বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নষ্ট ছেলে!!

নষ্ট ছেলে!!


সকাল কাটে মুনার সাথে,
আর সন্ধ্যেবেলা
আমার হাতটা থাকে লুনার হাতে।
একই বুলি চালিয়ে যাই
প্রেম নাটকের মোলাকাতে।

কাজের শেষে,
প্রেমের শেষে
ফিরি ঘরে।
সব করে
বিছানায় যাই।
চোখটা বুজি, ঘুমতো নাই!

চোখের পাতায় তোমার ছবি,
তোমায় ভেবে মস্ত কবি।
মাথার ভেতর কাব্য বুনি,
আমি জানি আমি খুনি।
খুন করেছি ভালোবাসা,
খুন করেছি তোমার আশা।

করে জ্বালা হৃদের ক্ষতেঃ
এসেছিলে আমার হতে,
করতে আমায় তোমার স্বামী।
ফিরিয়েছি তোমায় আমি।
আমার ছিল পকেট ফাঁকা।
শেষ সম্বল পঞ্চাশ টাকা,
তাই দিয়ে বলেছি তোমায়
চলে যাও ফেলে আমায়।

দেবার আর ছিল না কিছু...
তুমি ফিরে দেখছিলে পিছু,
সেদিন আমি হয়েছিলাম কাঠ।
আজ আমার ম্যালা টাকার ঠাঁট!

সবই আছে, ভালোবাসা ছাড়া...
আজ আমি তোমায় হারা...
সময় কাটে মুনাদের খেলে,
আজ আমি নষ্ট ছেলে!



১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১২
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

আগুনঝরা ফাগুনের দিন

বিশ্বের অনেক দেশে আজকের দিনে পালন করা ভ্যালেন্টাইন'স ডে এর আমাদের দেশে আগমন ঘটে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নামে। এই নামের আবির্ভাব খুব একটা পুরোনো না। আমার ছোটবেলায় এমন কোন নাম কানেও আসে নি। তবে একটু একটু করে ঠিকই শুনেছিলাম জয়নাল, জাফর, দীপালি সাহাদের নাম। সেই '৮৩ সালে আমার জন্মও হয়নি। বীর শহীদদের সেই গল্পের একটু-আধটি শুনেছিলাম এক বড়ভাইয়ের কাছ থেকে। তারপরে চাপা পড়ে যাওয়া। গত বছর শ্রদ্ধেয় কাঠমোল্লা ভাই এর পোস্ট থেকে বিস্তারিত জানতে পারি।

আজ ভালোবাসা দিবসের ডামাডোলে চাপা পড়ে যায় আমাদের বীর ভাই-বোনদের আত্মাহুতির গল্প। আজ আমরা খেলো গণতন্ত্র পেলেও আজও কৃতজ্ঞতা জানাতে পারিনি ঝরে পড়া সেই রক্তকে।

দীপালি সাহা
ঘুমায় আহা
ঘুমায় ঘুমাক ঘুম রে
আধফোঁটা ফুল
ফুটলো না ভুল
মরন দিল চুম রে!
১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা গ্রহণ করেন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। রাজনীতি হয় নিষিদ্ধ, আর গণতান্ত্রিক অধিকার হয় রহিত। পোস্টার সাঁটাও নিষিদ্ধ ছিল। এই করতে গিয়ে কয়েক ছাত্রকর্মী ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন। এর মধ্যেই ছাত্রসমাজ বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে। দমন-পীড়নের কারণে সেগুলো খুব বড় আকার ধারণ করেনি। আর সরকারের তরফ থেকে সেন্সরশীপ তো ছিলই। তবে ৮২ শেষের দিক থেকেই ছাত্র সংগঠনগুলো সংগঠিত হতে থাকে। এর মধ্যে ডঃ মজিদ খানের নেতৃত্বে নতুন শিক্ষানীতি রচিত হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। আপাতভাবে এই আন্দোলন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে হলেও এটি ছিল মূলত স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের সূচনা।



ছবিঃ স্বৈরশাসন বিরোধী চিকা মারা!
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন একত্রিত হয়ে এগিয়ে যায় সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। ঐ আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা রাখা ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলঃ

১) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (আওয়ামী লীগপন্থী)
২) বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
৩) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদপন্থী)
৪) জাতীয় ছাত্রলীগ
৫) বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি
৬) গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন
৭) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বাসদপন্থী)
৮) ছাত্র ঐক্য ফোরাম
৯) জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বড় সংগঠন হলেও পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না এবং প্রথমদিকে এই আন্দোলন থেকে দূরে ছিল।

১১ জানুয়ারি, ১৯৮৩ শিক্ষানীতির প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বটতলা' থেকে শিক্ষাভবন অভিমুখে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং কর্মসূচী সংগঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ চলতে থাকে। একদম শেষ মুহূর্তে এসে সামরিক সরকার মূল রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে ছাত্রসংগঠনগুলোর উপর কর্মসূচী প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। সংগ্রাম পরিষদের সভায় অধিকাংশ সংগঠনই মিছিল বাদ দিয়ে শুধু সমাবেশ করার পক্ষে মত দেয়। তিনটি সংগঠনের আপত্তি সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরদিন ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুল থেকে হাজার-হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে প্রাঙ্গনে অবস্থান নিতে থাকে। সেখানে নেতৃবৃন্দের পক্ষে জাসদপন্থী ছাত্রলীগের সভাপতি মুনীরউদ্দিন আহমদ ঘোষণা দেন যে ঐদিন আর মিছিল হবে না। মিছিল হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।

মিছিল বাতিলের ঘোষণা্য মোহন রায়হান নামের এক ছাত্র চিৎকার করে প্রতিবাদ জানান। শেষ পর্যন্ত মূল নেতৃবৃন্দ ছাড়াই মোহন রায়হানের নেতৃত্বে সমাবেশের একটা বড় অংশ শিক্ষাভবনের সামনের সড়কদ্বীপ পর্যন্ত যা্ন। তারা ঐ জায়গায় কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং কোন অঘটন ছাড়াই ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। জানা যায় যে ডি,জি,এফ,আই, মোহন রায়হানকে ধরে নিয়ে যায় এবং অনেকদিন পর্যন্ত তার আর কোন খবর পাওয়া যায় নি।

২৬ জানুয়ারি, ১৯৮৩ খন্দকার মোঃ ফারুক সহ তিনজন ছাত্রনেতা গ্রেফতার হওয়ায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই ডাক অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি, ১৯৮৩ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও নারায়ঙঞ্জের তোলারাম কলেজে স্বতস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট পালিত হয়।

৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ শিক্ষানীতি বাতিল, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ছাত্রবন্দীদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে 'বিক্ষোভ দিবস' হিসেবে পালিত হয়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে ছাত্রদের সমাবেশ হয়। এই সভার সভাপতি আখতারুজ্জামান ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্য ঘোষিত কর্মসূচি বহাল থাকার কথা ব্যক্ত করেন।




ছবিঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ এর প্রচারণায় পোস্টার!
১৪ই ফেব্রুয়ারি তারিখেও বিপুল পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী জড়ো হন। মিছিল শুরু হয় শিক্ষাভবন অভিমুখে। তবে সেখানে পৌঁছে সমাবেশ কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। নেতৃবৃন্দ বিচ্ছিন্নভাবে ছাত্রদেরকে মিছিল নিয়ে বাহাদুর শাহ পার্কের দিকে যেতে বলেন; কিন্তু অনেকের কাছেই সেই বার্তা পৌঁছেনি। অনেকেই শিক্ষাভবন ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন। আবার অনেকে বাহাদুর শাহ পার্কের দিকে রওনা হলেও বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্যত্র চলে যান। এক সময় পুলিশ শিক্ষাভবনের সামনে ও শিশু একাডেমির ভিতরে গুলি চালায়। আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীপালি সাহা, জাফর, জয়নাল সহ নাম না জানা অনেকে। পুলিশ অনেকের লাশই গুম করে ফেলে, তাই আর নিহতের সঠিক সংখ্যাটা জানা যায় না।

মেডিকেল কলেজ থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করে ছাত্ররা। বিকেলে অপরাজেয় বাংলার সামনে জানাজা শেষে লাশ নিয়ে মিছিল করতে চায় ছাত্ররা। জাতীয় নেতৃবৃন্দ এসে লাশ দেখে যাবার পরই লিশ ও বিডিআর এসে কলাভবন ও রোকেয়া হলের মাঝের রাস্তা জুড়ে অবস্থান নেয়, সংগ্রামী ছাত্রদের উপর চড়াও হয়। কেউ কেউ চারুকলার ভিতর দিয়ে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ছাত্রই কলাভবন বা ক্যাম্পাসের অন্যান্য ভবন থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশ তাদের পেটাতে পেটাতে শাহবাগ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যায়। এর পরপরই ভীত সামরিক জান্তা এরশাদ কার্ফিউ জারি করে এবং পুলিশ ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন ছাত্রহল থেকে নির্বিচারে ছাত্রদের গ্রেফতার করতে থাকে।

১৫ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডাকা হয়। এদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন আউয়ুব আর কাঞ্চন। আর শাহবাগ পুলিশ কন্ট্রোলরুমে আটকে রাখা ছাত্রদেরকে সামরিক আদালতে বিচারের উদ্দেশ্যে সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে কয়েকদিনে অনেকে ছাড়া পেলেও, কাউকে কাউকে জেল খাটতে হয়।

১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে ৪৯ জন ছাত্র পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বলে জানা যায়। কিন্তু অনেকেরই লাশ পাওয়া যায় নি। শিশু একাডেমির সামনে জমিয়ে রাখা লাশের স্তূপ থেকে লাশ নেবার জন্য ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এম্বুলেন্স নিয়ে আসলে পুলিশ তা হতে দেয় নি। সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী লাশ গুম করে ফেলে। এই আন্দোলনে সনহতি প্রকাশ করা অনেক শিক্ষক-অভিভাবক পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হত। গ্রেফতারকৃত হাজারখানেক ছাত্র চরম নির্যাতনের শিকার হন। শিশু একাডেমিতে যাওয়া শিশু ও তাদের অভিভাবকেরাও পুলিশের গুলি হতে রক্ষা পান নি।

এই আন্দোলন শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। চট্টগ্রামের ছাত্র ও সাধারণ ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। উনারা চট্টগ্রাম শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জরো হন। পুলিশ সমাবেশ ও বিক্ষোভে গুলি চালায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন ছাত্র ও একজন কিশোর প্রাণ হারান। অনেকি আশঙ্কাজনকভাবে আহত হত। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে হরতাল পালিত হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ২৭ জন ছাত্র-শিক্ষক গ্রেফতার হন।

ঢাকার খবর পাওয়ার পরপরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশাল মিছিল নিয়ে রাজশাহী শহরের দিকে এগিয়ে চলেন। বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েও পুলিশ এই মিছিল থামাতে পারে নি। ছাত্র সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায়। এতে একজন শহীদ হন। অনেকেই আহত হন।

হত্যা ও চরম নির্যাতনের পথ ব্যবহার করে এরশাদ সরকার সাময়িকভাবে এই আন্দোলন দমন করতে সমর্থ হয়। কিন্তু এই প্রথম ফাগুনের ছাত্র আন্দোলন দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশব্যাপী সকলের মাঝে। ১৯৯০ এ এসে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটে।

আজ এই স্বৈরাচারী এরশাদই ক্ষমতায় ফিরে এসেছে গণতন্ত্রের লেবাসে। দেশের অনেক মানুষের কাছে আজও নাকি প্রেসিডেন্ট হিসেবেই পরিচিত। সবাই ফুলে যায় এই এরশাদ তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কত ভাই-বোনের তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নাম সর্বস্ব গণতন্ত্রের জোয়ারে আজ বৃথা যেতে বসেছে দীপালি সাহাদের রক্ত।

লেখাটা শেষ করছি শ্রদ্ধেয় আরিফ জেবতিক ভাই এর একটা আগুন ঝলসানো বক্তব্য দিয়েঃ

14 ফেব্রুয়ারি,2007

দীপালি, কাঞ্চন, জাফর, জয়নালের উত্তরপুরুষেরা আজ মগ্ন ভালোবাসায়। এক জারজ পুরুষ আমাদের কে ভালোবাসার দিন এনে দিয়েছেন। তার আগে কেউ এদেশে ভালোবাসতো না। আমরা তাই নতুন করে ভালোবাসা শিখছি।

পয়লা ফাল্গুনের হলুদ রেখে আমরা পরদিন থেকে ভালোবাসাবাসি করব।

আমরা আজ বইমেলায় গিয়ে ইমদাদুল হক মিলনের পর্ণো বই কিনব,
রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জিয়ার মাজার আর সাইবার ক্যাফের বুথে প্রেমিকার স্তন টিপব,
কে জানে ভাগ্য ভালো থাকলে কোন বন্ধূর বাসায় উপগত হয়ে সঙ্গম সুখও পেতে পারি।
আমরা আজ ভালোবাসার বন্যায় ভেসে যাবো।

দীপালি, কাঞ্চন, জাফর, জয়নালের মুখ আর আমাদের মনেও পড়ে না...

উপরের আলোচনার শেষে দেখে নিন আগুনঝরা সে উত্তাল ফাগুনের কিছু লিফলেট ও ছবিঃ
















এই পোস্টটি সম্পন্ন করতে কৃতজ্ঞতা জানাই -
১) ব্লগার কাঠমোল্লা
২) ব্লগার আরিফ জেবতিক
৩) ফেইসবুক গ্রুপঃ আসুন প্রতিবাদ করি এই অন্যায়ের,তুলে ধরি বাংলা ও বাঙ্গালীর ঐতিহ্যকে।
৪) দৈনিক ইত্তেফাক
৫) সাহসের সমাচার

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

শোধ


মনে পড়ে সেই রক্তের নদী,
বুকের ভেতর চলছে সে স্রোত
আজো নিরবধি।
সবুজ-শ্যামল বাংলা আমার;
যেদিক তাকাই ছড়িয়ে আছে
লাশের পাহাড়।
যেদিক তাকাই শুধুই ধ্বংস।
শেয়ালেরা টানে পিতার দেহ,
ছিন্ন-ভিন্ন মাংস।
আকাশেতে উড়ছে শকুন-দল,
ভায়ের লাশখানা ধারালো নখে 
ছিঁড়ে-কুঁড়ে খায়,
আর ঐ ছোট প্রিয় বোনটা
হায়েনার হাতে পালায় হয়
সে ধর্ষিত, হায়!
বেয়নটে কাটা অর্ধেক স্তন!
দেখে আজ আর বুক কাঁপে না,
কাঁদে না এ মন।
বাতাসে আজো যে লাশের গন্ধ
ভাসে। তাই আমি শোধের তরে
হয়েছি যে অন্ধ।
রক্তের শোধটা রক্তেই নেবো,
আর শরীরের দাম শরীরে।
জয় বাংলা বলে চিৎকার জুরে
বাঙালি ওঠোগো আজকে ফিরে।


১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১২; ঢাকা
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বাঙালির দেউলিয়াত্ব


একটু-আধটু কবিতা নিয়ে এখনো ব্লগে টিকে আছি। মন থেকে কোন লেখা আসে না। স্মৃতিকাতরতার কাব্যে ডুবি। ঐ আমার জীবন। আজ বিশেষ কারণেই মনের মাঝে বিস্ফোরণ হল। ক্ষোভটাকে ভাষা দিতে চাইছি। জানি না পারবো কি না।


বাঙালি রাজনীতি, ভাষা, সংস্কৃতিতে অন্যন্য এক জাতি। বাঙালির গৌরব তো আর কম দিনের না। কোলকাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল আধুনিক বাঙালির জাতীয়তা বোধ। যা ছড়িয়ে ছিল পুরো বাংলা জুড়েই। বাঙালির পায়ের ওপর ভর করেই বাতাস পেত ভারতের স্বাধিকার লড়াই। কিন্তু বাঙালি শেষতক তার সফল হয় নি। ধর্মকে পুঁজি করে নোংড়া খেলায় মেতে উঠেছিল জিন্নাহ সাব। আর সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে গেল নেহেরু সাব। লাভ হল ইংরেজদের, আর ধরা খেল বাঙালি। বাংলা ভাগ হয়ে গেল। সংস্কৃতি আর ভাষাও বদলে যেতে লাগলো। ওপারে চললো বাংলার হিন্দুয়ানী আর হিন্দিয়ানী, আর এপারে চললো মুসলমানী।

আমরা ব্লগ সহ বিভিন্ন জায়গায় ওপারের বাঙালিদের গাল দেই। ওদের দোষ ওরা দিনে দিনে বাঙালিত্ব হারিয়ে ভারতীয় হয়ে উঠছে। হিন্দিকে প্রাণের ভাষা হিসেবে মেনে নিয়েছে। যার প্রমাণ মেলে ওদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে যেগুলো মূলত বাংলা চ্যানেল হওয়া সত্ত্বেও ধীরে ধীরে হিন্দিকে জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলা কথোপকথনের মাঝে ‘ক্যায়া বাত হ্যায়’ ধরণের হিন্দি জুড়ে দেওয়া হয়। টালিগঞ্জের বাংলা চলচ্চিত্রে হিন্দি গান ঢোকানো হয়। কিন্তু আমি এতে ওদের দোষ দেখছি না। আমাদের দেশের দিকে তাকালেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের দেষের পাহাড়িরা যখন কর্মক্ষেত্রে যান কিংবা আমাদের দেশের কোন টিভি অনুষ্ঠানে কথা বলেন তখন কি তাদের নিজস্ব ভাষায় বলেন নাকি বাংলায় বলেন?? পাহাড়িরা ধীরে বাঙালিদের সাথে মিশে যাচ্ছে। সিলটীরা দিনকে দিন বাঙালি হয়ে উঠছে। তেমনি ওপারের বাঙালরা দিনকে দিন ভারতীয় উঠছে। কোন দোষ নেই। এটাই জাতীয়তার আধুনিক রূপ।

আমরা বাংলাদেশি বাঙালি। আমরা বাঙালির মূল প্রবাহের ঝাণ্ডাবাহক। আমরা তো আর ভারতে থাকি না। তবে আমরা কেন আমাদের বাঙালিত্বের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করছি?? আমরা কেন হিন্দির দিকে ঝুঁকছি?? আমাদের মহিলারা কেন ‘কাসুটি জিন্দেগি’ ধরণের টিভি ধারাবাহিকে আসক্ত হচ্ছে?? আমাদের মায়েরা কেন তাদের শিশুদের হিন্দি কার্টুন ‘ডোরেমন’ দেখিয়ে ভাত খাওয়ায়??

গেল বছর মুম্বাই এর শাহরুখ এসেছিল ঢাকাতে। তখন টাকা-পয়সা খরচের ব্যাপারটা নিয়ে আমি পোস্ট দিয়েছিলাম। সেখানে কেউ কেউ এমন দাবি করেছিল যে আমাদের টাকা আছে তাই আমরা ওকে এনে বাঁদড় নাচিয়েছি। কতিপয় মানুষের হাস্যকর দাবিতে টাকার প্রসঙ্গটা বাদ দেই। কিন্তু আমাদের দর্শকেরা কেন স্টেজে গিয়ে হিন্দি বললো। কিংবা আমাদের মন্ত্রী কেন শাহরুখের নাচ দেখার টিকিট না পেয়ে মাটিতে বসেই বাঁদড় নাচ দেখে??

আমাদের তো গোল্ডফিশ মেমোরি। তাই এদেশের নামে জিকির তুলি, আর পরক্ষণেই ভুলে যাই। আমিও হয়তো সবার মতন ভুলতে বসেছিলাম। গত কয়েক দিনের দু’টো ঘটনা গোল্ডফিশ হতে দিলো না।

(১)

কিছুদিন আগেই আমার এক বন্ধুর বিয়ে গেল। টাকা-পয়সা খরচ করে জোড় আয়োজন করা হয়েছিল বলেই মনে হয়। আমি অসুস্থ্য ছিলাম বলে আমার আর যাওয়া হয় নি। কিন্তু হলুদের অনুষ্ঠানের রিহার্সেলে যাওয়া হয়েছিল। আয়োজনটা সাজানো হয়েছে গোটা বিশেক হিন্দি গান দিয়ে। এটা আমাদের দেশে খুবই সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে ছেলে-পেলেরা একটু মজা করবেই। কিন্তু সেগুলো করার জন্য কি আমাদের দেশে কোন গান নাই?? আর আমাদের কি মুম্বাই চলচ্চিত্রের অনুকরণেই কোমর দোলাতে হবে??

(২)

গতকাল নানা ব্যস্ততায় বিপিএল এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখা হয় নি। আজকে ওটার পুনর্প্রচার দেখতে বসেছিলাম। ওখানে কেন ভারতীয় শিল্পীদের ডেকে আনা হল তা আমার বোধগম্য হল না। আমাদের দেশে কি ভালো সঙ্গীত শিল্পী নেই?? আর মালাইকা-বিপাশাদের নিয়ে শরীর সর্বস্ব নাচের আয়োজন কেন করতে হবে??

আমি একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছি। কারো পক্ষেই হয়তো এর পেছনে একটা কারণ বাদে যৌক্তিক কিছু তুলে ধরা সম্ভব হবে না। কারণটা হল বাঙালি দিনকে দিন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। সেদিন হয়তো আর খুব বেশিদিন দূরে না যেদিন ভারতীয় হিন্দি আগ্রাসন আমাদেরকে পুরোই গিলবে।