আমি এক ছাইওয়ালী,
ঘরে ঘরে ছাই বেঁচি।
বস্তাটা কাঁধে নিয়ে পথে পথে হাঁটি,
আর সুর করে হাঁকি,
'ছাই নিবেন ছাই...
সাদা ছাই...
কালো ছাই...
ছাই নিবেন ছাই...'
বড়লোক এলাকাতে যাই না আর,
ওদের ভিম আছে, লাগে না ছাই!
গরিব এলাকার সরু গলি ধরে হাঁটি,
আর সুর করে হাঁকি,
'ছাই নিবেন ছাই...
সাদা ছাই...
কালো ছাই...
ছাই নিবেন ছাই...'
কোন এক লোক এসে দেয় রাম-ঝাড়ি,
'চিল্লানোর জায়গা পাওনা বেটি?
আমার ঘুম হল মাটি...
কোন এক ঘরের ছোট্ট খোকা,
ফেলে আমার গায়ে জল।
জল ফেলে কী যে খুশি!
কোন এক খুকি ভেংচি কাটে,
কেউ বা গলা ছাড়ে আমার সুরে,
'ছাই নিবেন ছাই...'
কোন এক বুড়ো মা একটু চ্যাঁচায়,
'এদে শোর পারে কিডা?'
রোদ বাড়ে আমি পুড়ি,
বৃষ্টি পড়ে আমি ভিজি,
শীত আসে আমি কাঁপি,
আমার দিন চলে যায়।
আমি হেঁটে চলি সরু গলি ধরে,
কেউ ডাকে কিনা দেখি চারদিকে।
কেউ চাইলে বেঁচিঃ
সাদা ছাই!
কালো ছাই!
পাঁচ টাকায় দশ পট!
ঐ বেঁচে ফিরি বাড়ি,
বুড়ো বাবা-মা ঘরে।
আমার ছাই-বেঁচা টাকায়
চাল কিনলে পরে খাওয়া হবে,
নয়তো তিনজনেই শুয়ে রবো অনাহারে।
রাতটা ছুটে চলে শুভড্যা বস্তিতে।
সবার ঘরে জ্বলে আলো,
জীবনে লাগে রঙ...
আমার অন্ধকারে দু'টো রঙ -
সাদা ছাই, কালো ছাই।
আমি ছাই ওড়াই,
কোন রতন আর পাওয়া হয় না।
ঐ ছাইই আমার রতন, আমার বন্ধু,
হয়তো বা মরণের সাথী!
মরণের দিনটাতেও হাঁটবো পথে,
আর হাঁকবো সুরে,
'ছাই নিবেন ছাই...
সাদা ছাই...
কালো ছাই...
ছাই নিবেন ছাই...'
২৭ আগস্ট, ২০১২
দেবাশিস্ মুখার্জি