বুধবার, ৫ জুন, ২০১৩

আমার সাম্যবাদ...

আমি ইঞ্জিনিয়ার মানুষ হলেও বাংলাদেশের বর্তমান স্রোতে গা ভাসিয়ে এম,বি,এ, এর পেছনে দৌড়াচ্ছি। আজ ছিলো প্রিন্সিপ্যাল অব একাউন্টিং এর ক্লাশ। গত ক্লাশগুলো সহজ মনে হলেও আজকের অ্যাডজাস্টমেন্ট থিওরি মাথার ওপর দিয়েই যাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ মনযোগ দিয়েও যখন বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম তখন 'নাই কাজ তো খই ভাজ' এর শুরু। আমার ক্ষেত্রে এটা হল কিছু লেখবার চেষ্টা করলাম। আমি কাগজে-কলমে বাম-ঘেঁষা, সাম্যবাদ, কমিউনিজম, বিপ্লব-বিদ্রোহের স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবে পুঁজিবাদের ছাত্র। আজকের লেখাটাও হয়ে গেলো সেই নিয়েই।

আমার সাম্যবাদ

আমি তো সাম্যবাদী মানুষ!
নিজের কিছুই নাই,
সবার তরেই চাই!
ওড়ে কমিউনিস্ট ফানুশ!

গাছতলাতে রোদ্দুর-পোড়া,
আর কাকভেজা হই।
উষ্ণ দখিণ হাওয়া
আর পাতায় ছাওয়া
ছোট্ট একটা ঘর।
হেথায় র'বে মানুষ জোড়া।

সবটাই মনের স্বপন...
আমার কেউই নাই,
সাম্যেরই গান গাই!
জাগে মনে লোভের বপন!

ঘর চাই! ঘর চাই!
নিজের তরে একটা ঘর!
দখিণা জান্‌লা র'বে,
কবাটও থাকবে হবে;
যেন যায় না কো বয়ে ঝড়!

অন্ধকারে খেলবে জোনাই
ঐ জান্‌লার ধারে।
হয় যেন খাল-পাড়ে!
মোর এমনই ঘর চাই!

যদি ঘরটা হত বা পাকা,
দেওয়াল হত লাল!
গায়ে বিপ্লবের শাল
চড়িয়ে মাওসেতুং আঁকা!

রাতে যদি ল্যাম্পশেড জ্বেলে
শীতল মেশিনে বসে
হত দ্রোহী-নক্সা কষে!
কতই না ভালো হত
আমি এমন ঘরটা পেলে!

রহিম-রাজু পায়না ভাত!
মুক্তিরই কথা ভাবি,
খুঁজি অর্থনীতি-চাবি!
কেটে চলে ভাবনার রাত...

ভেবে ভেবে হয়রান হই,
ভোরবেলা থামি আমি।
ঐ সুয্যি বুঝি হাসে!
ভাবনার দাঁড়ি টানি
কত বিপ্লবী সুবাসে!
আমি আর সাম্যবাদী নই!

শুরুয় রহিম-রাজু,
আমি শেষটা টানি আমাতে।
বদলে যে গেছি আমি,
বদলে গেলো সবটা।
ধীরে ধীরে যায় কমে
কমিউনিস্ট রবটা।
সাম্যবাদ আজ ম্লেচ্ছ
ফাঁদওলা পুঁজিবাদী পাতে!


০৫ জুন, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

সোমবার, ৩ জুন, ২০১৩

পোড়া লাশে স্বজনের বাস...

টিকটিকির লেজ সাংঘাতিক এক জিনিস। টিকটিকির লেজ খেয়ে কেউ মরে না, নেশায় চূড় হয়ে আধমরা হয়ে পড়ে থাকে। কোন হুঁশ থাকে না। মাঝে মধ্যে দু-এক বার হাত উঠিয়ে কিছু বললেও আবার ঘুমের রাজ্যে পৃথিবী কাব্যময় হয়ে ওঠে। দু'দিন না কাটলে এই ঘুম আর যাবার নয়, সব ভোলা যায় এক নিমিষেই।

আজ ৩ রা জুন। বছর দুই আগে এইদিনেই ঘটেছিল নিমতলী ট্র্যাজেডি। বেশি না, মাত্র দু'শ মানুষ পুড়েছিল আগুণে। দু'শ সংখ্যা আর বেশি না, ক'দিন আগে রানা প্লাজায় হাজার লাশ দেখে ফেলেছি।  গোটা জাতি টিকটিকির ল্যাজ খেয়ে ঝিমোচ্ছে, নিমতলী ট্র্যাজেডি মনে রাখবার ফুরসাৎ কই! মনে থাকলে তো বিচারের বাণী একা একা কাঁদতো না, কেমিক্যালের গোডাউন সরে যেত। কিন্তু ঐ যে টিকটিকির ল্যাজ আছে না! সব ভুলে যাওয়ার মহৌষধ। 


আমিও এক *দির ভাই, আমার কিচ্ছু করার খ্যামতা নাই। বইয়া বইয়া কাব্য মারি। এইবারের দৌড় সনেটেই শ্যাষ!


পোড়া লাশে স্বজনের বাস...

চেয়ে দ্যাখ্‌ পোড়া লোক, লাশ হয়ে রয়।
লাশটা আর একা না, শ' ছাড়িয়ে গ্যালো,
সত্যিই তো সব লাশ, নয় ড্রামা-ম্যালো!
ওরা হাতছানি দেয়। মনে লাগে ভয়?
আমার ভয় লাগে না, নিজের মানুষ।
আমি পোড়া লাশ শুঁকি, স্বজনের বাস!
কয়লা-কালি মেখেও টিকে রয় শ্বাস।
লাশ গুণে দিল-খুশ্‌! নাই রে কি হুঁশ?

দিন-মাস -সন গ্যালো, নেই পোড়া ছাই,
সব ভুলিয়ে দেয় রে নয়া লাশ এসে।
সরে ন কো কেমিক্যাল, কে সরাবে ভাই?
কেঁদে চলে জাজমেন্ট, আজব এ দেশে।
পুড়ছে নতুন লোক, যেন শেষ নাই!
আর কত জন ম'লে পৌঁছবে যে শেষে?

৩ মে, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

দ্বাদশপদী কবিতা - ২: চৈতারকোল

আমার বেড়ে ওঠা শহরে হলেও ফিবছরই গাঁয়ের দেখা মিলতো শীতের ছুটিতে। সাঁতার জানতাম না বলে বর্ষায় যাওয়া হ'ত না বললেই চলে। প্রায় সারাটা বছর শহরে থাকলেও গাঁইয়ের জন্য মন কাঁদতো। গাঁয়ে গিয়ে জ্ঞাতি ভাইবোন আর সমবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক মজা করতাম। লুকোচুরি খেলা, চড়ুইভাতি, ভূতের বাড়ি দ্যাখার মত অনেক অনেক অনেক মজা হলেও বেশি মজা হত নাইতে যাবার সময়। সবাই মিলে গাঁইয়ের কোল ঘেঁষে যাওয়া নদে অনেক মজা করতাম। নদটার দাপ্তরিক নাম চৈত্রকোল হলেও গাঁয়ের লোকেরা ওকে চৈতারকোল নামেই ডাকতো। ডাকতো বলছি কারণ আজ আর নদটা নেই। বাংলাদেশের মানিচিত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে নামটা আজও আছে হয়তো, তবে বাস্তবে ও মৃত, ওর বুকে ধুধু করে বালু, ওর বুক চীরে চাষ হয় চীনাই, ফুটি!

আমার ছেলেরবেলার নদটাকে নিয়ে ঠিক এক বছর আগে একটা দ্বাদশপদী কবিতা লিখেছিলাম। সময়ের গবেষণায় দ্বাদশপদীর সংজ্ঞা বদলে ফেলেছি। মাত্রার হিসেব পাল্টে স্বরবৃত্তকে ফেলে দিয়ে বেছে নিয়েছি অক্ষরবৃত্ত ছন্দকে। তাই সংজ্ঞাকে ঠিক রাখতে পুরোনো কবিতাটা লিখলাম নতুন করে। সাথে পুরোনোটাও তুলে দিলাম।

চৈতারকোল

আজ জলহীন নদে ধুধু করে বালু,
মাঝিদা'র লগি নাই আর চালু।
মাছ গ্যাছে মরে, জেলেরা নিখোঁজ।
শৈশব-স্মৃতি মনে জাগে রোজঃ
চৈতারকোল যেত গ্রাম ছুঁয়ে,
নাওয়ের মাঝে র'তাম যে শুয়ে।
সাদাকাশ মেশে আকাশের নীলে।
নাইতে যেতাম ভাই-বোন মিলে।
ছোটছোট মাছ গামছায় ধরে
ফিরতাম বাড়ি কত না আদরে!
টলমলে জল, ছিলো না যে কাঁদা;
আজ শুধু বালু, চিক্‌চিকে সাদা।

২৯ মে, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি


মূল কবিতাটি -


চৈত্রকোল

আজ নদখানি জলহীন, ধুধু করে বালু,
মাঝি দাদার লগিখানা আর নাই চালু।
জেলেরা গ্যাছে মরে, নাই কারো খোঁজ।
শৈশবের স্মৃতিরা মনে জাগে রোজঃ
গ্রামখানির পাশ ঘেঁষে যেত নদ চৈত্রকোল,
নৌকোর মাঝে বসে আমি খেতাম যে দোল!
কাশফুলের সাদা মেশে আকাশের নীলে!
সকালেতে স্নান ছিল সব ভাই-বোন মিলে।
ভাই আর বোন গামছা করে ছোট মাছ ধরে
সব মিলে খেলা করে দিতেম যে ছেড়ে!
জল ছিল টলমলে, ছিল না তো কাঁদা,
বালু 'পরে আলো পড়ে: চিকমিক সাদা!

২৯ মে, ২০১২ 

দেবাশিস্‌ মুখার্জি

বুধবার, ২২ মে, ২০১৩

দ্বাদশপদী কবিতা - ১১: শিকারী

শিকারী

একটা টিকটিকি বসে দেয়ালে
শিকারের নেশায়। অন্য খেয়ালে
নীলচে প্রজাপতি; হয়তো মনে
ভাবছে প্রেমিকা তারই সনে
খেলছে প্রেম-প্রেম। হঠাৎ করে
ঝাঁপায় টিকটিকি তারই 'পরে,
গোগ্রাসে গিলে চলে নীলচে পাখা।
চলছে সুধা রাণী, সিঁদুর-শাঁখা
বলে দেয় সে হিন্দু। কাদের মিয়ে
লম্বা পাটের খেতে জোরছে নিয়ে
যৌনখিদে মেটায় সস্তার মালে,
সেই একাত্তরের ভয়াল কালে।

২০ মে, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

* এই দ্বাদশপদী কবিতাটি রুদ্রের নিসঙ্গতা গল্প হতে আংশিক অনুপ্রাণিত।

অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ 

শনিবার, ৪ মে, ২০১৩

দ্বাদশপদী কবিতাঃ প্রথম পর্ব

দ্বাদশপদী শব্দটা পড়লে খুব সহজেই বোঝা যায় পদসংখ্যা বারো। কিন্তু শব্দটা খুব একটা প্রচলিত না। তাই ভ্রূ কুঞ্চিত হবার সম্ভাবনা প্রবল। আমি এক বছরের ওপরে এই নিয়ে ঘঁষামাজা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার আগে কেউ এই নিয়ে কোন চেষ্টা করেছিলেন কি না তা আমার জানা নেই। আমি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গেল বছরে মে তে এই নিয়ে সর্বপ্রথম আমার ব্যক্তিগত ব্লগে পোস্ট দেই। দ্বাদশপদী মানেই বারো পঙ্‌ক্তি, কিন্তু ঝামেলা হল মাত্রার হিসেবে। চতুর্দশপদীতে যেমন প্রতি পঙ্‌ক্তিতে চৌদ্দমাত্রার বিন্যাস সেরকম এখানেও প্রতি পঙ্‌ক্তিতে বারো মাত্রা রাখা হয়েছে। মাত্রার হিসেবে কেমন হবে অর্থাৎ কোন ছন্দে কবিতাটি লেখা হবে সেটাও একটা দ্বন্দ্বের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। প্রথমেই স্বরবৃত্ত ছন্দ দিয়ে শুরু করলেও সময়ের সাথে সাথে লেখা এগুতে থাকলে বুঝি অক্ষরবৃত্তই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। পরীক্ষা-নিরীক্ষার বছর শেষে দ্বাদশপদীর একটা সংজ্ঞাও দাঁড় করে ফেলেছিঃ

১) ১২ পঙ্‌ক্তিতে বিন্যস্ত
২) প্রতি পঙ্‌ক্তিতে ১২ মাত্রা
৩) অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
৪) পর পর দুই চরণে অন্ত্যমিল
৫) কবিতার বিন্যাস ৬+৬ কিংবা ৪+৪+৪ কিংবা ৮+৪ কিংবা ৫+৭ সহ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে 


আজকের পর্বটি সাজিয়েছি সদ্য লেখা দু'টি দ্বাদশপদী নিয়ে।

দ্বাদশপদী - ৯

বুড়ো চশমাখানি

মোটা ফ্রেমের কালো চশমাখানি,
তোমায় ছাড়া চোখেয় পড়ে ছানি।
বছর গেলো, বছর এলো; তুমি
যাওনি ছেড়ে, রয়েছো নাক চুমি।
কাঁচ ঝাপসা, ফ্রেমটা বাঁকা, বুড়ো
যে হয়েছিলে। হঠাৎই হলে গুঁড়ো
আমার রাগে। বয়েছো কত স্মৃতি
দীপক চিত্তে। দিয়েছো মোরে ধৃতি
কবিতাসম। রওনি তুমি দূরে
কেউবা যবে ফেলেছে মোরে ছুড়ে
জীবন থেকে, কিংবা ফেলেছি আমি
নীলে-অনিলে হোক না যত দামি।


২৭ এপ্রিল, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি



দ্বাদশপদী - ১০

অজানা পথে

বাদর ধারার ছলনার মাঝে
ক্লান্ত-শ্রান্ত আমি মরণের সাঁঝে।
সে গাঢ় আঁধারে রোদেলা প্রভাত
হয়ে এলে তুমি। কেটে গেলো রাত
জ্যোতির ছোঁয়ায়। দিবস-রজনী
তোমারই সাথে কাটছে সজনী।
কাল্‌-সরণীতে হাঁটছি দু'জন,
কাছাকাছি দেহ, কাছাকাছি মন।
শুরুটাই জানি, শেষ নেই জানা,
হারিয়ে যাবার নেই কোনো মানা।
পিছুটান ফেলে সোনাঝরা রোদে
যাক দিনগুলো ভালোবাসা বোধে।


৪ মে, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি



অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৮  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৭  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৬ 
দ্বাদশপদী কবিতা - ৫ 
দ্বাদশপদী কবিতা - ৪  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৩  
দ্বাদশপদী কবিতা - ২  
দ্বাদশপদী কবিতা - ১ 


- দেবা ভাই

বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৩

দ্বাদশপদী - ৮: কর্পোরেট বেশ্যাপনা

কর্পোরেট বেশ্যাপনা

আঁধারের মাঝে টর্চটা যে জ্বলে
নিভু নিভু করে। কেউ কেটে চলে
মানুষের হাত লোহার করাতে।
পারছে না ঠিক, তাই তার সাথে
আহত মেলায় আরেকটা হাত
বাঁচবার আশে। নতুন প্রভাত
দেখবে কি সে? একই আঁধারে
আলোর ফোয়ারা! আহা রে! বাহা রে!
বাণিজ্য-গণিকা নোংড়া নৃত্য করে
উদ্ধত আয়েশে লাশেদের 'পরে।
সব সুশীলতা ইলানেই ইতি!
টাকাটাই যেন জীবনের নীতি!

২৯ এপ্রিল, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি
 
 
 
অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ

বুধবার, ১ মে, ২০১৩

মে দিবস - এক প্রহসনের নাম

আজ পহেলা মে। মে দিবস, মহান মে দিবস। সারা বিশ্বের জন্য এদিনটি শ্রমিকদের মুক্তিগাঁথা হলেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য এটি প্রহসন ব্যতীত আর কিছু নয়। ১৯৭১ সালের পূর্বে পরাধীন কালের কথা বাদ দিলাম, স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ টি বছর চলে গেলেও আমাদের শ্রমিকদের কোন স্বাধীনতা নেই, মুক্তি নেই; তারা আজও পুঁজীবাদ আর কর্পোরেট বাণিজ্যের শেকলে আবদ্ধ।

বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতির একটি হল সমাজতন্ত্র। এটি প্রচলিতভাবে সংজ্ঞায়িত সমাজতন্ত্র না হলেও ন্যূণতমভাবে রাষ্ট্র রাষ্ট্রের সকলের জন্য সমান দৃষ্টি রাখবে সে দাবিটি রাখে। কিন্তু এ দাবিটি বাংলাদেশের জন্য বারবার অসার হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে। গরিবেরা বরাবরের মতনই নিগৃহীত, শ্রমিক শ্রেণিটি আরো বেশি অবহেলিত।


বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে শ্রমিকদের হাত ধরে, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার কথা বললে তৈরী পোশাক শিল্পের কথাটিই আগে বলতে হয় যেখানে অধিকাংশই নারী শ্রমিক। অথচ তারা কেবলই নিগৃহীত, নির্জাতিত। তাদেরকে যে মজুরী দেওয়া হয় তাতে তাদের তিন বেলা খাবার তো দূরের কথা ২ বেলার ঠিক খাবারটাও জোটার কথা না।  অথচ তৈরী পোশাক কারখানার মালিকেরা যখন বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ নিয়ে আসেন তখন তাদেরকে কথা দেন যে তারা শ্রমিকদের কথা ভাববেন। মালিকপক্ষের সেই ভাবনা ইলানেই সমাপ্তি ঘটে।

শ্রমিকেরা তাদের নায্য মজুরীর জন্য বারবার আন্দোলন করে আসলেও কোন কাজ হয় নি, উল্টো পুলিশের লাঠি আর মালিকের পোষা গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। সরকারের এই দিকটাতে নজর দেওয়ার ফুরসাৎ নেই, তারা ব্যস্ত মালিক পক্ষকে খুশি করতে করের ব্যাপারে নানা ছাড় দিতে, নানা প্রণোদনা নিশ্চিত করতে; কেননা এই মালিকদের দেওয়া চাঁদাতেই হয়তো চলবে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী খরচ! মালিকপক্ষ বারবারই এক ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেন যে শ্রমিকদের বেশি মজুরী দিতে গেলে তাদের ব্যবসা চালানো সম্ভব না, কারখানা বন্ধ করে পথে চলতে হবে। কিন্তু তাজরিন দুর্ঘটনার পর টিভি চ্যানেলে অনন্ত জলিলের কথায় প্রমাণ পাওয়া যায় মালিকেরা কতটা মিথ্যাচার করেন। তিনি বলেছেন, তার কারখানায় শ্রমিকদের পারশ্রমিক ছাড়াও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয় যা অন্য কারখানাতে বিরল। শ্রমিকদের জন্য বাড়তি দেওয়ার পরও তার অনেক টাকা থাকা যা দিয়ে তিনি প্রতি বছর কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

না্য্য মজুরী তো আজ অনেক দূরের কথা শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থলেরই নিশ্চয়তা নেই। জানের নিরাপত্তা ছাড়াই শ্রমিকেরা প্রতিদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে যাচ্ছেন কোন রকমে পরিবার নিয়ে পেট চালাতে। অধিকাংশ কারখানাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় না। বিজেএমইএ, বিকেএমিএ তো দেখেই না, সরকারের কোন বিভাগেরই নজর নেই এই খাতে। সরকার বৈদেশিক মুদ্রাপ্রাপ্তি আর নির্বাচনী চাঁদা পেয়েই খুশি। অন্যদিকে ফিনিক্স, তাজরীন আর সবশেষে সাভারের রানা প্লাজার মতন দুর্ঘটনা একের পর এক ঘটে চলছে। আগের ঘটনাগুলো ঘটবার পর শুধুমাত্র লোক দেখানো তদন্ত কমিটি ছাড়া আর কিছুই হয় নি, লাশের দাম উঠেছে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। কাউকেই আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় নি, আবার আইনগুলোও মালিকদের রক্ষা করেই তৈরি করা যেখানে হাজার মানুষ নিহত হলেও সর্বোচ্চ শাস্তি কখনোই মৃত্যুদণ্ড নয়। এবার অবস্থা বেগতিক দেখেই শেখ হাসিনা সরকার মালিকদেরকে গ্রেফতার করেছে। এখন সময়ই বলে দেবে কোথাকার জল কোথায় গড়াবে।

আজকের দিনে মহান মে দিবসকে ঘিরে কিছু সেমিনার হবে, সমাবেশ হবে, কিছু দাবি তোলা হবে। সময়ের চোরা স্রোতে সব দাবি ভেসেও যাবে। এইসব সমাবেশে যারা বক্তব্য রাখেন তারা নিজেরাও জানেন তারা প্রকৃত শ্রমিক নন, শ্রমিক নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসায়ি তাদের কাজ। তাই তারা দাবি তোলার জন্যই দাবি তোলেন, দলকে চাঙা রাখতে। আর সরকার সব শুনে একটু হু-হা করবে এ যা।


শ্রমিক মারা যাবে আর শ্রমিকদের লাশের ওপরে প্রথম আলো, স্কয়ারের মতন কর্পোরেট বেশ্যারা উদ্দাম নৃত্যের আয়োজন করবে, কিছু অর্থ কড়ি ফেলে ঔদ্ধত্য দেখাবে। এভাবেই চলে যাবে বছরের পর বছর, পহেলা মে আসলেই সাজ সাজ রবে পালিত হবে মহান মে দিবস, লালঝাণ্ডার মিছিল হবে, ফকির আলমগীরের গান হবে। আর কিছুই বদলাবে না, শাহীনারা মারা যাবে বছরের পর বছর। সেই রক্তের টাকায় ধনী মালিকেরা কোন বারে বসে পৌনে নগ্ন বারগার্লের নাচ দেখবে আর ভদকা, জ়ীন, রাম, টাকিলার গেলাসে চুমুক দিয়ে একজন আরেকজনকে বলবে, 'ভাই, এভাবে কি আর ব্যবসা চলে? শ্রমিকদের শুধু খাই খাই! ওদেরকে এত টাকা দিলে কীভাবে চলবো। ঐ ব্যাটা অর্থমন্ত্রীকে বলতে হবে যেন আরো কিছু সুবিধা দেয়...... ...... ......'

লেখাটা শেষ করছি সাভার ট্র্যাজেডি আর কর্পোরেট বেশ্যাদের ঔদ্ধত্য নিয়ে লেখা একটা দ্বাদশপদী দিয়ে।


কর্পোরেট বেশ্যাপনা

আঁধারের মাঝে টর্চটা যে জ্বলে
নিভু নিভু করে। কেউ কেটে চলে
মানুষের হাত লোহার করাতে।
পারছে না ঠিক, তাই তার সাথে
আহত মেলায় আরেকটা হাত
বাঁচবার আশে। নতুন প্রভাত
দেখবে কি সে? একই আঁধারে
আলোর ফোয়ারা! আহা রে! বাহা রে!
বাণিজ্য-গণিকা নোংড়া নৃত্য করে
উদ্ধত আয়েশে লাশেদের 'পরে।
সব সুশীলতা ইলানেই ইতি!
টাকাটাই যেন জীবনের নীতি!

২৯ এপ্রিল, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

দ্বাদশপদী - ৭: বাক্‌হীনা মা

ব্লগিং জগতে যাদের খুব আপন ভাবি তাদেরই একজন তার অনাগত সন্তানের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত। এমন এক শিশু যার অপেক্ষায় প্রহর গুণছিলো তার বাবা-মা, আপ নেরা, সে জন্মের আগেই চলে গেলো পরপারে। চুপচাপ শুয়ে আছে হিমঘরে। শোকগ্রস্ত বাবা-মা, আপনজনকে যে ঠিক কী বলবো তা আমার জানা নেই। মনটা অনেক অনেক বেশি খারাপ। সেই থেকেই লেখা এই কবিতাখানি। 


বাক্‌হীনা মা

বাক্‌হীনা বসে আছে। দুই চোখ
বেয়ে বেয়ে জল পড়ে। কী যে শোক
হৃদ-মাঝে। যার যায় শুধু যে সে
বোঝে। তার মনে পরে ভালোবেসে
পার করা দিনগুলো। ছোট কায়া
দেহ-মাঝে ছিলো। আজ শুধু ছায়া।
কান্নাহীন! হাসিহীন! বাক্স করে
শুয়ে আছে অন্ধকার হিমঘরে।
নেই কোন জন্মদিন, শুধু আছে
মৃত্যুদিন। সবকিছু রেখে পাছে
চলে গেলো। মায়ে কাঁদে! শুধু কাঁদে!
রয়ে গেলো প্রাণ ব্যথা ভরা ফাঁদে।


দেবাশিস্‌ মুখার্জি
১৮ এপ্রিল, ২০১৩


অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ
দ্বাদশপদী কবিতা - ৬  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৫  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৪  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৩  
দ্বাদশপদী কবিতা - ২    
দ্বাদশপদী কবিতা - ১

শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

দ্বাদশপদী - ৬: ক্রীড়নক

ক্রীড়নক

গণজাগরণ! চিলে নিলো কান!
সে চলমান সঙ্ঘাতে কত প্রাণ
যায় কক্‌টেল, বোমে।  রগকাটা
দেহ ছট্‌ফট্‌ করে। টোনা আঁটা
মুখ চুপ করে রয়। দুধ-কলা
খায় হেফাজত শাপে! এ অবলা
মায় সব কিছু সয়। মিথ্যাচারে
শোর পারে বুদ্ধিবেশ্যা। অনাচারে
সঙ্গমে মিলতো ল্যাদা রুদ্ধদ্বারে!

ঘরছাড়া হিন্দু-বৌদ্ধ। বারে বারে
বইবে কি রক্ত নদী? ধ্বক! ধ্বক!!
করে হৃদে ব্যথা। মোরা ক্রীড়নক!!

দেবাশিস্‌ মুখার্জি
১২ এপ্রিল, ২০১৩



অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ
দ্বাদশপদী কবিতা - ৫  
দ্বাদশপদী কবিতা - ৪
দ্বাদশপদী কবিতা - ৩
দ্বাদশপদী কবিতা - ২  
দ্বাদশপদী কবিতা - ১

শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৩

গণ আদালতের সেদিন...

ঘড়ির কাঁটাগুলো ঘুরতে ঘুরতে রাত বারোটা হতেই তারিখটা বদলে গেল। ২৯ মার্চ - শহীদ রুমির জন্মদিন। শহীদ রুমি আজ বেঁচে নেই, কিন্তু তার মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, বিপ্লবী চেতনা, দেশপ্রেম কি মরে গিয়েছে? উত্তর হ্যাঁ, না দু'টোই ঠিক। যারা উল্টো স্রোতের পথিক তাদের কাছে সবই মৃত; কিন্তু কারো কারো বুকে ঐ চেতনা আজো জ্বলছে একটু একটু করে।


শহীদ শফি ইমাম রুমী (বীর বিক্রম), জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো, শুভেচ্ছা রইলো আপনার বিদেহী আত্মার প্রতি, আপনার চেতনার প্রতি।

১৯৭৩ সালে রজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার শুরু হলেও তা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় যখন ১৯৭৫ এ স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে জিয়া সরকার এসে বিচার কাজ পুরো বন্ধ করে রাজাকারদের মুক্তি দেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন।

রুমী শহীদ হবার ২০ বছরেও আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় নি এরকম একটা সময়ে শহীদ রুমীর মা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রাজাকার বিরোধী চেতনার নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। এডভোকেট গাজিউল হক, ডঃ আহমদ শরীফ, মাজহারুল ইসলাম (স্থপতি), ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সুফিয়া কামাল, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) কাজী নুরুজ্জামান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শওকত আলী খানকে নিয়ে গঠিত হয় গণ আদালত যার নেতৃত্ব দেন আম্মা জাহানারা ইমাম। এটি গঠিত হয় ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ । এই আদালতে মূল অভিযুক্ত ছিলেন গোলাম আজম। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে আরো অভিযুক্ত হন আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামরুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আবদুল কাদের মোল্লা।

গণ আদালতে রায়ে গোলাম আজমের মৃত্যুদণ্ড হয়। গণ আদালত গঠনের জন্য জাহানারা ইমামের নামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। অন্যদিকে গণ আদালতের  রায় কার্যকর করবার জন্য  জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন। ১০০ জন সাংসদ গণআদালতের রায়ের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেন, যার ভেতর ৮৮ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের। 


১৯৯৩ সালে নির্মূল কমিটির সমাবেশে পুলিশ বাহিনী হামলা চালায় । পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জাহানারা ইমাম, এবং তাঁকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আহত শরীর নিয়েই কাজ চালিয়ে যান। 

২৬ মার্চ ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের ২য় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা হচ্ছেনঃ শওকত ওসমান, কে এম সোবহান, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, অনুপম সেন, দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, খান সারওয়ার মুরশিদ, শামসুর রাহমান, শফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন। 

খুব দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে ২ এপ্রিল ১৯৯৪ সালে চিকিৎসার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ডেট্টয়েট হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন জাহানারা ইমাম। ২২ এপ্রিল চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসার আওতার সম্পূর্ণ বাইরে চলে গেছেন তিনি। তাঁর মুখগহ্বর থেকে ক্যান্সারের বিপজ্জনক দানাগুলো অপসারণ করা আর সম্ভব নয়। বাকশক্তি হারিয়ে কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তাঁর।  ২২ জুনের পর থেকে তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে। সব ধরনের খাবার গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা ওষুধ প্রয়োগও বন্ধ করে দেন। 

২৬ জুন ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্টয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালের বেডে ৬৫ বছর বয়সে জাহানারা ইমাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি ২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত শোক সপ্তাহ এবং ৬ জুলাই জাতীয় শোক দিবস পালন করে। 

৪ জুলাই বিকেলে বাংলাদেশে আসে শহীদ জননীর মরদেহ। তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শহীদ জননীর লাশ গ্রহণ করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, অথচ আজ ছাগুরা বলে আম্মার মৃত্যুতে শেখ হাসিনা নাকি মিষ্টি বিতড়ন করেছেন!! 

৫ জুলাই সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ জননীর কফিন রাখা হয় জনগণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে। দুপুরে যোহরের নামাযের পর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর নামাযের জানাযা। জানাযা শেষে শহীদ জননীকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের আটজন সেক্টর কমান্ডার শহীদ জননীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। ইতি ঘটে গণ আদালত অধ্যায়ের। খালেদা সরকার ঐ আদালতকে অবৈধ ঘোষণা করে।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মৃত্যুবরণ করেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা মাথায় নিয়ে, খালেদা সরকারের দেওয়া রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। জনতার মঞ্চে খালেদা সরকারের পতন ঘটলে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঐ মামলা তুলে নেয়। অথচ ছাগুরা বলে শেখ হাসিনা যদি গণ আদালতকে সমর্থণ করবেনই তবে ক্ষমতায় গিয়েও জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা কেন প্রত্যাহার করেন নি!!

 

শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৩

কাব্যমালা - ০১

শুঁয়ো পোকা

হলুদ-কমলা ডোরা কাটা তুমি,
হাঁটো গুটিশুটি পায়ে,
কিংবা শুয়ে শুয়ে।
তাই তুমি শুঁয়ো পোকা?
পাটগাছ বেয়ে উঠছো ওপরে।
রোদের নেশায় মাতলে নাকি?
নাকি গুটি পাকানোর আগে দেখছো সুয্যিমামা?
ভাবছো ছোঁবে ওকে দু'দিন গেলে পরে?
পাকাও গুটি তবে মুক্তির মাদকতায়...
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তৈরি করো ছোট্ট রঙিন পাখা,
উড়বে তুমি মুক্তির খোঁজে প্রজাপতি হয়ে...

দেবাশিস্‌ মুখার্জি
২১।০৩।২০১৩



হল্‌দে প্রজাপতি

হল্‌দে প্রজাপতি,
ছোট্ট ছোট্ট পাখনা মেলে ওড়ো,
ছোঁয়াছুঁয়ি করো,
কামজ প্রেমের নেশায়...
এ কি শুধু শারীরিক?
নাকি তোমরাও বোঝ 'ভালোবাসা কারে কয়'?
তোমরা কি শোন ঠাকুরের গান? দাশের কবিতা?
গাঁথো কি মালা বকুলের ফুলে?
তোমরা কি বোঝ আকাশের মেঘ? 
রাতের তারার মেলা?
তোমরা কি বোঝ বৃষ্টির রিনিঝিনি?
নদেয় বানের ডাক?
কিচ্ছু বোঝনা...
তবে কি বোঝ প্রাণের কথা? হৃদয়ের ব্যথা?
তাও বোঝ না...
তবে আমি বলি, তুমি ভালোবাসা কী তাই জানো না!

দেবাশিস্‌ মুখার্জি
২১।০৩।২০১৩

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৩

ইচ্ছে করে...

ইচ্ছে করে...


ইচ্ছে করে -
পাখির মতন ডানা মেলে,
দূর আকাশে হেলে-দুলে,
রঙধনুটার সাথে খেলে
সন্ধ্যেটাতে যাই হারিয়ে


ইচ্ছে করে -
মাছ হয়ে ঐ নদীর জলে,
কচুরীপানা আর শতদলে
করবো খেলা; যাবো চলে
সাঁতার কেটে, মন যেথা চায়।


ইচ্ছে করে -
দূরের ঐ বনের ধারে,
ছোট্ট এক পুকুর পাড়ে,
পা দু'টোকে দিয়ে ছেড়ে
জলের মাঝে করি খেলা।


ইচ্ছে করে -
ঐ সাগর তীরে
তোমায় নিয়ে ধীরে ধীরে
ফিরবো আমি সুখের নীড়ে,
সূর্য যখন ডোবে।


ইচ্ছে করে -
ভালোবাসা আর লাজে,
ঘন আবীর এক সাঁঝে,
ঐ দূর পাহাড়ের মাঝে
দু'জনাতে পথ হারাই।


ইচ্ছে করে -
তোমায় নিয়ে দূর বিহনে,
তাকিয়ে তোমার চোখের পানে
বলবো আমি কানে কানে,
'তোমাই আমি চাই।'


ইচ্ছে নিয়েই আছি বেঁচে,
ইচ্ছেঃ তোমায় চাই।
এখন আমি স্মৃতি খুঁড়ি,
তুমি আমার নাই।



**এই কবিতাটা সেই ২০০০ সাল থেকে লিখে চলছি... সবশেষ কাঁটাছেঁড়া করেছি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, আমারব্লগে পোস্ট করেছিলাম... ইচ্ছে তো ইচ্ছেই, ওটা যখন বদলাবে, লেখাও বদলে যাবে... তাই এই কবিতায় কোন তারিখ দেই নাই...

শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

শকুন-বধনামা

শকুন-বধনামা

লাখো জনতা জেগে আছে আজ বাংলা মায়ের বুকে
'জয় বাংলা' রবে টেকনাফ হতে তেঁতুলিয়া কাঁপে...
আর ডানা ঝাপটায় পুরোনো শকুন-দল নব্য শকুন নিয়ে,
ছদ্মবেশে ঘোরে জনতার মাঝে।
দাঁড়িওলা, দাঁড়িছাড়া, গোঁফওলা, গোঁফছাড়া, টুপিওলা, টুপিছাড়া --
নানান রঙের শকুন...ধ্বংসনৃত্য করে পথে পথে নেমেঃ
আমার প্রাণের পতাকা পোড়ায়,
কলুষিত করে জাগরণ-মঞ্চ,
ভাংচুড় হয় শহিদের বেদী,
বিয়াল্লিশ সন গেল; আজও তোলে শোর 'পকিস্তান জিন্দাবাদ' বলে...
আর আমরা??
আজ অহিংসামন্ত্র-শিষ্য!
নীরবে কাঁদে প্রতিবাদ নানান মোমের আলোয়,
নীরবে কাঁদে প্রতিবাদ নানান রঙের বেলুনে...
এভাবেই যাবে একটা করে দিন নীরব তামাশা নিয়ে??
লাঠি নিয়ে আজ রাজপথে নামো, শকুন ঠ্যাঙাতে হবে...
রক্তের শোধ রক্তে হবে, লাশের শোধ লাশে।
'জয় বাংলা' ধ্বনিত হবে প্রতি বাঙালির শ্বাসে...



দেবাশিস্‌ মুখার্জি
২২।০২।২০১৩

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৩

চিরমুক্তি


চিরমুক্তি

যে খোঁজে চিরমুক্তির পথ কে রুধিবে তারে??
স্বজনের মায়া??... প্রেয়সীর প্রেম??
সবুজ বন্ধুতা??... পিছুটান??
সে তো রয় না বৈরাগ্যে!
কেউ নিজেরে ভোলায় নিকোটিন ধোঁয়ায়,
কেউ বোতলের টানে,
কেউ নারীর কায়ার মায়ায়...
এ তো শুধু ছুটে চলা!
যন্ত্রণাহীনতার কপট অভিনয়,
সাময়িক ভালোলাগা...
তাই কেউ কেউ খোঁজে মুক্তি... চিরমুক্তির পথ...
ভালোবাসা-প্রেম-মমতা-মায়ার বাঁধন ছেঁড়ার টান
সব করে খানখান...
শুধু খুঁজে চলেঃ
যন্ত্রণা হতে মুক্তি... জীবন হতে মুক্তি...
চিরমুক্তির পথ...


দেবাশিস্‌ মুখার্জি
২৪ জানুয়ারি, ২০১৩

মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৩

শুধুই কি ছবি??


শুধুই কি ছবি??

পবন-দোলায় দোলে ঈষৎ-কৃষ্ণ কেশ,
সিঁথিতে সিঁদুর; নবনিতা বেশ...
কোন এক দক্ষিণ অয়নে
হারালো কবি সুনয়নার নয়নে।
ভ্রূ-জোড় মাঝে সিঁদুর-আদিত্য --
কবি মন্ত্রমুগ্ধ নিত্য।

সফেদ শাঁখের কাঁকন... ঐ হাত দু'য়ে...
লাল-লাল চুড়ি টুং টাং করে হৃদয় ছুঁয়ে...
আয়স্থি-পলার বন্ধুতা থাকবে অহর্নিশ...
দীপিত কবি, শুধু প্রেমে দিশ...
লাল জামদানী পরিহিতা, অরুণিমায় দীপ্তিমতী...
এ যেন এক দেবজ্যোতি!

এ কি শুধুই ছবি???
নয় ছবি, নয় ছবি, নয় শুধুই ছবি...
এ এক ধ্রুব সত্যি, জানে শুধু এই কবি...



দেবাশিস্‌ মুখার্জি
৫ জানুয়ারি, ২০১৩