মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১২

এলোমেলো কথাগুলো

এলোমেলো কথাগুলো



রাত বেড়ে চলে শীতের বাতাসে,
ঘুমঘোরে সব, কিংবা মশানের শব...
কেউ কেউ জেগে রয় ঘুমহীন চোখ...
বুকে একরাশ যন্ত্রণা আর এক মুঠো ভালোবাসা।
নবাগত আলোর লড়াই,
আবছা কালো দীর্ঘ অতীত...
প্রেমিকার বুকেও কেউ একা,
সংসারে থেকেও কেউ রয় বৈরাগ্যে...
চার দেয়ালের মাঝে আকাশটা ঝোলে সিলিঙের কোণে...
নিদ্রালু চোখ, ধোঁয়া ধোঁয়া সব...
মৃত্যুকে পিছে রেখে ছুটে চলে জীয়ন-লড়াই...
এক বুকে কত বাতি জ্বলে!
সব নিভু নিভু, জ্বলজ্বলে জ্যোতি...


দেবাশিস্‌ মুখার্জি
২১ ডিসেম্বর, ২০১২

শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১২

ছবির ফ্রেম

ছবির ফ্রেম

হাঁটুর 'পরে রেখেছো হাত,
আর তার 'পরে থুতনিটা,
তুমি বসে আছো...
রক্তলাল কামিজে নিরাভরণ তুমি!
কপালের মাঝে লাল টুকটুকে টিপ...
কাঁধ-ছোঁয়া চুল ওড়াউড়ি করে
মৃদুমন্দ বাতাসে...

শুধু চুলগুলো ওড়ে, আর বাকি সব নীথর!
উড্ডীয়মান প্রজাপতি কিংবা দোদুল্যমান পল্লব
সব যেন থেমে আছে এক ছবির ফ্রেমে,
আর সময়ের চোরা স্রোতে বন্দী আমি!

মনকাড়া ডাগর চাউনি, কী গভীর তার ভাষা!
প্রেম-জ্যোতি মাখা চোখে যতটা গভীরে গেলে হয় সর্বনাশ,
আমি ঠিক ততটা গভীরেই গেলাম,
নাহ আরো গভীরে হারালাম আমি...

সময় ছুটে চলে আমি আটকে পড়ে রই,
আমার রাস্তা হাঁটে আমি হাঁটি না...
নীথর দাঁড়িয়ে রই ঐ আঁখিপানে,
কী এক গভীর আবাহনে আমি দাঁড়িয়েই রই...
দাঁড়িয়েই রই... দাঁড়িয়েই রই...
সব যেন এক ছবির ফ্রেম!


দেবাশিস্‌ মুখার্জি
১ নভেম্বর, ২০১২

মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১২

দ্বাদশপদী কবিতা - ৫

জ্যোতি
মঞ্জুল চোখেতে কৌমুদী-প্রপাত,
আবার কখনো অন্ধকার রা্ত,
কখনো বা ঝরে সঘন বরষা;
হয়েছে সে নিধি নিবেদ্য সহসা।
প্রেমের কাঙাল অধম এ কবি
একে একে আঁকে স্বপ্ন-কল্প ছবি।
প্রেমহীন হৃদে নব প্রেমারতিঃ
সুহাসিনী শ্যামা সুনয়না জ্যোতি।
হৃদয়-মাঝারে সুমন্দ-অনিল।
অনিকেত আমি। হবে দোঁহে মিল??
ছুটে চলে ধরা, কাল্‌-স্রোত বয়;
এই প্রেম-সুধা অজর-অক্ষয়।

২৭ অক্টোবর, ২০১২; ঢাকা
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ

দ্বাদশপদী কবিতা -৪
দ্বাদশপদী কবিতা - ৩
দ্বাদশপদী কবিতা - ২
দ্বাদশপদী কবিতা - ১

রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১২

জাস্ট অ্যানাদার ডে...

যখন মনের ভেতর সূর্যটা হটাৎ ডুবে যায়,
যখন আশা ভরসা সব রাস্তা হারায়।
যখন ভর দুপুরে পথের ধারে একলা করে ভয়,
যখন বাসের ভিড়ে গলার ভিতর কান্না চাপতে হয়।
জেনো তোমার মতই আমি ঠাকরে বেড়াই
জেনো তোমার মত আমার বন্ধু একটা চাই।
যেমন মাঝ দরিয়ার নৌকো ফিরে আসে কিনারায়,
ওরে মানুষ যথন আছে তখন হাত জুটে যায়।
শেষ বলে কিছু নেই...শেষ বলে কিছু নেই...
শেষ যেখানে, জেনো শুরু সেখানে...

[শেষ বলে কিছু নেই - অঞ্জন দত্ত]

দেখতে দেখতে দিন চলে যায়। কিছু মানুষ পুরোনো হয়ে যায়, নতুন্ কিছু মানুষ চলে আসে সেই জায়গাটা পূরণ করতে। মানুষ একা থাকে না, কেউ না কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে পুরনোদের স্মৃতি ভোলা যায় না, মনের কোণে কখনো না কখনো নাড়া দেয়। এভাবেই দিন চলে যায়, অথবা চালিয়ে নিতে হয়। মানুষ যা চায় তা খুব কম সময়েই সম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মানুষকে নতুন অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়, নয়তো সে আর টিকে থাকতে পারে না।

কিছুক্ষণ পরই তারিখটা বদলে যাবে, চলে আসবে একটা কালো দিন। ১৯৮৫ এর এই দিনে জগন্নাথ হলের ছাদ ধ্বসে কিছু মেধাবী ছাত্র হারিয়ে গেছেন সময়ের অতল গহ্বরে। জানি, মৃত্যুর সাথে-সাথেই সব শেষ। তারপরও কখনো ভাবতে ইচ্ছে করে অন্যকোন জগতে তারা আছে্ন। সেই মানুষদের জন্য রইলো অনেক শ্রদ্ধা।



মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১২

চুম্বন...

চুম্বন...


মাঝ রাত্তিরে আঁধারের খেলা,
ঘাসের চাদরে আয়েশি ভঙিতে শুয়ে জোছনা,
হাজার জোনাই তারে চুম্বন করে।
সারারাত ধরে চলে সোম-বসুধার সঙ্গম-কলা,
বাতাসে শিস্‌ দেয় অবৈধ প্রেমের কামজ শিৎকার।
শেষ প্রহরে উত্তূঙ্গ মুহূর্তে ঘটে স্বামী রবির আগমন,
বিছানা ছেড়ে ভাগে বসুধা-নাগর সোম।


দেবাশিস্‌ মুখার্জি

৯ অক্টোবর, ২০১২

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

প্রেম-জ্যোতি

প্রেম-জ্যোতি 

চোখ-জোড়া বড়-বড়, 
ভ্রূ-জোড়া মোটা, 
ঠোঁটে এক তিল। 
স্মিত হাসি হাসে, সে যে 
মোহনমূর্তি, 
কেড়ে নেয় দিল।। 

মেঘ ঢেকেছে আকাশ, 
সুমন্দ বায়ু, 
কাঁধে খেলে চুল। 
হেলে-দুলে হেঁটে যায়; 
বাতাসে দোলে 
লতিকার দুল।। 

স্বপন দেশের মেয়ে 
দেয় না ধরা; 
সদা দূরে থাকে। 
হৃদয়ের মাঝখানে 
দেয় সে দোলা, 
প্রেম-ছবি আঁকে।। 

দিবস-রজনী যায়, 
কাটে না ঘোর; 
সদা তারে ভাবি। 
মনমাঝে দিয়ে তালা 
গেলোরে চলে 
সাথে নিয়ে চাবি।। 

থাকি পড়ে তারি আশে 
যদি বা আসে 
হৃদয় প্রসর। 
বেঁধে রেখে দেবো তারে 
আমার করে; 
আমার প্রবর! 


দেবাশিস্‌ মুখার্জি 
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২ 

**[অক্ষরবৃত্ত; মাত্রা ৮/৫/৬]

রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কবি আর কিছু কবিতার কথা

কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের আবেগে প্রভাব রাখা, কখনো প্রেম জাগানো, কখনো বিরহে শান্তির পরশ বুলানো, কখনো যুদ্ধের ডাক, বিদ্রোহী গানের সুর তুলে আন্দোলিত করা। অনেকেই কবিতা লেখবার চেষ্টা করেন, নিজেকে কবি ভাববার চেষ্টা করেন; কেউ পারেন, কেউ পারেন না। তবে তাঁকেই কবি বলা উচিত যিনি তাঁর অমর লেখনী দিয়ে মানুষের আবেগকে তুলে ধরতে পারেন, এবং পারেন সে আবেগ নিয়ে খেলতে।

মানুষের জীবনে ‘হতাশা’ শব্দটা খুবই স্বাভাবিক। আমিও নানা কারণে কখনো কখনো হতাশাগ্রস্ত হই। তবে একটা কবিতা আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে খুব সাহায্য করে –


কারোর বিরুদ্ধে তুমি কোরো না নালিশ কখনোই,
কোন কিছুকেই দায়ী কোরো না কখনো;
কারণ জীবনে তুমি যা চেয়েছো
তাই তুমি করেছো মূলত।

মেনে নাও নির্মাণের অন্তরায় আর
নিজেকে শোধরানোর শুরুর সাহস।
ভুলের ভস্ম থেকে উঠে আসে প্রকৃত
মানুষের সফলতা।

কখনো কোরো না দায়ী নিয়তি ও একাকিত্বকে
মোকাবিলা করো সব সাহসের সঙ্গে।
যেকোনভাবেই হোক – এ তোমারই কাজের ফসল,
তুলে ধরো নিয়ত জয়ের লক্ষণ।

নিজের ব্যর্থতায় তিক্ত হোয়ো না আর,
অন্যের কাঁধে তাকে দিয়ো না চাপিয়ে,
এই বেলা মেনে নাও কিংবা শিশুর মতো
ভাববে তুমি নিজেকে সঠিক।

যেকোন সময়ই, শোনো, সুসময় সূচনা করার।
ভন্ডুলের জন্য এত ভয়ানক আর কিছু নেই।
ভুলো না, তোমার এই মুহূর্তের কারণটি তোমারই অতীত
যেমন তোমার ভবিতব্যের কার্যকরণ
হবে এ মুহূর্ত তোমার।

শেষ শক্তি এবং সাহস
মেনে যে নেবে না পরিস্থিতিকে;
বেঁচে রও উজানে ও তোমার নিজের
মসিবত নিয়ে ভাবো কম আর কাজ করো বেশি।
তোমার সমস্যাগুলো এমনিই ঝরে পড়ে যাবে।

বেদনার মধ্য থেকে জন্ম নিতে শেখো
বাধার চেয়েও বেশি বড় হয়ে ওঠো।
নিজের দর্পণে দেখো নিজেকে এবং
মুক্ত হও, বলবান হও;
হোয়ো না পুতুল তুমি পরিস্থিতির
কেননা নিজেই তুমি নিজের নিয়তি।

ওঠো, দেখো প্রত্যূষের সূর্যের দিকে
ভোরের আলোয় নেও শ্বাস।
তোমার জিন্দেগিরই অংশ তুমি;
চোখ খোলো, যুদ্ধ করো, হাঁটো আর ঠিক করো নিশানা তোমার;
জয় করো জীবনকে, নিয়তির কথা তুমি ভেবো না কখনো
কেননা নিয়তি হলঃ
ব্যর্থতারই অজুহাত। [১]


এটি কোন মৌলিক কবিতা না, এটি স্প্যানিস থেকে বাংলায় অনূদিত। অনুবাদকের নাম রাজু আলাউদ্দিন আর মূল কবির নাম রিকার্দো এলিয়েসার নেফতালি রেইয়েস বাসোয়ালতো। অনেকেই কবিকে এই নামে চেনেন না, চেনেন অন্য একটা নামে – পাবলো নেরুদা। পাবলো নেরুদা কবির ছদ্মনাম। উনিশ শতকের চেক কবি জান নেপোমুক নেরুদা থেকে নেরুদা নামটা নিয়েছিলেন নিজের করে। আর ধারণা করা হয় নামের ‘পাবলো’ অংশটুকু ফরাসি কবি পল ভের্লেন থেকে নেওয়া। তৎকালীন সময়ে ছদ্মনাম নেওয়ার রীতিটা বেশ জনপ্রিয় ছিলো আর তিনি তাঁর কবিতাগুলো নিজের বাবার চোখ হতে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। আমরা পরবর্তীতে দেখেছি যার থেকে নেরুদা নামটা নেওয়া তার থেকে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থেকেছেন পাবলো আর এই নেরুদা নামটাকে নিজের আর বিশ্বের অন্যতম সেরা কবির সমার্থক করে তুলেছেন যার প্রমাণ মেলে কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কোয়েজ এর বয়ানে –


the greatest poet of the 20th century in any language[২]




১৯০৪ সালের ১২ জুলাই চিলির পাররাল নামক ছোট্ট শহরে এক রেল-শ্রমিক পরিবারে জন্ম হয় পাবলো নেরুদার। শিক্ষিকা মাকে হারিয়েছেন শৈশবেই, আর বাবা আবার বিয়ে করেছেন। শৈশবের কিছুটা কাটিয়েছেন টিমুকো শহরে বাবার সাথেই যেখানে পরিচয় হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং কবি গ্যাব্রিয়েল মিস্ত্রালের সাথে যিনি ছিলেন পাবলোর শুরুর অনুপ্রেরণা। ১৯২১ সালে চলে আসেন সান্তিয়াগোতে। সেই সময়ে, যখন ল্যাটিন আমেরিকা মহাদেশ ইয়োরোপীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রের নব-নিরীক্ষার ঢেউয়ে উত্তাল আর স্যুরিয়ালিজম, দাদাবাদ ও কিউবিজমের উদ্ভাবনী উত্তেজনায় শিল্পাঙ্গণ চঞ্চল, নেরুদার কাব্য চর্চায় হাতে খড়ি হয়। তিনি ছিলেন ফরাসী কবিত্রয় বোদলেয়ার-র‍্যাঁবো-ভের্লেনে অনুরক্ত।

১৯২৩ সালে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘Crepuscularin (Book of Twilights)’ বা ‘গোধূলির কথা’ যা আপাতভাবে খুব একটা জনপ্রিয়তা পায় নি। পরের বছর ছোট্ট একটা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় যার নাম 'Veinte poemas de amor y una canción desesperada (Twenty Love Poems and a Song of Despair)' বা ‘কুড়িটি প্রেমের কবিতা আর একটা হতাশার গান’ যা ছিলো স্প্যানিশ ক্যাবসুধায় নতুন কিন্তু চমকসুলভ বাঁক। এই কাব্যগ্রন্থটিতে ছিলো পরাবাস্তব জগতের আলো-আঁধারের খেলা, প্রকৃতির সজীব উপস্থাপনা। জীবনপ্রেমের বলিষ্ঠতার কারণে নেরুদার লেখনী বিশেষ হয়ে ধরা দেয়।

‘মর্ত্যের অধিবাসী’ নামের তিন পর্বের পরবর্তী কাব্যগ্রন্থে পাবলো অধিক দক্ষতার পরিচয় দেন, যেখানে উন্মোচিত হয়েছে জটিল ও আবেগময় ভাবের গ্রন্থি। ঘোর বুর্জোয়া বিরোধী সুরিয়্যালিজম স্পষ্ট চোখে ধরা দেয় এই কাব্যগ্রন্থে। এই কাব্যগ্রন্থে দুই বিদেশি কবির প্রভাব ছিলো স্পষ্টতই – সোভিয়েত কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি এবং মার্কিন কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান। এখানে ‘কাঠুরেরা জেগে থাকুক’ শীর্ষক কবিতায় হুইটম্যানকে সম্বোধন করে বলেছেন,


তুমি আমাকে দাও তোমার উদাত্ত কণ্ঠ,
তোমার ঘুমন্ত হৃদয়ের অসীম শক্তি,
দাও আমাকে তোমার গাছে শিকড়ের মতো উচ্ছ্বসিত মুখাবয়ব
যেন আমার কণ্ঠ গেয়ে উঠতে পারে পুনরুজ্জীবনের গান। [৩]


১৯২৭ থেকে ১৯৩৫ পর্যন্ত সরকারের হয়ে দূতিয়ালি করেছেন তৎকালীন বার্মা, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও আর্জেন্টিনায়। ১৯২৭ এ রেঙ্গুনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সাথে নেরুদার সাক্ষাৎ ঘটে। কবিগুরুর রচনার প্রভাব নেরুদার মাঝে পরিলক্ষিত হয়েছে। পূর্বে প্রকাশিত ‘কুড়িটি প্রেমের কবিতা’র একটা ছিলো কবিগুরুর গানের অনুবাদ।



তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা,
মম শূন্য গগণ বিহারী।
আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে, তোমারে করেছি রচনা –
তুমি আমারি তুমি আমারি ,
মম অসীমগগণবিহারী।

মম হৃদয় রক্তরাগে তব চরণ দিয়েছি রাঙিয়া
অয়ি সন্ধ্যাস্বপনবিহারী।
তব অধর এঁকেছি সুধাবিষেমিশে মম সূখ দুখ ভাঙিয়া –
তুমি আমারি তুমি আমারি,
মম বিজনজীবনবিহারী।

মম মোহের স্বপন-অঞ্জন তব নয়নে দিয়েছি পরায়ে,
অয়ি মুগ্ধ নয়ন বিহারী।
মম সঙ্গীত তব অঙ্গে অঙ্গে দিয়েছি জড়ায়ে জড়ায়ে,
তুমি আমারি, তুমি আমারি,
মম জীবন মরণ বিহারী।[৪]

My Sky At Twilight

In my sky at twilight you are like a cloud
and your form and colour are the way I love them.
You are mine, mine, woman with sweet lips
and in your life my infinite dreams live.

The lamp of my soul dyes your feet,
the sour wine is sweeter on your lips,
oh reaper of my evening song,
how solitary dreams believe you to be mine!

You are mine, mine, I go shouting it to the afternoon's
wind, and the wind hauls on my widowed voice.
Huntress of the depth of my eyes, your plunder
stills your nocturnal regard as though it were water.

You are taken in the net of my music, my love,
and my nets of music are wide as the sky.
My soul is born on the shore of your eyes of mourning.
In your eyes of mourning the land of dreams begin.


নেরুদার কবি জীবনের বড় ধরনের মোড় পরিবর্তন ঘটে ১৯৩৬ দিকে স্পেনে থাকা অবস্থায়, যখন তাঁকে স্পেনে চিলির রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়। খ্যাতির মধ্যগগণে থাকা কবি তাঁর মাদ্রিদের কন্সাল ভবনে প্রায়ই জমায়েত হতেন ফেদেরিকো গার্থিয়া লোর্কা, রাফায়েল আলবের্তী, গঞ্জালেস তুনোন এর সাথে।

হিটলার-মুসোলিনীর আশির্বাদে ফ্র্যাঙ্কো-ফ্যাশিবাদ মাথাচাড়া দেয় স্পেনে, আর ‘অন্যের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে নাক গলানো অনুচিত’ নীতিতে মুখ আড়াল করে ফ্রান্স ও বৃটেন সরকার। জনগণ এই ফ্যাশিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে, সাথে থাকেন শিল্প ও সাহিত্য জগতের মহারথীরা – এলুয়ার, আরাগঁ, মালরো, পিকাসো, অডেন, স্পেন্ডার, ডেলুইস, সেকুইরোজ, হে্মিংওয়ে, ডস প্যাসোস, এহরেনবুর্গ, সী্মোনভ প্র্মুখ। ফ্রাঙ্কোর ফ্যাশিবাদের প্রথম শিকার হন গীতিকাব্যের সম্রাট ফেদেরিকো গার্থিকা লোর্কা, কারাগারে পাশবিক নির্যাতনে প্রাণ হারান ‘কাব্যের নীল অগ্নিশিখা’ মিগুয়েল হারনানদেজ, যুদ্ধের ধকল সইতে না পেরে প্রয়াত হন কবি সীজার ভালেথো।

প্রিয় সঙ্গীদের হারানোর বেদনা, সাধারণের উপর ফ্যাশিবাদের রোলার চালানোর দৃশ্য কবির হৃদয়ে জ্বালিয়ে দেয় দ্রোহের আগুন। পিকাসোর ‘গোয়ের্নিকা’, হেমিংওয়ের ‘ফর হুম দ্যা বেল টোল্‌স্‌’, ম্যালরোর ‘মানুষের আশা’র মতো করে নেরুদার হাত ধরে জন্ম নিলো আরেক মহৎ শৈল্পিক দলিল ‘Tercera Residencia’, এক ক্ষোভের উদগিরণ যার একটা অংশ ‘I Explain A Few Things’ কবিতা –


You will ask: ‘And where are the lilacs?
And the metaphysics covered with poppies?
And the rain that often beat down
filling its words
with holes and birds.’

To you I am going to tell all that happened to me.

I lived in a quarter
in Madrid, with bells
with clocks, with trees.

From there could be seen
the dry face of Castille
like a sea of leather.
                              My house was named
the house of the flowers, because everywhere
geraniums exploded: it was
a beautiful house
with dogs and little children.
                                             Raúl, you agree?
You agree, Rafael?
                                     Federico, you agree
beneath the earth,
you agree about my house with balconies where
the light of June drowned flowers in your mouth?
                                                                             Brother, brother!

All
was loud voices, salt of wares,
agglomerations of pulsating bread,
the markets of my quarter of Argüelles with its statue
like a pallid inkwell amongst the hake:
the olive oil flowed into spoons
a deep pounding
of feet and hands filled the streets,
metres, litres, sharp
essence of life,
                       stacked fish,
the build of roofs with a cold sun on which
the weathervane tires,
the fine frenzied ivory of potatoes,
tomatoes multiplied down to the sea.

And one morning all of that burned
and one morning the bonfires
leapt from the earth
devouring beings,
and from that moment fire
gunpowder from that moment,
and from that moment blood.
Thugs with planes, and the Moors,
thugs with signet rings, and duchesses,
thugs with black friars blessing
came through the sky to slaughter children,
and through the streets the blood of the children
flowed easily, like the blood of children.

Jackals that the jackal would drive away,
stones that the dry thistle would bite and spit out,
vipers that the vipers would hate!

Opposed to you I have seen the blood
of Spain rise up
to drown you, in a single wave
of pride and knives!
Generals
traitors:
consider my dead house,
consider Spain, broken:
but from every dead house burning metal flows
in place of flowers,
but from every hollow of Spain
Spain rises,
but from every dead child rises a gun with eyes,
but from every crime are born bullets
that will find you one day in the house
of the heart.

You will ask why his poetry
has nothing of the earth, of the leaves,
of the grand volcanoes of his native country?

Come and see the blood through the streets,
come and see

the blood through the streets,
come and see the blood
through the streets!


(কবিতাটার অংশবিশেষ তুলে দিলে ঘটনাটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হবে, তাই পুরোটাই দিলাম।)

কবি ১৯৪৩ এ চিলি ফিরে আসেন এবং ফিরে এসেই দেশভ্রমণ শুরু করেন। ইনকা সভ্যতা ঘুরে এসে লেখেন বিখ্যাত কবিতা ‘Alturas de Macchu Picchu’ বা ‘মাৎশু পিক্সৎশুর শিখরে’ এবং ১৯৪৫ সালে লেখেন ‘Canto General’  যাতে তাঁর শৈল্পিক দক্ষতায় এক বিন্দুতে এনে মিলিয়েছেন রাজনীতি আর কবিতাকে।

১৯৪৫ এর ১৫ জুলাই নেরুদা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁর মধ্যে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে। স্যুরিয়ালস্টিক কবি দীক্ষিত হন মার্ক্সবাদে। স্যুরিয়ালিজমের আদিপিতা ত্রিস্তান জারা, দুই প্রধান প্রবক্তা পল এলুয়ার ও লুই আরাগঁ এর পূর্বেই সাম্যবাদকে জীবনের দর্শণ করে নেন। ঠিক স্যুরিয়ালিস্টিক না হলেও পিকাসোকে তাঁদের সাথের মানুষই বলা যায়। সবার ভাবধার সাধারণ ব্যাপার ছিলো – ধনতান্ত্রিক সমাজকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান।

১৯৪৮ এ চিলিতে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে আশ্রয় হয় প্রবাসে যার শুরুর তিন বছর কাটিয়েছেন আর্জেন্টিনায়, পরে মেক্সিকো সহ বিভিন্ন স্থানে। ১৯৫০ এর জানুয়ারিতে আর্জেন্টিনার ‘লা হোরা’ পত্রিকায় পাবলো নেরুদার একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশ পায় যা তাঁর রাজনৈতিক দর্শণকে বুঝতে সাহায্য করবে। ঐ সাক্ষাৎকারে ‘আপনার রাজনৈতিক কার্যকাপের মূল কারণ কী’ প্রশ্নের যে উত্তর দেন তার চুম্বক অংশ তুলে ধরলামঃ


‘আমার সাহিত্যসৃষ্টিতে এক অচলাবস্থায় পৌঁছে আমি বেরোবার প্রকৃষ্ট পথ খুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম; দুঃখের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যেই সে পথ আমি খুঁজে পেয়েছি। আধ্যাত্ববাদ বা ধর্মের ভাষায় যাকে দুঃখ বলা হয় এটা তেমন কোন দুঃখ নয়। যে সামাজিক অন্যায়ের অপরাধে মানুষ নিজেই অপরধী, এটা হল তারই ফল। এই পথ এবং সংগ্রামই আমার নিকট সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হলো। ...... ...... ...... শিল্পের জন্যেই শিল্প – বড় ব্যবসায়ীদের এই মত প্রচার করা হয়। তিয়োফিল গোতিয়ে ধনী ব্যবসায়ী ও শোষকের আদর্শের গুণকীর্তন করেছেন। লেখকেরাও যে এই মত গ্রহণ করেছিলেন সেটা হল উঠতি ধনতন্ত্রের পক্ষে জয়। আর্তুর র‍্যাঁবোর মতো বড় বিদ্রোহীর ইথিওপিয়ায় পলায়ন হল শার্লভিলের মাংসব্যবসায়ীদের অবিসংবাদিত জয়। ...... ...... ......’ [৫]


নেরুদা ১৯৫০ সালে পেয়েছেন বিশ্বশান্তি পুরস্কার এবং ১৯৫৩ সালে পেয়েছেন লেনিন পুরস্কার। ১৯৭০ এ সেরার স্বীকৃতি মিলেছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের মধ্য দিয়ে।

নেরুদা ১৯৬৯ সাল কাটিয়েছেন আইলা নেগ্রা অন্তরীপের যেখানে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রকৃতির খেলা। এই নিয়ে আত্মজীবনীতে বলেছেন –


‘আমি প্রায় পুরো ১৯৬৯ সালটা আইলা নেগ্রা অন্তরীপে কাটালাম। সকালে জোয়ার উঠতো ভীষণ ফুলে-ফেঁপে, যেন আদি-অন্তহীন বিশাল এক তাল ময়দা কেউ পিষছে। তার মাথায় ভেসে-আসা ফেনাকে মনে হ’ত হিম-শীতল পাতালের মথিত গাঁজলার ওপর ছড়ানো ময়দার গুঁড়ো। ...... ...... ’ [৬]

সত্তরের  দশকের চিলি হয়ে উঠেছিলো এক সংঘাতপূর্ণ স্থান যেখানে লড়াই ছিলো সাধারণ আর মার্কিনী ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার। ১৯৭০ এর নির্বাচনের জন্য নভেম্বরে সোশ্যালিস্ট-কমিউনিস্ট ও অপরাপর সমমনা দলগুলোর একটা জোট করা হয়। অন্যেরা তাদের প্রার্থী ঠিক করতে না পারায় কমিউনিস্ট পার্টি নেরুদাকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়। নেরুদা শুরুতে রাজি না হলেও পরে এই শর্তে রাজি হন যে অন্য দল ভালো কোন প্রার্থী দাঁড় করালে তিনি সরে দাঁড়াবেন এবং তা তার দলকে মেনে নিতে হবে। পরে সালভাদোর আলেন্দেকে প্রার্থী করা হলে নেরুদা সরে দাঁড়ান এবং সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় বিশাল জনসভায় আলেন্দেকে তুলে ধরেন এবং পুরো নির্বাচনী প্রচারণার আলেন্দের হয়ে কাজ করেন।

আলেন্দে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তিনিই হন চিলির প্রথম প্রেসিডেন্ট যাকে শ্রমিক-জনতা ভালোবেসে ‘কমরেড প্রেসিডেন্ট’ নামে অভিহিত করতো। আলেন্দে এসেই জাতীয় সম্পদ তামা সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে ছিনিয়ে জনগণের হাতে তুলে দেন, সাম্রাজ্যবাদকে হটাতে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু মার্কিনী মদদপুষ্ট ধনতান্ত্রিক সমাজ একটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সূচনা করে যার নমুনা – বিশ্ববাজারে চিলির তামা বয়কট, কৌশলে আন্তর্জাতিক বাজারে তামার অবিশ্বাস্য দরপতন ঘটানো, প্রতিশ্রুত সকল ঋণ বাতিল করা ও পুরোনো দায় শোধের জন্য চাপ প্রয়োগ, ভারাটে গুন্ডাদের দিয়ে চিলিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি। এসবের চরম পরিণতি ঘটে সাম্রাজ্যবাদীদের অবৈধভাবে চিলিকে গৃহযুদ্ধসম অভ্যুত্থান জ্যাক-লন্ডনীয় ‘লৌহ-পাদুকা’র সৃষ্টি করার মদ্য দিয়ে, এবং চিলি সরকারকে চরম আঘাত করা হয় ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ এ।

এই সময়টাতে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করা নেরুদা অবস্থান করছিলেন সান্তিয়াগোর বাসভবনে। রুগ্ন কবির গৃহে মোতায়েন করা হয় সশস্ত্র পাহারা, করা হয় গৃহবন্দী। চারদিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয় মেশিনগানের আওয়াজ, আর্ত-চিৎকার, বারুদের ঘ্রাণ, আর রক্ত। কবি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও পরিবর্তনের হাওয়া ঠিকই টের পাচ্ছিলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘আমার স্মৃতিকথা’তে লিখলেন –


‘আমার স্মৃতিকথা বিষয়ক বইটাতে ছাপার জন্য এক টুকরো কথাগুলো লেখা হয়েছিলো সেই অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটে যাওয়ার তিন দিন পরে, যে ঘটনার পরিণতি আমার বন্ধু এবং কমরেড প্রেসিডেন্ট আলেন্দের মৃত্যু।’ [৭]


কবির অসুস্থ্যতা দ্রুত খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ১৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে নেওয়া হয়। চারদিন বাদে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা বেজে ৩০ মিনিটের দিকে পাবলো নেরুদার জীবনাবসান ঘটে। প্রমাণ না থাকলেও অভিযোগ আছে মৃত্যুর আগেই কবিকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে হয় সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তে, হাসপাতালে কবির চিকিৎসা না করে তাঁর মৃত্যু তরান্বিত করা হয়।

মৃত্যুর পরপরই ফ্যাশিস্তদল নেরুদার ঘর তোলপাড় করে ফেলে, ঘরের প্রতিটি কোণ তছনছ করে খোঁজা হয় কবি কিছু লিখে গেছেন কি না যা সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে যায়। কফির লাশ ওঠে স্বল্প মুল্যের এক কফিনে এবং ফ্যাশিস্তদলের বন্দুক পাহারায় কফিন বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শ্মশানে। লোকেরা নানা বাধা সত্ত্বেও দলে দলে ভীড় জমায় লাশের পেছনে, মিছিল করে তবে সবই ছিলো নিঃশব্দ। এভাবেই হয় এক মহা মানবের সাদামাটা বিদায়।

তথ্য-সূত্রাবলিঃ
[১] ‘কাউকে কোরো না দায়ী’ – মুলঃ পাবলো নেরুদা, অনুবাদঃ রাজু আলাউদ্দিন।
[২] Plinio Apuleyo Mendoza (1 March 1983). The fragrance of guava: Conversations with Gabriel García Márquez. Verso. p. 49. Retrieved 4 August 2011.
[৩] ‘কাঠুরেরা জেগে থাকুক’ – মূলঃ পাবলো নেরুদা, অনুবাদঃ মফিদুল হক।
[৪] ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’, ‘গীত বিতান’, ৯ আশ্বিন, ১৩০৪ বঙ্গাব্দ।
[৫] ‘পাবলো নেরুদা’ – মফিদুল হক।
[৬], [৭] ‘আমার স্মৃতিকথা’ – মূলঃ পাবলো নেরুদা, অনুবাদঃ মোজাম্মেল হোসেন।

চিত্র-সূত্রাবলিঃ
গ্লগস্টার

শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

অসম্পূর্ণ কবিতা...

অসম্পূর্ণ কবিতা...

একটা কবিতা লিখবো; বসে বসে ভাবি--
একাকী জীবনের কথা লিখে যাবো তাতে।
টেবিল ল্যাম্পের আলোয় কাগজের স্তূপ
জমা হতে থাকে মেঝেয়, আর শেষ হতে
চলে কলমটার কালি। শব্দেরা নিখোঁজ।
মেলে না হিসেব কিছুই-- মাত্রা, ছন্দ, অন্ত্য।
বাড়ে নিশির গভীরতা, আর বাড়ে ধোঁয়া--
মার্লবোরোর ধোঁয়া-ছাই, কফি-পোড়া ঘ্রাণ।
অতীত-- গভীর সাগর। ডুবি আর ভাসি।
সিগারেটের বহ্নিশিখা আঙুল পোড়ায়,
অতীতের ঘোরটা ভাঙে, বর্তমানে ফিরি।
রাতের কালোরা পালায়; অন্য কালো থাকে
ডানা-ভাঙা পাখি ঝাপ্টায় জীবন খাঁচায়।
হয়না কবিতার শেষ, ইতি টানে প্রাণ।


দেবাশিস্‌ মুখার্জি
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২


[অক্ষরবৃত্ত, ৯+৬ = ১৫ মাত্রা]

বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আজকের রাত...

আজকের রাত...

ওগো চন্দ্রমুখী, চলে এসো আজ এ গভীর রাতে,
বিনিদ্র রজনী উষ্ণতায় যাক তোমারই সাথে।
ভুলে যেতে চাই হারানো সুরের সেই দুঃখ-বেলা,
বৃষ্টিভেজা স্বপ্ন, তুলির আঁচড়ে প্রেম-প্রেম খেলা,
কৃষ্ণকলি নামে কপট ললনা, চপল ছলনা,
প্রিয়াহারা রাতে অন্তঃক্ষরণের নীরব কলনা।
মিটি মিটি করে হলুদ, কমলা, লাল পিলসুজ!
পেটো মাদুরেতে শুয়ে আছি এক যুবক অবুঝ।
তুমি ছাড়া আজ ক্লিষ্ট তরুণের নাই কেউ ভবে।
ধূমায়িত ঘর। নীরবতা ভাঙে ঘুঙুরের রবে।
অপ্সরা-নাচন দোলায় দুলুক অবরুদ্ধ আর্য,
কাঁপুক! কাঁপুক! ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জালসাজি বার্য!
বাঁকা ঠোঁটে হাসো, হরিনী চোখেতে করা ইশারায়
কামনার পাশে বাঁধো এলোকেশী প্রতন আমায়।
রঙিন ঠোঁটেতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাও আমার অধর,
ঘামে ঘামে ভেসে যায় যদি যাক কমানার জ্বর।
রঙিন জলেতে চুর হয়ে র'বো তব দেহ-খাপে,
নীথর হৃদয় জাগবে তোমার বক্ষবৃন্ত-তাপে।


দেবাশিস্‌ মুখার্জি
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২


[১৮×১৮; অক্ষরবৃত্ত; ৬+৬+৬]

মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১২

দ্বাদশপদী কবিতা - ৪

একাকীত্ব-ক্লেশ

অদৃষ্ট ক্ষরণ-স্রোত বয়ে যায় হৃদয়ে।
কাল্‌-তরঙ্গে ব্যথা তবু না যায় সয়ে।
দিবা কিবা রাতি থাকি আশে আশে,
স্বপন মাঝে যদি আসে মোর পাশে।
স্বপন বিনে সে যে না দিবে ধরা,
ভালোবাসাহীন নীলয়ে সে অধরা।
মরীচিকা মাঝে কাপেঁ ছবিখানি,
পরশহীনা সে ধূমায়িত হাতছানি।
এ চঞ্চল চপল মন সদা খোঁজে তারে,
ধূমকেতু হারিয়ে যায় গভীর আঁধারে।
অধরা প্রিয়া মোর অধরাই র'বে।
একাকীত্ব-ক্লেশ বেশ! এ অলিন্দে স'বে।


২৮ আগস্ট, ২০১২; ঢাকা
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ
দ্বাদশপদী কবিতা - ৩
দ্বাদশপদী কবিতা - ২
দ্বাদশপদী কবিতা - ১

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

আমি এক ছাইওয়ালী...



আমি এক ছাইওয়ালী,
ঘরে ঘরে ছাই বেঁচি।
বস্তাটা কাঁধে নিয়ে পথে পথে হাঁটি,
আর সুর করে হাঁকি,
'ছাই নিবেন ছাই...
সাদা ছাই...
কালো ছাই...
ছাই নিবেন ছাই...'

বড়লোক এলাকাতে যাই না আর,
ওদের ভিম আছে, লাগে না ছাই!
গরিব এলাকার সরু গলি ধরে হাঁটি,
আর সুর করে হাঁকি,
'ছাই নিবেন ছাই...
সাদা ছাই...
কালো ছাই...
ছাই নিবেন ছাই...'
কোন এক লোক এসে দেয় রাম-ঝাড়ি,
'চিল্লানোর জায়গা পাওনা বেটি?
আমার ঘুম হল মাটি...
কোন এক ঘরের ছোট্ট খোকা,
ফেলে আমার গায়ে জল।
জল ফেলে কী যে খুশি!
কোন এক খুকি ভেংচি কাটে,
কেউ বা গলা ছাড়ে আমার সুরে,
'ছাই নিবেন ছাই...'
কোন এক বুড়ো মা একটু চ্যাঁচায়,
'এদে শোর পারে কিডা?'

রোদ বাড়ে আমি পুড়ি,
বৃষ্টি পড়ে আমি ভিজি,
শীত আসে আমি কাঁপি,
আমার দিন চলে যায়।
আমি হেঁটে চলি সরু গলি ধরে,
কেউ ডাকে কিনা দেখি চারদিকে।
কেউ চাইলে বেঁচিঃ
সাদা ছাই! 
কালো ছাই!
পাঁচ টাকায় দশ পট!
ঐ বেঁচে ফিরি বাড়ি, 
বুড়ো বাবা-মা ঘরে।
আমার ছাই-বেঁচা টাকায়
চাল কিনলে পরে খাওয়া হবে,
নয়তো তিনজনেই শুয়ে রবো অনাহারে।
রাতটা ছুটে চলে শুভড্যা বস্তিতে।

সবার ঘরে জ্বলে আলো,
জীবনে লাগে রঙ...
আমার অন্ধকারে দু'টো রঙ -
সাদা ছাই, কালো ছাই।
আমি ছাই ওড়াই,
কোন রতন আর পাওয়া হয় না।
ঐ ছাইই আমার রতন, আমার বন্ধু,
হয়তো বা মরণের সাথী!
মরণের দিনটাতেও হাঁটবো পথে,
আর হাঁকবো সুরে,
'ছাই নিবেন ছাই...
সাদা ছাই...
কালো ছাই...
ছাই নিবেন ছাই...'


২৭ আগস্ট, ২০১২
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১২

ফুলবাড়ির কথা

ফুলবাড়ির কান্না
ফুলবাড়ি কাঁদেরে
লাশ নিয়ে কাঁধেরে,
আর হাসপাতাল আছে শুয়ে
র'বে না তারা নুয়ে,
শ'খানেক লোক।
চারদিকে তাকালেই শোক আর শোক।

ফুলবাড়ির লোকেরা নয় যেন মানুষ!
তাই বিডিআরে করে গুলি 'ঠুশ ঠাশ ঠুশ...!'
ক্ষমতার নির্দেশে কত লাশ পড়ে,
আর কিছু বামনেতা 'আহা-উহু' করে!
ফুলবাড়ি জেগে রয় কান্নার ধূমে,
আর বাকি বাঙালি পড়ে রয় ঘুমে!
কিছু লোকে ছবি তোলে প্রমোশনের লোভে!
কিছু লোকে লিখে যায় রাজনীতি-ক্ষোভে!
লাশ হবে যত লাভ হবে তত!
দেখেও কেউ বুঝবে না হৃদয়ের ক্ষত।
গদিখানা বাঁচাতে নেতা যাবে ছুটে,
কত শত কথা দিবে।
ফটোগ্রাফার ছবি নিবে,
সময়ের সাথে সাথে হয়ে যাবে চুপ!
লাশ ফেলে খোঁড়া হবে কয়লার কূপ!
ঐ ফুলবাড়ি লাথ খাবে ক্ষমতার বুটে।
কবিতাটা ২৬ আগস্ট, ২০০৬ এ ফুলবাড়ি আন্দোলনে গুলি চালানোর রাতে লেখা। ঐদিন চারদলীয় জোট সরকার ও এশিয়া এনার্জির আঁতাতের বহির্প্রকাশ রূপে আন্দোলনে গুলি চালানো হয়। আল-আমিন, সালেকিন ও তরিকুল নামের তিনজন নিহত হয়। গুলবিদ্ধ হয় কুঁড়িজন, আর প্রায় দু'শ লোক আহত হয়। রক্তাক্ত আন্দোলনের মুখে চারদলীয় জোট সরকার আপাতভাবে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৩০ আগস্ট ঐতিহাসিক 'ফুলবাড়ি চুক্তি' সাক্ষরিত হয়। চুক্তির মূল বক্তব্য ছিল 'এশিয়া এনার্জি'-কে বিতাড়ন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন নিষিদ্ধ করা এবং জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে কয়লা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ঐ চুক্তিকে জনগণের বিজয় বলে এর সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
'ফুলবাড়ি চুক্তি বাস্তবায়ন না করার পরিণতি হবে ভয়াবহ' [১]
চারদলীয় সরকারের সময় শেষ হয়ে যায় কিছুদিন পরেই। এরপর আসে সামরিধায়ক সরকার। এরপর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে নতুন সরকার পরিচালনা করেছেন কিন্তু ঘটনার কোন পরিবর্তন ঘটেনি শুধু খোলস বদলেছে।

এবার ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্পের ইতিহাসটা সংক্ষেপে তুলে ধরবার চেষ্টা করি।
প্রকল্পের অবস্থান 
প্রকল্প এলাকা ঢাকা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে এবং দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, নওয়াবগঞ্জ, বিরামপুর ও পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত।
ফুলবাড়ী একটি ছোট শহর যা জাতীয় প্রধান সড়ক ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলীয় রেলওয়ের সাথে যুক্ত এবং এর ৪০ কিলোমিটার উত্তরে সৈয়দপুর বিমানবন্দর অবস্থিত। ফুলবাড়ী থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত পার্বতীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলজংশন এবং এর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রেল সংযোগ রয়েছে।
এই প্রকল্পটি বরেন্দ্র এলাকায় অবস্থিত, যা একটি উঁচু মালভূমি এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের ২৫-৩২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। বরেন্দ্র এলাকার কিঞ্চিত উঁচু ভূ-প্রকৃতির কারণে সমীক্ষা এলাকাটি সাধারণভাবে বন্যামুক্ত। এই এলাকায় তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং শীতকালে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মে মাসের শেষদিক থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারী ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। বছরে গড় বৃষ্টিপাত ১,৮০০ মিলিমিটার।
প্রকল্প উদ্যোক্তা
এশিয়া এনার্জি করপোরেশন (বাংলাদেশ) প্রোঃ লিঃ, যা লন্ডন ভিত্তিক জিসিএম রিসোর্সেস পিএলসির (ভূতপূর্ব এশিয়া এনার্জি পিএলসি) বাংলাদেশী সাবসিডিয়ারী।
মোট বিনিয়োগ

খনির মেয়াদকালে মোট বিনিয়োগ ২০০ কোটি মার্কিন ডলার যার অর্ধেকের বেশী খনি উন্নয়নের সময় ব্যয় হবে।
চুক্তি
কয়লার অনুসন্ধান ও খনি উন্নয়ন করার জন্য এশিয়া এনার্জি এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত রয়েছ।
লাইসেন্স
এশিয়া এনার্জি মূল কয়লা সম্পদ এলাকার খনি ইজারা এবং তদ্‌সংলগ্ন অন্যান্য এলাকার অনুসন্ধান লাইসেন্স পেয়েছে (বর্তমানে তা খনি ইজারায় রূপান্তরের জন্য আবেদনকৃত ও বিবেচনাধীন রয়েছে)।
বর্তমান অবস্থা
দু-বছরব্যাপী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়া গেছে।
খনি পদ্ধতি
উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি।
কয়লা
বিটুমিনাস জাতীয় কয়লা (উচ্চ তাপমান সম্পন্ন, অল্প ছাই ও অল্প সালফার যুক্ত)- তাপীয় (থারমাল) ও সেমিসফট কোকিং কয়লা।
মোট কয়লা সম্পদের মজুদ
৫৭২ মিলিয়ন টন (দক্ষিণে ড্রিলিং করলে যার পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়)।
বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা
১৫ মিলিয়ন টন।
সহ-সম্পদ
কাদা, বালি, নুড়ি, চীনামাটি (কেওলিন), পান।
প্রকল্প এলাকা
দিনাজপুর জেলার ৪ টি উপজেলা ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর এর অধীন ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অংশ প্রকল্প এলাকার ভিতরে অবস্থিত।
প্রকল্পের মোট প্রয়োজনীয় জমি
খনির মেয়াদকালে প্রায় ৫,৯৩৩ হেক্টর জমির প্রয়োজন হবে। তবে খননের জন্য প্রকল্পভুক্ত জমির এক তৃতীয়াংশ ব্যবহৃত হবে এবং তা হবে পর্যায়ক্রমে।
ফুলবাড়ী শহর
পৌরসভা ঠিক থাকবে তার পুনঃনির্ধারিত সীমানা নিয়ে। পূর্ব ফুলবাড়ীর খুব সামান্য অংশ খনির ভিতরে পড়বে এবং একটি নতুন শহর ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাশে বিদ্যমান পশ্চিম ফুলবাড়ীর বর্ধিতাংশরূপে গড়ে উঠবে।
জনগোষ্ঠীর স্থানান্তর ও পুনর্বাসন
খনির মেয়াদকালে প্রায় ৪০,০০০ ব্যক্তিকে (যার বেশিরভাগ প্রথম দশ বছরে) স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে।
পুনঃস্থাপন
প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে প্রয়োজনে বা তাদের ইচ্ছানুযায়ী নতুন সম্প্রসারিত শহর অথবা নতুন উন্নত গ্রামে পুনর্বাসন করা হবে।
ক্ষতিপূরণ
প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জমি, সম্পদ ও জীবিকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হবে নগদ অর্থ, জমি, বাড়ি, উন্নততর জীবন-যাপনের সুবিধা, উন্নততর শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা, প্রশিক্ষণ, বিকল্প জীবিকার সুযোগ এবং সমাজ উন্নয়ন তহবিল হতে সহায়তা। তাদের কেউ বর্তমানের অবস্থা থেকে খারাপ অবস্থানে যাবে না বরং অধিকাংশের অবস্থা হবে উন্নততর।
খনি পুনর্বাসন
উন্মুক্ত খনি ক্রমান্বয়ে ভরাট করে আগের প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে; শেষাংশে খাদটি একটি স্থানীয় জনগোষ্ঠির পানি সরবরাহ, বিনোদন ও মৎস্যচাষের জন্য একটি মিঠা পানির লেকে রূপান্তর করা হবে। খনি উন্নয়নকালে খনিখাদ শুঙ্ক রাখার জন্য খনি এলাকায় পানি উত্তোলন করতে হবে এবং এ পানি কৃষিজমি ও বসতবাটিতে সরবরাহ করা হবে। কিছু পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হবে নতুন শহর ও অন্যান্য পুনঃস্থাপন এলাকায়। আশুরার বিলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক আবাস সংরক্ষণের জন্যও কিছু পানি সরবরাহ করা হবে। এতে প্রকল্প এলাকায় পানির অভাব হবেনা এবং প্রকল্পের কারণে কোন এলাকা শুকিয়ে যাবেনা। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত পৃথক সমীক্ষা করা হয়েছে।
পরিবেশ
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা হবে এবং শব্দ, ধূলা ও বর্জ্যপানি গ্রহণযোগ্য মানমাত্রার ভিতরে রাখা হবে। পরিবেশগত সকল উপাদান সবসময় পর্যবেক্ষণাধীন রাখা হবে এবং খনির মেয়াদকালে সকল কার্যক্রম যাতে পরিবেশগতভাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রার ভিতরে থাকে তা নিশ্চিত করতে বিস্তারিত পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ সরকারের লাভ/প্রাপ্তি
বিনিয়োগ ও ঝুঁকি শূন্য। লাভের প্রায় ৫০% প্রাপ্তি ছাড়াও (এর অন্তর্ভুক্ত ৬% রয়্যালটি, ৪৫% কর্পোরেট ট্যাক্স এবং ২.৫% আমদানী শুল্ক) অন্যান্য প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে দেশে একটি সহজলভ্য দীর্ঘ মেয়াদী নতুন জ্বালানী শক্তির উৎস, বিদ্যুৎ উৎপাদন, নতুন শিল্পক্ষেত্র, নতুন রেল ও বন্দর অবকাঠামো, সম্ভাবনাময় সহযোগী শিল্পের বিকাশ, চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি, আঞ্চলিক উন্নয়ন, এবং দারিদ্র বিমোচন। [২]

ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্প হতে 'এশিয়া এনার্জি' এর দাবিকৃত সুবিধাসমূহ হলঃ
জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ইতিবাচক অর্জন 
জাতীয়
• প্রতি বছর জাতীয় জিডিপি-তে ১.০% সংযোজন
• প্রকল্প মেয়াদকালে জিডিপি-তে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান
• ট্যাক্স ও রয়্যালটির মাধ্যমে সরকারের ৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি আয়
• ব্যালান্স অব পেমেন্টের উপর বছরে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ইতিবাচক প্রভাব
• বাংলাদেশ রেল-এর নীট আয় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
• দারিদ্র দূরীকরণ ও টেকসই উন্নয়ন
• টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিকল্প জ্বালানীর নিশ্চয়তা
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল
• উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন কয়লা শিল্পের উন্নয়ন
• এশিয়া এনার্জি কর্তৃক পরিচালিত ১,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র
• সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী কর্তৃক আরো কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন
• প্রায় ১২,০০০ নতুন স্থানীয় কর্মসংস্থান (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ)
• সহসম্পদ (কো-প্রডাক্ট) নির্ভর এবং খনি সহযোগী বেশ কিছু নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন
• প্রকল্পের মেয়াদকালে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়
• পুনঃস্থাপন ও নতুন শহরের জন্য ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ
• স্থানীয় নীট কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি
• উন্নত সুবিধাসহ নতুন পরিকল্পিত শহর ও গ্রাম
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
• পশ্চিম রেলের পথের উন্নতি
• খুলনায় কয়লা টার্মিনাল স্থাপন
• আকরাম পয়েন্টে গভীর সমুদ্র কার্গো হ্যান্ডলিং সুবিধা
• খুলনা ও মংলা বন্দরের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়ন
• প্রায় ৮,০০০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ)
• বন্দর উন্নয়নে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ
• স্থানীয়ভাবে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনা
• সহসম্পদ ভিত্তিক শিল্প-কারখানা স্থাপনের সম্ভাবনা [৩]

'এশিয়া এনার্জি' বিভিন্ন লাভের কথা ধরলেও কোথাও এই প্রকল্পের সমস্যার ব্যাপারগুলো পরিষ্কার করা হয় নি। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের মূল সমস্যাগুলো হলঃ

১) এটি খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া এবং এর মাঝে অনেকগুলো অংশ থাকে, এবং এর কোন এক অংশের সম্যস্যার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি বন্ধ থাকবে। তাই ৩৫ বছরের প্রকল্প আদৌ ৩৫ বছরে শেষ হবে কি না সন্দেহ আছে।

২) এই পদ্ধতিতে কয়লা উৎপাদনে ডাস্টের পরিমাণ অনেক বেশি হবে যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।

৩) এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ মিলিয়ন লিটার পানি তোলা হবে বলে জানিয়েছে। খনি উন্নয়ন এবং পরিচালনার ৩৮ বছর জুড়ে এই পানি তোলা হবে। এর মাত্র ১৫ ভাগ তারা রিইনজেক্ট করবে। এতে করে ওই এলাকার পানি সরবরাহ এবং কৃষি কাজে পানিপ্রাপ্তি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।

৪) প্রকল্প শেষে খনি পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, এবং এটি সফল না হবারও সম্ভাবনা আছে। এবং পানিস্তর আগের পর্যায়ে মিলিয়ে দেওয়াটা খুবই কঠিন। এই এলাকার মানুষ তিস্তা ও মহানন্দা বাঁধের কারণে এমনিতে পানির কষ্টে আছে, তাই খনি পুনর্বাসন সফল না হলে পুরো এলাকা মরুতে পরিণত হতে পারে।

এত সমস্যার পরেও ‘এশিয়া এনার্জি’ কেন সুরঙ্গ পদ্ধতিতে খনন না করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতেই কয়লা উত্তোলন করতে চাচ্ছে এ প্রশ্ন আসাটা খুবই স্বাভাবিক। এর কারণটা হল আর্থিক লাভ। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে যেখানে ৯৫-৯৮% কয়লা উৎপাদন সম্ভব সেখানে সুরঙ্গ পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ৬৫-৭০% কয়লা উত্তোলন সম্ভব। [৪]

এবার ‘এশিয়া এনার্জি’ এর ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্পের বর্ণনায় আরো কিছু অসামঞ্জস্যতা ও সমস্যা পরিলক্ষিত হয়ঃ

১) প্রকল্পকালে ৪০,০০০ লোক সরিয়ে নিতে হবে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যাটা লক্ষাধিক হতে পারে। আমাদের মত ছোট একটা দেশে এত লোককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন হবে।

২) অনেক কৃষি জমিও এই প্রকল্পের আওতাভূক্ত হবে, তাই এই প্রকল্প আমাদের কৃষিক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব রাখবে।

৩) প্রকল্পের ব্যবসায়িক হিসেবে শুধুমাত্র কয়লাই দেখানো হয়েছে কিন্তু উপজাত হিসেবে পাওয়া বালি, নুড়ি, চিনামাটির হিসেবটা কী হবে আর কে পাবে তা পরিষ্কার না।

৪) চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার মাত্র ৬% রয়ালটি পাবে এবং কয়লার সাথে তেল, গ্যাস কিংবা মহামূল্যবান হীরে পাওয়া গেলে কী হবে সেটা পরিষ্কার না।

৫) বলা হয়েছে উত্তোলিত কয়লা দিয়ে ‘এশিয়া এনার্জি’ ১০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেবে। অর্থাৎ ‘এশিয়া এনার্জি’ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমাদের কাছেই বিক্রি করবে না প্রতিবেশীদেরকে দিতে পারবে ব্যাপারটা পরিষ্কার না। আর উৎপাদিত বিদ্যুতের দামই বা কী হবে সেটাও কোথাও বলা হয় নি। তাই ওরা চাইলেই আমাদেরকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য করতে পারে, এবং সে সম্ভাবনা প্রবল।

সরকার এত সব সমস্যা বিবেচনা না করে ব্যবসায়ী ‘এশিয়া এনার্জি’ এর পক্ষেই তার অবস্থান নিয়েছে ৫], এবং হয়তো তারা বাহ্যিক চাপে কিছুটা দিশেহারা, অসহায়। টাকার অঙ্কে এই প্রকল্পের লাভ নিরূপন করা হচ্ছে কিন্তু লোকসানটা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা সম্ভব হবে না। আর ফুলবাড়িবাসী কি সরকারের এই অবস্থান বিনে বাঁধায় মেনে নেবে?! সে সম্ভাবনা অন্যরা দেখলেও অন্তত আমি দেখছি না। ফুলবাড়ি এখনো জেগে আছে। আর বাকি দেশবাসিও হয়তো তাদের পাশে থাকবে। কেউ পারতপক্ষে ফুলবাড়ির সর্বনাশ মেনে নেবে না। তাই এখনো আন্দোলন চলছে, এবং আশা করি চলবে।




তথ্য উৎসাবলিঃ
[১] দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত আনু মুহাম্মদের কলাম 'ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন না করার পরিণতি হবে ভয়াবহ'
[২],[৩] ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট - 'ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প'
[৪],[৫] দৈনিক জনকণ্ঠ


চিত্র-উৎসঃ
[১] বিপ্লব রহমান-এর ব্লগ 'ফুলবাড়ি- লাল সেলাম!, উন্মোচন ব্লগ

বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১২

২৩ আগস্ট...



আকাশ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কিছুতেই নিজেকে ঘরে আটকে রাখতে পারছে না। আজ ওকে বাইরে যেতেই হবে। আকাশের এক বন্ধু জান্নাত ওকে ফোকে আটকানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো।

মা ডাকছে, 'কীরে খোকা ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিস কেন?? খাবি না। দশটা বাজে! এখনো নাশ্তা করিস নি!'


আকাশ তার সকল যন্ত্রণাটাকে রাগ রূপে মায়ের উপর ঝেড়ে দিলো, 'আমি বললাম তো খাবো না। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি খাবো না।'


আকাশ কিছুক্ষণ পর ঘরের মাঝে এটা-ওটা ছোড়াছুড়ি করে ঘর থেকে বেড় হয়ে গেল।


আকাশ রাস্তার পর রাস্তা হেঁটে চলছে। ধানমণ্ডি থেকে কাঁটাবন। কাঁটাবন থেকে পরিবাগ। পরিবাগ থেকে বেইলি রোড। বিক্ষিপ্ত মনে হাঁটছে। আর শূন্য দৃষ্টিতে চারপাশে তাকাচ্ছে। সব কিছুর মাঝে একজনের গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ভালো লাগা একজনের গন্ধ। সেই চেনা রাস্তায় বুক ভরে বাতাস নিচ্ছে আর তাতে প্রিয় এক মানুষের গন্ধ পাবার চেষ্টা করছে।


বেইলি রোডে ভিকারুন্নেসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। অনেক মেয়ে আর তাদের সাথের লোকজনের ভীড়। প্রত্যেকটা মেয়েকে আকাশের মনে হচ্ছে বয়সে কত ছোট। দশ বছর আগে বৃষ্টিও এই বয়সীই ছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললো। ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে আসতেই দেখলো ও আর বৃষ্টির প্রিয় সময় কাটানো 'ইউরো হাট' আর নেই। সেখানে 'সসেজ' নামে নতুন একটা খাবারের দোকান হয়েছে।


আকাশ এগিয়ে চলে। শান্তিনগর মোড় হয়ে হেঁটে চলে সেগুন বাগিচার দিকে। সেগুন বাগিচা হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে পা বাড়ায়। গন্তব্য শহীদ মিনার।


আকাশ আকাশের দিকে তাকায়। আজ আকাশে কোন মেঘই নেই। কিন্তু দশ বছর আগের দিনটাতে ছিল। আকাশ জোড়া কালো মেঘ ছিল। ছিল ঝুম বর্ষা।


শহীদ মিনারের কাছের সিঁড়িটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। আকাশের থেকে ন-দশ বছরের ছোট ছেলে-মেয়ে বসে আছে। একজন আরেক জনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আকাশের সব মনে পড়ে যায়। ঠিক দশ বছর আগে ঠিক ঐ জায়গাটাতেই বসে ছিল আকাশ আর বৃষ্টি। আর আকাশ থেকে অবিরাম বৃষ্টি ঝড়ছিল। ঐ অঝোড় বৃষ্টিতে ভেজা বৃষ্টির কাঁপা-কাঁপা হাত ধরে বলেছিল, 'বৃষ্টি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।' বৃষ্টি আকাশকে ফেরাতে পারে নি। একে অপরের চোখে হারিয়ে গিয়েছিল। আর একজন আরেক জন থেকে কত দূরে। সময়ের ব্যবধান দুজনের মাঝে দেওয়াল গড়ে দিয়েছে যদিও একজন আরেকজনকে এখনো চায় অনেক বেশি।


আকাশ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। যত যাই ঘটে যাক আজ ও বৃষ্টিকে ফোন করেই বসবে, যদিও ও নিজেই বৃষ্টিকে বলেছে যেন বৃষ্টি আর ওকে ফোন না দেয়। আকাশ যেই না হাতে মুঠোফোনটা নিয়েছে, ওটার স্ক্রিণে বৃষ্টির নাম্বারটা দেখা যাচ্ছে। আর তার পাশে লাল রঙের হৃদয় চিহ্ণ। বৃষ্টি ওকে ফোন করছে। আকাশ ফোনটা রিসিভ করতে না করতেই বৃষ্টির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। বৃষ্টি কান্নাভেজা গলায় বলতে লাগলো, 'আমি আর ফোন না করে পারলাম না। তুমি কেমন আছো??'


দু'জনের কথা চলতে লাগলো। আকাশ হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে। ওর চোখের কোণাটা ভিজে উঠেছে। আর ভাবছে সব বাঁধা উপেক্ষা করে কি আবার এক হবে দু'জনে! হঠাৎ লাইনটা কেটে গেল। বৃষ্টি একের পর এক চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু প্রত্যেকবারই এক মহিলা কণ্ঠ বলছে, 'এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। অনুগ্রহপূর্বক আবার চেষ্টা করুন!'


বৃষ্টি একের পর এক চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে লাগলো। ওর আকাশের প্রতি অনেক অভিমান হল। রাতটা নির্ঘুম কাটলো। রাতে কখনো কাঁদলো, কখনো আকাশকে গাল দিলো, কখনো খাটের পাশে মাথা কুটলো।


সকালে বুঝতে পারলো যে আকাশ আর ওর সাথে যোগাযোগ করবে না। বরাবরের মতন হারিয়ে গেছে। চা বানিয়ে বসলো সোফার উপর। দৈনিক পত্রিকাটা সাথে। পৃষ্ঠাগুলো উল্টে-পাল্টে দেখছে। শেষ পৃষ্ঠার এক কোণে ছাপা হয়েছে একটা ছবি। নীল পাঞ্জাবি পরা রক্তাক্ত এক ছেলের ছবি। পাশে লেখাঃ
...... বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আকাশ নিহত। বৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে গেল। যন্ত্রের মতন করে পড়ে গেল বাকিটাঃ


''গতকাল বিকেলে আকাশ শহীদ মিনারের সামনের রাস্তায় মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলো। এরকম অবস্থায় গাড়ি চাপা পড়ে...... আকাশের পকেটে একটা চিরকূট পাওয়া যায়, যাতে একটা কবিতা লেখা ছিলঃ


'আছে কার সাহস
করবে আমায় বন্ধ?
আজ আমি পথে পথে রবো
খুঁজবো যে তোর গন্ধ...
তোর গন্ধভরা মাদকতা
পাগল করে মোরে...
সকাল-সন্ধ্যা কাটতো আমার
তোর ভালোবাসা আর আদরে...
আসবি না কাছে??
থাকবি আমার দূরে??
দূরেই থাক্‌, বুঝিস না আর
ভালোবাসি কত তোরে...

২৩ আগস্ট, ২০১১
আকাশ'  ''


শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১২

আলফ্রেড সরেনদের কথা

‘এ ফুল দেলা ফুল
রেলগাড়িরে দেজোক ফুলেম তাইনমোক কান
রেলগাড়িরে দেজোক দাই বগেতেঞ বতোরক
রেলগাড়িরে বাঞদেজোক, দুমকা দিসম বাঞঞেল
ইঞদঞ রুয়াড় চালাক অড়াক তেগে।’
বাংলা করলে এর অর্থ দাঁড়ায়,
‘এই ফুলমনি তাড়াতাড়ি চলো
ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে; দেরী হয়ে যাচ্ছে।
আমার খুব ভয় করে, আমি ট্রেনে উঠবো না,
আমি দুমকা জেলাও দেখব না,
আমি বাড়িতে ফিরে যাবো’
এই ফুলমনি একজন সাঁওতাল নারী। সিদু-কানুর বোন ফুলমনির লাশ মিলেছিল রেল-লাইনের ধারে। তার গায়ের কাপড় ছিল ছিন্ন-ভিন্ন। খুব সম্ভবত ব্রিটিশ সৈন্যরা ফুলমনিকে ধর্ষণ করে, খুন করে লাশটা ফেলে রেখে যায় রেল-লাইনের ধারে। সাঁওতালীরা আজও ফুলমনিকে স্মরণ করে, আজও কাঁদে।

পেছনের দিকে তাকালে পাই,


আজ থেকে ১৫৭ বছর পূর্বে ১৮৫৫ খ্রি. ৩০ শে জুন সান্তাল (সাঁওতাল) বিদ্রোহের বীজ মহিরুহে পরিণত হয়েছিলো। ইতোপূর্বে ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দ ক্যাপ্টেন ব্র“কের নেতৃত্বে একদল সিপাহী নিয়ে অরণ্যচারী আদিবাসীদের বশে আনার প্রথম ব্যর্থ উদ্যোগ ছিলো। দ্বিতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ইংরেজ প্রশাসক (কালেক্টর) আগষ্টাস ক্লিভল্যাণ্ড ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। এতদিন আদিবাসীরা স্বাধীনভাবে চাষবাস করেছে, অরণ্যের সম্পদ ভোগ করেছে কিন্তু এবার ইংরেজদের খাজনা দিতে হবে। খাজনা প্রদানকে তারা তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মনে করলো। তারা খাজনা প্রদানে অস্বীকার করলো। ফলে কোম্পানীর কর্মচারী ও সিপাহীরা আদিবাসীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে শুরু করলো। তাদের ধরে বেঁধে ভাগলপুর নিয়ে গিয়ে অমানুষিক ও অমানবিক নির্যাতন শুরু করলো। আদিবাসী অরণ্যচারীরা বিদেশী ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। এদের নেতৃত্ব দিলেন তিলকা মাজহী বা তিলকা মুরমু। শুরু হলো আদিবাসী সাঁওতাল বিদ্রোহ। অস্ত্র তাদের নিজেদের তৈরি বাঁশের তীর-ধনুক, বাটুল, বর্শা ইত্যাদি। তিলকা মাজহীর গেরিলা আক্রমণ নীতিতে ইংরেজ সৈন্যরা বার বার মার খেল। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জানুয়ারি তিলকা মাজহীর বাটুলের গুলিতে ক্লিভল্যাণ্ড সাহেব আহত হয়ে মারা যান। বাটুল হচ্ছে তীর ধনুকের মতো কিন্তু তীর পরিবর্তে পোড়ামাটির শক্ত গুলি, পাথরের টুকরো অথবা মাছ ধরা জালের লোহার কাঠি ব্যবহার করতো। বন্দুক অথবা রাইফেলের গুলির মতো বাটুলের গুলিও প্রচণ্ড শক্তি ও গতির অধিকারী ছিলো। আধুনিক সমরাস্ত্রে সুশিক্ষিত ইংরেজ বাহিনীর সাথে কতোক্ষণ এ যুদ্ধ চলতে পারে। তিলকপুরের মাটি আদিবাসী সাঁওতালদেও রক্তে লাল হয়ে গেল। তিলকা মাজহী ধরা পড়লেন। তাঁকে ভাগলপুরে নিয়ে এসে নিদারুণ শারিরীক অত্যাচার করা হলো। শেষে ঘোড়ার সাথে বেঁধে সিনেমার স্টাইলে তাকে টেনে হিচড়ে সমস্ত শহর ঘোরানো হলো। এতেও তাঁর মৃত্যু হয়নি দেখে তাঁকে বটগাছে ঝুলিয়ে (১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে) ফাঁসি দেওয়া হয়। এভাবেই ইতিটানা হয় সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রথম পর্ব। [১]




ছবি ১  - সিদু-কানুর আদর্শে উজ্জীবিত সাঁওতাল যুবক

স্বাধীনতা প্রিয় সাঁওতালদের দমন-নিপীড়নের শুরুটা সেই ব্রিটিশদের হাতে এবং আজও চলে আসছে। এই স্বাধীন বাংলাদেশেও চলছে পুরোদমে। অথচ ওরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে হাতের তীর-ধনুক তুলে নিয়েছিল, এই দেশের স্বাধীনতায় লড়েছিল বাঙালির পাশে। ঐ নিয়েই ২৭-২৮ মার্চ দল বেঁধে আক্রমণ করেন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট এবং পাকসেনার গুলিতে অনেকেই শহীদ হন [২]; আমরা ওদের আজও স্বীকৃতি দেই নি।




ছবি ২  - ২৮ মার্চ, ১৯৭১ এ সাঁওতাল-ওঁড়াওঁ-রংপুরি-বাঙালির সম্মিলিতভাবে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ।

১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বাংলাদেশে সাঁওতালদের মোট সংখ্যা ২০২৭৪৪, ২০১২ সাল নাগাদ ওদের সংখ্যা হয়ে দাঁড়ানোর কথা কমপক্ষে ২৭১৪৮৫; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওদের সংখ্যা তিন লাখের বেশি হবে। কিন্তু ১৯৪১ সালের ব্রিটিশ ভারতের আদমশুমারি রিপোর্ট দেখলে পাওয়া যায় তখন সাঁওতালদের সংখ্যা ছিল ৮২৯০২৫ জন যার ভেতরে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশে সাঁওতাল ছিলো ২৮২৬৮২ জন। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে সাঁওতাল এর সংখ্যা যেভাবে বাড়ার কথা সেভাবে বাড়ে নি, উল্টো কমেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভূমি থেকে উচ্ছেদ, নানা অত্যাচার, শোষণ-নিপীড়ন, হত্যা-ধর্ষণ ইত্যাদি কারণে এরা দলে দলে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় [৩]; এদের অনেকেই চলে গেছে পাশের দেশ ভারতে যেখাতে সাঁওতালদের বর্তমান সংখ্যা ৬ লাখের মতন, আর নেপালে ৫০ হাজারেরও বেশি।

অস্ট্রিক গোষ্ঠির সাথে সাঁওতালদের চেহারায় ব্যাপক মিল আছে। এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলঃ খজর্বাকৃতি, মাথার খুলি লম্বা থেকে মাঝারি, নাক চওড়া ও চ্যাপ্টা, গায়ের রঙ কালো এবং ঢেউ খেলানো [৪]; ভাষাগত পরিচয়ে এরা অস্ট্রো-এশিয়াটিক। নৃতাত্ত্বিকদের ধারণা এরা ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসীদের অন্যত্ম। এক সময় এরা বাস করতো উত্তর ভারত থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগরের ইস্টার দ্বীপ পর্যন্ত। আনুমানিক ৩০ হাজার বছর পূর্বে এরা ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল [৫], আর সাঁওতালরা যে আর্যদের আগে থেকেই ভারতে আছে সে ব্যাপারে কোনই দ্বিমত নেই। এদের আদি নিবাস হয়েছিল হাজারিবাগ, মালভূম (চায়-চাম্পা), এবং বিহারের আশ-পাশের বিভিন্ন অঞ্চল। মোঘল আমলে এরা হাজারীবাগ, মালভূম হতে বিতাড়িত হয়ে ওড়িষ্যার সাঁওতাল পরগণায় চলে আসে।

সাঁওতালরা আজও নিজেদেরকে বলে ‘হোড়’ কিংবা ‘হেড়’ যার অর্থ মানুষ আর ওদের কারমণকারী মানুষদেরকে বলে ‘দিকু’ যার অর্থ আক্রমণকারী কিংবা ডাকাত। ওরা প্রকৃত অর্থেই নিপীড়িত এক গোষ্ঠী। অশিক্ষিত সাঁওতালদের সরলতার সুযোগ নিয়েছে শিক্ষিত ধনীক গোষ্ঠী। জমিদার, মহাজন, প্রশাসক ও স্থানীয় প্রভাবশালী হিন্দু-মুসলমান ওদেরকে করেছে শোষণ আর ইংরেজরা করেছে অত্যাচার। [৬]

সুনীতি কুমারের এক গ্রন্থে পাই,


... ... ... বিহার প্রদেশ বিশেষ করিয়া সাঁওতাল পরগণা উড়িষ্যা, বাংলাদেশ বিশেষ করিয়া পশ্চিম ও উত্তর বঙ্গ, এবং আসাম এই সমস্ত স্থানে সাঁওতালদের বাস। ইহাদের আদি ভূমি হইতেছে বিহারে; উত্তর বঙ্গ ও আসামে মজুরীগিরি করিবার জন্য দলে দলে গিয়া ইহারা বাস করিতেছে। ... ... ... [৭]

বাংলাদেশে সাঁওতালদের আগমন ঘটেছে নানা কারণে। এর মধ্যে জমিদার-মহাজনেরা যেমন তাদের কাজের প্রয়োজনে সাঁওতালদের উত্তরবঙ্গে এনেছেন, তেমনি এরা নিজেরাই জীবিকার সন্ধানে, খাদ্য ও বাসস্থল সংকটে, এমনি কি ১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণে ইংরেজ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে এ অঞ্চলে বাসস্থান গড়েছে।

Qureshi এর বইতে পাওয়া যায়,


… … … Santals came originally to clear land, build rail roads, and do other labor, and many of them work today as landless, laboures, but some have assets… [৮]

স্বাধীন বাংলাদেশেও ওরা যে কতটা নিপীড়িত তার একটা ছটত উদাহরণ আলফ্রেড সরেন। ১১ বছর আগের এই দিনটাতে ভূমিদস্যু হাতেম আলী ও সীতেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ওরফে গদাই এর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় আলফ্রেড সরেন নৃশংস ভাবে খুন হন। আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার ছোট বোন রেবেকো সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আজও খুনীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ওদের হুমকির মুখে অনেক সাঁওতালই ধীরে ধীরে আদিবাসী পল্লী ত্যাগ করছে।





ছবি ৩  - ১৮ আগস্ট, ২০০১ সালে বাঙালি ভূমিদস্যুদের আক্রমণে নিহত আদিবাসি নেতা আলফ্রেড সরেন।



২০০০ সালের ১৮ আগস্ট, ঘড়ির কাটায় সকাল এগারটা, ভূমি দস্যু হাতেম ও গদাই লস্কর তার দেড়শতাধিক ভাড়াটিয়া খুনি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নওগাঁ জেলার, মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর গ্রামের ১৩টি আদিবাসী পরিবারের উপর যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবলীলা চালায় তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। অতর্কিত এই আক্রমণে আদিবাসীরা হত বিহ্বল হয়ে পড়ে। খুনিরা চিৎকার করে খুজতে থাকে আলফ্রেড সরেনকে। একেরপর এক বাড়ী আগুনে জ্বালিয়ে দিতে দিতে অগ্রসর হয় খুনিরা। সামনে যাকে পায় তার উপর চলে পৈশাচিক নির্যাতন। শিশুদের হাত পা ধরে পুকুরে ছুড়ে মারা হয়। আদিবাসী পরিষদের নেতা বৃদ্ধ জগন্নাথ সরেণ ও যতীন সরেণ নামে ৩০ বছরের এক যুবককে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। আলফ্রেড সরেণের বড় ভাইয়ের স্ত্রী পানসিরির পেটে লাথি দেবার ফলে তার গর্ভচ্যুতি ঘটে।

চারিদেকে যখন আদিবাসীদের আত্ম-চিৎকার আর আগুনের লেলিহান শিখায় আকাশ বাসাত ভারি হয়ে উঠেছে, তখন খুনিদের উন্মত্ত খুনের নেশা আলফ্রেড সরেণকে খুজেছে। তখন বোন রেবেকা সরেণ ভাইকে নিয়ে বাঁচার জন্য পাশের বাড়ীতে ঘরের মধ্যে ধানের বস্তার ফাঁকে আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় খুনিরা। আগুনের উত্তাপে টিকতে না পেরে  রেবেকা সরেণ ঘরের জানালা ভেঙ্গে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই খুনিদের হাতে ধরা পড়ে আলফ্রেড সরেন। খুনিরা রামদা, চাইনিজ, কুড়াল, বল্লম দিয়ে একেরপর এক আঘাত করতে থাকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আলফ্রেড সরেণ । আহত অবস্থায় খুনিদের কাছে আকুতি জানায় আমার হাত পা কেটে ফেলো কিন্তু প্রাণে মেরো না আমি কি দোষ করেছি তোমাদের কাছে ? বেঁচে থাকার আকুতি খুনিদের কানে পৌছায় না। আলফ্রেডের আকুতি খুনিদের আরও উন্মত্ত করে তোলে বর্শার ফালার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত আলফ্রেড সরেণ মৃত্যর কোলে ঢলে পড়ে। বোন রেবেকা সরেন মাত্র ৫০গজ দুরে মূর্তিরমত দাড়িয়ে দেখে ভাইয়ের মৃত্যু। আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে ছাই হয়ে যায় ভীমপুরের আদিবাসী পল্লীর ১৩টি পরিবার। ৩০/৩৫ জান আদিবাসী মারাত্বকভাবে আহত হয়। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ব্যাপি চলে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। দীর্ঘ সময় ব্যাপী এই নারকীয় তাণ্ডব চললেও রহস্যজনকভাবে পুলিশ নিরব ও নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

ভীমপুর গ্রাম ও মৌজার ১৬৬ ও ১৬৮ দাগের এক একর জমির উপর তখন যে ১৩টি আদিবাসী সাঁওতাল পরিবার বসবাস করত। এর অল্প দুরে ৯০/৯৫ বিঘা খাস জমি ছিল। সেই জমি দরিদ্র আদিবাসী ও এলাকার ভূমিহীনদের কাছে বন্দোবস্তো দেবার জন্য আলফ্রেড সরেণ এলাকার ভূমিহীন ও আদিবাসীদের সংগঠিত করে তাদের মাঝে বিতরণ করতে চেয়েছিল। কম্যুনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নওগাঁ জেলার এই নেতাকে ভূমি দস্যু হাতেম গদাই গং ও তার সন্ত্রসী বাহিনীর নির্মমভাবে খুন করে। যে দিন আলফ্রেডকে হত্যা করা হয় সেই দিন স্থানীয় নৈ-হাটা মোড়ে ভূমিহীনদের সমাবেশ হবার কথা ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে সমাবেশের মঞ্চ তৈরীর কাজ দেখাশুনা করে ১০টা ৩০ মিনিটের দিয়ে বাড়ীতে খেতে আসার পরপরই এই ঘটনা ঘটে। [৯]

দেখতে দেখতে ১১ টা বছর চলে গেল। আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচার হয়নি, এর বিচার আদৌ হবে সে আশা করাটাও খুব কঠিন। আজ মৃত কিংবা শহিদ আলফ্রেড সরেন সাঁওতালদের জন্য এক বীরের নাম। আলফ্রেডের নাম উচ্চারিত হয় সিদু-কানুর নামের সাথে। 

আলফ্রেড সরেনের আত্মত্যাগ কি নাড়া দেবে বাঙালিদের?? বাঙালি কি এগিয়ে আসবে আদিবাসি ও অন্যন্যগোষ্ঠী দমন-নিপীড়নের দায় থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে??

তথ্য-উৎসাবলিঃ
[১] ৩০ শে জুন ইতিহাসের স্মরণীয় সান্তাল (সাঁওতাল) বিদ্রোহ - মিথুশিলাক মুরমু, আদিবাসী বাংলা ব্লগ।
[২] মুক্তিযুদ্ধে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট।
[৩] বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষা – সৌরভ সিকদার।
[৪] বাঙালি নৃতাত্ত্বিক পরিচয় – ড, অতুল সুর।
[৫] ভারতের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় – ড, অতুল সুর।
[৬] সাঁওতাল সমাজ সমীক্ষা – ধনপতি বাগ।
[৭] ভারতের ভাষা ও ভাষা-সমস্যা – সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
[৮] Journal: Tribal Cultures in Bangladesh – Shah Qureshi, Institute Of Bangladesh Studies, Rajshahi University.
[৯] আলফ্রেড সরেন মৃত্যু যাকে অমরত্ব দিয়েছে - রানা, উন্মোচন ব্লগ।

চিত্র-উৎসাবলিঃ
[১] গুগল সার্চ।
[২] বাংলাদেশ বার্তা ডট কম।
[৩] দৈনিক কালের কণ্ঠ।

শ্রমিকের কান্না




উৎসর্গঃ শ্রমিকদের রক্তাক্ত, নীথর লাশগুলোকে; রক্তের মাঝেই বেঁচে যাওয়া শ্রমিকের আর্তনাদকে; না খেতে পারা শ্রমিকদের বোবা কান্নাকে।

শ্রমিকের কান্না

'এই বেতনে ঘর চলে না...
চালের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়ে গেছে...
ঘরে আমার আধপেটা শিশু, অনাহারী বধূ...
দেও না বাড়িয়ে দু'টো পয়সা...
বেশি না... মাত্র দু'টো পয়সা বাড়ালেই চলবে...'

'চুপ কর! শয়তানের দল!
কী এমন করিস যে তোদের এত খাই খাই??'

'তোমাদের তো কত্ত টাকা...
আর দু'টো পয়সা দিলে ক্ষতি কী??'

'ভিখেরির দল...
তুই কী বুঝিস লাভ আর ক্ষতির??
কথা না বাড়িয়ে কাজে যা...
নয়তো চাবুক বলবে কথা...'

'তোমরা তো থাকো ঐ আরাম-ঘরে,
বুঝবে কেমনে সেই খনির গরম??
কত জ্বলে-পুড়ে টোকাই হীরে...
আর তোমরা তাই বেঁচে পার্টি করো...'

'খামোস!! হারামীর বাচ্চারা!!
একটু পরেই আসবে মালিক,
তাই আর না চেঁচিয়ে কাজে চলে যা...'

'নাহ, এই বেতনে কাজ হবে না...
দু'টো পয়সা বাড়াতেই হবে...'

'কুত্তার দল, কথা না বাড়িয়ে কাজে যা...
মালিক আসবে এক্ষুণি...
কাজে যা নয়তো অ্যাকশন...'

'আমাদের দাবি, আমাদের দাবি...
মানতে হবে, মানতে হবে...
দু'টো পয়সা, দু'টো পয়সা...
বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে...'

'পুলিশ... পুলিশ...
কী দেখছো তাকিয়ে??
অ্যাকশন...'

'অ্যাকশন...'

ঠা... ঠা... ঠা...
ঠা... ঠা... ঠা...
ঠা... ঠা... ঠা...

রক্ত.. রক্ত... আর রক্ত...
রক্তের চোরা স্রোতে ভাসে শ্রমিকের লাশ...
একজন-দু'জন এখনো বেঁচে,
যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছে, 'একটু জল হবে?? জল??'

ঠা... ঠা... ঠা...

'আ-আ-আ...'

এভাবেই বাড়তে থাকে শ্রমিকের লাশ...
একটা... দু'টো... হাজার... লাখ... কোটি...
আর মালিকেরা আরাম-ঘরে আয়েসে বসে খবর শোনে,
মিডিয়ার বানানো খবরঃ
'অবশেষে শ্রমিকেরা তাদের অন্যায্য দাবি থেকে সরে এসেছে,
কাল থেকে কাজে যোগ দিবে!!'

মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১২

রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ




প্রিয়ারে বেসেছি ভালো ,
বেসেছি ফুলের মঞ্জরিকে ;
করেছে সে অন্তরতম
পরশ করেছে যারে। [১]

এই পোস্টটা সেই প্রিয়াকে উৎসর্গ করলাম যে আমাকে ভালোবাসুক কিংবা না বাসুক আমার ভালোবাসার রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসে, সেই প্রিয়াকে উৎসর্গ করলাম যার প্রেমে পড়তে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রেমে মজেছিলাম নতুন করে।


মরণসাগরপারে তোমরা অমর,
তোমাদের স্মরি।
নিখিলে রচিয়া গেলে আপনারই ঘর
তোমাদের স্মরি।
সংসারে জ্বেলে গেলে যে নব আলোক
জয় হোক, জয় হোক, তারি জয় হোক—
তোমাদের স্মরি।
বন্দীদের দিয়ে গেছ মুক্তির সুধা,
তোমাদের স্মরি।
সত্যের বরমালে সাজালে বসুধা,
তোমাদের স্মরি।
রেখে গেলে বাণী সে যে অভয় অশোক,
জয় হোক, জয় হোক, তারি জয় হোক—
তোমাদের স্মরি। [২]

আমার কাছে এই কবিতার মানে 'তোমরা'-তে বিস্তৃত না, এর বিস্তৃতি শুধুই 'তুমি'-তে, আর সেই 'তুমি' হলেন আমার    প্রাণের ঠাকুর, আমার প্রিয় বুড়ো কবি, আমার ভাবনার অবিচ্ছেদ্য অংশ, আমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ রবি ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ দিবস। আজকে যে সময়ে আমি এই লেখাটা লিখে যাচ্ছি তখন আকাশ কাঁদছে শ্রাবণের ধারায়। আকাশ কেন কাঁদছে তা আকাশই জানে। হয়তো ঠাকুরের স্মরণে, হয়তো রক্তাক্ত আগস্টের শোকে, হয়তো বা এ শুধুই এক সাধারণ শ্রাবণধারা।

কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর একনিষ্ঠ ভক্ত রবি নিজ কাব্যের ব্যাপারে ছিলেন কিঞ্চিৎ সন্দিহান। ভেবেছিলেন লোকে কি এসব পড়বে কিংবা পড়েইবা ভাববে কীসব। তাই আর নিজের নামে লেখেন নি, যাত্রা শুরু করে ভানুসিং ঠাকুর নামে। কিন্তু সময়ের সাথে সেই নিজের ওপর বিশ্বাস না পাওয়া ছোঁকড়াই পরবর্তীতে হয়েছেন কাব্যমহীরূহ। যাঁর ছায়ার নীচে আমরা পাই শান্তির পরশ, প্রেমের দোলা, স্বাধিকার আহ্ববান, মুক্তির ডাক, ঈশ্বরের স্বরূপ। ছোঁকড়া থেকে আমার বুড়ো কবি হয়ে ওঠা এই লোকটা শুধু আমারই মন কাড়েন নি, কেড়েছেন সকল বাঙালির, বিশ্ববাসীর।




আমরা বাঙালিরা রোজ ভাত খেয়ে থাকি। কিন্তু ক'জনে খবর নিয়েছি কে সেই সোনার ফসলের জোগানদাতা! আমরা নেই না সেই খবর। একই রকম ভাবে কোন একটা ভালো কাজের ফলটা আমরা বয়ে চলি, কাজটা জায়গা করে নেয় মহাকালের উঠোনে। কিন্তু কাজের কাজীকে ক'জনেই বা চিনতে চায় কিংবা চিনেও মনে রাখে। একইভাবে রবীন্দ্র ঠাকুর নিজেই সংশয় প্রকাশ করে গিয়েছেন যে, লোকে তাঁর কাব্যফসল ঠিকই ঘরে তুলে নেবে, কিন্তু তাঁর তো আর লোকের ঘরে থাকা হবে না।


আমি শীত গ্রীষ্ম বর্ষা মানি নি, কতবার সমস্ত বৎসর ধরে পদ্মার আতিথ্য নিয়েছি, বৈশাখের খররৌদ্রতাপে, শ্রাবণের মুষলধারাবর্ষণে। পরপারে ছিল ছায়াঘন পল্লীর শ্যামশ্রী, এ পারে ছিল বালুচরের পাণ্ডুবর্ণ জনহীনতা, মাঝখানে পদ্মার চলমান স্রোতের পটে বুলিয়ে চলেছে দ্যুলোকের শিল্পী প্রহরে প্রহরে নানাবর্ণের আলোছায়ার তুলি। এইখানে নির্জন-সজনের নিত্যসংগম চলেছিল আমার জীবনে। অহরহ সুখদুঃখের বাণী নিয়ে মানুষের জীবনধারার বিচিত্র কলবর এসে পৌঁচচ্ছিল আমার হৃদয়ে। মানুষের পরিচয় খুব কাছে এসে আমার মনকে জাগিয়ে রেখেছিল। তাদের জন্য চিন্তা করেছি, কাজ করেছি, কর্তব্যের নানা সংকল্প বেঁধে তুলেছি, সেই সংকল্পের সূত্র আজও বিচ্ছিন্ন হয় নি আমার চিন্তায়। সেই মানুষের সংস্পর্শেই সাহিত্যের পথ এবং কর্মের পথ পাশাপাশি প্রসারিত হতে আরম্ভ হল আমার জীবনে। আমার বুদ্ধি এবং কল্পনা এবং ইচ্ছাকে উন্মুখ করে তুলেছিল এই সময়কার প্রবর্তনা— বিশ্বপ্রকৃতি এবং মানবলোকের মধ্যে নিত্যসচল অভিজ্ঞতার প্রবর্তনা। এই সময়কার প্রথম কাব্যের ফসল ভরা হয়েছিল সোনার তরীতে। তখনই সংশয় প্রকাশ করেছি, এ তরী নিঃশেষে আমার ফসল তুলে নেবে কিন্তু আমাকে নেবে কি। [৩]


ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই— ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী। [৪]

মহাকাল রূপ সোনার তরী ঠাকুরের সব সোনার ফসল তুলে রেখেছে, যা আমরা আজও ভোগ করে চলেছি। ঠাকুরের কাব্যসুধা আমাদের আন্দোলিত করে প্রতিনিয়ত। কবির ফসল চির অমর, চির সবুজ, সকল কালের, সকল বয়সের। কিন্তু ব্যক্তি কবি অমর হতে পারেন নি। তাঁকে দেহ ত্যাগ করতে হয়েছে সময়েরই সাথে। তাঁর নশ্বর দেহ অমর হতে পারে নি, কিন্তু ঠাকুর আর তাঁর সৃষ্টি কর্ম অমর হয়ে আছে বাঙালির বুকে, বিশ্ববাসীর মনে।

শেষ বয়সে এসে কবি তাঁর পরপারের ডাক স্পষ্টভাবে শুনতে পাচ্ছিলেন আর সে কথা তিনি তার কাব্যে প্রকাশ করে গিয়েছিলেন। এর একটা নমুনা খুঁজে পাওয়া যায় কবির আশি বছর পুর্ণ হবার ক্ষণে লিখে যাওয়া এক অমর কবিতাতে। কবিতাটিতে তাঁর নিজ জীবন নিয়ে চিন্তাধারাটা স্পষ্টরূপে ধরা দেয়ঃ


জীবনের আশি বর্ষে প্রবেশিনু যবে
এ বিস্ময় মনে আজ জাগে—
লক্ষকোটি নক্ষত্রের
অগ্নিনির্ঝরের যেথা নিঃশব্দ জ্যোতির বন্যাধারা
ছুটেছে অচিন্ত্য বেগে নিরুদ্দেশ শূন্যতা প্লাবিয়া
দিকে দিকে,
তমোঘন অন্তহীন সেই আকাশের বক্ষস্তলে
অকস্মাৎ করেছি উত্থান
অসীম সৃষ্টির যজ্ঞে মুহূর্তের স্ফুলিঙ্গের মতো
ধারাবাহী শতাব্দীর ইতিহাসে।
এসেছি সে পৃথিবীতে যেথা কল্প কল্প ধরি
প্রাণপঙ্ক সমুদ্রের গর্ভ হতে উঠি
জড়ের বিরাট অঙ্কতলে
উদ্‌ঘাটিল আপনার নিগূঢ় আশ্চর্য পরিচয়
শাখায়িত রূপে রূপান্তরে।
অসম্পূর্ণ অস্তিত্বের মোহাবিষ্ট প্রদোষের ছায়া
আচ্ছন্ন করিয়া ছিল পশুলোক দীর্ঘ যুগ ধরি;
কাহার একাগ্র প্রতীক্ষায়
অসংখ্য দিবসরাত্রি-অবসানে
মন্থরগমনে এল
মানুষ প্রাণের রঙ্গভূমে;
নূতন নূতন দীপ একে একে উঠিতেছে জ্বলে,
নূতন নূতন অর্থ লভিতেছে বাণী;
অপূর্ব আলোকে
মানুষ দেখিছে তার অপরূপ ভবিষ্যের রূপ,
পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে
অঙ্কে অঙ্কে চৈতন্যের ধীরে ধীরে প্রকাশের পালা —
আমি সে নাট্যের পাত্রদলে
পরিয়াছি সাজ।
আমারো আহ্বান ছিল যবনিকা সরাবার কাজে,
এ আমার পরম বিস্ময়।
সাবিত্রী পৃথিবী এই, আত্মার এ মর্তনিকেতন,
আপনার চতুর্দিকে আকাশে আলোকে সমীরণে
ভূমিতলে সমুদ্রে পর্বতে
কী গূঢ় সংকল্প বহি করিতেছে সূর্যপ্রদক্ষিণ —
সে রহস্যসূত্রে গাঁথা এসেছিনু আশি বর্ষ আগে,
চলে যাব কয় বর্ষ পরে। [৫]

জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে চলে যাওয়ার ডাক পাওয়ার কথা তাঁর 'জন্মদিনে' কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য জায়গাতেও প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে কবি অত্যন্ত বিনয়ের সাথেই প্রকাশ করেছেন, যে মাটি হতে তাঁর শুরু সেমাটিতেই তাঁকে ফেরত যেতে হবে। মানবদেহ ত্যাগ করে কালের মৃত্যু অন্ধকারে তাঁকে হারিয়ে যেতে হবে।


ফসল গিয়েছে পেকে,
দিনান্ত আপন চিহ্ন দিল তারে পাণ্ডূর আভায়।
আলোকের ঊর্ধ্বসভা হতে
আসন পড়িছে নুয়ে ভূতলের পানে।
যে মাটির উদ্‌বোধন বাণী
জাগায়েছে তারে একদিন,
শোনো আজি তাহারই আহ্বান
আসন্ন রাত্রির অন্ধকারে।
সে মাটির কোল হতে যে দান নিয়েছে এতকাল
তার চেয়ে বেশি প্রাণ কোথাও কি হবে ফিরে দেওয়া
কোনো নব জন্মদিনে নব সূর্যোদয়ে! [৬]

যাবার সময়ে নিজেই বলে গেছেন তাঁর সময় হয়েছে কিন্তু তিনি জ্বলে রইবেন ধ্রুবতারাসম। সত্যিই আমার বুড়ো কবিটা এখনো জ্বলজ্বল করছে ধ্রুবতারাসম। তাঁর আলোর কোন ক্ষয় নেই। এ অক্ষয়, এ অবিনশ্বর।


সমুখে শান্তিপারাবার ,
ভাসাও তরণী হে কর্ণধার।
তুমি হবে চিরসাথি ,
লও লও হে ক্রোড় পাতি ,
অসীমের পথে জ্বলিবে জ্যোতি
ধ্রুবতারকার।

মুক্তিদাতা , তোমার ক্ষমা , তোমার দয়া
হবে চিরপাথেয় চিরযাত্রার।

হয় যেন মর্ত্যের বন্ধন ক্ষয় ,
বিরাট বিশ্ব বাহু মেলি লয় ,
পায় অন্তরে নির্ভয় পরিচয়
মহা-অজানার। [৭]

ইশ, যদি আমার জন্মটা হতো আগে, যদি দেখতে পেতাম তাঁকে। জীবনের বড় একটা আক্ষেপ কেন আমি কবিকে দেখতে পারি নি, তাঁর পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারি নি -  এ সাধ আর মিটবার নয়। আমরা আর কখনই কবিকে খুঁজে পাবো না, যতই শোকময় হয়ে, সকরুণভাবে কাঁদি না কেন। আমরা রয়ে আছি মনিবহারা কুকুরের মতন। আমরা শুধু মনিবের ফেলে চৌকিসম সাহিত্যসুধা পান করে মনের পিয়াস মেটাতে পারি।


কুকুর মনিবহারা যেমন করুণ চোখে চায়
অবুঝ মনের ব্যথা করে হায় হায় ;
কী হল যে , কেন হল , কিছু নাহি বোঝে —
দিনরাত ব্যর্থ চোখে চারি দিকে খোঁজে।
চৌকির ভাষা যেন আরো বেশি করুণ কাতর ,
শূন্যতার মূক ব্যথা ব্যাপ্ত করে প্রিয়হীন ঘর। [৮]

৬ আগস্ট, ২০১২
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

তথ্যসূত্রাবলিঃ

[১] শেষ লেখা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকাশকালঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর, ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দ।
[২] মরণসাগরপারে তোমরা,গীতবিতান - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকাশ কালঃ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ।
[৩] ভূমিকা, সোনার তরী - রবীন্দ্রনাথঠাকুর। ভুমিকা সংযোজন কালঃ বৈশাখ, ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ।
[৪] সোনার তরী, সোনার তরী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকাশ কালঃ ১৩০০ বঙ্গাব্দ।
[৫] জীবনের আশি বর্ষে প্রবেশিনু যবে, জন্মদিনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকাশ কালঃ ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ।
[৬] ফসল গিয়েছে পেকে, জন্মদিনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকাশ কালঃ ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ।
[৭], [৮] শেষ লেখা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকাশকালঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর, ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দ।

চিত্রউৎসাবলিঃ ভারতীয় পুরোনো ছবির সাইট।