শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

অকৃত্রিম বন্ধু ভারত - ০১ : নদ-নদী - ০২ : গঙ্গা-পদ্মা দরকষাকষি ও আমার প্রস্তাবনা

বাংলাদেশ-ভারত এই দুই প্রতিবেশি দেশের মাঝে যে সকল বিষয়ে টানপোড়ন চলছে তার মাঝে অন্যতম হল নদী সমস্যা। ভারত তাদের দাদাগিরি ফলিয়ে নদী হতে এক তরফা ভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। যার ফলাফল ডেকে নিয়ে আসছে বাংলাদেশের করুণ পরিণতি। এই ধারাবাহিকের গত পর্বে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরের তিস্তা ও মহানন্দা নিয়ে। আজকের আলোচনা শুধুই গঙ্গা-পদ্মার পানি কেন্দ্রিক। আর এর সাথে আমার কিছু প্রস্তাবনাও উত্থাপনও করতে চাই।

গঙ্গা এই ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান নদী। আর আমাদের বাংলাদেশ মূলত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এর নিয়ে আসা পলি দ্বারা গঠিত বদ্বীপ। গঙ্গার উৎপত্তি ভারতের উত্তরখণ্ড (উত্তরাঞ্চল) প্রদেশ এর উত্তরে হিমালয়ের পশ্চিমাংশের গঙ্গোত্রি হিমবাহ এর গণুমুখ থেকে। এর পানির উৎস মূলত হিমালয়ের বরফগলন। অনেকগুলো পাহাড়ি নদী এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এর প্রধান পানি-প্রবাহ অলকনন্দের উৎপত্তি নন্দদেবী, ত্রিশূল আর কামিত পর্বতে সৃষ্ট প্রবাহ থেকে। এরপর এই নদী হিমালয়ের প্রায় ২০০ কিমি সংকীর্ণ পাহাড়ি পথ পার হয়ে হরিদ্বারের নিকটে এসে সমভূমিতে পতিত হয়েছে। নিচের মানচিত্রে উৎপত্তিস্থল হতে হরদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার গতিপথ দেখে নিই:


[ছবিটা পরিষ্কার দেখা না গেলে আলাদা করে 'View Image' Option ব্যবহার করে দেখে নিন]

হরিদ্বারের কাছেই রয়েছে ইস্ট-ইন্ডিয়া আমলের বাঁধ যা এই গঙ্গা নদীর অনেকটা পানি সরিয়ে উত্তর প্রদেশের দোয়াবের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আর কম পানি নিয়েই গঙ্গা ধাবিত হয় পূর্বের সমভূমির দিকে। প্রায় ৮০০ কিমি পথ পারি দেওয়ার পর এলাহাবাদের কাছে ত্রিবেনী সঙ্গমে মিলিত হয় গঙ্গা আর যমুনা। এরপর একে একে কোশি, শন, গাঁদাকি, ঘাগরা নদী এর সাথে যুক্ত হয়ে এর প্রবাহকে করেছে আরো বেগবান। এই ধারা ভাগলপুরের রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে দক্ষিণে মোড় নেয়। কিছুপথ পরেই মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে জন্ম হয় এর প্রথম শাখানদী ভাগিরথী-হুহলীর। আর মূল প্রবাহ ফারাক্কা পার হয়ে ধাবিত হয় বাংলাদেশের দিকে। ১৯৭৪ সালে এখানেই বাঁধ নির্মাণ করা হয় মূল প্রবাহ থেকে পানি সরিয়ে হুগলীর দিকে প্রবাহিত করা যাতে কোলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় থাকে।

বাংলাদেশের চাঁপাই-নওয়াবগঞ্জের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রায় ১৪৫ কিমি জুড়ে বাংলাদেশ-ভারত রাজনৈতিক সীমানা নির্দেশ করে। বাংলাদেশে প্রবেশের পরই এর পরিচিতি হলে নদী-কৌশলের কারণে রাজবাড়ির গোয়ালন্দ পর্যন্ত এর নাম গঙ্গা। পথে পাবনার ঈশ্বরদীর কাছে জন্ম হয় দ্বিতীয় শাখানদী গড়াই-মধুমতীর। গোয়ালন্দে এর সাথে মিলিত হয় পুরাতন বহ্মপুত্র যমুনা। মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে চাঁদপুরের নিকট মেঘনায় পতিত হয়।

ফারাক্কার বাঁধ ডেকে আনে বাংলাদেশের বিপদ। তারপরও বছরের পর বছর নানা অজুহাতে ঝুলে রয়েছিল চুক্তি সাক্ষরের। অবশেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাথে ৩০ মেয়াদী একটা চুক্তি করেন যা মন্দের ভাল বলে অভিহিত করা যায়। এর আগে অবশ্য জিয়া সরকারও ৫ বছরের স্বল্প মেয়াদী একটি চুক্তি করতে সমর্থ হয়। ফারাক্কা বাঁধ আর গঙ্গা-পদ্মার পানি নিয়ে দর কষাকষির ইতিহাসকে মূলত ৬ টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

প্রথম পর্যায় (১৯৫১-১৯৭৪)
এই পর্যায়ে আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল বাঁধ নির্মানের আগেই গঙ্গার পানির সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পর বিপরীতে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ গঙ্গার পানির সম্পূর্ন প্রবাহের দাবিতে অটল থাকে। কারণ ফারাক্কার উজানে জলাধারে সঞ্চিত পানিই ভারতের জন্য যথেষ্ট আর এই প্রল্পের মাধ্যমে হুগলিতে পানি পাঠানোর ব্যপারটা ত্রুটিপূর্ণ। অন্যদিকে ভারত দাবি করে যে বাংলাদেশে গঙ্গায় প্রবাহিত পানির সিংহভাগই বঙ্গোপসাগরে অপচয় হয়। ১৯৭২ সালে আন্তঃসীমান্ত নদীসমুহের উন্নয়নের দিককে সামনে রেখে সংযুক্ত নদী কমিশন (জ়েআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৭৪-১৯৭৬)
বাংলাদেশ প্রস্থাব ছিলঃ ভারত বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমান পানিকে উজানের জলাধারে সঞ্চিত করে তা শুস্ক মৌসুমে ব্যাবহার করতে পারে, অন্যদিকে ভারত একটি সংযোগ খালের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র থেকে বিপুল পরিমান পানি গঙ্গায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনাটি ব্যার্থ হয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সাথে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মতৈক্যের ভিত্তিতেই ব্যারেজের কার্যক্রম শুরু হয়। মতৈক্যটি ছিলঃ ভারত বিকল্প খাল দিয়ে ১১,০০০ থেকে ১৬,০০০ কিউসেক পানি গঙ্গা থেকে অপসারন করবে আর বাকি প্রবাহ বাংলাদেশে আসবে। এই পরীক্ষামুলক পানিবন্টন মাত্র ৪১ দিন স্থায়ী হয়। ১৯৭৬ সালে আগের সমঝতার নবায়ন না করে ভারত একতরফা ভাবে গঙ্গার পানি অপসারন করতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়েই ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করে এবং সাধারন পরিষদ এক্ষেত্রে একটি মতৈক্যের বিবৃতি দেওয়া হয়। ফলে ঢাকায় মন্ত্রি-পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন হয়।

তৃতীয় পর্যায় (১৯৭৭-১৯৮২)
মন্ত্রি-পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনার পর ১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে) গঙ্গার পানি প্রবাহ বন্টনের বিষয়ে একটি পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে, ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল এই দশ দিন সময়ের মধ্যে বাংলাদশের জন্য ৩৪,৫০০ কিউসেক এবং ফারাক্কার বিকল্প খাল দিয়ে কলকাতা বন্দরের জন্য ২০,৫০০ কিউসেক পানি বরাদ্দ করা হয়। সেই সাথে চুক্তিতে পানি বন্টনের (১০ দিনের ভিত্তিতে) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী নির্ধারন করা হয় যাতে বাংলাদেশকে চুক্তিতে উল্লেখিত পানি প্রবাহের ন্যুনতম শতকরা ৮০ ভাগ প্রদান নিশ্চিত করা হয়।

চতুর্থ পর্যায় (১৯৮২-১৯৮৮)
১৯৭৭ সালের প্রথম গঙ্গার পানি চুক্তি ১৯৮২ সালের পর আর নবায়ন করা হয়নি, তবে ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালের শুষ্ক মৌসুমের পানি বণ্টনের জন্য ১৯৮২ সালের অক্টোবর মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা-পত্র স্বাক্ষরিত হয়। এতে 'নিশ্চিত ন্যূনতম' প্রবাহের সুযোগ না রেখে বারডেন শেয়ার এর শর্ত রাখা হয়। উভয়পক্ষকেই গঙ্গার পানিবৃদ্ধির বিষয়ে তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবের ফিজিবিলিটি নিরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৯৮৩ সালে উভয়পক্ষ তাদের হালনাগাদ প্রস্তাব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে, কিন্তু আবারও মতপার্থক্যের জন্য কোন গ্রহনযোগ্য সুপারিশ অনুমোদিত হয়নি। ১৯৮২ এর সমঝোতা-পত্রের মেয়াদ ১৯৮৪ সালে শেষ হবার পর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত মতৈক্যে না পৌঁছার ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলতে থাকে। আর সুযোগ নিয়ে ভারত এক তরফা ভাবে পানি সরাতে থাকলেও অস্থায়ী কিছু সমঝোতায় বাংলাদেশ কিছু পানি পায়।

পঞ্চম পর্যায় (১৯৮৮-১৯৯৬)
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে কোন চুক্তি না থাকায় ভারত একতরফাভাবে বাংলাদেশকে কোণ পানি না দিয়েই গঙ্গার পানি বিকল্প পথে হুগলি নদীতে স্থানান্তর করতে থাকে। ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মূল-নদীপ্রবাহ গড়াই-মধুমতী শুস্ক মৌসুমে সম্পুর্নভাবে শুকিয়ে যায়। ভারতের এই একচেটিয়া পানি উত্তোলনের হলে ১৯৯২ সালের মার্চে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে গঙ্গায় ইতিহাসের সর্বনিম্ন প্রবাহ (১২,৫২১ কিউসেক) পরিলক্ষিত হওয়া; কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে গড়ে যা ৭৫,০০০ কিউসেক হবার কথা ছিল। এ পর্যায়ে পানিবণ্টনের জন্য আলোচনা চলতে থাকলেও তা সাফল্যের মুখ দেখেনি।

ষষ্ঠ পর্যায় (১৯৯৬)
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেরই সরকার পরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় পর্যায়ে পানি বন্টনের বিষয়টি পুনরালোচনায় আসে এবং ঐ বছরের ডিসেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ঐতিহসিক গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ১৯৯৭ সালের জানুয়ারী থেকে কার্যকর হয় এবং ত্রিশ বছর পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হবে।

১৯৯৬ এর ঐতিহাসিক গঙ্গা পানিবন্টণ চুক্তি
মূল চুক্তিটি বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনের ওয়েব-সাইটে ইংরেজিতে দেওয়া আছে। দেখতে চাইলে এই লিঙ্কে যান। তবে চুক্তিটির বাংলা সারাংশ করলে দাঁড়ায়ঃ

# চুক্তির প্রথমধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাবে ফারাক্কায় পানির পরিমাণ অনুয়াযী। ফারাক্কায় পানি কম থাকলে বাংলাদেশ কম পাবে আর বেশি থাকলে বেশি পাবে।

# এ চুক্তিটি শুধুমাত্র শুষ্ক মৌসুমের (১ জানুয়ারি - ৩১ মে) জন্য কার্যকর।

# কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য হুগলি নদীতে পানি-প্রবাহের প্রয়োজন ৪০,০০০ কিউসেক। ফলে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৭৫,০০০ এর বেশী হলে ভারত ৪০,০০০ পাবে আর বাকিটা বাংলাদেশ।

# পানি-প্রবাহ ৭০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ কিউসেকের মধ্যে থাকলে ভারত বাংলাদেশকে শুধু ৩৫,০০০ কিউসেক দেওয়া হবে।

# ফারাক্কায় পানি-প্রবাহের ঐতিহাসিক গড় অনুযায়ী মার্চে থেকে মধ্য মে পর্যন্ত প্রবাহ ৭০,০০০ এর কম থাকে। তাই এ সময় পানির বন্টণ হবে ৫০-৫০ অনুপাতে।

চুক্তির দুর্বলতা
# পানি-প্রবাহের পরিমাণ নির্ণয়ে বাংলাদেশকে বোকা বানানো হয়েছে। আর বাংলাদেশও ভারতের দাদাগিরির কাছে না পেরে নাই মামার চেয়ে কানা ভালোর পথে গিয়েছে। চুক্তিতে দেখানো হয়েছে ফারাক্কায় ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত পানির পরিমাণকে। কিন্তু এই ৪০ বছরের ১৪ বছর (১৯৯৭৪-১৯৮৮) বাংলাদেশ পানি কম পেয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর, ২০১০ এ দৈনিক কালেরকণ্ঠের রাজকূটে প্রকাশিত নিচের ছবিদুটো দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।






এটি বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের প্রবাহ চিত্র।

# এখানে ফারাক্কায় পানির পরিমাণ অনুযায়ী যতটা সম্ভব সমতা বিধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ভারত যে উজানে পানি সরিয়ে নিচ্ছে তার কোন প্রকার পরিসংখ্যান চুক্তিতে নেই এবং তা হিসেব নির্ণয়ে বিবেচনা করা হয় নি। জানামতে ভারত গঙ্গায় ফারাক্কা ছাড়াও আরও দুটো বাঁধ/জলাধার নির্মাণ করেছে। এর একটা সালে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি হরদ্বারে গঙ্গা বাঁধ। গুগল আর্থে যা পেলামঃ







আর র‌য়েছে উত্তরখণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় তেহরিতে তেহরি জলাধার।





গঙ্গার প্রাণ বলা যায় এর ন্যতম প্রধান উপনদী কোশিকে। ভারত এই কোশী নদী ও এর উপনদীগুলো থেকে ইচ্ছেমত পানি সরিয়ে নিচ্ছে।







এছাড়াও পেলামঃ












# চুক্তির ARTICLE-II এর (ii) ধারায় বলা হয়েছেঃ
The indicative schedule at Annexure II, as referred to in sub para (i) above, is based on 40 years (1949-1988) 10 day period average availability of water at Farakka. Every effort would made by the upper riparian to protect flows of water at Farakka as in the 40-years average availability as mentioned above

কিন্তু এই 'Every effort' এর মানেটা যে কী হবে তা সংজ্ঞায়িত নয়। এবং ভারত দাদাগিরি ফলিয়ে এই সুযোগের অপব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক মহলে ফারাক্কার উজানে মাত্র দুটো বাঁধ/জলাধার এর কথা বলা হলেও; আমি গুগল আর্থ দিয়ে খুঁজে বিহারে এটা পেলাম। তবে ব্যাপারটা পরিষ্কার নাহলেও গঙ্গা থেকে পানি সরিয়ে নেবার ছবি বলেই মনে হচ্ছে।







এছাড়াও গঙ্গার অন্যান্য উপনদীগুলো থেকে নতুন করে পানি সরিয়ে নেবার প্রকল্প চলছে। আর এটা সরাসরি এই চুক্তির লঙ্গন। এই প্রচেষ্টার প্রমাণ মিলবে নিচের লিঙ্ক দুটোতে গেলেইঃ

কর্ণালি নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

গাঁদাকি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প


# চুক্তির ARTICLE-XI এ বলা হয়েছেঃ
For the period of this Treaty, in the absence of mutual agreement of adjustments following reviews as mentioned in Article X, India shall release downstream of Farakka Barrage, water at a rate not less than 90% (ninety per cent) of Bangladesh's share according to the formula referred to in Article II, until such time as mutually agreed flows are decided upon.

অর্থাৎ কোন কারণে ভারত আমাদের চুক্তি অনুযায়ী পানি দিতে না পারলে তারা অন্তত এর ৯০ শতাংশ দিবে। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেল যে ভারত একে আমাদের পানি দিবে না তার মাঝে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতন ১০ ভাগ কমিয়ে দিবে। এই না বলে দাদাগিরি!!

চুক্তি ঝুলে থাকার কারণ ও আমার প্রুস্তাবনা

বাংলাদেশ আর ভারতের গঙ্গা পানি বণ্টন বছরের পর বছর ঝুলে ছিল ভারতের একগুঁয়েমির কারণে। ভারত বারবার বলে আসছিল যে বাংলাদেশ যেন ব্রহ্মপুত্র তথা যমুনা থেকে খাল কেটে গঙ্গা(পদ্মা) তে পানি আনার বিকল্প ব্যবস্থা করে নেয়। আমাদের দেশের বোকা কিছু মানুষ ভারতের এই অপপ্রচেষ্টার মানে না বুঝলেও আমি কেন যেন বুঝতে পারছি। কারণ ভারত জানে যে গঙ্গার পানির উৎস তাদের হাতে হওয়াতে এখানে অন্যকারো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না আর অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের নিয়ন্ত্রণ মূলত চীনের হাতে (সিরিজের পরের কোন পোস্টে আলোচনা করবো)। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল ভারত চাইলেই অন্য কোন নদী থেকেও পানি এনে হুগলিতে স্থানান্তর করতে পারে। যেমন দামোদর থেকে সেটা করা খুবই সম্ভব।

ভারতের প্রস্তাবনার রূপটি ছবিতে দাঁড়ায়ঃ



ভারতের ফারাক্কা বাঁধ এর মূল যুক্তি কোলকাতা পোর্টের নাব্যতা বজায় রাখা। তাই সাপও মরে না লাঠিও ভাঙে না এমনভাবে একটা বিকপ্ল চিন্তা করলাম। কিন্তু এতে বাংলাদেশকে এগিয়ে আসতে হবে এবং বাংলাদেশকে টাকা খরচ করতে হবে নিজ দেশ বাঁচানোর স্বার্থে বাঁধ তৈরি করতে। আমার বিকল্প প্রস্তাবনা নিম্নরূপঃ



এর চাইতেও উত্তম প্রস্তাব হয় যাতে ভারতেরই যা করার করতে হবে। আমরা শুধু আমাদের গঙ্গা-পদ্মার প্রবাহ ফিরে পাব। দামোদর নদীতে পানির পরিমাণ ভালো। ভারতের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশে তো গরাইয়ের পানি বঙ্গোপসাগরে অপচয় হয়। তেমনি সমদ্রের কাছাকাছে চলে যাবার পর দামোদর এর পানিও অপচয় হয়। এই পানিই যদি হুগলি নদীতে নেওয়া হয় তো ভারত ও আমরা উভয়েই বেঁচে যাবো। নিচের ছবিটা দেখুনঃ



ভারতের দাদাগিরি শুধু বাংলাদেশের ও এরকম কম শক্তিশালী দেশের সাথেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে না ভারত ছলে,বলে, কৌশলে কিংবা প্রচ্ছন্ন হুমকিতে আমাদেরকে জাতিসঙ্ঘে যাওয়া হতে বিরত রেখেছে। কিন্তু পাকিস্তানের সাথে পারে নি। গঙ্গার পূর্বমূখী প্রবাহে বাঁধ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের কড়া বাঁধার মুখে পড়েছে। কারণ এতর ফলে ভারতে উৎপন্ন পাকিস্তানমুখী নদীসমূহে পানি কমে যাবে। পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘে নালিশ করেছে। তাই ভারতের কাজ আপাতত বন্ধ। খবর এখানে

বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

অকৃত্রিম বন্ধু ভারত - ০১ : নদ-নদী - ০১ : ভারতের তিস্তা-মহানন্দা শোষণ

আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দলই কম-বেশি ভারতকে খুশি রাখার চেষ্টা করে নিজের মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য। কারণ ভারত হল আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু; তাদের খুশি না রেখে কি টেকা যায়। কো দল সরাসরি তা স্বীকার করে নেয় আর কোন দল তা মুখে স্বীকার না করলেও তা-ই করে। এটা ভারতের যতটা দোষ ঠিক ততটাই দোষ আমাদের। এ দুনিয়ায় কোন মানুষ কিংবা দেশ কেউ/কোনটাই তাদের স্বার্থ বিসর্জণ দিয়ে আমাদের সাহায্য করবে না। এক্ষেত্রে আমাদেরই ব্যর্থতা যে আমরা আমাদের দাবি আদায় করতে পারিনি; এমনকি অনেকসময় চুপ করে থেকেছি। তারপরও যত বড়ই দেশ হোক না কেন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দাদাগিরি ছাড়াও ভারতের কর্তব্য রয়েছে যা দু-দেশের মাঝে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবে। কিন্তু তারা খুব একটা আগ্রহী না।

আমাদের দেশ হয়তো একটা সময়ে ব্যাপাক লবণাক্ততায় ভুগবে এবং তাই অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্রটার জন্যই। তারা বিভিন্ন আন্তঃদেশীয় নদীতে বাঁধ দিয়ে এক চেটিয়া ভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। তারা তাদের দরকার মেটাচ্ছে কিন্তু তা আমাদের দরকার ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করেই।

বাংলাদেশ মূলত সমভূমি-দেশ। তাই এখানে উৎপন্ন নদী সংখ্যা প্রায় শূন্যা। ভারত ও মায়ানমার থেকেই নদীর আগমন ঘটেছে। বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে বেশ কয়েকটি আন্তঃদেশীয় নদী রয়েছে যা থেকে ভারত এক চেটিয়া ভাবেই পানি সরিয়ে নিচ্ছে।

আজকে দেখবো তিস্তা সহ উত্তরাঞ্চলের কিছু নদীর চিত্র। কোন গবেষণা করছি না কারণ আমি এই ব্যাপারে দক্ষ নই। তবে আমার সাধারণ জ্ঞান দিয়ে আর গুগুল আর্থ, উইকি আর কিছু ওয়েবসাইটের সহায়তায় কিছু একটা ঠিকই দাঁড় করানো যাচ্ছে। আর আশাকরি আপনাদের আলোচনা থেকে বাকিটা জানতে পারবো।

দুই বাংলার উত্তরের নদীগুলো দেখে নিন।


আজকের আলোচনা তিস্তা আর মহানন্দা নিয়ে।

তিস্তা:
সিকিমে হিমালয়ের ৭,২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি দার্জিলিং -এ অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরিসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা একটি বন্য নদী এবং এর উপত্যকা ঘনবনে আচ্ছাদিত। পার্বত্য এলাকায় এর নিষ্পাশন এলাকার পরিমাণ মাত্র ১২,৫০০ বর্গ কিলোমিটার। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে প্রবাহটি দার্জিলিং সমভূমিতে নেমে আসে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করে। নদীটি নিলফামারী জেলার খড়িবাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

অষ্টাদশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত এই ধারাটি বিভিন্ন নদীপ্রবাহের মাধ্যমে গঙ্গা নদীতে প্রবাহিত হতো। ১৭৮৭ সালের অতিবৃষ্টি একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করেছিল এবং সেই সময় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিমি, তার মধ্যে ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত।

তিস্তার মাসিক গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০ কিউমেক। তিস্তা একসময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নামে পরিচিত।


বর্তমান গুগল আর্থ দিয়ে শুধুমাত্র ২০১০ সাল পর্যন্ত ছবি পাওয়া যায় এবং তাও অসম্পূর্ণ। তারপরও একটু খেয়াল করুন।

ভারত ও বাংলাদেশে তিস্তা:




তিস্তার পথে বাধা-বিপত্তি:



তিস্তা ড্যাম:



তিস্তা ড্যাম হতে পানি সরিয়ে মহানন্দা ড্যামে আনা হচ্ছে:



বাংলাদেশ তিস্তা হতে এমনিতেই যথেষ্ট পানি পাচ্ছে না। বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গের কৃষি বাঁচাতে তৈরী তিস্তা ড্যাম কোন কাজেই লাগছে না। কারণ ভারত পানি সরিয়ে নিচ্ছে। তারপর ভারত তিস্তায় সিরিজ বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাতে করে আমাদের পানি পাবার শেষ আসাটুকুও হয়তো শেষ হয়ে আসবে।

India has proposed a series of dams within the Teesta river that should produce some 50,000 MW of electricity within the next 10 years.[6] With some of the largest sediment loads, the creation of a reservoir will lead to an increased pressure on an active fault area. There are concerns that the building of these dams may lead to river-induced seismicity. Despite such worries the construction of the dams had started.

তিস্তায় করা সিরিয়াল বাঁধের কিছু প্রকল্পঃ

Teesta Low Dam - III Project
Location: On river Teesta in Darjeeling dist. (W.B.)
Approach: Nearest Rail Head - New Jalpaiguri & ......
Capacity: (4x33) MW or 132 MW
Annual Generation: 594.07 MU (90% dependable year)
Project Cost: Rs.768.92 Crores (Net) (Dec 2002 price level)
Year of Commissioning/Completion Schedule: Feb 2011 (Anticipated)
TECHNICAL FEATURES
* 32.5 m high barrage
* 125x22x56 m surface power house
* 4 nos.kaplan turbine of 33 MW each

Teesta Low Dam - IV Project
Location: Kalijhora, darjeeling (W.B)
Approach: 25 Kms from Siliguri town.
Capacity: 160 MW (4x40 MW)
Annual Generation: 720 MUs ( 90% dependable year)
Project Cost: Rs.1061.38 Crores at March 2005 P.L.
Year of Commissioning/Completion Schedule: August 2011 (Anticipated)
TECHNICAL FEATURES
* 45 m high dam(above deepest Foundation level)/Roller Compacted Concrete Dam
* Surface Power House at Left Bank with 4 units of 40 mw each Kaplan turbine.
* Pressure Shaft: 4 Nos., 7m dia each,Circular shaped; steel lined

মহানন্দা:
মহানন্দারও জন্ম হিমালয়ে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার চিমলির কাছে মহালদিরাম পর্বতের ২১০০ উচ্চতায় এর জন্ম।এটি শিলিগুঁড়ির কাছে সমতলে আসে এবং জলপাইগুঁড়ি জেলায় পৌঁছে।

এটি বাংলাদেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করে। প্রায় ৩ কিমি জুড়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমানা চিনহিত করে ভারতেই ভেরত যায়। এটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর থেকে বিহারের কিষাঙ্গঞ্জ হয়ে পশিমবঙ্গের মালদা জেলায় ফিরে আসে। এর পশ্চিমাংশে গড়ে ওঠে অনুর্বর গড় এলাকা আর পূর্বাংশে গড়ে ওঠে বরেন্দ্রভূমি। এটি বাংলাদেশের চাঁপাইগঞ্জের কাছে গোদাগরিতে গঙ্গার সাথে মিলিত হয়।

মহান্দার দৈর্ঘ্য ৩৬০ কিমি যার মাত্র ৩৬ কিমি বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্তের নিকটে বাঁধ দিয়ে সীমান্ত নদী মহানন্দার পানি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ড্যামে তিস্তার বিকল্প পথের পানি এসেও মিশছে:






সরিয়ে নেওয়া পানির বিকল্প পথ বাংলাদেশের সীমান্তের সমান্তরালে চলছে:




শুকনো মহানন্দা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করা মাত্রই মহানন্দার পানি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে: