বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১১

গোপন ক্যামেরার নজরদারি থেকে বাঁচার উপায় কি জানা আছে??

কিছু ওয়েব-সাইট আর ফেইসবুকের কল্যাণে লাখো মানুষের কাছে একটা তথ্য পৌঁছে গেছে যে সেল ফোন ব্যবহার করে গোপন ক্যামেরা সনাক্ত করা সম্ভব। ঐখানে যেভাবে সনাক্তকরণের কথা বলা হয়েছে সেটা টেলিকম এ পড়াশোনা করা একজন হিসেবে আমাকে বেশ ভাবালো। সেই থেকে আমি, আমার বন্ধু পার্থ আর আবরার মিলে এই লেখাটা দাঁড় করালাম। আশাকরি অনেকের কাজে লাগবে।

ঐ লেখাগুলোতে দেখানো হচ্ছে যে আরএফ ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তারবিহীন ক্যামেরা্র কারণে সেলফোন থেকে ফোন করা যায় না।

ব্যবহৃত তারবিহীন গোপন ক্যামেরাগুলোর অধিকাংশতেই ক্ষেত্রেই ২.৪-২.৫ গিগা হার্জের আর এফ সিগনাল ব্যবহার করা হয় যা সাধারণ সেলফোনের মাধ্যমে সনাক্ত করা সম্ভব হবার কথা না।

বাংলাদেশে (এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশে) প্রচলিত সেলফোনগুলো GSM-900 এবং GSM-1800 ব্যবহৃত হয়। GSM-900 এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডঃ সেলফোন থেকে বেইজ-স্টেশনে পাঠাতে ৮৯০-৯১৫ মেগা হার্জ আর বেইজ-স্টেশন থেকে সেলফোনে ডাটা গ্রহণ করার সময় ৯৩৫-৯১৫ মেগা হার্জ। অন্যদিকে GSM-1800 এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডঃ সেলফোন থেকে বেইজ-স্টেশনে পাঠাতে ১৭১০-১৭৮৫ মেগা হার্জ আর বেইজ-স্টেশন থেকে সেলফোনে ডাটা গ্রহণ করার সময় ১৮০৫-১৮৮০ মেগা হার্জ।

ফলে গোপন ক্যামেরার ফ্রিকোন্সির জন্য সেলফোনের ফ্রিকোয়েন্সি ব্লক হয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, খুব একটা ইন্টারফেয়ারেন্সেরও সুযোগ নেই। তাই ঐভাবে সেলফোন দিয়ে আরএফ ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গোপন ক্যামেরা সনাক্ত করা সম্ভব না।

এভাবে যেখানে সেখানে গোপন ক্যামেরাগুলো কেন বসানো হয়?? কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষার্থে এভাবে নজরদারি করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে খারাপ উদ্দেশ্যে। তাই এগুলো বসানো হয়ে থাকে মেয়েদের বাথরুমে, ট্রায়াল রুমে, হোটেল, এমনকি কখনো কখনো লোকজনের বাসাতেও। মূল উদ্দেশ্য মেয়েদের শরীর আর নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ দৃশ্যগুলো ধারণকরা, সেগুলো নিয়ে কাউকে হেয় করা, ব্যবসা করা।

গুগলে ‘victim by hidden camera’ লিখে খোঁজ করলে তৎক্ষণাৎ পাওয়া যাবে ৩৬ লাখ ওয়েব-সাইট লিঙ্ক, ৩৬৪ টি ভিডিও এর লিঙ্ক। আর ‘hidden camera in girls toilet’ লিখে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ওয়েব-সাইট লিঙ্ক, ২৫৪ টি ভিডিও এর লিঙ্ক। এর থেকেই গোপন ক্যামেরার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।


ছবি - আরএফ ক্যামেরা ও এর রিসিভার

অনেক ধরণের ক্যামেরা আছে যা এসব কাজে ব্যবহৃত হয়। আগেকার দিনের ক্যামেরাগুলোর আকার বড় ছিল বলে অনেক সহজেই তা ধরা যেত। কিন্তু আজকাল ইলেকট্রনিক্স এর বিপ্লবে এদের আকার এত ছোট হয়ে গেছে যে সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব না। তার উপর এখনকার এই ক্যামেরাগুলো সাধারণত তারবিহীন হয়ে থাকে এবং আকার এত বেশি ছোট হয় যে অনেকসময় খালি চোখে এদের অস্তিত্ত্ব নির্ণয় করা অসম্ভব।


ছবি - অতিক্ষুদ্র ক্যামেরা যা চোখে পরা খুব কঠিন

এবার একটু জেনে নিই যে কীভাবে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন আর এর থেকে প্রতিকারে উপায়ই বা কী –

১) অনেক সময় বিশেষ কারো প্রতি নজর রাখতে কারো বাসাতেই গোপন ক্যামেরা বসাতে পারে। সাংবাদিকেরা সেলিব্রেটিদের বাসায় এই কাজ করতে পারে, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কাউকে হেয় করতেও এই কাজ করতে পারে। আবার অনেক সময় সন্দিহান স্বামী/স্ত্রী বাসাতে বসে তার স্ত্রী/স্বামী কী করছে তা জানার জন্যো করে থাকতে পারে।

এ কাজের জন্য ক্যামেরা বাসার যেকোন জায়গাতেই বসানো হতে পারে। তাই সোফার কোণা, ঘড়ি, টেলিভিশন, ফ্যান এর মতন জায়গাও সন্দেহের বাইরে না। এসব জায়গাতে চোখে পরার মতন কালো দাগ দেখলেই তা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।


ছবি - হয়তো এভাবেই আপনা্র উপর লক্ষ রাখা হচ্ছে

বাসার সব কিছু ঠিক জায়গাতে আছে কিনা কিংবা নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা তাও দেখে নেওয়া উচিত। অনেকে অভিনন্দন জানাতে ফুলের বুকির মাঝেও ছোট্ট একটা ক্যামেরা লুকিয়ে রাখতে পারে। তাই সাবধান!!

ঘরের বাতি নিভেয়ে এলইডি থেকে নির্গত হয় এমন ক্ষুদ্র লাল সবুজ আলো খুঁজে দেখা উচিত। বেশিরভাগ ক্যামেরার মাইক্রফোনের পাওয়ার অন করার পরপরই পাওয়ার অন ইনডিকেটর বাতি জ্বলে ওঠে। অনেকে ক্যামেরা স্থাপন করার সময় এই ফিচার বন্ধ করতে ভুলে যায়। এতে সহজে অন্ধকার জায়গায় ক্যামেরা সনাক্ত করা যায়। সাথে রুমে থাকা আয়না এবং জানালার কাঁচ গুলো ফ্ল্যাশ লাইট দিয়ে চেক করে নেয়া উচিত। সম্ভব হলে কিছু দিয়ে স্বচ্ছ কাঁচ ঢেকে দেয়া উচিত।

অনেক ক্যামেরা আছে মোশন সেন্সিটিভ। যখন ক্যামেরা ভিডিও ধারণ করে তখন এর থেকে হালকা শব্দ নির্গত হয়। তাই সতর্কতার সাথে খেয়াল করে দেখা দরকার যে কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কীনা।

২) গেষ্ট হাউস বা আবাসিক হোটেলে ওঠার আগে যদি সম্ভব হয় সাথে একটি আরএফ সিগনাল ডিটেক্টর (RF signal detector) বা ক্যামেরা ডিটেক্টর সাথে কিনে রাখতে পারেন। এটি আকারে ছোট বহন করতে সুবিধা এবং খুব বেশি দামিও না। আরএফ সিগনাল ডিটেক্টর দিয়ে সম্পূর্ণ সার্চ করা যায় এবং কোন ধরনের বিশেষ সিগনাল সনাক্ত হলেই ডিটেক্টর সিগনাল দিয়ে সতর্ক করে দিবে।


ছবি - হোটেলে এভাবেই নজর রাখা হয়

কিছু কিছু হোটেলে ডুয়েল মিরর বসানো থাকে। ডুয়েল মিররের উল্টো পাশ থেকে আয়নার এপাশের সব কিছুই পরিষ্কার দেখায় যায় সাধারণ কাঁচের মতো। কিন্তু এপাশ থেকে দেখলে এটাকে একটা সাধারণ আয়না ছাড়া কিছুই মনে হবে না। অনেক গেস্ট হাউসে এই ডুয়েল মিররের উল্টোপাশে ক্যামেরা বসিয়ে কাপলদের ক্লিপ রেকর্ড করা হয়। তাই হোটলে বা গেষ্ট হাউসে থাকা আয়নাগুলো সঠিকভাবে চেক করে নেয়া উচিত।

আয়নার উপর একটা আঙ্গুল রাখুন। আপনার আঙ্গুল আর আয়নায় আঙ্গুলের প্রতিবিম্বের মাঝখানে যদি কোনো ফাঁক না থাকে (মানে দুটো আঙ্গুলের মাথা যদি একেবারে একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে) তাহলে বুঝবেন এটা ডুয়েল মিরর। আর যদি মূল আঙ্গুল এবং আয়নার আঙ্গুলের মাঝে একটু ফাঁক থাকে (মূলত আয়নার থিকনেসের সমান) তাহলে বুঝবেন এটা একটা সাধারণ আয়না।

৩) মহিলারা যারা জিমে যান তাদেরকে জিমের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় এবং ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহারের আগে সঠিকভাবে চেক করে নেয়া উচিত। আশেপাশে পরে থাকা জিম ব্যাগগুলো চেক করে নিলে ভাল হয়। কারন আজকাল জিম ব্যাগ নামক হিডেন ক্যামেরা বাজারে এসেছে। এতে অতি ক্ষুদ্র ক্যামেরা লাগানো থাকে।

তাছাড়া মেয়েরা যখন কাপড় কিনতে গিয়ে ট্রায়াল রুমে কাপড় বদলে দেখেন কিংবা বাইরের কোথাও অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেটে যান তখন সে জায়গাটি খুব ভালো করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। চারদিকে চোখে লাগার মতন কিছু দেখা যায় কিনা, কোন ছোট কালো কিছু দেখা যায় কিনা। সাথে কাপড় বদলের পূর্বে ট্রায়াল রুমের আয়নাটিও পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।


ছবি - ট্রায়াল রুমে মেয়েদের শরীর ধারণের অপকৌশল

৪) বর্তমান টিনেজারদের মাঝে সাইবার ক্যাফেতে বসে মেইক-আউট করার প্রবণতাও দেখা যায়। অনেক সাইবার ক্যাফের লোকেরা সেখানে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে রাখেন এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ধারণ করে ওয়েব-সাইটে ছেড়ে দেয় কিংবা ব্যাক্মেইলিং এর কি হিসেবে ব্যবহার করে। তাই টিনেজারদের এই ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকা উচিত।

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি এতটা এতটা এগিয়ে যাচ্ছে যে ক্যামেরাগুলো দিনকে দিন সনাক্ত করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। তাই সকলেরই উচিত সাবধানে থাকা। পার্ক কিংবা রেস্টুরেন্টে নিজেদের সংযত রাখা এবং নিজের পোষাক ঠিক আছে কিনা সেইদিকে খেয়াল রাখা। অপরিচিত কাউকে ছবি তুলতে দেওয়া উচিত না। ফেইসবুকে নিজের ছবি গুলো সঠিকভাবে প্রাইভেসি দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।

গোপন ক্যমেরার মাধ্যমে কারো উপর নজর রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো এসব ব্যাপারে অনেক সচেতন হলেও আমাদের মতন দেশে আইন থাকলেও সে আইনের কোন প্রকার প্রয়োগ নেই। তাই নিজের সম্মান বাঁচাতে নিজেকেই যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

একজন কবির গাজী লাশ হয়ে গেল...

আমি বরাবরই একটু বোকা। তাই আমার করার ক্ষমতা খুবই সীমিত জেনেও সেই অক্ষমতা থেকে কষ্ট পাই। আমার অক্ষমতা আমি বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারছি না, আমার অক্ষমতা আমি দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি না, আমি একজন কবির গাজীকে বাঁচাতে পারিনা, আমি একজন লিমনের পা ফিরিয়ে দিতে পারি না, একজন ইয়াসমীন-পূর্ণিমা-সীমা-চৌধুরীকে বাঁচাতে পারি না কিংবা পারিনা রুমানাদের রক্ষা করতে। আমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিজেই কষ্ট পাওয়া।

কাল রাতে জাগো ভাইয়ের পোস্টে আদিল ভাইয়ের লিঙ্কের লেখায় গিয়ে লেখাটা বার বার পড়ছিলাম। অনেক কষ্ট লাগছিলো। তারপরও পরছিলাম। আমাদের দেশেই এসব হচ্ছে, আর আমরা নীরব সাক্ষী। তবে এই কষ্ট পাওয়া আমার কর্তব্যের মাঝে পরে। রাতে আর ঘুমাতে পারি নি। চোখ বুঝলেই ঐ কবির গাজীর কথা মনে হয়েছে। ঐ নৃশংসতার কথা মনে হয়েছে। ঘুম না আসায় আবোল-তাবোল লিখে গিয়েছি। অবশেষে ৭ টার দিকে আমি ঘুমাতে গিয়েছি।

আমার আবোল-তাবোল কথাগুলো তুলে ধরলাম -

আমার ঘুম চলে যায়
চোখ বুজলে পরে।
চোখের কোণে ভাসে -
'কবির গাজী মরে'
শয়তানেরা ধরলো তারে
বাঁধলো শক্ত করে,
অত্যাচারে রইলো ঝুলে
ঐ বট গাছের 'পরে।
দমখানি তার বেড় হয়ে গেল
জোটেনি ফোঁটা পানি,
লুটিয়ে পরে নীথর দেহ
সাথে নিয়ে মিছে গ্লানি।
এভাবেই মরে কবির গাজীরা
রুলুলদের হাতে পরে,
দোষ না করেও দোষী হতে হয়
নানান অত্যাচারে।
আর কতশত কবির গাজীরা
মরবে বিনা দোষে??
ঘুম ভেঙে ফিরবো মোরা
নতুন করে হুঁশে??
সব শোষিত দাঁড়িয়ে ওঠো
নিজের পায়ের 'পরে,
অস্ত্র তোল, যুদ্ধ হবে
সাম্যবাদের তরে।
শুধু স্বাধীনতা না, মুক্তিও চাই
সারাটা বাংলা জুড়ে,
রক্তচোষা বাদুরগুলোকে
ছোড় আস্তাকুড়ে।

সবাই আসুন। দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজে হাত বাড়াই। অসহায় কবির গাজী-সীমা চৌধুরী-ইয়াসমীন-পূর্ণিমা-রুমানা-লিমনদেরকে বাঁচাই। ঐসব রক্তচোষা বাদুড়দের সমাজ থেকে বিদেয় দেই।

**কারো কাছে যদি সবটাই ঝাপসা মনে তবে দেখে নিনঃ
শতাধিক লোকের সামনে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা

বুধবার, ২৯ জুন, ২০১১

বীর বাঙালি… জেগে ওঠো …


লাখো মায়ের সম্মান
আর বুকের রক্ত দিয়ে
শহীদ-গাজী-বীর সেনানী
এসেছে পতাকা নিয়ে,
লাল-সবুজ তুলেছে গগণে
জয় বাংলা বলে।
আজো শুধু বলি সেই গল্প
কত যুগ গেছে চলে।
ধূলো পড়েছে সেই স্মৃতিতে,
বাঙালি ঝিমায় ঘুমে।
বাঙালি নামের রক্ত চোষারা
সুযোগে উঠেছে ধুমে।
পথে পথে আজ সন্ত্রাস
রক্তের হানাহানি।
নেত্রীরা আছে গদি বাঁচাতে
ঐ নিয়ে টানাটানি।
কেউ চেয়ে দেখে নাতো
কোথা গেছে দেশ,
ছাড়ে শুধু ফাঁকা বুলি -
'সোনার বাংলাদেশ'
শয়তানের হাতে বাউল মরে
গলাচিপা, পটুয়াখালী,
দেশ বাঁচাতে র‍্যাব নেমেছে
আর লিমন খেয়েছে গুলি!!
ঘরে-বাইরে মা-বোনেরা মরে
পুরুষের মার খেয়ে
আমরা শুধু 'উহু-আহা' করি
ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে।
ব্যাস্ত সবাই সুশীল-মুখোশে
গুছাই নিজের আখের,
মুখ খুলতে ভয়েই মরি
যেন এ করাত শাঁখের।
বীর বাঙালি হয়েছে সময়
জেগে ওঠো আজ তবে,
নতুন করে দেশটা গড়ি
হাত হাত রাখো সবে...

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১১

দেশকে বাঁচাও... মাকে বাঁচাও...


যশোর রোড - মৌসুমী ভৌমিক




এটা কি শুধুই গান??
এটা কি শুধুই কান্নার গান??
এটা কি শুধুই মন খারাপ করার গান??
ঐ ফেলে আসা দিনগুলো কি শুধুই ছুড়ে ফেলার??
এখান থেকে কি নতুন করে জেগে উঠতে ইচ্ছে করে না??
ইচ্ছে কি করে না নিজে দেশের নাম বিশ্বের বুকে উঁচু করে ধরতে??
ইচ্ছে কি করে না পাক-ভারত-মার্কিনীদের থাবা থেকে নিজেদের বাঁচাতে??
ইচ্ছে কি করে না নিজের দেশকে বিক্রি করে দেওয়াটাকে ঠেকাতে??
ইচ্ছে কি করে না দেশের একটু জন্য কাজ করতে??
ইচ্ছে কি করে না দুর্নীতিটা ছেড়ে দিতে??
ভুলে কি গেছি দেশটাও মা??
সব দেখেও চুপ কেন??

যদি দেশ মায়ের জন্য কিছু একটা করতে ইচ্ছে করে, তবে জেগে ওঠো।
মাথা অনেক নুয়েছি, এবার নোয়ানোর জালটাকে ছিড়ে ফেলো।
দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেবার জন্য না।
কাজ করে দেশ মায়ের মুখ উজ্জ্বল করো।
প্রিয় এই দেশটাকে রক্ষা করো।
প্রিয় মাকে রক্ষা করো।

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১১

আজকে নাকি বাবা দিবস??


সারা বছর বাপের খবর রাখে না... শুধু টাকা দরকার হলেই বাপের কাছে গিয়ে হাত পাতে... আর 'বাবা দিবস' নামক দিবস আসলেই ফেইসবুকে বাপের সাথে নিজের ছবি দিবে আর স্ট্যাটাসে বাবাকে নিয়ে উহু আহা করবে... এই হল বাপের প্রতি ভালবাসা - সবাই না, তবে অনেকেরই দেখি এরকম দশা!!

বাবা দিবস টা অনেকটাই এরকম। লোক দেখানো ভালোবাসায় ভরপুর!!

পশ্চিমা দেশগুলোতে আবগের দাম কম। তারা একটা বয়সের সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের ছেড়ে দেন, নিজের রাস্তা নিজেকেই দেখে নিতে বলেন। তারা আমাদের দেশের বাবা-মায়ের মতন সন্তানদের আঁকড়ে ধরে রাখেন না। ছেলেরা-মেয়েরা নিজেদের রাস্তা দেখে নেন। কাজ খোঁজেন, সঙ্গী খোঁজেন, জীবনের সফলতা খোঁজেন। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জায়গা হয় বৃদ্ধাশ্রমে, তাদের দেখার ফুরসাৎ মেলে না। তাই এই সুযোগ করে দেবার জন্য বছরে একটা দিন ঠিক করা হয়েছে, যেদিন সন্তানেরা কার্ড, ফুল, কেক নিয়ে বাবার সাথে দেখা করবেন।

এই দিবসের প্রচারণা চালায় পশ্চিমা ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান গুলো। কেন করে?? কারণ এই দিন উপলক্ষে কার্ড বিক্রি হবে, ফুল বিক্রি হবে, কেক বিক্রি হবে, বাবাদের দিতে নানা রকম উপহার সামগ্রী কেনা-বেচা হবে।

কিন্তু আমাদের দেশে এই প্রচারণা কেন?? আমরা তো এত ব্যস্ত না যে বাবা-মায়েদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে জীবনের সফলতা খুঁজবো! ছোট বেলায় বাবার হাতে যত মারই খাই না কেন বাব্র আদরই সব ভুলিয়ে দিয়েছে। মার খাবার সময় ভুল করেও বাবার খারাপ চাইলেও একবারের জন্য হলেও পারতপক্ষে বাবাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবি না। বাবার সময়ে বাবা আমাদের দেখেছেন, আমাদের সময়ে আমরা বাবাকে দেখবো। আমাদের ৩৬৫-৩৬৬ দিনই আমাদের বাবার জন্য, মায়ের জন্য। প্রতিটা দিনই তাই বাবা দিবস, মা-দিবস। সব দিনই ভালোবাসবো। এক দিনের জন্য কার্ড দিয়ে, কেক কেটে দেখানো ভালোবাসার কি কোন প্রয়োজন আছে??

প্রতিদিনই দেশকে ভালোবাসবো, দেশের জন্য শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করবো, তাদের স্যালুট জানাবো, এর সাথে সাথে স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবসটাও উদযাপন করবো। সবদিনই করবো তবে একটা বিশেষ দিন থাকতে পারে। বাবা বেঁচে থাকতে পরিবারের সবাই মিলে তা উদযাপন আর উনি পরলোকগত হয়ে থাকলে তো মৃত্যু দিবসে ধর্মীয় আচারের ব্যাপার আছেই।

কিছু মানুষ কার্ড ব্যবসায়ীদের ব্যবসা টিকানোর স্রোতে ভেসে ব্যপারটাকে লোক-দেখানো পর্যায়ে নিয়ে গেছে, মূলত তাদের জন্যই এই পোস্ট।

বুধবার, ১৫ জুন, ২০১১

নারী নির্যাতন আর কিছু কথা - যা না বললেই নয়...



সারা বিশ্বের কথা বাদ দেই, শুধু এই বাংলার কথাই বলি। এই বাংলার অন্তত অর্ধেক ঘরে নারী নির্যাতন হয়। আমরা দেখতে চেষ্টা করি না। কারণ ওরা সখিনা, মর্জিনা, কিংবা সালেহা, রাহেলা। ওদের নিয়ে ভাববার সময় কোথায়?? কিন্তু আমাদের ঢাবির শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের উপর অত্যাচারের কথা শুনে আমরা ঠিকই আঁতকে উঠি। আঁতকে ওঠার মতনই। কিন্তু আমাদের বিবেক রাহেলা-সালেহাদের জন্য না কেঁদে শুধু রুমানা মঞ্জুরদের জন্যই কাঁদে। কারণ উনি ঢাবির শিক্ষিকা। এই একচোখামি সারা দেশ জুড়েই চলছে।

কোন কোন নারী মানবাধিকারের কর্মী সেমিনারে বসে বড় বড় বুলি আওড়ায়, নারী মুক্তির আন্দোলন করে। আবার বাসায় গিয়ে ছেলের বউকে নির্যাতন করে, ছেলেকে বউ পেটাতে উসকে দেয়। কোন কোন পুরুষ পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা সেমিনারে নারীবাদী কথা বলে বাহবা পায়। অথচ ঘরে ফিরে বউ পেটা্য, হয়তোবা বউয়ের দোষঃ তরকারিতে নুন কম হওয়া। এইসব বর্ণচোরার কোন অভাব নেই। বরং এদের সংখ্যাই বেশি।

দেশে দুই নারী মিলে সাড়ে ১৭ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী। কই তারা তো একটা নারী-নীতিই চালু করতে পারলো না!! এক্ষেত্রে বাঁধা নাকি কোরান-হাদীস। কোরান-হাদীসে আরো কত কথাই লেখা আছে সেগুলা নিয়া তো তাদের মাথাব্যথা নাই। কোরান-হাদীসে নারীদের ভাগ কম দেওয়াকে অনেক শিক্ষিত পুরুষই কোরাণ না মানলেও এইবেলা মেনে নেন, কারণ এতে যে তারই স্বার্থ আছে। এদেরকে একবার বুকে হাত দিয়ে বলতে বলেন যে কোরানে যদি বলা হত পুরুষেরা নারীর অর্ধেক সম্পত্তি পাবে তবে মানতো কিনা। এইবেলা কবি অবশ্যই নীরব থাকবেন।

নারী নির্যাতনের যতগুলো কারণ আছে তার শুরুতেই থাকবে যৌতুক আর পরকীয়া। যারা কোরান-হাদীসের কথা বলে নারী-নীতির বিরোধীতা করেন তারা কি বলতে পারবেন যে কোরান-হাদীসের কোন আয়াতে যৌতুকের কথা বলা হয়েছে?? প্রয়োজনে একটু পড়াশোনা করেই নাহয় উত্তর দিন। এইবার আসি পরকীয়ার কথায়। অনেকেই (বিশেষ করে তথাকথিত নারীবাদিরা) বোঝাতে চান যে এই পরকীয়া শুধু পুরুষেরাই করে থাকেন। বড়ই হাস্যকর। নারীরাও যে এই ব্যাপারে খুব একটা পিছিয়ে নেই সেটা স্বীকার না করলেই বক্তাদের অন্ধ না বলে পারছি না।

শুধু একজন রুমানা না, সকল নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। তবে এখানে পুরুষদের করার মতন বিশেষ কিছু নেই। নারীদের এই লড়াইতে তাদের নিজেদেরকেই লড়তে হবে। নিজেদের লড়াই নিজেরা করলেই তাতে প্রাণ থাকে, অন্য করলে তার আর দাম থাকে না।

পোস্টটা এখানেই শেষ করলে হয়তো ভালো হত, কিন্তু তাতে যে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

পুরুষেরা গায়ে হাত তোলেন। আর নারীরা কী করেন?? ঘরে ঘরে যে নারীরা পুরুষদের উপর মানসিক অত্যাচার করেন তার কোন হিসেব নেই। হিসেব করলে একটা ভয়ংকর তথ্যই পাওয়া যাবে।

এই ব্লগে অনেক বিবাহিত পুরুষ ব্লগার আছেন। তারা একবার চিন্তা করে দেখেন তো আপনি আপনার স্ত্রীর কাছে মানসিক অত্যাচারের স্বীকার কিনা!! হয়তো লজ্জাই অনেকেই স্বীকার করবেন না। তবে লজ্জা ভাঙ্গার সময় চলে এসেছে। আর বিবাহিত নারী ব্লগাররা একটু ভেবে দেখেন তো আপনার স্বামীর সাথে যা যা করেন তা ঠিক করেন কিনা আর তাকে মানসিকভাবে কতটা ভালো থাকতে দিচ্ছেন।

ঘরে ঘরে নারী নির্যাতনটা বন্ধ হওয়া খুব জরুরী। এর সাথে নারীদের পুরুষদের উপর মানসিক অত্যচারটাও বন্ধ হওয়া দরকার।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১১

এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না - তোমার জন্ম অমর হোক


এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না - বিশ্বজগতে আধুনিক বিপ্লবের ঝাণ্ডা বাহক। মানুষ তাকে ভালোবেসে ডাকতো 'চে', এর্নেস্তো চে গেভারা নামে। আর্জেন্টিনায় 'চে' নামটির মানে অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। মার্কিনীরা তাঁর দেহখানি নিথর করে দিয়েছে ৪২ বছর আগেই। কিন্তু তাঁর আত্মা আজও রয়ে গেছে কোটি মানুষের হৃদয়ে।

আজ থেকে ৮৩ বছর আগে এইদিনে এক শুভক্ষণে জন্মেছিলেন এর্নেস্তো। এই এর্নেস্তোই ভবিষ্যতে বিপ্লবের প্রবাদ পুরুষে পরিণত হত। সারাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে যাওয়া পুঁজিবাদের বিষবাষ্পে সাধারণ মানুষ যখন চরমভাবে দারিদ্যে আক্রান্ত, তখন কিছু মানুষ এর প্রতিবাদে মাঠে নামেন। একসময় সেই বিপ্লবীদের পাশে এসে দাঁড়ান এর্নেস্তো। তিনি কখনো বিপ্লবীদের করেছেন উদ্বুদ্ধ, কখনো বা নিজেই অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পরেছেন অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে। তার কারণে মার্কিনীদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। তাই এর্নেস্তোকে মেরে ফেলার জন্য হিংস্র জাল ফেলতে থাকেন। ১৯৬৭ সালে এর্নেস্তো যখন বলিভিয়ার বিপ্লবে যোগ দিতে ছদ্মবেশে দেশটিতে যান, তখন ৭ অক্টোবর সিআই এর লোকেরা তাকে আটক করে আর ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায় অমানবিকভাবে হত্যা করে। হত্যা করবার পর তার লাশটাও গুম করে ফেলা হয়। পরে ১৯৯৭ সালে ভ্যালেগ্রান্দের একটি গণ-কবরে চে ও তাঁর সহযোদ্ধাদের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়।

যারা মানবতার বুলি আওড়ায়, সেই মার্কিনীরাই যখন বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করে তখন কোন মানবাধিকার কমিশন আওয়াজ তোলার সাহস পান না। 'চে' এর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।

'চে' ছিল, আছে থাকবে। 'চে' থাকবে সবার অন্তরে, বিপ্লবী চেতনায়। যতদিন না মানুষের গরিবী না ঘুঁচবে, না ঘুঁচবে পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের নামে দরিদ্র্য নিপীড়ন, ততদিন মানুষ এই জাল থেকে বেড়িয়ে আসতে বিপ্লবের পথে পা দিবেই। সেই ১৯৬৭ থেকে আজ অনেক বছর চলে গেছে, বিশ্বও অনেক বদলে গেছে। কিন্তু সেই সাধারণেরা আজও নিপীড়িত। তাই সেই বিপ্লব আজও চলবে তবে নতুন আদলে। সময়ের সাথে সাথে কৌশল বদলাবে কিন্তু সাধারণ মানুষের বিপ্লব টিকে থাকবে। জয় বিপ্লবের জয়।