বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

দ্বাদশপদী কবিতা - ২: চৈতারকোল

আমার বেড়ে ওঠা শহরে হলেও ফিবছরই গাঁয়ের দেখা মিলতো শীতের ছুটিতে। সাঁতার জানতাম না বলে বর্ষায় যাওয়া হ'ত না বললেই চলে। প্রায় সারাটা বছর শহরে থাকলেও গাঁইয়ের জন্য মন কাঁদতো। গাঁয়ে গিয়ে জ্ঞাতি ভাইবোন আর সমবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক মজা করতাম। লুকোচুরি খেলা, চড়ুইভাতি, ভূতের বাড়ি দ্যাখার মত অনেক অনেক অনেক মজা হলেও বেশি মজা হত নাইতে যাবার সময়। সবাই মিলে গাঁইয়ের কোল ঘেঁষে যাওয়া নদে অনেক মজা করতাম। নদটার দাপ্তরিক নাম চৈত্রকোল হলেও গাঁয়ের লোকেরা ওকে চৈতারকোল নামেই ডাকতো। ডাকতো বলছি কারণ আজ আর নদটা নেই। বাংলাদেশের মানিচিত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে নামটা আজও আছে হয়তো, তবে বাস্তবে ও মৃত, ওর বুকে ধুধু করে বালু, ওর বুক চীরে চাষ হয় চীনাই, ফুটি!

আমার ছেলেরবেলার নদটাকে নিয়ে ঠিক এক বছর আগে একটা দ্বাদশপদী কবিতা লিখেছিলাম। সময়ের গবেষণায় দ্বাদশপদীর সংজ্ঞা বদলে ফেলেছি। মাত্রার হিসেব পাল্টে স্বরবৃত্তকে ফেলে দিয়ে বেছে নিয়েছি অক্ষরবৃত্ত ছন্দকে। তাই সংজ্ঞাকে ঠিক রাখতে পুরোনো কবিতাটা লিখলাম নতুন করে। সাথে পুরোনোটাও তুলে দিলাম।

চৈতারকোল

আজ জলহীন নদে ধুধু করে বালু,
মাঝিদা'র লগি নাই আর চালু।
মাছ গ্যাছে মরে, জেলেরা নিখোঁজ।
শৈশব-স্মৃতি মনে জাগে রোজঃ
চৈতারকোল যেত গ্রাম ছুঁয়ে,
নাওয়ের মাঝে র'তাম যে শুয়ে।
সাদাকাশ মেশে আকাশের নীলে।
নাইতে যেতাম ভাই-বোন মিলে।
ছোটছোট মাছ গামছায় ধরে
ফিরতাম বাড়ি কত না আদরে!
টলমলে জল, ছিলো না যে কাঁদা;
আজ শুধু বালু, চিক্‌চিকে সাদা।

২৯ মে, ২০১৩
দেবাশিস্‌ মুখার্জি


মূল কবিতাটি -


চৈত্রকোল

আজ নদখানি জলহীন, ধুধু করে বালু,
মাঝি দাদার লগিখানা আর নাই চালু।
জেলেরা গ্যাছে মরে, নাই কারো খোঁজ।
শৈশবের স্মৃতিরা মনে জাগে রোজঃ
গ্রামখানির পাশ ঘেঁষে যেত নদ চৈত্রকোল,
নৌকোর মাঝে বসে আমি খেতাম যে দোল!
কাশফুলের সাদা মেশে আকাশের নীলে!
সকালেতে স্নান ছিল সব ভাই-বোন মিলে।
ভাই আর বোন গামছা করে ছোট মাছ ধরে
সব মিলে খেলা করে দিতেম যে ছেড়ে!
জল ছিল টলমলে, ছিল না তো কাঁদা,
বালু 'পরে আলো পড়ে: চিকমিক সাদা!

২৯ মে, ২০১২ 

দেবাশিস্‌ মুখার্জি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন