বুধবার, ৩০ মে, ২০১২

দ্বাদশপদী কবিতা - ২

গত পোস্টটি পরবার পর অনেকেই অনেকেই যে কবিতার ব্যাকরণ নিয়ে পোস্ট দিলে ভালো হয়; কারণ ব্যাকারণের ব্যাপারগুলো তাদের কাছে কিঞ্চিৎ দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। কিন্তু শুধুই ব্যাকরণের কচকচানি নিশ্চই ভালো লাগার কথা না। তাই আমি ঠিক করেছি আমার এই ধারাবাহিকভাবে দ্বাদশপদী কবিতা পোস্টের সাথে সাথে একটু একটু করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।

বাংলা স্বর বা ধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

১. বদ্ধস্বর
২. মুক্তস্বর

বদ্ধস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় তাদের বদ্ধস্বর বলা হয়। যেমন : আঁক্‌, বাঁক্‌, কর্‌ (করো কিন্তু না), লড়্‌ (লড়ো কিন্তু না) ইত্যাদি।

মুক্তস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের প্রবহমান বাতাস জিভের কোনো বাধা ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে তাদের মুক্তস্বর বলে। যেমন: লড়ো, করো, নদী, ইত্যাদি।

উপরের উদাহরণগুলোর সবই ছোট ছোট শব্দ বা ধ্বনি নিয়ে দিলাম। বড় বড় শব্দ নিয়ে দিলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে:

বৃন্দাবন = বৃন্‌ + দা + বন্‌

এখানে বৃন্‌ বদ্ধস্বর, দা মুক্ত স্বর, এবং বন্‌ বদ্ধস্বর।

আবাহন = আ + বা + হন্‌

এখানে আ মুক্তস্বর, বা মুক্তস্বর, এবং হন্‌ বদ্ধস্বর।

কিন্তু আবাহনী = আ + বা + হ + নী

আ মুক্তস্বর, বা মুক্তস্বর, হ মুক্তস্বর (খেয়াল করে দেখুন বিশ্লেষণে হ এর নীচে কোন হসন্ত দেই নি), এবং নী মুক্তস্বর।

স্বরের ব্যপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলেই মাত্রায় প্রবেশ খুব সহজ হয়ে যাবে। মুক্তস্বর সবসময়েই একমাত্রার, তাই একে নিয়ে কোন সমস্যাই হয় না। কিন্তু বদ্ধস্বর কোন কোন ছন্দে একমাত্রার আবার কোন কোন ছন্দে দুই মাত্রার।

স্বরের ব্যাপারটা আগামী পোস্টে আলোচনা করবো। তবে তার আগে আরো দু'টি ব্যাপারে কথা বলে নিইঃ

পয়ার: চতুর্দশ অক্ষরের ছন্দ , বাংলা পদ্যে সর্বাধিক প্রচলিত ছন্দবিশেষ। যেমন:

মঙ্গলকাব্যে ‘বিজয় গুপ্ত’ ‘হরিদত্ত’ সম্পর্কে বলেছেন

রথমে রচিল গীত কানা হরিদত্ত
মূর্খে রচিত গীত না জানে মহাত্ম্য
এ কাব্যের ছন্দ মূলত অক্ষরবৃত্ত পয়ার ছন্দ। যে ছন্দে মঙ্গলকাব্য রচিত তাকে লঘু বা দ্বিপদী পয়ার ছন্দ বলা হয়েছে। এর প্রতিটি পদ আট ও ছয় মাত্রায় বিভক্ত।

আজ এইটুকুতেই থামি এবং মূল পোস্টে যাই। smile :) :-)
চৈত্রকোল

আজ নদখানি জলহীন, ধুধু করে বালু,
মাঝি দাদার লগিখানা আর নাই চালু।
জেলেরা গ্যাছে মরে, নাই কারো খোঁজ।
শৈশবের স্মৃতিরা মনে জাগে রোজঃ
গ্রামখানির পাশ ঘেঁষে যেত নদ চৈত্রকোল,
নৌকোর মাঝে বসে আমি খেতাম যে দোল!
কাশফুলের সাদা মেশে আকাশের নীলে!
সকালেতে স্নান ছিল সব ভাই-বোন মিলে।
ভাই আর বোন গামছা করে ছোট মাছ ধরে
সব মিলে খেলা করে দিতেম যে ছেড়ে!
জল ছিল টলমলে, ছিল না তো কাঁদা,
বালু 'পরে আলো পড়ে: চিকমিক সাদা!

২৯ মে, ২০১২; ঢাকা
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

দ্বাদশপদী কবিতা - ১

'দ্বাদশপদী' নামটা শুনে কি ভ্রু কুঁচকে গেল?? কিছুটা তাইই। বাংলা সাহিত্যে এরকম বস্তুর নাম খুব একটা শোনা যায় নি। এক-দু'জন যদিও বা দুয়েক বারের জন্য এই শব্দটা ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তারা মজা করতেই করেছেন, ব্যাপারটাতে কোন গুরুত্ব দেন নি। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই এরকম একটা ব্যাপার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছি কিন্তু ব্লগে কোন পোস্ট দেবার সাহস পাই নি। আজ অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে পোস্ট দিয়েই ফেললাম। এটা শুধুই পরীক্ষাপর্ব, তাই অনুগ্রহপূর্বক কেউ গাল দিবেন না।

আমি যে বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিয়ে দ্বাদশপদী কবিতাকে দাঁড় করানোর পরীক্ষা চালাচ্ছি সেগুলো হলঃ
১) ১২ পঙ্‌ক্তিতে বিন্যস্ত
২) প্রতি পঙ্‌ক্তিতে ১২ মাত্রা
৩) অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
৪) পর পর দুই চরণে অন্ত্যমিল
৫) কবিতার বিন্যাস ৬+৬ কিংবা ৪+৪+৪ কিংবা ৮+৪ কিংবা ৫+৭ সহ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে


প্রিয়া

প্রিয়া, তুমি হও আজ অনিরুদ্ধা,
আমার হৃদয়ে তুমি শুধু শুদ্ধা
নীলয়-দুন্দভি কাঁপে তব আশে,
তব নাম বাজে মোর প্রতি শ্বাসে!
তব কাছে অঘ প্রেমখানি মোর?
অঘর য়েও জিগীষা অঘোর।
এ প্রেম শাশ্বত, শ্যামল, অব্যয়!
যদিবা হারাই জাগে মনে ভয়!
অঘোষ এ প্রেম হয় না শ্রবণ?
মোর হৃদে জ্বলে খাণ্ডব-দহন।
তবু হৃদ জাগে তব জয়-আশে,
মন শুধুই তোমা ভালোবাসে!

২৭ মে, ২০১২
(পরিমার্জনঃ ০১ মে, ২০১৩)
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১২

কচু পাতার জল...





এই জীবনের সত্য যেন পেয়েছে এক তিল,
কচু পাতায় জলের মতন তোমার-আমার মিল!

কচু পাতায় ঠাঁই মেলে না, জল গড়িয়ে যায়...
এই আমিটা যাচ্ছি সরে তোমার থেকে হায়!
দেহ দু'টো যাচ্ছে সরে, মন দু'টো কি তাই??
স্বপ্ন মাঝে দেখি তোমায়, চোখ মেললেই নাই!

হয়তো জীবন অন্ত্য পাবে, কিন্তু ভালোবাসা??
এই জীবনে তোমার ছোঁয়ায় পাবে সে কি ভাষা??
স্বপ্ন-ভাঙা যন্ত্রণার নাইতো কোন শেষ,
বুকের মাঝে একটু ব্যথা, লাগছে আমার বেশ!

যাও, চলে যাও উড়ে,
আমার পাখি দূরে...
আর ছোট্ট কচু পাতায়
জল গড়িয়ে যায়...

এই জীবনে হবে না আর তোমার-আমার মিল,
আমি যেন জলে ভাসা ছোট্ট একটা তিল!

১৬ মে, ২০১২; ঢাকা
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

রবিবার, ৬ মে, ২০১২

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা...


ধানের সবুজ
আমারে যে ডাকে,
এ শহর থেকে দূরে, বহুদূরে,
পাহাড়ের ফাঁকে।
উঁচু এক তাল গাছ
খাড়া এক পায়ে,
সে গাছেরই ছায়ে
পথ গেছে চলে খেতটা চিরে।
আমি হেঁটে চলি একটু ধীরে,
সরু পথ ধরে সবুজ পাহাড়ে।
শীতল বাতাস!
কী সুখ! আহারে!
পাহাড়ের 'পরে দিগন্ত মেলে।
আকাশের মাঝে সুয্যিটা খেলে।
মেঘগুলো যায় ভেসে,
কোন এক দূর দেশে।
আমি ভাবিঃ ঘর!
হরিণ, ভালুক!
ভাবনার খেল আকাশে চলুক।
খানিক বাদে বৃষ্টি আসে।
ভেজা মাটির সোঁদা বাসে
বিমুগ্ধ আমি।
দাঁড়িয়ে আছি ভেজা কাক হয়ে।
হয়তো বা সোনা রোদ দিবে দেখা,
সে মিষ্টি রোদের ভালোবাসা সয়ে
যাবো নেমে নীচে ফের ধানখেতে।
সবুজেরা খেলে সোনালি আলোতে।
মৃদু বাতাসে শীষ দোল খায়,
আর তার আন্দোলন হাত ছুঁয়ে যায়।
সেই আন্দোলনে
শিহরিত আমি।
গেয়ে উঠি জোরে আপন এ মনেঃ
'কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা
মেলে দিলেম গানের সুরে এই ডানা... ...'

 ০৯/০৯/০৯
দেবাশিস্‌ মুখার্জি