শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১০

শাহ্‌রুখ খান দর্শণ আর অনাহারী কিছু মানুষ!!

অন্তর শোবিজের প্রচারণা মারফৎ জানাগেল যে আগামী ১০ ডিসেম্বর ভারতের মেগাস্টার শাহ্‌রুখ খান আসছেন।সাথে থাকছেন রাণী মুখার্জি, অর্জুন রামপাল, প্রীতি জিনতা, মল্লিকা শেরাওয়াৎ সহ আরও অনেকে।এদের প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যপী কর্মকাণ্ড চলবে ঢাকাস্থ আর্মি স্টেডিয়ামে।অন্তর শোবিজ প্রায় ২০,০০০ টিকেট ছাড়ছে।এর মাঝে ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা থেকে থাকছে ১০,০০০, ১৫,০০০ এবং ২৫,০০০ টাকার টিকেট।

কর্তৃপক্ষ মূল্য অনুযায়ী টিকেট সংখ্যা জানায় নি।তাই গাণিতিক সুবিধার জন্য ধরে নিলাম ৫,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ১০,০০০ (৫০%), ১০,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ৫,০০০ (২৫%), ১৫,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ৩,০০০ (১৫%) এবং ২৫,০০০ টাকার টিকেট সংখ্যা ২,০০০ (১০%)।এই হিসেবে ২০,০০০ টিকেটের মোট মূল্যমান সাড়ে ১৯ কোটি টাকা মাত্র।

সাধারণত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কখনই প্রকাশ করে না যে কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে।তারকারা অনেক বেশি জনপ্রিয় সেটা মাথায় রেখেই অর্থভাগের একটা হিসেব করি।ধরে নেই তারকারা পাবেন এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ সাড়ে ৬ কোটি টাকা।সরকারকে দেওয়া কর সহ অন্যন্য ব্যবস্থাপনা খরচ আরও এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ সাড়ে ৬ কোটি টাকা।এবং অন্তর শোবিজের লাভ বাকি এক-তৃতীয়াংশ সাড়ে ৬ কোটি টাকা।এটা একটা গড়পরতা হিসেব।

এখন আসি বাংলাদেশের মানুষের আয়ের হিসেবে।সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লক্ষ এবং মাথা পিছু বার্ষিক আয় ১৪৪০ মার্কিন ডলার।মোট ৫২ সপ্তাহের ৪ সপ্তাহ্‌ ছুটি, প্রতি সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪০ ধরলে, প্রত্যেক কর্মজীবি মানুষের বার্ষিক কর্মঘণ্টা ১৯২০।প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি হবার কথা।এই হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি জন মানুষের ঘণ্টা প্রতি আয় প্রায় ৫২ টাকা(ডলার প্রতি ৬৯ টাকা ধরে)।৬ ঘণ্টায় আয় ৩১২ টাকা।২০,০০০ মানুষের ৬ ঘণ্টায় আনুমানিক আয় প্রায় ৬২ লাখ টাকা।সেখানে খরচ সাড়ে ১৯ কোটি টাকা।দুই-তৃতীয়াং টাকা দেশেই থাকছে ধরে বোঝাটা কমে যাবে।দেশের সাড়ে ৬ কোটি টাকা মাত্র ৬ ঘণ্টাতেই অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।

আমার এই হিসেব-নিকেষে অনেকেই ভাবতে পারে যে অন্তর শোবিজের সাথে আমার কী শত্রুতা।আমার কোনই শত্রুতা নেই।এট সারা দেশের অর্থপাচারের একটা উদাহরণমাত্র।আমাদের ভেতর এই অপচয়ের সংস্কৃতিটা বেশ ভালোভাবেই শেঁকড় গেড়েছে।যেখানে আমাদের দেশের অনেক লোকই এক বেলা খবার পর ভেবে পায় না যে পরের বেলাতে খাবার জুটবে কি না সেখানে আমরা কেএফসি তে খাই যারা আবার দেশি মুরগি খাওয়াতে ভয় পেয়ে সব মুরগি ভারত থেকে কিনে আনে।

যাদের টাকা আছে তারা খাবে, যাদের নাই তারা না খেয়ে থাকবে এটাই পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যের মূলনীতি।যাদের টাকা আছে তারা কেএফসি তে খাবে কিংবা শাহ্‌রুখের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করবে।তাতে আমি বাধা দেয়ার কেও না।শুধু অনুরোধ আমার মনগড়া হিসেবটা মাথায় না রাখলেও ব্যস্ত জীবনের কিছুটা সময় খরচ করে নাখেয়ে থাকা মুখগুলোর কথা একটু ভাবুন আর সম্ভব হলে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।