সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১২

কবরঃ গাঢ় অন্ধকার




কবরঃ গাঢ় অন্ধকার


একটি গোরস্তান,
কত যে কবর আছে,
ঐ অন্ধকারের কাছে!
বাঁধাই করা,
বাঁধাই ছাড়া,
উপেক্ষিত,
এপিটাফ সহ,
হয়তো কবিতা লেখা!

আঁধার রাতে কবর ঘুরি,
আর মনের কোণে?
কবর খুঁড়ি?
মৃত্যুর এক চোরা স্রোত আসে,
যেন কাঁধ ছুঁয়ে যায় এক হিম হাত!
আমি কাঁপি,
যেন মাঘের শীতে কাবু এক বাঘ!

মরতেই হবে,
আজ,
কিংবা কাল।
তবু কেন হানাহানি?
এত সম্পদ!
অথবা মনের রাণী,
কেউ যাবে না কো সাথে
ঐ আঁধারের গুহায়!

মৃত্যুর সাথে হবে সব চূর-মার,
রয়ে যাবে শুধু শতখানি হাড়,
তাও ক্ষয়ে যাবে সময়ের সাথে।
তবে ফল রয়ে যাবে সময়ের পাতে।
করেছো কি কোন ভালো,
যা অন্যকে দেবে আলো?

ভাবি, শুধু ভাবি,
ভেবে ভেবে হয়রান,
সময়ের সাথে মৃত্যু করবে পান
এই দেহখানি!
ঘনিয়ে আসে গাঢ় অন্ধকার,
আমি ডুবে চলি! 

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১২

হৃদয় কোণে একটি গোলাপ ফুল!


 অনেক দিন ধরেই নতুন কোন দুঃসাহসিকতার স্পর্ধা সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি। আজ হঠাৎ করেই যেন এক ঝিলিক সাহস ফিরে পেলাম। খুবই পছন্দের একটা কবিতা নিয়ে বসে পড়লাম, ওটার অনুবাদ করবো বলে। আমি বরাবরই ইংরেজি ভাষাতে ভীষণ দুর্বল, তাই এরকমভাবে অনুবাদে হাত দেওয়াটাকে আমার জন্য এক দুঃসাহসিকতা তা বলাই যায়। এই ব্লগে বেশ কিছুদিন আগে পো এর 'অ্যানাবেল লী' এর অনুবাদ করেছিলাম। অল্প পাঠকের উৎসাহে টের পেয়েছিলাম যে ওবার উৎড়েই গিয়েছিলাম। এবার হাতে নিয়েছি ইয়েটসের 'The Rose in the Deeps of his Heart' - এ। উৎড়াতে পারবো কী না তা আমি জানি না, সে ভার আপনাদের হাতে। আমি চেষ্টা করে গেলাম মাত্র।



হৃদয় কোণে একটি গোলাপ ফুল!

এই চারপাশ ঘেরা ভাঙা-চোরা-খোঁড়া,
উফ্‌ কী যন্ত্রণা!
এই চারপাশ ঘেরা শত পুরোনোতে, আর ছেঁড়া-ফাটা।
পথটার পাশ থেকে কান্নার আওয়াজ পাই,
কাঁদে এক শিশু।
ঘোড়াবাহী ভারী গাড়ি আগায় অনেক ধীরে --
ক্যাঁচক্যাঁচ করে।
আর কোন এক চাষাঃ
যে যায় এগিয়ে পথে, ভারী ভারী পায়ে।
যায় ছড়িয়ে এ হৃদে একটা শীতল পরশ,
হৃদয়ে আঘাত করে তোমার মধুর স্মৃতি --
গোলাপ হয়ে ফুঁটেছে বুকের গভীর কোণে।
কদাকার সব ভুল,
দারুন করে বলাটা আরেক বিশাল ভুল!
খিদের জ্বালায় মরি আবার গড়ার আশে।
দূরের এক পাহাড়ে, নতুন সবুজ ঘাসে,
এই বসুধার সাথে, ওই আকাশের মাঝে,
কিংবা জলের ভেতর
গড়েছি স্বর্ণ-আঁকড়!
স্বপ্নের মাঝে তোমার ছবি ফোঁটায় হৃদয় কোণে
একটি গোলাপ ফুল!



মূল লেখাটাঃ


The Rose in the Deeps of his Heart

-- William Butler Yeats


All things uncomely and broken,
All things worn-out and old,
The cry of a child by the roadway,
The creak of a lumbering cart,
The heavy steps of the ploughman,
splashing the wintry mould,
Are wronging your image that blossoms
A rose in the deeps of my heart.
The wrong of unshapely things
Is a wrong too great to be told;
I hunger to build them anew
And sit on a green knoll apart,
With the earth and the sky and the water,
Remade, like a casket of gold
For my dreams of your image that blossoms
A rose in the deeps of my heart.


মূল কবিতার আবৃত্তিঃ



শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১২

হুমায়ূন আহমেদ আর কিছু কথা...


উৎসর্গঃ
যারা হুমায়ূন এর ভক্ত এবং যারা হুমায়ূনের উপর বিরক্ত!

হুমায়ূন আহমেদ, বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় নাম, ১৯ জুলাই, ২০১২ দেহ ত্যাগ করলেন। যাকে নিয়ে চলছে মৃত্যু পরবর্তী আলোচনা-সমালোচনা, কান্নার বাঁধভাঙা ঢেউ, আদিখ্যেতা, ছেলেমানুষী, পণ্য কেনা-বেচাসহ আরো অনেক কিছুই। সেসব নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

আলু পত্রিকার সেলিনা হোসেনের কথাকে তুলে ধরে বলেছেঃ



প্রথম আলোর এই রিপোর্ট দেখে একদলা থু ছাড়া মুখে চলে আসে। ওরা এখন মৃত হুমায়ূনকে নিয়ে ব্যবসায় ব্যস্ত। বাঙালি জাতি উঠে এসেছে একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, ত্রিশ কিংবা তারও অধিক মানুষের রক্তের নদীর মাঝ দিয়ে, চোখের সামনে দেখে এসেছে রাজাকার-আল বদর-আল শামস কী করে এসেছে। তাই  রাজাকারকে ঘৃণা করাটা কাউকে শিখিয়ে দিতে হয় না, এটা বাঙালির স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের মাঝেই পড়ে। রাজাকারকে রাজাকার বলবার জন্য কোন নব্য সাহস লাগে না, এটা একটা স্বতস্ফূর্ত ব্যাপার। হুমায়ূন আহমেদ কাছ থেকে সাহস ধার না নিয়েই বাঙালি ১৯৮১ এর জানুয়ারিতে বায়তুল-মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে গোলাম আযমকে রাজাকার বলে গাল দিয়েছে, জুতাপেটা করেছে।



একথা শুরুতেই স্বীকার করে নিয়েছি হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম ব্যক্তি। আমি উনার ওপর যতই বিরক্ত হই না কেন আমার ওপরও উনার প্রভাব আছে, কিছুটা হলেও। ছোটবেলায় উনার নাটকের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলাম। বহুব্রীহির কথা মনে নেই। যা এখনো মনে আছে তা হলঃ অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, নক্ষত্রের রাত সহ আরও অনেক। তার চলচ্চিত্র দেখেছি। শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি, দুই-দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন - এগুলো বাংলাদেশের ভালো চলচ্চিত্রের উদাহরণ না বললে মিথ্যে বলা হবে। তার হাত দিয়ে গ্রাম-গঞ্জের গান, হাসন রাজার গান, বারী সিদ্দিকীর গান নতুন করে প্রাণ পেয়েছে।

উনার যে মানুষকে ধরে রাখবার একটা আকর্ষণীয় ক্ষমতা আছে তার প্রমাণ 'কোথাও কেউ নেই' নাটক। এটি বাংলাদেশের একমাত্র নাটক, সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেও হতে পারে, যার জন্য মানুষ রাস্তায় নেমেছে। নাটকে বাকের ভাই এর ফাঁসি বাতিল করবার জন্য এই দেশের মানুষ রাস্তায় মিছিল-মিটিং-বিক্ষোভ করেছে, বোদি নাটকে বাকের ভাই এর বিরুদ্ধে মিথ্যে সাক্ষী দেবার জন্য রাস্তায় মার খেয়েছে।

উনি আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় কিছুও রেখে গেছেন। উনার কাছ থেকেই আসে গাছের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বের কথা, চোখ দান করবার প্রয়োজনীয়তার কথা, জাটকা না ধরে ইলিশকে বাঁচানোর কথা, ওর স্যালাইন এর কথা, সেনিটারি ল্যাট্রিন এর কথা, সবুজ ছাতা হাসপাতালের কথা। আরো অনেক কিছুই এসেছে যা ঠিক মুহূর্তে মনে আসছে না।

হুমায়ূন আহমেদ হিমু লিখেছেন, মিসির আলী লিখেছেন। লোকে গোগ্রাসে এগুলোই গেলে। আর আমি বলি উনাকে ডুবিয়েছেই এই দু'টো চরিত্র। লোকে বলে হিমু মানুষকে দর্শন শিখিয়েছে আর মিসির আলী লজিক! হিমু মানুষকে শিখিয়েছে খালি পায়ে হাঁটার কথা, মানূষকে বিভ্রান্ত করবার কথা, মহা পুরুষ হবার নাটকীয় প্রচেষ্টার কথা। এই দর্শণ আমাদের সমাজের জন্য ক্ষতিকর ছাড়া আর কিছু না। আর মিসির আলীতে যদি ঠিকমত লজিক থাকে তবে বলতে হয় আমার লজিক জ্ঞানই শূন্য। হয়তো মানুষের কাটতির কারণেই তিনি বছরের পর বছর একই বছরে কয়েকটা করে হিমু, মিসির আলীর জন্ম দিয়ে গেছেন। সেই একঘেঁয়ে, গৎবাঁধা জিনিসই লোকে গিলে খেয়েছে। তাই উনার মানের অবনয়নের জন্য পাঠকও কম দায়ী নয়। পাঠক যদি উনার দায়সারা লেখাই গোগ্রাসে গিলে যান, তবে উনি তাই লিখে যাবেন বছরে অনেকগুলো করে। উনি তো টাকার দিকে তাকাবেনই কারণ তার পেশাটাই লেখালেখি। তবে একটা কথা ভুলে গেলে তো চলবে না কেউ যখন সংখ্যা বাড়িয়ে দিবেন, তখন তার মান কমে যাবেই। এটা শুধু হুমায়ূন আহমাদের জন্য প্রযোজ্য না, সকলের জন্য প্রযোজ্য, আমার ব্লগের ব্লগারদের জন্যো প্রযোজ্য। উনার এইসব লেখা সময় কাটানোর জন্য আদর্শ, বিশেষ করে আমি যখন বাস কিংবা ট্রেনে কোথাও যাচ্ছি। কিন্তু যখন এইসব লেখাগুলোকেই ভালো সাহিত্য বলে ভোট দিতে হয় তখনই প্রশ্ন চলে আসে পাঠকের মান নিয়ে। আর যে সাহিত্যে পাঠকের মান ভালো না, সে সাহিত্যের মান কমবেই।

হুমায়ূন আহমেদের যে মেধা আর মনন ছিলো তা আমাদের জন্য একটা বিশাল সম্পদ হতে পারতো। কিন্তু তিনি তা না করে একটা সময়ে অন্য পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। যে সময়ে উনার লেখার মান কমে যাচ্ছিলো (অবশ্যই অত্যধিক লেখার কারণে) সে সময়েই পাঠকের কিংবা তার নিজেরই উচিত ছিল রাশ টেনে ধরা। উনি তো তা করেনই নি উল্টো শেষের দিকে এসে নিজেকে করেছেন বিতর্কিত। দেয়াল নামের বিতর্ক তার আগের ভালোকিছুকে করে দিয়েছে ম্লান। মনে করিয়ে দেয় ব্লগার ধ্রুবতারার মাসি কাব্য পোস্টের কথা!

অনেকেই উনার ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে এনে উনার নিন্দা করেন। এটা খুবই গর্হীত কাজ। যারা করে আমি তাদেরকে ধ্বিক্কার জানাই। আমার আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত ব্যক্তি হুমায়ূন না, হুমায়ূনের সৃষ্টি।

অনেকেই হুমায়ূন আহমেদের 'জোসনা ও জননীর গল্প' গল্প প্রসঙ্গে হুমায়ূনকে আক্রমণ করে যেটা খুব একটা ঠিক না।এটা নিয়ে অনেক আগে ব্লগে আলোচনা করেছি। তাই আর নতুন করে স্ক্রিন শট দিচ্ছি না। তবে উনার রেফারেন্স ছিল বিচারপতি হাবিবুর রহমান আর কবি শামসুর রাহমান। মজার ব্যাপার হল যেসব লোকের রাগ হুমায়ুনের ওপর তারা বাকি দু'জনের ব্যাপারে নীরব থাকেন। ঐ বিচারপতিই হন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি, আর শামসুর রাহমান আসন করে রাখেন 'স্বাধীনতা তুমি' কবিতা দিয়ে।

তবে দেওয়াল নিয়ে চরম বিরক্ত। শুধু তার উপরেই বিরক্ত না তাদের উপরও বিরক্ত যারা নানা অজুহাতে হুমায়ূনকে এই দেওয়াল লজ্জা থেকে বাঁচাতে চান এই বলে মাত্র দু'টো অধ্যায় পড়েই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। যা বোঝার ঐ দুই অধ্যায়েই বোঝা হয়ে গেছে। বাকি অধ্যায়গুলোতে বঙ্গবন্ধু কিংবা তার সহযোদ্ধাদের কথা যতটাই সঠিকভাবে তুলে ধরুক না কেন খুনী ফারুককে যেভাবে তুলে ধরেছেন তাইই যথেষ্ট হুমায়ূনের পুর্বের ভালো কাজকে ধূলিসাৎ করে দিতে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন হয়তো অনিচ্ছায় করেছেন, সত্যিটা আর জানা যাবে না। তাদের উদ্দেশ্যে বলি সত্যি প্রকাশ করবার মত সাহস না থাকলে চুপ থাকা উচিত, তবু মিথ্যাচার করা উচিত না। হুমায়ূন আহমেদ যা করেছেন তা স্পষ্টতই ইতিহাস বিকৃতি। আর আমাদের ইতিহাসকে যে বা যারা বিকৃত করে, কিংবা করবার চেষ্টা করে তাদের প্রতি আমার কোনই সহানুভূতি নাই।


উনার প্রতি সহানুভূতি নাই তবে উনাকে নিয়ে ব্যবসার প্রতিবাদ জানাই, তীব্রভাবেই জানাই। মৃত হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে টেলিভিশন মিডিয়া যে বাণিজ্যের শুরু ঘটালো তার প্রতি ধিক্কার জানাই। টেলিভিশনের আলোচনায় যারা টেলিভিশন মাতিয়ে রাখছেন তাদের সকলেরই কি মন খারাপ?? কেউ কেউ তো তাদের সবগুলো দাঁত মিডিয়াতে দেখিয়ে দিলেন। একি শোকের প্রকাশ?? আর তারা হুমায়ূন আহমেদ মারা যাবার আধ ঘণ্টার মাঝেই কীভাবে এসে পৌঁছলেন?? কেউ কেউ বেশ সাজ-গোজ করেই এসেছেন। তারা কি আগে থেকেই তৈরি হয়ে ছিলেন?? চ্যানেল আই রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে প্রচার করলো হুমায়ূন আহমেদ আর নেই, ১১ টা ৪৫ এ হুমায়ূণ মৃত্যুতে ডিজিটাল ব্যানার নিয়ে হাজির। ওরা কি আগেই তৈরি হয়ে ছিল?? এরা মৃত্যুকেই করেছে পণ্য।

এবার হুমায়ূন আহমেদ প্রসঙ্গ ছেড়ে অন্য একটা প্রসঙ্গে আসি। সেলিনা হোসেনের বিবৃতিকে অস্ত্র করে প্রথম আলো আমাদের দেশের রাজাকার বিরোধী মনোভাবকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করেছে। কোন প্রগতিশীল শক্তি ঘাতকদালাল নির্মূল কমিটিকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করে না, তবে ইনকিলাবসহ কিছু রাজাকার পক্ষেরর শক্তি এক সময়ে ব্যাঙ্গ করে একে বলতো 'ঘাদানিক', প্রথম আলোও সেই দলে যোগদান করে তাদের অবস্থানটা আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার করে দিয়েছে। সব কিছুর নাম সংক্ষিপ্ত করতে হয়না, বদলে দেবার জোয়ারে সুবহে সাদিক সেটা ভুলে গেছে। আমরাও একটু যোগ দেই তার সাথে। প্রথম আলোর মতিউর রহমান এর নাম সংক্ষিপ্ত হলে হয় মর। এবার এর সাথ একটা আকার যোগ দেই, কারণ গ্রাম দেশে কোন কোন লোককে লোকে ব্যাঙ্গার্থে নাম বিকৃত করে 'আ' যোগ করে দেয়, যেমনঃ হরিপদকে ডাকে হরিপদা, কামালকে ডাকে কামাইল্লা ইত্যাদি। এভাবে মতিউর রহমানের নাম হয় মরা।

আজকে সবাইকে একটা অনুরোধ করে যাচ্ছিঃ
আজ থেকে প্রথম আলোর মতিউর রহমানকে মরা বলে ডাকা শুরু করুন!!


চিত্রউৎসঃ সচলায়তন

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১২

পরাজিত যোদ্ধা



পরাজিত যোদ্ধা

পরাজিত যোদ্ধা ঘর-ছাড়া আজ।
জীর্ণ-শীর্ণ দেহে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে
হেঁটে চলে শহরের পিচঢালা পথে,
তারপরে গ্রামের সেই মেঠো পথ!
বিষণ্ণ আকাশে কান্না হয়ে নামে বৃষ্টি...
সস্তা ফ্রেমের চশমাতে মোটা কাচ
ঝাপসা হয়ে আসে একটু-একটু করে,
পিছুটানে সেই পুরোনো স্বপন,
চোখের কোণটা কি একটু ভেজা?
আঁধারের মাঝে যায় না তো দেখা...

জীবনের শেষে হিসেব মেলাতে চায়,
                            হিসেব মেলেনা কিছুই!
এই দেশ কি চেয়েছিলো সে '৭০ এর ভোটে??
'৭১ এ অস্ত্র তুলেছিলো এরই জন্য??
কিংবা হারতে হারতে '৯০ এর জয়??

দেশে আজ গণতন্ত্র চলে!
নাকি গণতন্ত্রের নামে নব্য রাজতন্ত্র!
এ গণতন্ত্রের কাঁধে ছিনালি করে স্বৈরাচারে!
এ গণতন্ত্রের কাঁধে ভোট কেনা-বেচা চলে
                                       ইসলামের নামে!


দেশে আজও আছে সমাজত্রন্ত্র!
যার কোন সংজ্ঞা নেই, শুধুই ফাঁকা বুলি!
সে অসংজ্ঞায়িত সংজ্ঞায় না খেয়ে মরে গায়ের চাষা!
আর পেট মোটা হয় রক্তচোষা বাঁদুড়ের,
মধ্যসত্ত্বাভোগী আর কর্পোরেট মালিকের!

রাষ্ট্রের হয় মুসলমানী, সে নামাজ পড়ে হর-রোজ!
ধর্মের নামে চলে হানাহানি, রাখে না কেউ খোঁজ...
আলু-কালু ভাই পত্রিকা ভরে পাকিদের গান গেয়ে,
স্টেডিয়াম হয় উত্তাল বাং-পাকিদের পেয়ে...

বেঁচে থাকা আর কেন??
তাই ছুটে চলা রেল-পথে...
যেন লাশ চেনে না কেউ!
সে সব হেরে গিয়ে চায় না পতাকা কফিনে,
যা উড়েছে রক্তচোষার গাড়িতে,
রাজাকার, আর আল-বদরের বাড়িতে!

বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১২

'মোরা' আর আমার হাইকু প্রচেষ্টা

এর আগে হাইকু নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলামঃ জাপানি ছন্দঃ হাইকু। পোস্টটা অনেকেই পড়েছেন, কেউ কেউ মন্তব্য করে উৎসাহ যুগিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নিজের হাইকু প্রচেষ্টা নিয়ে পোস্ট দিচ্ছি। হাইকু আকারে ছোট হলেও বদ্ধস্বর বর্জণ করে লেখাটা খুবই কঠিন। কারণ বাংলা ভাষা ঠিক জাপানি ভাষাটার মতন না। এ ভাষাতে বদ্ধস্বর শব্দের বাহুল্য বাংলাতে হাইকু লেখাকে কঠিন করে দিয়েছে। কারো কারো মোরা নিয়ে প্রশ্ন ছিল সেটা নিয়ে শুরুতেই আলোচনা করবো। এরপর মূল পোস্টে যাবো।

মোরা বা Mora বোঝাতে গেলে আমাকে সেই বাংলা ছন্দেই ফিরে যেতে হবে। কারণ বাংলা ছন্দে একে ব্যাখ্যা করলেই সবচেয়ে সহজবোধ্য হবে বলে আমার মনে হয়। যদিও বিশেষ কিছু কারণে বাংলা ছন্দ নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু আজ ঘুরেফিরে ওখানেই ফিরতে হচ্ছে। আগে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে এখানে, আজ আরেকটু লেখার চেষ্টা করি।

মোরার সংস্কৃত শব্দ হল মাত্রা, যার থেকে বাংলাতেও এর নাম হয়েছে মাত্রা। বাংলা কবিতায় একটি স্বর উচ্চারণের নিম্নতম কালকে মাত্রা বলে। যেমন: হ্যাঁ, না, কি, বান্‌, ধান্‌, তৃ, বৃ, দেশ্‌ ইত্যাদি। বাংলাতে কখনো কখনো শব্দের এই ক্ষুদ্রতম অংশকে একমাত্রার আবার কখনো কখনো দুই মাত্রার হিসেব করা হয়। সবক্ষেত্রেই মুক্তস্বরকে একমাত্রা ধরা হয়, কিন্তু বদ্ধ্বস্বরকে কোন কোন ক্ষেত্রে একমাত্রার, আবার কখনো কখনো দুই মাত্রার ধরা হয়ে থাকে।

স্বরবৃত্ত ছন্দঃ
মুক্তস্বর - একমাত্রা।
বদ্ধস্বর - একমাত্রা।

মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ
মুক্তস্বর - একমাত্রা।
বদ্ধস্বর - দুইমাত্রা।

অক্ষরবৃত্ত ছন্দঃ
মুক্তস্বর - একমাত্রা।
বদ্ধস্বর - কখনো একমাত্রার, কখনো দুই মাত্রার। শব্দের শুরুতে বা মাঝের বদ্ধস্বর একমাত্রার কিন্তু শেষে থাকলে দুইমাত্রার হবে। যেমনঃ শ্রাদ্ধ = শ্রাদ্‌ + ধো; এখানে শব্দের শুরুতে বদ্ধস্বরটিকে একমাত্রার ধরা হবে কিন্তু শেষে থাকালে দুমাত্রার ধরা হত। যেমনঃ নির্মল = নির্‌ + মল্‌; নির্‌ একমাত্রার, মল্‌ দুই মাত্রার।

এবার বলুনতো কালপুরুষ শব্দটি কয় মাত্রার??

কালপুরুষ = কাল্‌ + পু + রুষ

সাধারণ হিসেবে কাল্‌ কে একমাত্রার ধরতে হলেও ধরা যাবে না, কারণ কালপুরুষ একটা শব্দ হলেও কাল্‌ নিজেই একটা পূর্ণ শব্দের গুণ রাখে, আর সেভাবেই উচ্চারিত হয়। তাই কাল্‌ দুইমাত্রার হবে, আর কালপুরুষ ৪ মাত্রার না হয়ে ৫ মাত্রার হবে।

অনেক হল, এবার হাইকুতে ফিরি!


(১)



বাদরো ঝরে
কালো কাকেরো 'পরে,
ভিজে গেলো যে!


(২)



বাদলো মাঝে
ভালোবাসাটা খুঁজি...
কতদূরে সে?


(৩)



ভালোবাসাটা
জলেরি মতো করে
কচু পাতাতে!


(৪)



ক্ষ্যাপাটে হয়ে
সে মেতে ওঠে নাচে
মেঘোলা দিনে!


(৫)



তুমি ও আমি
জলোধারারি মাঝে
মিলে যাবো কি?




বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
জাপানি হাইকুর স্বকীয়তা বজায় রাখবার জন্যই বাদর = বাদরো, বাদল = বাদলো, মেঘলা = মেঘোলা, জলধারা = জলোধারা উচ্চারণ করতে হবে। মাত্রার হিসেব ঠিক রাখবার জন্য ধারারই = ধারারি (র্‌+ই দ্রুত উচ্চারিত হয়ে রি হবে), একইভাবে জলের

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

জাপানি ছন্দঃ হাইকু


আমি ছন্দ নিয়ে কিছু আলোচনা করে কিছু পোস্ট দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবো। কিন্তু আমার ছন্দ আলোচনা, বিশ্লেষণ অনেকেরই ভালো লাগে নি। এজন্য তারা আমাকে তাদের নানা মন্তব্যে আমাকে হেয় করবার চেষ্টা করেছে। তাই ভাবলাম ওদের ইচ্ছেরই প্রতিফলন ঘটুক, ওগুলো নিয়ে আর লিখবো না। তবে ছন্দের যে গভীর প্রেমে আমি মজেছি তাতে ছন্দ থেকে আমার দূরে থাকাটা হয়তো আর হবে না। আমি ছন্দ নিয়েই থাকবো তবে অন্যভাবে। smile :) :-)

প্রত্যেক সাহিত্যেই কবিতার ছন্দ-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত হয় ঐ ভাষার দ্বারা, ভাষার উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য দ্বারা। জাপানি ছন্দও এই নীতির ব্যতিক্রম না। জাপানি ভাষায় স্বরবর্ণ সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। এগুলোর সবগুলোই হ্রস্ব। জাপানি ভাষায় কোন দীর্ঘস্বর কিংবা অই্‌, উউ্‌ এর মতন বদ্ধস্বর নেই। জাপানি ভাষায় কোন ব্যঞ্জনস্বরের উচ্চারণও হসন্ত যুক্ত না, অর্থাৎ সবই মুক্তস্বর, কোন বদ্ধস্বর নেই। তাই জাপানি সাহিত্যে ছন্দের হিসেবে কোন প্রকার জটিলতাই নেই। ফলে জাপানি সাহিত্যে ছন্দশাস্ত্রও খুব একটা গড়ে অঠে নি।

জাপানি সাহিত্যে কবিতাগুলো হয়ে থাকে খুবই সরল প্রকৃতির। ছন্দবৈচিত্রতার দরুন জাপানি ছন্দকে শ্রেণিকরণ করা যায় না, তবে মাত্রার পর্বসংখ্যা অনুযায়ী জাপানি কবিতাকে মোটামুটি পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় - হাইকু, তানকা, চোকা, সেদোকা এবং ইয়ামো।

হাইকু (একবচনে "হাইকি") একধরনের জাপানি কবিতা যাতে মাত্র তিনটি পঙ্‌ক্তিতে যথাক্রমে ৫, ৭ এবং ৫ মোরাসের মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। সাধারণত একটি ছবি বর্ণনা করার জন্য হাইকু লেখা হয়ে থাকে। মোরাস ও মাত্রা একই ব্যাপার নয়। কিন্তু ইযোরোপীয়রা ১৭ মাত্রার হিসেবে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে। তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয়। মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী সংজ্ঞায়িত হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী ১২ মোরাসে ১৭ দল হয় ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ দলের পরিবর্তে আরো বেশী দলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে। জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। তাই তারা ১৭ দল ও তিন বাক্য বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লেখার সূত্রপাত ঘটান।

মাৎসু বাশোর "old pond" বা পুরোনো পুকুর হাইকিটা দেখে নিইঃ


古池や蛙飛込む水の音
ふるいけやかわずとびこむみずのおと

উচ্চারণে একে বিন্যস্ত করলে পাইঃ
fu-ru-i-ke ya (৫)
ka-wa-zu to-bi-ko-mu (৭)
mi-zu no o-to (৫)

ইংরেজি অনুবাদঃ
old pond . . .
a frog leaps in
water’s sound

এর বাংলা রূপটা দাঁড়ায়ঃ
পুরোনো পুকুর
ব্যাঙের লাফ
জলের শব্দ।

এটা আক্ষরিক অনুবাদ, হাইকুর ছন্দ রক্ষা করা হয় নি।। হাইকুর ছন্দে রবি ঠাকুর একে ভাবানুবাদ করে লিখেছেনঃ

পুরোনো ডোবা,
দাদুরী লাফালো যে,
জলেতে ধ্বনি।


এবার এই ছবিটার বর্ণনা করে একটা হাইকির চেষ্টা করিঃ
বাদরো ঝরে
কালো কাকেরো 'পরে,
ভিজে গেলো যে!

শুক্রবার, ৬ জুলাই, ২০১২

বাংলাদেশের নুনু...


পুরুষ মানুষের যৌনাঙ্গের অনেক নাম। লিঙ্গ, শিশ্ন, পুরুষাঙ্গ হল পুঁথিগত নাম। অশালীনভাবে একে বলে বাড়া, ডাণ্ডা, লেওড়া। আর এর দুইয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে বলা হয় সোনা, ধন। তবে নুনু শব্দটা বহুল প্রচলিত। পুরুষ মানুষের নুনু থাকে। আবার বৃহণ্নলাদেরও নুনু থাকে। তবে পুরুষের নুনু কাজের কাজ করতে পারলেও বৃহণ্ণলার নুনু পারে না।

সাধারণত পুরুষ প্রজাতির প্রাণীদের নুনু থাকলেও বর্তমানকালে রাষ্ট্রেরও নুনু থাকে। কোন কোন দেশের নুনু কাজের, আবার কোন কোন দেশের নুনু কাজের না। ১৯৪৭ এ যখন পাকিস্তানের জন্ম হয় তখন বলা হয়েছিল আর যাইহোক পাকিস্তানের নুনুতে হাত দেওয়া হবে না। কারণ পাকিস্তান শুধুমাত্র মুসলমানদের দেশ হবে না, এখানে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, কাদিয়ানীদের জায়গা হবে। এই ভরসায় বাংলার ছুডলোক হিন্দুরা জিন্নাহ সাবরে সমর্থণ দিলো। পাকিস্তান হল। ছুডলোক হিন্দুদের নেতা যোগেন বাবু মন্ত্রী হলেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে বুঝতেই পারলেন পাকিস্তানের নুনুটা একটু বড় হইছে, একে হাফ-হাতা বানানোর সময় এসে গেছে। রাতের অন্ধকারে ভারতে হলেন পগার পার। শালার মালু সময়মত ঠিকই আসল দেশে দৌড় দিলো!!

পাকিস্তান রাষ্ট্রের মুণ্ডিখোলা নুনুর সুরসুরিতে মালুরা বেশিদিন টিকতে পারলো না। দলে দলে সব ভারত রওনা দিলো। পিপীলিকার মতন পিলপিল করে এগিয়ে চললো নিজ দেশের মাটিতে। পাকিস্তান সত্যিকারের মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে উঠতে লাগলো। কিন্তু তাতে বাধ সাধলো গোপালগঞ্জের মালুরা, আর তাদের নেতা মুজিব সাব। তিনি দেখলেন এই নুনুর চুলকানি চলতে থাকলে পাকিস্তান ধর্মের নামে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলছে। কারণ পশ্চিমা পাকিরা ভাবে পূর্বের পাকি মুসলিমরা আসলে মুসলমান না, তাদের নুনু ঠিকমত কাটা না! ধনের জোর কম!!

চুলকানি মুক্ত দেশ গড়ার জন্য শেখ সাবের নেতৃত্বে আর মালুদেশ ইন্ডিয়ার ইন্ধনে বাঙালি পাকিগো পিটাতে নামলো লগি-বৈঠা নিয়া। ওরা শেখ সাবরে ধরে নিয়ে গেল। তাতে কী!! মালুরা মালুভাইদের কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়া নেমে পড়লো আসল মুসলিমদের সাফা করতে। সব সাফা করতে হল না, তার আগেই পাকিরা পায়ে ধরে মাফ চাইলো।

দেশ স্বাধীন হল। নতুন দেশের নতুন নুনু, কোন চুলকানি না। শেখ সাব দেশে ফিরলে নতুন সংবিধান লেখা হল। এটা নিশ্চিত করা হল আর যাই হোক বাংলাদেশের নুনু নিয়ে কোন টানহ্যাঁচড়া চলবে না। যার যার নুনু সে তার ইচ্ছে মত চুলকাতে পারলেও কাউকে দেশের নুনু চুলকানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। এই ফাঁকে নুনু চুলকানোর মানুষেরা দলে দলে কপালে সিঁদূর দিয়ে মালু সাজতে লাগলো কিন্তু তলে তলে নুনুর চুলকানি ঠিকই থাকলো। সব চুলকানির জন্য শান্তির পরশ হয়ে এল মামুরা। তারা শেখ সাব আর তার পুরো পরিবারকে সাফা করে দিলো। রেডিও বাংলাদেশে আবারো গর্জণ করে বলা হলঃ পাকিস্তান জিন্দাবাদ থুক্কু বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!

এরপর চললো মামুদের ক্ষমতা দখলের নাটক। জিয়া-খালেদ হয়ে আবারো জিয়ার হাতে ফিরলো তাহের মামুর কল্যাণে। তাহের মামু সমাজতান্ত্রিক দেশ চেয়েছিলেন, ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ চেয়েছিলেন। তার প্রমাণ মিলে তার নেতৃত্বে এগিয়ে জিয়াকে সিপাহী-জনতার শ্লোগানে!! সবাই শ্লোগান দিলোঃ


নারায়ে তাক্‌বীর!
আল্লাহু একবার!!
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!!


জিয়া সাব ক্ষমতায় আসতে না আসতেই হিরো তাহের মামুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জিরো বানিয়ে দিলেন। যেসব সাচ্চা মুসলমান কপালে আবির দিয়ে মালু সেজেছিল তারা আগের রূপে ফিরে এল। পাকি দেশে পালিয়ে থাকা সাচ্চা মুসলমান বাঙালিরা দেশে ফিরে আসতে লাগলো। সবাই মিলে জিয়া মামুর নেতৃত্বে দেশের নুনু কাটার ব্যবস্থা করলেন। শিশুদেশের কচি নুনুর মাথার খোলসটা সহি ইসলামিক কায়দায় কেটে ফেলা হল। মুণ্ডিটা সুন্দর দেখা যেত লাগলো। এই না হলে ইসলামি দেশ।

কিন্তু জিয়া সাব সুন্নতে খৎনার উৎসবটা ঠিকমত করতে পারলেন না। মঞ্জু মামু জিয়া মামুকে সরিয়ে দিলেন, গদি থেকে না, সোজা দুনিয়া থেকে। আর মঞ্জু মামুর ঘাড়ে বন্দুক রেখে এগিয়ে এলেন এরশাদ মামু। আবারো একই কাণ্ড! এরশাদ মামু হিরো মঞ্জু মামুকে হিরো থেকে জিরো করে দিলেন দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে। জিয়া মামু সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান করে যেতে পারেন নি, এরশাদ মামু সেই উৎসবটাই করলেন মহাধুমধামে।

এরশাদ মামু সুন্নতে খৎনার উৎসব করে নিজেকে সাচ্চা মুসলমান হিসেবে প্রমাণ করলেও খ্রিস্টান সংস্কৃতি ঠিকই আমদানি করলেন। চাতরদের রক্তের দাগ মুছিয়ে দিতে দেশে এলো 'ভালোবাসা দিবস'...খ্রিস্টান কায়দা কানুন যতই আসুক মামু আটরশি পীরের বাড়িতে গিয়ে সব গুণাহর দায় মুছে ফেলেছেন। কিন্তু একসময় এরশাদ মামুও টিকতে পারলেন না। ক্ষমতা থেকে সরে গেলেন। দেশে গণতন্ত্র এলো। কিন্তু এরশাদ মামু দুইনেত্রীর ঘাড়ে বসেই রুটি-হালুয়া খেতে লাগলেন। খালেদা ম্যাডামের কাছে কেউ নুনু নিয়ে কথা বলার সাহস পেলেন না। যদিওবা মালু সুরঞ্জিত একবার ছোট্ট একটা কথা তুলেছিল কী প্রসঙ্গে, সাকা সাব তাকে চুপ করিয়ে দিলেন। ফুল হাতারা কেন কথা বলবে।

যাইই ঘটে চলুক না কেন দেশের একটা অংশ স্বপ্নে বিভোর যে, দেশের নুনু আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে। সবাই নৌকায় ভোট দিলেন, হয়তো এবার হাসিনা আপা পারবেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না। কাটা নুনু কাটাই থাকলো। কারণ সেটা করা সম্ভব না। ফুলহাতা নুনুকে সুন্নতে খৎনা দিয়ে হাফহাতা করা যায়। কিন্তু হাফহাতা নুনুকে কি আর ফুলহাতা করা যায়!!

বাংলাদেশ এখন সাচ্চা মুসলমান রাষ্ট্র। বাংলাদেশ এখন হ্বজ করে, রোজা রাখে, নামাজ পড়ে। সবাই তাই দলে দলে বলুনঃ

নারায়ে তাক্‌বীর!
আল্লাহু একবার!!
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!!