তাঁর বাবা শরীফ ও ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুরকার আলতাফ মাহমুদও গ্রেফতার হন। জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে রুমীকে ভাই ও বাবাসহ একঘরে আনলে রুমী সবাইকে তাদেরকে তাঁর সাথে যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী ও চুন্নুকে আর দেখা যায়নি।

ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক আত্মীয় তাঁর জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ধরা পড়েছে, তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা শরীফ রাজি ছিলেন না। ফলে রুমীর আর ঘরে ফেরা হয়নি।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপেডিয়া
চিত্রউৎসঃ শাফি ইমাম রুমীর ফেইসবুক ফ্যান পেইজ

আরো জানতে চাইলে পড়ুনঃ
১। ৭১ এর দিনগুলি - শহীদ জননী জাহানারা ইমাম
২। মা - আনিসুল হক

বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১১

চে বেঁচে আছে প্রতিটি বিপ্লবীর চেতনায়...বিপ্লব থেকে যাবে, শুধু বদলাবে তার কৌশল...


চে - শুধুমাত্র এক মহান বিপ্লবীর নাম না।এক বিপ্লবী আত্মা।দেহ মরে গেছে।কিন্তু আত্মা থেকে গেছে প্রতিটি বিপ্লবীর চেতনায়।

চে এর সেই মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্র আজ হয়তো আর আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না।সময়ের সাথে সাথে দাবিও বদলে গেছে।

স্বাধীনতার প্রায় চল্লিশটা বছর চলে গেছে।কী পেয়েছি আমরা??যদি আমরা হতাশাবাদীদের দলে না ভিড়ে থাকি তো দেখতে থাকবোঃ সে মুজিব সরকার থেকে শুরু করে আজকের সরকার, সব সরকারই দেশের জন্য কিছু না কিছু ভালো কাজ করতে চেয়েছে এবং কিছু ভালো কাজ করেছেও।কিন্তু তার সাথে করা খারাপ কাজগুলো বরাবরই তাদের ভালো কাজকে ছাপিয়ে গেছে।তা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ কিংবা দলীয় স্বার্থ কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বহির্শক্তির স্বার্থই রক্ষা বেশি করেছে অথবা করতে বাধ্য হয়েছে।

এই দেশের জন্মযাত্রা থেকেই নানা বিপ্লব-প্রতি বিপ্লব চলে আসছে।কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের কথা কে ভেবেছে??সবাই জনগণকে সিড়ি বানিয়ে ক্ষমতার আসনে আরোহণ করতে চেয়েছে।এরাই আজও আমাদের শোষণ করছে।শুধু চরিত্রগুলো সময়ের সাথে বদলেছে।জলপাইদের দল,নৌকা, ধানের শীষ। এখন এসেছে জিহাদী জঙ্গী,তাদের সাথে আছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি।কিন্তু কেউ কি জানতে চেয়েছে সাধারণ কি চায়??

আমরা, আমাদের বাবা-ভাইয়েরা কি এই উদ্দেশ্যেই রক্ত দিয়েছিল ৭১ এ??নাকি মা-বোনেরা অত্যাচারিত হয়েছিল এই ভবিষ্যত চেয়ে??

স্বাধীনতা মিলে গেলেও, পাওয়া যায় নি এর স্বাদ।আজও জুটেনি মুক্তি।এই মুক্তির জন্য চাই বিপ্লব।বিপ্লবের কোন বিকল্প নেই।বিপ্লব মানেই রক্তপাত না।বিপ্লব মানেই অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়া না।সময়ের সাথে বিপ্লবের উদ্দেশ্য বদলায় নি।তবে বদলাতে হবে এর কৌশল।বিপ্লব অনেক ভাবেই আসতে পারে।কৃষি বিপ্লব,শিল্প বিপ্লব, প্রযুক্তির বিপ্লব, রাজনৈতিক বিপ্লব, ভোটের বিপ্লব।সবকিছুর সুষ্ঠু সমন্বয়েই সম্ভব সত্যিকারের মুক্তি।

কিন্তু কোথায় সে কাণ্ডারি??কাণ্ডারি আসছে বলে।অপেক্ষায় না থেকে খুঁজে বেড় করুন।

জয় বিপ্লবের জয়।

বুধবার, ২ মার্চ, ২০১১

প্রাণের পতাকা...

সারা বাংলাদেশ পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন জোয়ারে ভাসছে। সবাই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর। এত সব ঢেউয়ের মাঝে বড় বড় ঢেউগুলো ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর তা বাকিসব ঢেউ নিয়ে আছড়ে পরছিল ধানমণ্ডি ৩২ এ নেতার বাড়িতে। ২রা মার্চ, ১৯৭১ ডাকসু র ভিপি আ স ম আব্দুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের প্রাণের পতাকা উত্তোলন করেন। সেই নিশান একে একে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লো। এই পতাকা হয়ে গেল আমাদের প্রাণের পতাকা। এই পতাকা নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। পাকিদের নাস্তানবুদ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি।

এই পতাকার নকশা করেছেন শিব নারায়ণ দাশ। পতাকার সবুজ আমাদের দেশের সবুজ-শ্যামলের প্রতিনিধিত্ব করে। মাঝে লাল বৃত্ত যা প্রকাশ করে মুক্তিকামী মানুষের বুকের তাজা রক্ত। এই রক্ত তিতুমীরের, এই রক্ত সূর্যসেনের, এই রক্ত প্রীতিলতার, এই রক্ত ক্ষুদিরামের, এই রক্ত ভাষা শহীদদের, এই রক্ত নাম জানা-অজানা লাখো শহীদের যারা ধাপে ধাপে এই বাংলার মুক্তির সংগ্রামে রক্ত দিয়েছেন। আর রক্তাক লালের মাঝে বাংলার উদীয়মান সোনালি মানচিত্র। পরে এই পতাকাকে অর্জণ করতে রক্ত দিয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদ।

২রা মার্চ আমাদের পতাকার জন্য একটা বিশেষ দিন হলেও এর জন্ম আরো আগেই। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে জয়বাংলা বাহিনী গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ।

এই লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৬ নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।

সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে সোনালি হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭০ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নং (উত্তর) কক্ষে রাত এগারটার পর পুরো পতাকার ডিজাইন সম্পন্ন করেন শিব নারায়ণ দাশ।

সেই রাতেই নিউমার্কেট এলাকার বলাকা বিল্ডিংয়ের ৩ তলার ছাত্রলীগ অফিসের পাশে নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সের টেইলার্স মাস্টার খালেক মোহাম্মদী পতাকার নকশা বুঝে কাজ শুরু করেন। তারা ভোরের মধ্যেই কয়েকটি পতাকা তৈরি করে দেন।

আমাদের আদি পতাকা



আমাদের এই প্রাণের পতাকা উত্তোলনের জন্য কিছু বিখ্যাত দিন হলঃ

জুন ৭, ১৯৭০
৭ জুন ১৯৭০ এ অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব প্রদান করেন আ স ম আবদুর রব। অল্প পেছনে পতাকা হাতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন হাসানুল হক ইনু। রব সেই পতাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন এবং শেখ মুজিবুর রহমান সেই পতাকা ছাত্র-জনতার সামনে তুলে ধরেন। এরপর ইনু পতাকাটি তার কক্ষে নিয়ে যান এবং সহপাঠি শরীফ নুরুল আম্বিয়া শেরে বাংলা হলের ৪০৪ কক্ষের খবিরুজ্জামানকে পতাকাটি বাক্সে লুকিয়ে রাখতে বলেন। এরপর একাত্তরের শুরুতে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহিদ হোসেন পতাকাটি নিয়ে যান তার মালিবাগের বাসায়।

মার্চ ২, ১৯৭১
১৯৭১ এর ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হবার পর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিশাল সমাবেশ হয়। এ সমাবেশে আ স ম আবদুর রব যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন নগর ছাত্রলীগ নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে রোকেয়া হলের দিক থেকে মঞ্চস্থলে মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসেন। রব তখন সেই পতাকা তুলে ধরেন।

মার্চ ২৩, ১৯৭১
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সারা বাংলায় পাকিস্তানের পতকার পরিবর্তে শিব নারায়ণ দাশের নকশা করা পতাকা উত্তোলিত হয়।

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার কোন এক রহস্যময় কারণে [যদিও বলা হয়ে থাকে নকশাকা সহজ করার জন্য] পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং এই কাজটির দ্বায়িত্ব পান পটুয়া কামরুল হাসান। তার হাত ধরেই নব-নকশায় তৈরি হয় আমাদের বর্তমান জাতীয় পতাকা।

আমাদের বর্তমান পতাকা



তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

অকৃত্রিম বন্ধু ভারত - ০১ : নদ-নদী - ০২ : গঙ্গা-পদ্মা দরকষাকষি ও আমার প্রস্তাবনা

বাংলাদেশ-ভারত এই দুই প্রতিবেশি দেশের মাঝে যে সকল বিষয়ে টানপোড়ন চলছে তার মাঝে অন্যতম হল নদী সমস্যা। ভারত তাদের দাদাগিরি ফলিয়ে নদী হতে এক তরফা ভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। যার ফলাফল ডেকে নিয়ে আসছে বাংলাদেশের করুণ পরিণতি। এই ধারাবাহিকের গত পর্বে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরের তিস্তা ও মহানন্দা নিয়ে। আজকের আলোচনা শুধুই গঙ্গা-পদ্মার পানি কেন্দ্রিক। আর এর সাথে আমার কিছু প্রস্তাবনাও উত্থাপনও করতে চাই।

গঙ্গা এই ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান নদী। আর আমাদের বাংলাদেশ মূলত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এর নিয়ে আসা পলি দ্বারা গঠিত বদ্বীপ। গঙ্গার উৎপত্তি ভারতের উত্তরখণ্ড (উত্তরাঞ্চল) প্রদেশ এর উত্তরে হিমালয়ের পশ্চিমাংশের গঙ্গোত্রি হিমবাহ এর গণুমুখ থেকে। এর পানির উৎস মূলত হিমালয়ের বরফগলন। অনেকগুলো পাহাড়ি নদী এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এর প্রধান পানি-প্রবাহ অলকনন্দের উৎপত্তি নন্দদেবী, ত্রিশূল আর কামিত পর্বতে সৃষ্ট প্রবাহ থেকে। এরপর এই নদী হিমালয়ের প্রায় ২০০ কিমি সংকীর্ণ পাহাড়ি পথ পার হয়ে হরিদ্বারের নিকটে এসে সমভূমিতে পতিত হয়েছে। নিচের মানচিত্রে উৎপত্তিস্থল হতে হরদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার গতিপথ দেখে নিই:


[ছবিটা পরিষ্কার দেখা না গেলে আলাদা করে 'View Image' Option ব্যবহার করে দেখে নিন]

হরিদ্বারের কাছেই রয়েছে ইস্ট-ইন্ডিয়া আমলের বাঁধ যা এই গঙ্গা নদীর অনেকটা পানি সরিয়ে উত্তর প্রদেশের দোয়াবের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আর কম পানি নিয়েই গঙ্গা ধাবিত হয় পূর্বের সমভূমির দিকে। প্রায় ৮০০ কিমি পথ পারি দেওয়ার পর এলাহাবাদের কাছে ত্রিবেনী সঙ্গমে মিলিত হয় গঙ্গা আর যমুনা। এরপর একে একে কোশি, শন, গাঁদাকি, ঘাগরা নদী এর সাথে যুক্ত হয়ে এর প্রবাহকে করেছে আরো বেগবান। এই ধারা ভাগলপুরের রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে দক্ষিণে মোড় নেয়। কিছুপথ পরেই মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে জন্ম হয় এর প্রথম শাখানদী ভাগিরথী-হুহলীর। আর মূল প্রবাহ ফারাক্কা পার হয়ে ধাবিত হয় বাংলাদেশের দিকে। ১৯৭৪ সালে এখানেই বাঁধ নির্মাণ করা হয় মূল প্রবাহ থেকে পানি সরিয়ে হুগলীর দিকে প্রবাহিত করা যাতে কোলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় থাকে।

বাংলাদেশের চাঁপাই-নওয়াবগঞ্জের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রায় ১৪৫ কিমি জুড়ে বাংলাদেশ-ভারত রাজনৈতিক সীমানা নির্দেশ করে। বাংলাদেশে প্রবেশের পরই এর পরিচিতি হলে নদী-কৌশলের কারণে রাজবাড়ির গোয়ালন্দ পর্যন্ত এর নাম গঙ্গা। পথে পাবনার ঈশ্বরদীর কাছে জন্ম হয় দ্বিতীয় শাখানদী গড়াই-মধুমতীর। গোয়ালন্দে এর সাথে মিলিত হয় পুরাতন বহ্মপুত্র যমুনা। মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে চাঁদপুরের নিকট মেঘনায় পতিত হয়।

ফারাক্কার বাঁধ ডেকে আনে বাংলাদেশের বিপদ। তারপরও বছরের পর বছর নানা অজুহাতে ঝুলে রয়েছিল চুক্তি সাক্ষরের। অবশেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাথে ৩০ মেয়াদী একটা চুক্তি করেন যা মন্দের ভাল বলে অভিহিত করা যায়। এর আগে অবশ্য জিয়া সরকারও ৫ বছরের স্বল্প মেয়াদী একটি চুক্তি করতে সমর্থ হয়। ফারাক্কা বাঁধ আর গঙ্গা-পদ্মার পানি নিয়ে দর কষাকষির ইতিহাসকে মূলত ৬ টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

প্রথম পর্যায় (১৯৫১-১৯৭৪)
এই পর্যায়ে আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল বাঁধ নির্মানের আগেই গঙ্গার পানির সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পর বিপরীতে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ গঙ্গার পানির সম্পূর্ন প্রবাহের দাবিতে অটল থাকে। কারণ ফারাক্কার উজানে জলাধারে সঞ্চিত পানিই ভারতের জন্য যথেষ্ট আর এই প্রল্পের মাধ্যমে হুগলিতে পানি পাঠানোর ব্যপারটা ত্রুটিপূর্ণ। অন্যদিকে ভারত দাবি করে যে বাংলাদেশে গঙ্গায় প্রবাহিত পানির সিংহভাগই বঙ্গোপসাগরে অপচয় হয়। ১৯৭২ সালে আন্তঃসীমান্ত নদীসমুহের উন্নয়নের দিককে সামনে রেখে সংযুক্ত নদী কমিশন (জ়েআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৭৪-১৯৭৬)
বাংলাদেশ প্রস্থাব ছিলঃ ভারত বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমান পানিকে উজানের জলাধারে সঞ্চিত করে তা শুস্ক মৌসুমে ব্যাবহার করতে পারে, অন্যদিকে ভারত একটি সংযোগ খালের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র থেকে বিপুল পরিমান পানি গঙ্গায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনাটি ব্যার্থ হয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সাথে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মতৈক্যের ভিত্তিতেই ব্যারেজের কার্যক্রম শুরু হয়। মতৈক্যটি ছিলঃ ভারত বিকল্প খাল দিয়ে ১১,০০০ থেকে ১৬,০০০ কিউসেক পানি গঙ্গা থেকে অপসারন করবে আর বাকি প্রবাহ বাংলাদেশে আসবে। এই পরীক্ষামুলক পানিবন্টন মাত্র ৪১ দিন স্থায়ী হয়। ১৯৭৬ সালে আগের সমঝতার নবায়ন না করে ভারত একতরফা ভাবে গঙ্গার পানি অপসারন করতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়েই ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করে এবং সাধারন পরিষদ এক্ষেত্রে একটি মতৈক্যের বিবৃতি দেওয়া হয়। ফলে ঢাকায় মন্ত্রি-পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন হয়।

তৃতীয় পর্যায় (১৯৭৭-১৯৮২)
মন্ত্রি-পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনার পর ১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে) গঙ্গার পানি প্রবাহ বন্টনের বিষয়ে একটি পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে, ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল এই দশ দিন সময়ের মধ্যে বাংলাদশের জন্য ৩৪,৫০০ কিউসেক এবং ফারাক্কার বিকল্প খাল দিয়ে কলকাতা বন্দরের জন্য ২০,৫০০ কিউসেক পানি বরাদ্দ করা হয়। সেই সাথে চুক্তিতে পানি বন্টনের (১০ দিনের ভিত্তিতে) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী নির্ধারন করা হয় যাতে বাংলাদেশকে চুক্তিতে উল্লেখিত পানি প্রবাহের ন্যুনতম শতকরা ৮০ ভাগ প্রদান নিশ্চিত করা হয়।

চতুর্থ পর্যায় (১৯৮২-১৯৮৮)
১৯৭৭ সালের প্রথম গঙ্গার পানি চুক্তি ১৯৮২ সালের পর আর নবায়ন করা হয়নি, তবে ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালের শুষ্ক মৌসুমের পানি বণ্টনের জন্য ১৯৮২ সালের অক্টোবর মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা-পত্র স্বাক্ষরিত হয়। এতে 'নিশ্চিত ন্যূনতম' প্রবাহের সুযোগ না রেখে বারডেন শেয়ার এর শর্ত রাখা হয়। উভয়পক্ষকেই গঙ্গার পানিবৃদ্ধির বিষয়ে তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবের ফিজিবিলিটি নিরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৯৮৩ সালে উভয়পক্ষ তাদের হালনাগাদ প্রস্তাব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে, কিন্তু আবারও মতপার্থক্যের জন্য কোন গ্রহনযোগ্য সুপারিশ অনুমোদিত হয়নি। ১৯৮২ এর সমঝোতা-পত্রের মেয়াদ ১৯৮৪ সালে শেষ হবার পর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত মতৈক্যে না পৌঁছার ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলতে থাকে। আর সুযোগ নিয়ে ভারত এক তরফা ভাবে পানি সরাতে থাকলেও অস্থায়ী কিছু সমঝোতায় বাংলাদেশ কিছু পানি পায়।

পঞ্চম পর্যায় (১৯৮৮-১৯৯৬)
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে কোন চুক্তি না থাকায় ভারত একতরফাভাবে বাংলাদেশকে কোণ পানি না দিয়েই গঙ্গার পানি বিকল্প পথে হুগলি নদীতে স্থানান্তর করতে থাকে। ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মূল-নদীপ্রবাহ গড়াই-মধুমতী শুস্ক মৌসুমে সম্পুর্নভাবে শুকিয়ে যায়। ভারতের এই একচেটিয়া পানি উত্তোলনের হলে ১৯৯২ সালের মার্চে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে গঙ্গায় ইতিহাসের সর্বনিম্ন প্রবাহ (১২,৫২১ কিউসেক) পরিলক্ষিত হওয়া; কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে গড়ে যা ৭৫,০০০ কিউসেক হবার কথা ছিল। এ পর্যায়ে পানিবণ্টনের জন্য আলোচনা চলতে থাকলেও তা সাফল্যের মুখ দেখেনি।

ষষ্ঠ পর্যায় (১৯৯৬)
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেরই সরকার পরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় পর্যায়ে পানি বন্টনের বিষয়টি পুনরালোচনায় আসে এবং ঐ বছরের ডিসেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ঐতিহসিক গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ১৯৯৭ সালের জানুয়ারী থেকে কার্যকর হয় এবং ত্রিশ বছর পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হবে।

১৯৯৬ এর ঐতিহাসিক গঙ্গা পানিবন্টণ চুক্তি
মূল চুক্তিটি বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনের ওয়েব-সাইটে ইংরেজিতে দেওয়া আছে। দেখতে চাইলে এই লিঙ্কে যান। তবে চুক্তিটির বাংলা সারাংশ করলে দাঁড়ায়ঃ

# চুক্তির প্রথমধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাবে ফারাক্কায় পানির পরিমাণ অনুয়াযী। ফারাক্কায় পানি কম থাকলে বাংলাদেশ কম পাবে আর বেশি থাকলে বেশি পাবে।

# এ চুক্তিটি শুধুমাত্র শুষ্ক মৌসুমের (১ জানুয়ারি - ৩১ মে) জন্য কার্যকর।

# কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য হুগলি নদীতে পানি-প্রবাহের প্রয়োজন ৪০,০০০ কিউসেক। ফলে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৭৫,০০০ এর বেশী হলে ভারত ৪০,০০০ পাবে আর বাকিটা বাংলাদেশ।

# পানি-প্রবাহ ৭০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ কিউসেকের মধ্যে থাকলে ভারত বাংলাদেশকে শুধু ৩৫,০০০ কিউসেক দেওয়া হবে।

# ফারাক্কায় পানি-প্রবাহের ঐতিহাসিক গড় অনুযায়ী মার্চে থেকে মধ্য মে পর্যন্ত প্রবাহ ৭০,০০০ এর কম থাকে। তাই এ সময় পানির বন্টণ হবে ৫০-৫০ অনুপাতে।

চুক্তির দুর্বলতা
# পানি-প্রবাহের পরিমাণ নির্ণয়ে বাংলাদেশকে বোকা বানানো হয়েছে। আর বাংলাদেশও ভারতের দাদাগিরির কাছে না পেরে নাই মামার চেয়ে কানা ভালোর পথে গিয়েছে। চুক্তিতে দেখানো হয়েছে ফারাক্কায় ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত পানির পরিমাণকে। কিন্তু এই ৪০ বছরের ১৪ বছর (১৯৯৭৪-১৯৮৮) বাংলাদেশ পানি কম পেয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর, ২০১০ এ দৈনিক কালেরকণ্ঠের রাজকূটে প্রকাশিত নিচের ছবিদুটো দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।






এটি বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের প্রবাহ চিত্র।

# এখানে ফারাক্কায় পানির পরিমাণ অনুযায়ী যতটা সম্ভব সমতা বিধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ভারত যে উজানে পানি সরিয়ে নিচ্ছে তার কোন প্রকার পরিসংখ্যান চুক্তিতে নেই এবং তা হিসেব নির্ণয়ে বিবেচনা করা হয় নি। জানামতে ভারত গঙ্গায় ফারাক্কা ছাড়াও আরও দুটো বাঁধ/জলাধার নির্মাণ করেছে। এর একটা সালে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি হরদ্বারে গঙ্গা বাঁধ। গুগল আর্থে যা পেলামঃ







আর র‌য়েছে উত্তরখণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় তেহরিতে তেহরি জলাধার।





গঙ্গার প্রাণ বলা যায় এর ন্যতম প্রধান উপনদী কোশিকে। ভারত এই কোশী নদী ও এর উপনদীগুলো থেকে ইচ্ছেমত পানি সরিয়ে নিচ্ছে।







এছাড়াও পেলামঃ












# চুক্তির ARTICLE-II এর (ii) ধারায় বলা হয়েছেঃ
The indicative schedule at Annexure II, as referred to in sub para (i) above, is based on 40 years (1949-1988) 10 day period average availability of water at Farakka. Every effort would made by the upper riparian to protect flows of water at Farakka as in the 40-years average availability as mentioned above

কিন্তু এই 'Every effort' এর মানেটা যে কী হবে তা সংজ্ঞায়িত নয়। এবং ভারত দাদাগিরি ফলিয়ে এই সুযোগের অপব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক মহলে ফারাক্কার উজানে মাত্র দুটো বাঁধ/জলাধার এর কথা বলা হলেও; আমি গুগল আর্থ দিয়ে খুঁজে বিহারে এটা পেলাম। তবে ব্যাপারটা পরিষ্কার নাহলেও গঙ্গা থেকে পানি সরিয়ে নেবার ছবি বলেই মনে হচ্ছে।







এছাড়াও গঙ্গার অন্যান্য উপনদীগুলো থেকে নতুন করে পানি সরিয়ে নেবার প্রকল্প চলছে। আর এটা সরাসরি এই চুক্তির লঙ্গন। এই প্রচেষ্টার প্রমাণ মিলবে নিচের লিঙ্ক দুটোতে গেলেইঃ

কর্ণালি নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

গাঁদাকি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প


# চুক্তির ARTICLE-XI এ বলা হয়েছেঃ
For the period of this Treaty, in the absence of mutual agreement of adjustments following reviews as mentioned in Article X, India shall release downstream of Farakka Barrage, water at a rate not less than 90% (ninety per cent) of Bangladesh's share according to the formula referred to in Article II, until such time as mutually agreed flows are decided upon.

অর্থাৎ কোন কারণে ভারত আমাদের চুক্তি অনুযায়ী পানি দিতে না পারলে তারা অন্তত এর ৯০ শতাংশ দিবে। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেল যে ভারত একে আমাদের পানি দিবে না তার মাঝে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতন ১০ ভাগ কমিয়ে দিবে। এই না বলে দাদাগিরি!!

চুক্তি ঝুলে থাকার কারণ ও আমার প্রুস্তাবনা

বাংলাদেশ আর ভারতের গঙ্গা পানি বণ্টন বছরের পর বছর ঝুলে ছিল ভারতের একগুঁয়েমির কারণে। ভারত বারবার বলে আসছিল যে বাংলাদেশ যেন ব্রহ্মপুত্র তথা যমুনা থেকে খাল কেটে গঙ্গা(পদ্মা) তে পানি আনার বিকল্প ব্যবস্থা করে নেয়। আমাদের দেশের বোকা কিছু মানুষ ভারতের এই অপপ্রচেষ্টার মানে না বুঝলেও আমি কেন যেন বুঝতে পারছি। কারণ ভারত জানে যে গঙ্গার পানির উৎস তাদের হাতে হওয়াতে এখানে অন্যকারো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না আর অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের নিয়ন্ত্রণ মূলত চীনের হাতে (সিরিজের পরের কোন পোস্টে আলোচনা করবো)। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল ভারত চাইলেই অন্য কোন নদী থেকেও পানি এনে হুগলিতে স্থানান্তর করতে পারে। যেমন দামোদর থেকে সেটা করা খুবই সম্ভব।

ভারতের প্রস্তাবনার রূপটি ছবিতে দাঁড়ায়ঃ



ভারতের ফারাক্কা বাঁধ এর মূল যুক্তি কোলকাতা পোর্টের নাব্যতা বজায় রাখা। তাই সাপও মরে না লাঠিও ভাঙে না এমনভাবে একটা বিকপ্ল চিন্তা করলাম। কিন্তু এতে বাংলাদেশকে এগিয়ে আসতে হবে এবং বাংলাদেশকে টাকা খরচ করতে হবে নিজ দেশ বাঁচানোর স্বার্থে বাঁধ তৈরি করতে। আমার বিকল্প প্রস্তাবনা নিম্নরূপঃ



এর চাইতেও উত্তম প্রস্তাব হয় যাতে ভারতেরই যা করার করতে হবে। আমরা শুধু আমাদের গঙ্গা-পদ্মার প্রবাহ ফিরে পাব। দামোদর নদীতে পানির পরিমাণ ভালো। ভারতের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশে তো গরাইয়ের পানি বঙ্গোপসাগরে অপচয় হয়। তেমনি সমদ্রের কাছাকাছে চলে যাবার পর দামোদর এর পানিও অপচয় হয়। এই পানিই যদি হুগলি নদীতে নেওয়া হয় তো ভারত ও আমরা উভয়েই বেঁচে যাবো। নিচের ছবিটা দেখুনঃ



ভারতের দাদাগিরি শুধু বাংলাদেশের ও এরকম কম শক্তিশালী দেশের সাথেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে না ভারত ছলে,বলে, কৌশলে কিংবা প্রচ্ছন্ন হুমকিতে আমাদেরকে জাতিসঙ্ঘে যাওয়া হতে বিরত রেখেছে। কিন্তু পাকিস্তানের সাথে পারে নি। গঙ্গার পূর্বমূখী প্রবাহে বাঁধ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের কড়া বাঁধার মুখে পড়েছে। কারণ এতর ফলে ভারতে উৎপন্ন পাকিস্তানমুখী নদীসমূহে পানি কমে যাবে। পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘে নালিশ করেছে। তাই ভারতের কাজ আপাতত বন্ধ। খবর এখানে