বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১০

আগুন পোড়া মানুষেরা

বিকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলাম একটা প্রতিবাদী কিংবা দুখী পোস্টের আশায়। কোন সচল না হোক অন্তত কোন এক অচল একটা প্রতিবাদী পোস্ট দিবেন। কিন্তু আমি হতাশ। শেষপর্যন্ত আমিই লিখতে বসে গেলাম।

খবরটা সকলের জানার কথা। না জেনে থাকলে জেনে নিন। দৈনিক প্রথম আলো মারফত জানতে পারলামঃ

রাজধানীর সন্নিকটে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় আগুন লেগেছে। এতে ওই কারখানা ভবনের ১১তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন চার শতাধিক শ্রমিক। আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে আগুন লাগে। রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে জানা গেছে।

গতকালের দৈনিক কালের কণ্ঠে পড়া চট্টগ্রাম ইপিজেড এ শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে চার শ্রমিকের মৃত্যুর খবরঃ



দৈনিক কালের কণ্ঠেরই গতকালের দ্বিতীয় পাতায় ছাপা র‌্যাব-পুলিশের শ্রমিক-বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের দৃশ্যঃ



অনেকেই জানি এইদেশ তৈরী পোষাক শিল্পে বিশ্বে একটা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু যে খবরটা রাখি না তা হল এ শিল্পকে চালনা করতে শ্রমিকেরা কীভাবে জীবন কাটাচ্ছেন।

গত মাসেই আমাদের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আমাদের তৈরী-পোষাক শিল্পের হর্তাকর্তা বিজেএমই রাজকীয়ভাবে বাটেক্সপো-২০১০ এর আয়োজন করলো। উদ্দেশ্য বিদেশি অর্ডার পাওয়া নিশ্চিত করা। সেখানে পোষাক পরিদর্শনের ফ্যাশন-শো নামক দেশি-বিদেশি মডেলদের অশালীন বিড়াল-হাঁটা চললো। আর আমাদের র‌্যাব ও পুলিশ ভাইয়েরা কুকুর সহ বাইরে পাহারা দিলেন। তাতে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকলো। শুধু শাহরুখের কনসার্ট আর বাড়ির মহিলাদের হিন্দি সিরিয়ালেই দেশ গেল রব। আমি বলছি না যে তারা ভালো কিছু করছেন। কিন্তু শুধু সেটা দেখলেই চলবে না; বাকি ব্যাপারেও চোখ আনতে হবে, মুখ খুলতে হবে।

আজ এই কারখানায় আগুন লাগলো বেলা একটায়। আর নিয়ন্ত্রণে আসলো রাত ন'টায়। দ্রুত নেভানোর মত যন্ত্রপাতিই নেই। শুধু একথা বললে ভুল হবে। কেনার ইচ্ছেটাও নেই। ইচ্ছে থাকলে বিদেশিদের ডেকে অশালীন পোষাকে নারী প্রদর্শন না করে সে টাকায় আগুন নেভানোর কিছু জিনিস কিনতে পারা যেত।

আমাদের দেশে এইসব শ্রমিকদের টাকাটাও ঠিকমত দেওয়া হয় না। বেতন কাঠামো নিয়ে সারাদেশে আগুন জ্বললো। আর আমাদের দেশের মন্ত্রীরা কৌশলে মালিকপক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে গেলেন। শেষ পর্যন্ত একটা বেতনের কাঠামো ঠিক করা হলেও শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত সে বেতনটাও পাচ্ছেন না। বরং মন্ত্রী একের পর এক শ্রমিকদের এই বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন শীঘ্র সে কাঠামো কার্যকর করা হবে। সময় আর বাড়ানো হবে না। দরকার হলে আবার আলোচনা হবে। কিন্তু এর সমাধানটা কবে হবে?? অবশ্য আশা করাটাও বোকামি। যেদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যূনতম তদন্তের আশ্বাস না দিয়েই বলে বসেন এর মাঝেও রয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও বিরোধীদলের ষড়যন্ত্র, সেখানে কী আর আশা করা যায়?? অবশ্য একটা উন্নতি হয়েছে। শিল্প পুলিশের যাত্রা। শ্রমিকদের পেটে ভাত দিতে পারুক আর না পারুক তাদের পেটাতে নতুন বাহিনী তৈরি করা গেছে।

সাবেক সরকার মালিকদের খুশি করে গেছেন। এই সরকারও করছে। আগামী সরকারো তাই করবে। দল-মার্কা নির্বিশেষে তারা টাকাওলাদের সেবক। আর আমরা মধ্যবিত্তেরা সুশীল সমাজের টুপি মাথায় দিয়ে শাহরুখের কবল থেকে ভাষা-সংস্কৃতি বাঁচানোর ব্লগীয় আন্দোলন করে যাবো।

রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১০

কে বেশি পাওরফুল??

India'র দুই পাশে দুইটা দ্যাশ। একটা আমাগো বাংলাদেশ আর আরেকটা ফাকিস্তান। একসময় অবশ্য একলগেই ছিল।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বিশ্বের সেরা বাঘ। আর ফাকিগো জাতীয় প্রানী মার্খোর। এইডা এক প্রকারের হিমালয়ান বন্য রাম ছাগল। যে কেউ চোখ বন্ধ করে বইলা দিতে পারবো যে ক্যাডায় বেশি powerful। কিন্তু একদিন এই রামছাগুরাই বাঘের পিঠে ছড়ি ঘুড়াইতে চাইলো। বাঘের ছোট বাচ্চা দেইখা তারা ভাবলো বিলাই। সেই বাচ্চা বাঘটা যেই না বড় হইল রামছাগুদের ঘাড় দিলো মটকাইয়া। অবশ্য দ্যাশ থাইকা ছাগু তাড়াইতে প্রতিবেশী বাঘেও হেল্প করছে। বাঘটা তখন মাত্র থাবা মারতে শিখছে, আইজ কিন্তু পরিণত।

দুক্ষের ব্যাপার রামছাগুরা পালানোর সময় তাগো এইদেশী সংস্করণ রাইখা গেছে। কালা ছাগল। দেশীয় কাঁঠাল পাতা খাইয়া তারা সংখ্যায় বাইড়া গেল। এই দ্যাশে থাকা রামছাগুগো কিছু এজেন্টরা সাহায্য করছে। আমাগো এক সরকার তাগোরে এত্ত ভালোবাসতো যে কারণে অকারণে মাইনষেরে কালা ছাগল দিয়া বেড়াইছে।

আইজ এইসব কালা ছাগল এত্ত বাড়ছে যে বিভিন্ন ব্লগেও ল্যাদাইতেছে। চড়-থাবড়েও তাগো লজ্জা হয়না। মগবাজারের পেমেন্টে সদা দিল-খুশ।

কিন্তু আইজ বাঘ আবার জাইগা উঠতাছে। প্রত্যেকদিনই কিছু না কিছু কালা ছাগল খোঁয়াড়ে ঢুকানো হইতেছে। ভালা দিন বুইঝা সবগুলারে জবাই দেওন হইবে।

আপনারা চাইলে ছবি দেইখাও কইতে পারেন ক্যাডায় বেশি শক্তিশালী।



আমাগো টাইগার



ফাকিগো মার্খোর রামছাগল



রামছাগুগো ফালায় যাওয়া কালা ছাগল

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‍‍

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১০

জয়... আপোষহীন নেত্রীর জয়...

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হবার পর তার বিধবা পত্নী বিএনপির হাল ধরেন।নানা ষড়যন্ত্র থেকে দলকে রক্ষা করেছেন, একসময় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনও করেছেন।এইসব কারণে দেশবাসীর নিকট তিনি আপোষহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

এই ইমেজ নিয়েই একে একে হয়েছেন দেশের ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী ২ বারের বিরোধীদলীয় নেত্রী।

এদিকে তার দুই ছেলে সময়ের সাথে হয়েছেন দেশের রাজপুত্র।সত্য না মিথ্যা তা জানি না তবে লোকে বলে প্রেসিডেন্ট সাহেব কিছু রেখে যেতে পারেন নি। আমাদের দিয়ে গেছেন আপোষহীন এক নেত্রী, দুই এতিম পুত্র আর তার ভাঙ্গা স্যুটকেস।সময়ের সাথে সাথে সেই ভাঙ্গা স্যুটকেস অনেক হীরের ডিম দিয়েছে। বাজারে সেই ডিম বেঁচে দুই এতিমপুত্র তারেক আর আরাফাত হয়েছেন রাজপুত্র।

আপোষহীন নেত্রী কখনোই আপোষ করেননি।বিগত সামরিধায়ক(সামরিক+তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের মাইনাস টু ফর্মূলা সহ দলীয় ও বাহ্যিক নানাবিধ ষড়যন্ত্রের মুখে মাথা না নোয়ালেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি।দুই রাজপুত্রের কল্যাণে অতিষ্ঠ জনগণের ভোট বিপ্লবের তোড়ে কিংবা সামরিধায়ক সরকারের কূটকৌশলে সংসদে পেয়েছেন মাত্র এক-দশমাংশের মত আসন।

লীগের বাকশালী সরকার এসেই তাদের উপর এতদিনের জমা থাকা ক্ষোভ একে একে উশুল করতে থাকলো।অথচ আপোষহীন নেত্রীর সেদিকে খেয়াল নেই।তিনি ব্যস্ত ছিলেন সুপুত্রদের জামিন নিশ্চিতের ব্যাপারে।সরকার সাফল্যের সাথে বিরোধীদলকে ব্যস্ত রাখছে।আর তারা সেই ফাঁদেই হাবুডুবু খাচ্ছে।

দেশের জনগণ বাকশালীদের কিছু কাজে যেমন খুশি, তেমনি অখুশি নানা সমস্যায় জর্জড়িত হয়ে।কিছুতেই যেন বিদ্যুৎ-পানি সমস্যার সমাধান মিলছে না।বিচার হচ্ছে না সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার।নেত্রী এই ব্যাপারে বলার মতন কিছুই খুঁজে পান না।অথচ দেশবাসী রাজাকারদের যে বিচারের জন্য অধীর আগ্রহে তিনি সেই বিচারের বিপক্ষে গিয়ে রাজাকারদের গোলাপি আঁচলের নিচে ঠাঁই দিতে চাইলেন। আর ট্রানজিটসহ নানাবিধ সমস্যায় দেশবাসীকে কিছুই শোনাতে পারলেন না।

আপোষহীন নেত্রী সত্যিই আপোষহীন।দেশবাসীর দরকারে আপোষ করতে পারলেও দুই ছেলের জামিন, ১ টাকার বাড়ি আর রাজাকার বাঁচাতে সত্যিই আপোষহীন।তার নামের সুনাম আজ তিনি সাফল্যের সাথেই ধরে রেখেছেন।

আগামীকাল বাড়ি বাঁচাতে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়েছে।এর মাঝেই শুরু হয়ে গেছে হানাহানি।রাজধানীর পাঁচ জায়গায় বাসে আগুন দিয়ে জনগণের ক্ষতি করে বাড়ি রক্ষা করতে চাইছেন। সত্যি এই আপোষহীন চরিত্র। এসব ক্ষণপ্রভা চরিত্র যুগে যুগে খুব কমই আসে।জাতি দেখে রাখুন, প্রাণভরে দেখে রাখুন।জয় আপোষহীন নেত্রীর জয়।থুক্কু আপোষহীন নেত্রী জিন্দাবাদ।

শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১০

শাহ্‌রুখ খান দর্শণ আর অনাহারী কিছু মানুষ!!

অন্তর শোবিজের প্রচারণা মারফৎ জানাগেল যে আগামী ১০ ডিসেম্বর ভারতের মেগাস্টার শাহ্‌রুখ খান আসছেন।সাথে থাকছেন রাণী মুখার্জি, অর্জুন রামপাল, প্রীতি জিনতা, মল্লিকা শেরাওয়াৎ সহ আরও অনেকে।এদের প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যপী কর্মকাণ্ড চলবে ঢাকাস্থ আর্মি স্টেডিয়ামে।অন্তর শোবিজ প্রায় ২০,০০০ টিকেট ছাড়ছে।এর মাঝে ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা থেকে থাকছে ১০,০০০, ১৫,০০০ এবং ২৫,০০০ টাকার টিকেট।

কর্তৃপক্ষ মূল্য অনুযায়ী টিকেট সংখ্যা জানায় নি।তাই গাণিতিক সুবিধার জন্য ধরে নিলাম ৫,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ১০,০০০ (৫০%), ১০,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ৫,০০০ (২৫%), ১৫,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ৩,০০০ (১৫%) এবং ২৫,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ২,০০০ (১০%)।এই হিসেবে ২০,০০০ টিকেটের মোট মূল্যমান সাড়ে ১৯ কোটি টাকা মাত্র।

সাধারণত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কখনই প্রকাশ করে না যে কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে।তারকারা অনেক বেশি জনপ্রিয় সেটা মাথায় রেখেই অর্থভাগের একটা হিসেব করি।ধরে নেই তারকারা পাবেন এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ সাড়ে ৬ কোটি টাকা।সরকারকে দেওয়া কর সহ অন্যন্য ব্যবস্থাপনা খরচ আরও এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ সাড়ে ৬ কোটি টাকা।এবং অন্তর শোবিজের লাভ বাকি এক-তৃতীয়াংশ সাড়ে ৬ কোটি টাকা।এটা একটা গড়পরতা হিসেব।

এখন আসি বাংলাদেশের মানুষের আয়ের হিসেবে।সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লক্ষ এবং মাথা পিছু বার্ষিক আয় ১৪৪০ মার্কিন ডলার।মোট ৫২ সপ্তাহের ৪ সপ্তাহ্‌ ছুটি, প্রতি সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪০ ধরলে, প্রত্যেক কর্মজীবি মানুষের বার্ষিক কর্মঘণ্টা ১৯২০।প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি হবার কথা।এই হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি জন মানুষের ঘণ্টা প্রতি আয় প্রায় ৫২ টাকা(ডলার প্রতি ৬৯ টাকা ধরে)।৬ ঘণ্টায় আয় ৩১২ টাকা।২০,০০০ মানুষের ৬ ঘণ্টায় আনুমানিক আয় প্রায় ৬২ লাখ টাকা।সেখানে খরচ সাড়ে ১৯ কোটি টাকা।দুই-তৃতীয়াং টাকা দেশেই থাকছে ধরে বোঝাটা কমে যাবে।দেশের সাড়ে ৬ কোটি টাকা মাত্র ৬ ঘণ্টাতেই অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।

আমার এই হিসেব-নিকেষে অনেকেই ভাবতে পারে যে অন্তর শোবিজের সাথে আমার কী শত্রুতা।আমার কোনই শত্রুতা নেই।এট সারা দেশের অর্থপাচারের একটা উদাহরণমাত্র।আমাদের ভেতর এই অপচয়ের সংস্কৃতিটা বেশ ভালোভাবেই শেঁকড় গেড়েছে।যেখানে আমাদের দেশের অনেক লোকই এক বেলা খবার পর ভেবে পায় না যে পরের বেলাতে খাবার জুটবে কি না সেখানে আমরা কেএফসি তে খাই যারা আবার দেশি মুরগি খাওয়াতে ভয় পেয়ে সব মুরগি ভারত থেকে কিনে আনে।

যাদের টাকা আছে তারা খাবে, যাদের নাই তারা না খেয়ে থাকবে এটাই পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যের মূলনীতি।যাদের টাকা আছে তারা কেএফসি তে খাবে কিংবা শাহ্‌রুখের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করবে।তাতে আমি বাধা দেয়ার কেও না।শুধু অনুরোধ আমার মনগড়া হিসেবটা মাথায় না রাখলেও ব্যস্ত জীবনের কিছুটা সময় খরচ করে নাখেয়ে থাকা মুখগুলোর কথা একটু ভাবুন আর সম্ভব হলে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।

বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বাবরি-মসজিদ না রাম-মন্দির??


ভারতীয় মহাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্যতম একটা কারণ হল এই বাবরি মসজিদ অথবা রাম মন্দির।এটি ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের ফাইজাবাদ শহরের অতি প্রাচীণ শহর অযোধ্যার রামকোট পাহাড়ের ধারে অবস্থিত।মুসলমানদের দাবী এটা তাদের জায়গা।অন্যদিকে হিন্দুদের দাবি এটা তাদের অবতার রামের পূণ্যজন্মস্থান।তাই এই জায়গার একমাত্র দাবিদার তারাই।

এবার একটু ইতিহাসের দিকে চোখ বুলানো যাক।আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই মুঘল-সম্রাট বাবুর ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে এইস্থানের মন্দির ভেঙ্গে একটা মসজিদ নির্মাণ করেন।১৯৪০ এর আগে এই মসজিদের নাম ছিলো ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান’।অর্থাৎ মসজিদের নামটিও রামের জন্মভূমির সাক্ষী হয়ে ছিলো।

হিন্দুদের দাবি অনুসারে, বাবুর ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে আফগান থেকে এসে চিত্তরগড় এর রাজপুত রানা সংগ্রাম সিংকে পরাজিত করে এবং অযোধ্যার পবিত্রভূমিতে মন্দির ভেঙ্গে এই মসজিদ নির্মাণ করান।১৯৯২ সালে যখন হিন্দুমৌলবাদীরা মসজিদটিকে ভাঙ্গার চেষ্টা করে তখন বেশ কিছু পাথরের শিলালিপি পাওয়া যায় যাতে ‘দেবনাগরি লিপি’ তে লেখা সংস্কৃত শ্লোক পাওয়া যায়।

জৈনদের দাবি অনুসারে, অষ্টাদশ শতাব্দিতে জৈন সন্ন্যাসীরা এখানে এই মন্দির স্থাপন করেন।তাদের মতে ষোড়শ শতাব্দিতে এখানে মূলত জ়ৈন এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ছিলো।

এইস্থানের দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবারই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।এখানে একই স্থাপনায় হিন্দু-মুসলমানেরা একইসাথে নিজনিজ প্রার্থণা করতো।কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত ঘটে ১৮৫৩ তে যখন নির্মোহী সঙ্ঘ এর একছত্র মালিকানা দাবি করে বসে।কিন্তু ১৮৫৭ এর সীপাহি বিপ্লবে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্মনেয় আর মুসলমানেরা মসজিদ প্রাঙ্গনে হিন্দুদের প্রবেশে বাধা দেয়।

১৯৪৯ এর এক রাতে হিন্দুরা মসজিদের ভেতরে রাম-সীতার মূর্তি শাপন করে।আদালত নির্দেশ দেয় এই মূর্তি সরিয়ে নেয়ার জন্য কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয় নি।১৯৮৫ তে হিন্দুমৌলবাদীরা এর দখল নিতে চাইলে রাজীব গান্ধী প্রশাসনের দৃঢ়তায় ব্যর্থ হয়।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশে এরশাদের সরকার বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার গুজব রটিয়ে দাঙ্গার সূচনা করে।ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে নিরীহ অসহায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায় এরশাদের পোষা গুণ্ডা আর মৌলবাদীরা।এর চাক্ষুষ সাক্ষী আমি নিজেও।ওই বয়সেই আমাকে দেখতে হয় আগুনের লেলিহান শিখা। লোকজন গোপীবাগে আমাদের বাসার পিছনের ঋষিপাড়ায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।পরিবারে সবাইকে প্রাণ বাঁচিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তে তারা আর ব্যর্থ হয় না।তারা আক্রমণ করে এই মসজিদের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়।এর ফলস্বরূপ ভারতব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ লোক প্রাণ হারায়।এদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যাই বেশি।এই দাঙ্গার হুজুগে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায় মৌলবাদী মুসলমানেরা।

                     চিত্রঃ প্রত্নতত্ত্ব বিশারদদের বিশ্লেষণ
ভারত সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ এক তদন্ত কমিশন(Liberhan Commission) গঠন করে।কমিশন দীর্ঘ ১৭ বছর পরে ৩০ জুন,২০০৯ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর নিকট দাখিল করে।এই রিপোর্টে কয়েকজন হিন্দু সাংসদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়।এদের মধ্যে উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী কল্যান সিং,সাবেক প্রধান মন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানী আর মুরালী জোশীর মত High Profile নেতাদের নামও ছিল।যদিও পুরো রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয় নি।

অনেক দিন ধরেই এই স্থাপনার দাবিদার নির্ধারণ নিয়ে আদালতে মামলা ঝুলছিলো প্রায় ৬০ বছর ধরে।।প্রথম মামলা হয় ১৯৪৯ সালে।পরবর্তীতে ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালেও দু'টি মামলা হয়েছিলো।আজ দীর্ঘ ৬০ বছর পর বহুপ্রতিক্ষীত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন এলাহাবাদ উচ্চাদালত।তারা এই রায়ের সঠিকতা নিশ্চত করার জন্য নৃতত্ত্ব বশারদের সাহায্য নেন।ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিশারদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এই জায়গাটায় আসলে বহুপ্রাচীণ মন্দিরের ধ্বংশাবশেষ। 

এলাহাবাদ উচ্চ আদালতের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চের বিচারপতিত্রয় সিবাগত উল্লাহ খান, সুধীর আগারয়াল ও ধর্মবীর শর্মা ঘোষণা দেন যে আসলে ২.৭৭ একর জায়গাটির প্রকৃত দাবিদার হিন্দুরাই।সম্রাট বাবুর মদির ভেঙ্গে মসজিদ নির্মাণ করেননি।তিনি মন্দিরের পাশেই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।তবে শান্তি বজায় রাখার জন্য এই জায়গাটিকে তিন অংশে বিভক্ত করে এক-তৃতীয়াংশ মুসলমানদের সুন্নি ওয়াক্‌ফ বোর্ড, এক-তৃতীয়াংশ নির্মোহী আখড়া এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদেরকে হিন্দু মহাসভাকে দিতে বলেন।মন্দিরের বাইরের জমি পাবে সুন্নি ওয়াক্‌ফ বোর্ড।ঐজায়গা থেকে রামে-সীতার মূর্তি সড়ানো যাবে না।সীতারাসাইয়া মন্দিরের মালিক হবে নির্মোহী আখড়া।আগামী তিনমাসে এই ভাগাভাগি কার্যকর করা হবে।ততদিন পর্যন্ত ঐজমিতে স্থিতাবস্থা বিরাজ করবে।তবে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে।মামলার দুপক্ষই আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রায়ে হয়তো সত্যেরই জয় হয়েছে।কিন্তু শান্তির উদ্দেশ্যে যে ভাগাভাগি তা হয়তো কোন নতুন অশান্তির সূচনা ঘটাতে পারে।ভারতে অনেক মন্দির-মসজিদ আছে।তাই যদি এই জায়গাটা মন্দির কিংবা মসজিদে না দিয়ে এখানে কোন হাসপাতাল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হোত তবে বেশি ভালো হতে বলেই আমি মনে করি।

তথ্যসূত্রঃ http://en.wikipedia.org/
      http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/2528025.stm
      http://expressbuzz.com/
      http://dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Laptop&pub_no=298&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=0

মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১০

রাজাকারের ফাঁসি চাই

রাজাকারের ফাঁসি চাই

ঐ বাঙালি!
তুই ভুললি কি তোর শোক?
আজো নর-পিশাচে নাচে
এই মাটিরই আনাচে-কানাচে!
সেই পিশাচেরে বাঁচাবে বলে
ইসলামী মায়া-ছলে
জড় হয় কত লোক!

ঐ বাঙালি!
ভুললি কি তুই সেই কাল্‌ রাত,
নীলখেত মোড়ে আধ-কাটা হাত?
পঁচিশের পাঁচিলে ছিন্ন ঘিলু,
হিঁদু পাড়ার নীলু-বিলু-মিলু
শুয়েছিলো তাজা গণ-কবরে,
আর সেই খবরে
উল্লাশে ছিলো ইয়াহিয়া!
এই বাংলায় আজো সেই ছায়া!

বাঙালি, আজ ভুললি কি তুই
ভাইয়ের রক্ত-নদী
বয়েছিলো নিরবধি
জিঞ্জিরা-পাড়ে?
শহীদ বাবার ক্ষয়িষ্ণু হাড়ে
শকুনের টানাটানি?
আর নারীদের গ্লানি?
মায়ের দেহে হায়নার মোহ,
যৌনখিদের সুখ?
বেয়নটে কাটা বোনের নগ্ন বুক?
আল-শামসের জাতিদ্রোহ,
সাথে রাজাকা্র আর বদরের অভিযান,
পড়েছিলো কাটা দেশের জ্ঞানীগুণী,
যারা বাঙালেরে করেছে ধনী?
ব্যথাভরা সেই মুক্তির গান?

আজও হয়নি বিচার ঐ ঘৃণ্য অপরাধীর!
আজ জাগবে বুঝি বাঙালি, বিচারের তরে অধীর।
আসো, হাতে হাত রেখে জাগো সব প্রাণ,
আজ দলমত ভুলে তোল নতুন শ্লোগানঃ
“পথের মোড়ে এক হয়ে রও সকল বাংলাদেশি
খুনি রাজাকার-বদরের হবেই হবে ফাঁসি।” 

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১০
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০১০

এই আমি...

এই আমি...

যেকোন কিছুর সংজ্ঞা  দেওয়াই খুব কঠিন। নিজেকে সংজ্ঞায়িত করাটা বোধহয় দুরূহতম কাজ। নিজেকে নিজে চেনাই তো কঠিন, সংজ্ঞায়িত করি কেমনে? তারপরও আমার প্রথমব্লগটা শুরু করছি নিজেকে দিয়েই। নিজের সম্পর্কে যা বলতে পারিঃ

আমি আঁধার ভালোবাসি। আঁধার রাতে খোলা মাঠের মাঝে কিংবা কোন এক নদীর ধারে বসে বসে তারা ভরা আকাশ দেখতে ভালো লাগে। আঁধার কালো আকাশে সাদা রঙের বিন্দু হয়ে জেগে থাকা তারা আমার সাথে কথা বলে। ওরা আমার গল্প শোনে - আমার ভালোলাগার গল্প, আমার যন্ত্রণার গল্প।

আকাশের মাঝে পেজা তুলোর মেঘ ভেসে যাওয়া খুব ভালো লাগে, তবে ঐ মেঘগুলো যখন কালো হয়ে আকাশ ছেয়ে যায় তখন আর নিজেকে ঘরে ধরে রাখতে পারি না। ছুট দেই বাহির পানে। বৃষ্টি নামবে আর আমি কি ঘরে থাকতে পারি? পারিনা, কারণ আমার বৃষ্টিতে ভিজতে অনেক ভালো লাগে।

উপরের অনুচ্ছেদ দু'টো পড়েই বুঝে যাবার কথা যে আমি একটু স্বপ্নবিলাসী। আমি আমার স্বপ্নের দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকি। ঐ দুনিয়ায় কোন বাধা নেই। আমি স্বাধীন হয়ে ছুটে বেড়াই -

কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা
গানের সুরে মেলে দিলেম এই ডানা...

ঈশ্বরে বিশ্বাসী তবে আমার ঈশ্বর হল এই প্রকৃতি। আমরা প্রকৃতি ঈশ্বরকে কষ্ট না দিলে সেও আমাদেরকে কষ্ট দিবে না।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। নিজের দেশ ও ভাষার বিরুদ্ধে কাউকেই ছাড় দিতে নারাজ।  হোমো সেপিয়েন্সের একটা গোষ্ঠীকে আমি মানুষ ভাবি না - পাকিস্তানি। আমি ওদেরকে সাধারণত পাপীস্তানি, নাপাকি কিংবা ফাকিস্তানি বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ, এই দুনিয়ার অশালীনতম শব্দ হল পাকিস্তান ও পাকিস্তানি।

জানিনা ঠিক কতটুকু নিজেকে তুলে ধরতে পারলাম। তবে আমার লেখা পড়তে থাকুন। আশা করি ভালো লাগবে।


আমার ফেইসবুক লিঙ্কঃ দেবা ভাই