মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১২

সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল না চাঁদ...


সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল না চাঁদ...
ভোরের আলোয় তোমার রক্ত মুছে গেল সমুদ্র সমতল... [১]

১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ এর কাল রাত্রিতে বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায় নি। পুরো আকাশ ঢাকা ছিল শ্রাবণের মেঘে। এমন একটা রাতের শেষ ভাগে রক্তনেশায় পাগল খুনীর দল বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীনতার জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে পাল্টে দিয়ে চাইলো সদ্য স্বাধীন অসাম্প্রদায়িক, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের চেহারা। খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই খুন করে নি, খুব করেছে তার গোটা পরিবার, তার আত্মীয়-স্বজন।



ছবিঃ যুবক শেখ মুজিব, ১৯৪৭



ছবিঃ মহত্মা গান্ধীর সাথে বৈঠকে শেখ মুজিব, ১৯৪৭

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করাটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো না। সেদিনের ধানমন্ডি ৩২ এর রক্তবন্যা ছিল কিছু মহলের সুদূর প্রসারী ভাবনার ফসল। এখানে হাত ছিল হেরে যাওয়া চির-কুৎসিত পাকিদের; যার প্রমাণ মেলে মোশতাকের ‘বাংলাদেশ বেতার’-কে ‘রেডিও পাকিস্তান’ এর আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ এর ঘোষণায়, বাঙালির প্রাণের শ্লোগান বদলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ এর প্রচারে। এর পেছনে হাত ছিল পাকিদের দোসর, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের তীর্থ জামায়েত ইসলামীদের; যার প্রমাণ মেলে জিয়া সরকারের রাজাক্র বিচার প্রক্রিয়া থামিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে, রাজাকারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের মধ্যদিয়ে। এখানে হাত ছিল তথাকথিত ইসলামপন্থী, মূলত ধর্ম ব্যবসায়ীদের; যার প্রমাণ মেলে জিয়া সরকারের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সুন্নতে খৎনা করে সংবিধানে ‘বিসমিল্লা’ সংযোজনের মধ্য দিয়ে। এখানে হাত ছিল সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্রের; যার প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ থেকে সমাজতন্ত্র ব্যাপারটিকে মুছে দিয়ে আমাদের সংবিধানে ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দকে একটি খেলো শব্দে পরিণত করার মধ্য দিয়ে। এর পেছনে হাত ছিল রাজনীতিকে পুঁজি করে পল্টীবাজ রাজ-বেশ্যাদের, যার প্রমাণ মেলে জিয়ার ‘আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিটাকে কঠিন করে দিবো’ বয়ানের মধ্য দিয়ে।



ছবিঃ সপরিবারে শেখ মুজিব



ছবিঃ স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসার সাথে শেখ মুজিব, ১৯৪৭



ছবিঃ কণ্যা শেখ হাসিনার সাথে বঙ্গবন্ধু

খুনীচক্র শুধু বঙ্গন্ধুকে খুন করেই খান্ত হয় নি, বাংলাদেশের বুক থেকে তাঁর নাম চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল। তাই এক রাতের মাঝেই বাংলাদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। আমাদের ইতিহাস বই থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেওয়া হয়েছিল। পাঠবই থেকে পাকবাহিনী নামটা মুছে সেখানে হানাদার বাহিনী লেখা হয়েছিল। রাষ্ট্রের মূলনীতি বদলে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের অমর কাব্যের পটভূমি, আমাদের বিজয়ের সাক্ষী রেসকোর্স ময়দানের চেহারা বদলে ফেলা হয়েছিল। উন্মুক্ত উদ্যানে গাছে ভরে হয়ে উঠলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিশুদের জন্য তৈরি হল জিয়া শিশুপার্ক, আর অনেকটায় জায়গায় তৈরি হল সরকারি অফিস। স্বাধীনতার নতুন ঘোষক তৈরি করা হয়েছিল, সেই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য সেক্টর কমাণ্ডার, পরবর্তীতে সেনাপ্রধান লে, জেনারেল মীর শওকত এর ড্রামতত্ত্বের আগমন ঘটেছিল।



ছবিঃ ৭ই মার্চ, ১৯৭১ এর বিখ্যাত ভাষণরত বঙ্গবন্ধু

কিন্তু সবাই স্রোতে গা ভাসিয়ে চলে গেলেও কিছু মানুষ স্রোতের বিপরীতে রুখে দাঁড়ায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সত্যিকারের ইতিহাসটা লিখে রেখে যায় নিজ প্রাণের পরোয়া না করেই। তাদেরই একজন কবি নির্মলেন্দু গুণ। তিনি লিখে রেখেছেন বাঙালির শ্রেষ্ঠ কবিতার কথা, সেই কবিতার কবির কথাঃ

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উদাত্ত অধীর বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে : "কখন আসবে কবি?"
এই শিশুপার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশুপার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত। তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ...

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশুপার্কের রঙ্গিন দোলনায় দোল খেতে খতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেদিনের এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান, -এইসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দুর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে।

কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক।
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুন কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।

একটি কবিতা পড়া হবে,তার জন্য কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের : "কখন আসবে কবি? কখন আসবে কবি?"

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুন ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা,জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা।কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসুর্য্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি :
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"

সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের। [২]

সেই অমরকাব্য টা যদি কেউ না শুনে থাকেন কিংবা আবারো শুনে নিতে চান, শুনে নিনঃ


৭ মার্চ, ১৯৭১ যা বলার বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছেন। এরপর আর আলাদা করে স্বাধীনতা ঘোষণার দরকার পরে না। তারপরও আনুষ্ঠানিকতার জন্য ২৫ মার্চ দিবাগত কাল্‌ রাত্রিতে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হবার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে যান, যার প্রমান মেলে পাকিস্তানি মেজর শালিকের ‘অ্যা উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইতে। সেই কাল্‌রাত্রিতে দেওয়া ভাষণের রেকর্ডখানা না পাওয়া গেলেও পরদিন বিশ্বের অনেক দেশের মানুষই তাদের দৈনিক পত্রিকা খুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের খবর পেয়ে যান।



অষ্ট্রেলিয়া: The Age - March 26, 1971 -“Dacca breaks with Pakistan”



আর্জেন্টিনা: Buenos Aires Herald - March 27, 1971 - “Bengali independence declared by Mujib”

বিস্তারিত জানতে চাইলে শ্রদ্ধেয় সহ-ব্লগার যাত্রী-এর '৭১ সালে ৬টি মহাদেশের মিডিয়ায় ২৬শে মার্চের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার খবর পোস্টটা দেখে নিন। এটা দেখার পরেও জ্ঞানাপাপীরা অন্য কাউকেই স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে যাবে।



ছবিঃ পাইপ ঠোঁটে চিন্তিত বঙ্গবন্ধু

নেতা নেই, নেতাকে পাকবাহিনী নিয়ে গেছে সুদূর পশ্চিমে, পাকিস্তানে। তাই বলে কি লড়াই থেমে যাবে?? না, লড়াই থেমে যায় নি। বঙ্গবন্ধুর ছায়া হয়ে থাকা বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদ নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রাজনৈতিক যুদ্ধের। নেতা নেই কিন্তু সেই নেতার নামের সবকিছু পরিচালিত হয়েছে। তাই স্বাধীন বাংলা সরকারের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর অনুপস্থিতে সে দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গবন্ধুর আরেক যোদ্ধা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাথে ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান। সামরিক নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী। নেতা না থাকলেও নেতার নামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলার মানুষ। এক মুজিব না থাকলে, লক্ষ তরুণ মুজিব ঝাঁপিয়ে পড়েছে মুক্তির রণে।



ছবিঃ চির-উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু

শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণী
বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।।

এই সবুজের বুকে চেরা মেঠো পথে
আবার যে যাব ফিরে, আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
শিল্পে-কাব্যে কোথায় আছে
হায়রে এমন সোনার খনি।।

বিশ্ব কবির ‘সোনার বাংলা’,
নজরুলের ‘বাংলাদেশ’,
জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’
রূপের যে তার নেই কো শেষ, বাংলাদেশ।

জয় বাংলা বলতে মন রে আমার
এখনও কেন ভাবো আবার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
অন্ধকারে পূর্বাকাশে-, উঠবে আবার দিনমণি।। [৩]

পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক গোপন কুঠুরীতে লুকিয়ে রাখলো। গোপনে সাজানো বিচার চলতে লাগলো। বিচারে তাঁর মৃত্যদণ্ড হল। তাঁর ফাঁসির প্রস্তুতি চলতে থাকলো, কবরও খোঁড়া হল। কিন্তু বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে পাক সকরকার এইকাজ করতে পারলো না। আর সময়ের সাথে সাথে ৩০ লাখ কিংবা তারও অধিক বাঙালির রক্ত, ২-৪ লাখ মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে এল স্বাধীনতা। পাক সরকার বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। তিনি লন্ডন হয়ে দেশে ফিরলেন ২০ জানুয়ারি, ১৯৭২। আবেগে আপ্লুত হয়ে বিমানবন্দরে জনসমাবেশে চোখের জলে ভাসলেন, ফুলের মালায় ভাসলেন, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদ্ধৃত করে বললেনঃ

...... কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সাত কোটি বাঙালেরে হে বঙ্গ জননী রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করে যাও নি’... কবিগুরুর কথা মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ... ......


কবিগুরুর কথা মিথ্যে হয় নি, পরবর্তীতে সত্যি বলেই প্রমাণিত হয়েছে। বাঙালির সাথে মিশে গেছে দূষিত বাং-পাকিরা। তারা গোপনে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব সরকারকে উৎখাত করতে। এর সাথে সামিল হয় মুজিব সরকারের কাল্‌সাপ খন্দকার মোশতাকের মতন কিছু লোক। আর তাদেরকে ব্যবহার করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চক্র। বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধে বিধ্বস্ত একটা দেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে ব্যস্ত তখন আন্তর্জাতিকচক্র আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েও চাল পাঠালো না। এই ঘটনা ছাড়াও নানা ব্যর্থতায় দেশে নেমে এলো দুর্ভিক্ষ। কালোবাজারীদের দৌড়াত্ব পৌঁছালো চরমে। বাম নামধারী কিছু সন্ত্রাসী দেশে অরাজকতা চালাতে চাইলো। মুক্তিযোদ্ধা নামের কিছু সুবধাবাদী অস্ত্রের জোরে ঘটিয়ে চললো নানা অপকর্ম। এরই মাঝে সেনা বাহিনীকেও উসকানোর কাজে নিয়োজিত কিছু লোক। বঙ্গবন্ধু সবদিক বিবেচনা করে সমাজতন্ত্রের নতুন ধারার সূচনা করতে চললেন ‘বাকশাল’ এর নামে। এর সূচনালগ্নে, আর ভারতের স্বাধীনতা দিবস্কে বেছে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাঙ্ক নামলো রাস্তায়। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই রক্তে ভেসে গেল ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। পুরো পরিবারকে হত্যা করা হল।

পিতা...

পিতা শুধু দেয় নি পরিচয় এক কিংবা দু’টি মানুষকে,
দিয়েছি পরিচয় গোটা জাতিকে।
বুক চিতিয়ে দেখিয়েছে স্বপ্ন মুক্তির, স্বাধীনতার।
জনসমুদ্রে বজ্রনাদের আবৃত্তি করেছে অমর কাব্য,
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম...
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম...’,
যার অপেক্ষায় ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালি।

তোমরা সেই পিতাকে করেছো হত্যা।
পুঁজিবাদী আর সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট আমেরিকা,
গোটা দুনিয়ার দুর্গন্ধ, নাপাকির দল,
আর ইসলামের নাম ভাঙানো শকুনের দল,
হত্যা করলে একটা মানুষ,
হত্যা করলে আমার পিতা,
হত্যা করলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির পিতা...

তোমাদের ছেঁটানো ভাতে উল্লসিত কুৎসিত কাকেরা
রক্তে রাঙালো ধানমন্ডি বত্রিশ...
পিতা আছে সিঁড়িতে শুয়ে,
আর বাকিরা মৃত্য-ঘুমে এখানে-ওখানে...
পিতার বুক হতে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত গড়িয়ে গেল সিঁড়িতে,
আর কুৎসিত কাকের বুট চলে গেল সে রক্ত মাড়িয়ে...
ট্যাঙ্ক নিয়ে দাপালো শহর...
পিতা, তুমি এই বাংলাকে সব দিয়ে গেলে...
শরীরের রক্তটাও দিয়ে গেলে এই মাটির ‘পরে...

পরে র’লো পিতার নীথর দেহ,
আর আমরা, তোমার সন্তানেরা, তোমাকে শেষবারের মতন দেখতে পারলাম না।
ঘরে দোর দিয়ে কাঁদলাম,
শোকে পাথর হলাম।
আর সব দেখে গেলো ইতিহাসের পাতা।

কী দোষ ছিল আমার পিতার??
তাঁর দোষ ছিল তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন,
তাঁড় দোষ ছিল তিনি আমাদের মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন,
পুঁজিবাদকে ঝেটিয়ে এনেছেন সমাজতন্ত্র,
তিনি মাথায় তুলে নাচেন নি সেনাদের,
তাঁর কাছে জায়গা মেলে নি ইসলামের নাম ভাঙানো বেশ্যাপুত্রদের...

তোমরা, আমার পিতাকে হত্যা করলে,
হত্যা করলে এক মানুষ নামের মহামানব মুজিবকে।
কিন্তু মনে রেখো, মুজিবেরা কখনো মরে না,
মুজিবেরা জেগে থাকে অমর হয়ে,
কোটি তরুণের বুকের স্বপ্নে,
রক্তে মেশা মুক্তির নেশায়...

ঐ শোনা লাখোকণ্ঠে প্রিয় মুজিবের ধ্বনি,
আজ আকাশে-বাতাসে ওঠে রণী
ঐ শোনা যায় প্রিয় মুজিবের ‘জয় বাংলা’র প্রতিধ্বনি...

দেবাশিস্‌ মুখার্জি
১৪ আগস্ট, ২০১২



ছবিঃ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু এক অমর নাম। এই নাম কখনো মুছে দেওয়া যাবে না। এই নাম ধ্রুবতারাসম জ্বলে র’বে সকল বাঙালির বুকে। জ্বলে র’বে অন্তত ততদিন, যতদিন রবে এই বাংলা, যতদিন র’বে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গৌরী।

যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরি, মেঘনা বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা, অশ্রুগঙ্গা বহমান,
তবু নাহি ভয়, হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান।

তথ্য উৎসাবলিঃ
[১] ‘সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল না চাঁদ...’-গানের কথা। গানটির গীতিকারঃ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং সুরকার সাদী মহম্মদ।
[২] একটি কবিতা লেখা হবে – কবি নির্মলেন্দু গুণ।
[৩] ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’-এর জনপ্রিয় গান ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’-গান এর কথা। গানটির গীতিকারঃ গৌরী প্রসন্ন মজুমদার এবং সুরকার অংশুমান রায়।
[৪] শেখ মুজিবুর রহমান - কবি অন্নদাশঙ্কর রায়।

চিত্র উৎসাবলিঃ
বঙ্গবন্ধুর লেখা 'অসামাপ্ত আত্মজীবনী' এবং গুগল সার্চ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন