বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১০

আগুন পোড়া মানুষেরা

বিকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলাম একটা প্রতিবাদী কিংবা দুখী পোস্টের আশায়। কোন সচল না হোক অন্তত কোন এক অচল একটা প্রতিবাদী পোস্ট দিবেন। কিন্তু আমি হতাশ। শেষপর্যন্ত আমিই লিখতে বসে গেলাম।

খবরটা সকলের জানার কথা। না জেনে থাকলে জেনে নিন। দৈনিক প্রথম আলো মারফত জানতে পারলামঃ

রাজধানীর সন্নিকটে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় আগুন লেগেছে। এতে ওই কারখানা ভবনের ১১তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন চার শতাধিক শ্রমিক। আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে আগুন লাগে। রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে জানা গেছে।

গতকালের দৈনিক কালের কণ্ঠে পড়া চট্টগ্রাম ইপিজেড এ শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে চার শ্রমিকের মৃত্যুর খবরঃ



দৈনিক কালের কণ্ঠেরই গতকালের দ্বিতীয় পাতায় ছাপা র‌্যাব-পুলিশের শ্রমিক-বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের দৃশ্যঃ



অনেকেই জানি এইদেশ তৈরী পোষাক শিল্পে বিশ্বে একটা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু যে খবরটা রাখি না তা হল এ শিল্পকে চালনা করতে শ্রমিকেরা কীভাবে জীবন কাটাচ্ছেন।

গত মাসেই আমাদের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আমাদের তৈরী-পোষাক শিল্পের হর্তাকর্তা বিজেএমই রাজকীয়ভাবে বাটেক্সপো-২০১০ এর আয়োজন করলো। উদ্দেশ্য বিদেশি অর্ডার পাওয়া নিশ্চিত করা। সেখানে পোষাক পরিদর্শনের ফ্যাশন-শো নামক দেশি-বিদেশি মডেলদের অশালীন বিড়াল-হাঁটা চললো। আর আমাদের র‌্যাব ও পুলিশ ভাইয়েরা কুকুর সহ বাইরে পাহারা দিলেন। তাতে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকলো। শুধু শাহরুখের কনসার্ট আর বাড়ির মহিলাদের হিন্দি সিরিয়ালেই দেশ গেল রব। আমি বলছি না যে তারা ভালো কিছু করছেন। কিন্তু শুধু সেটা দেখলেই চলবে না; বাকি ব্যাপারেও চোখ আনতে হবে, মুখ খুলতে হবে।

আজ এই কারখানায় আগুন লাগলো বেলা একটায়। আর নিয়ন্ত্রণে আসলো রাত ন'টায়। দ্রুত নেভানোর মত যন্ত্রপাতিই নেই। শুধু একথা বললে ভুল হবে। কেনার ইচ্ছেটাও নেই। ইচ্ছে থাকলে বিদেশিদের ডেকে অশালীন পোষাকে নারী প্রদর্শন না করে সে টাকায় আগুন নেভানোর কিছু জিনিস কিনতে পারা যেত।

আমাদের দেশে এইসব শ্রমিকদের টাকাটাও ঠিকমত দেওয়া হয় না। বেতন কাঠামো নিয়ে সারাদেশে আগুন জ্বললো। আর আমাদের দেশের মন্ত্রীরা কৌশলে মালিকপক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে গেলেন। শেষ পর্যন্ত একটা বেতনের কাঠামো ঠিক করা হলেও শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত সে বেতনটাও পাচ্ছেন না। বরং মন্ত্রী একের পর এক শ্রমিকদের এই বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন শীঘ্র সে কাঠামো কার্যকর করা হবে। সময় আর বাড়ানো হবে না। দরকার হলে আবার আলোচনা হবে। কিন্তু এর সমাধানটা কবে হবে?? অবশ্য আশা করাটাও বোকামি। যেদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যূনতম তদন্তের আশ্বাস না দিয়েই বলে বসেন এর মাঝেও রয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও বিরোধীদলের ষড়যন্ত্র, সেখানে কী আর আশা করা যায়?? অবশ্য একটা উন্নতি হয়েছে। শিল্প পুলিশের যাত্রা। শ্রমিকদের পেটে ভাত দিতে পারুক আর না পারুক তাদের পেটাতে নতুন বাহিনী তৈরি করা গেছে।

সাবেক সরকার মালিকদের খুশি করে গেছেন। এই সরকারও করছে। আগামী সরকারো তাই করবে। দল-মার্কা নির্বিশেষে তারা টাকাওলাদের সেবক। আর আমরা মধ্যবিত্তেরা সুশীল সমাজের টুপি মাথায় দিয়ে শাহরুখের কবল থেকে ভাষা-সংস্কৃতি বাঁচানোর ব্লগীয় আন্দোলন করে যাবো।