বুধবার, ৫ জুন, ২০১৩

আমার সাম্যবাদ...

আমি ইঞ্জিনিয়ার মানুষ হলেও বাংলাদেশের বর্তমান স্রোতে গা ভাসিয়ে এম,বি,এ, এর পেছনে দৌড়াচ্ছি। আজ ছিলো প্রিন্সিপ্যাল অব একাউন্টিং এর ক্লাশ। গত ক্লাশগুলো সহজ মনে হলেও আজকের অ্যাডজাস্টমেন্ট থিওরি মাথার ওপর দিয়েই যাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ মনযোগ দিয়েও যখন বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম তখন 'নাই কাজ তো খই ভাজ' এর শুরু। আমার ক্ষেত্রে এটা হল কিছু লেখবার চেষ্টা করলাম। আমি কাগজে-কলমে বাম-ঘেঁষা, সাম্যবাদ, কমিউনিজম, বিপ্লব-বিদ্রোহের স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবে পুঁজিবাদের ছাত্র। আজকের লেখাটাও হয়ে গেলো সেই নিয়েই।

আমার সাম্যবাদ

আমি তো সাম্যবাদী মানুষ!
নিজের কিছুই নাই,
সবার তরেই চাই!
ওড়ে কমিউনিস্ট ফানুশ!

গাছতলাতে রোদ্দুর-পোড়া,
আর কাকভেজা হই।
উষ্ণ দখিণ হাওয়া
আর পাতায় ছাওয়া
ছোট্ট একটা ঘর।
হেথায় র'বে মানুষ জোড়া।

সবটাই মনের স্বপন...
আমার কেউই নাই,
সাম্যেরই গান গাই!
জাগে মনে লোভের বপন!

ঘর চাই! ঘর চাই!
নিজের তরে একটা ঘর!
দখিণা জান্‌লা র'বে,
কবাটও থাকবে হবে;
যেন যায় না কো বয়ে ঝড়!

অন্ধকারে খেলবে জোনাই
ঐ জান্‌লার ধারে।
হয় যেন খাল-পাড়ে!
মোর এমনই ঘর চাই!

যদি ঘরটা হত বা পাকা,
দেওয়াল হত লাল!
গায়ে বিপ্লবের শাল
চড়িয়ে মাওসেতুং আঁকা!

রাতে যদি ল্যাম্পশেড জ্বেলে
শীতল মেশিনে বসে
হত দ্রোহী-নক্সা কষে!
কতই না ভালো হত
আমি এমন ঘরটা পেলে!

রহিম-রাজু পায়না ভাত!
মুক্তিরই কথা ভাবি,
খুঁজি অর্থনীতি-চাবি!
কেটে চলে ভাবনার রাত...

ভেবে ভেবে হয়রান হই,
ভোরবেলা থামি আমি।
ঐ সুয্যি বুঝি হাসে!
ভাবনার দাঁড়ি টানি
কত বিপ্লবী সুবাসে!
আমি আর সাম্যবাদী নই!

শুরুয় রহিম-রাজু,
আমি শেষটা টানি আমাতে।
বদলে যে গেছি আমি,
বদলে গেলো সবটা।
ধীরে ধীরে যায় কমে
কমিউনিস্ট রবটা।
সাম্যবাদ আজ ম্লেচ্ছ
ফাঁদওলা পুঁজিবাদী পাতে!


০৫ জুন, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

সোমবার, ৩ জুন, ২০১৩

পোড়া লাশে স্বজনের বাস...

টিকটিকির লেজ সাংঘাতিক এক জিনিস। টিকটিকির লেজ খেয়ে কেউ মরে না, নেশায় চূড় হয়ে আধমরা হয়ে পড়ে থাকে। কোন হুঁশ থাকে না। মাঝে মধ্যে দু-এক বার হাত উঠিয়ে কিছু বললেও আবার ঘুমের রাজ্যে পৃথিবী কাব্যময় হয়ে ওঠে। দু'দিন না কাটলে এই ঘুম আর যাবার নয়, সব ভোলা যায় এক নিমিষেই।

আজ ৩ রা জুন। বছর দুই আগে এইদিনেই ঘটেছিল নিমতলী ট্র্যাজেডি। বেশি না, মাত্র দু'শ মানুষ পুড়েছিল আগুণে। দু'শ সংখ্যা আর বেশি না, ক'দিন আগে রানা প্লাজায় হাজার লাশ দেখে ফেলেছি।  গোটা জাতি টিকটিকির ল্যাজ খেয়ে ঝিমোচ্ছে, নিমতলী ট্র্যাজেডি মনে রাখবার ফুরসাৎ কই! মনে থাকলে তো বিচারের বাণী একা একা কাঁদতো না, কেমিক্যালের গোডাউন সরে যেত। কিন্তু ঐ যে টিকটিকির ল্যাজ আছে না! সব ভুলে যাওয়ার মহৌষধ। 


আমিও এক *দির ভাই, আমার কিচ্ছু করার খ্যামতা নাই। বইয়া বইয়া কাব্য মারি। এইবারের দৌড় সনেটেই শ্যাষ!


পোড়া লাশে স্বজনের বাস...

চেয়ে দ্যাখ্‌ পোড়া লোক, লাশ হয়ে রয়।
লাশটা আর একা না, শ' ছাড়িয়ে গ্যালো,
সত্যিই তো সব লাশ, নয় ড্রামা-ম্যালো!
ওরা হাতছানি দেয়। মনে লাগে ভয়?
আমার ভয় লাগে না, নিজের মানুষ।
আমি পোড়া লাশ শুঁকি, স্বজনের বাস!
কয়লা-কালি মেখেও টিকে রয় শ্বাস।
লাশ গুণে দিল-খুশ্‌! নাই রে কি হুঁশ?

দিন-মাস -সন গ্যালো, নেই পোড়া ছাই,
সব ভুলিয়ে দেয় রে নয়া লাশ এসে।
সরে ন কো কেমিক্যাল, কে সরাবে ভাই?
কেঁদে চলে জাজমেন্ট, আজব এ দেশে।
পুড়ছে নতুন লোক, যেন শেষ নাই!
আর কত জন ম'লে পৌঁছবে যে শেষে?

৩ মে, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি