মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১২

দ্বাদশপদী কবিতা - ৫

জ্যোতি
মঞ্জুল চোখেতে কৌমুদী-প্রপাত,
আবার কখনো অন্ধকার রা্ত,
কখনো বা ঝরে সঘন বরষা;
হয়েছে সে নিধি নিবেদ্য সহসা।
প্রেমের কাঙাল অধম এ কবি
একে একে আঁকে স্বপ্ন-কল্প ছবি।
প্রেমহীন হৃদে নব প্রেমারতিঃ
সুহাসিনী শ্যামা সুনয়না জ্যোতি।
হৃদয়-মাঝারে সুমন্দ-অনিল।
অনিকেত আমি। হবে দোঁহে মিল??
ছুটে চলে ধরা, কাল্‌-স্রোত বয়;
এই প্রেম-সুধা অজর-অক্ষয়।

২৭ অক্টোবর, ২০১২; ঢাকা
দেবাশিস্‌ মুখার্জি

অন্যান্য দ্বাদশপদী কবিতাঃ

দ্বাদশপদী কবিতা -৪
দ্বাদশপদী কবিতা - ৩
দ্বাদশপদী কবিতা - ২
দ্বাদশপদী কবিতা - ১

রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১২

জাস্ট অ্যানাদার ডে...

যখন মনের ভেতর সূর্যটা হটাৎ ডুবে যায়,
যখন আশা ভরসা সব রাস্তা হারায়।
যখন ভর দুপুরে পথের ধারে একলা করে ভয়,
যখন বাসের ভিড়ে গলার ভিতর কান্না চাপতে হয়।
জেনো তোমার মতই আমি ঠাকরে বেড়াই
জেনো তোমার মত আমার বন্ধু একটা চাই।
যেমন মাঝ দরিয়ার নৌকো ফিরে আসে কিনারায়,
ওরে মানুষ যথন আছে তখন হাত জুটে যায়।
শেষ বলে কিছু নেই...শেষ বলে কিছু নেই...
শেষ যেখানে, জেনো শুরু সেখানে...

[শেষ বলে কিছু নেই - অঞ্জন দত্ত]

দেখতে দেখতে দিন চলে যায়। কিছু মানুষ পুরোনো হয়ে যায়, নতুন্ কিছু মানুষ চলে আসে সেই জায়গাটা পূরণ করতে। মানুষ একা থাকে না, কেউ না কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে পুরনোদের স্মৃতি ভোলা যায় না, মনের কোণে কখনো না কখনো নাড়া দেয়। এভাবেই দিন চলে যায়, অথবা চালিয়ে নিতে হয়। মানুষ যা চায় তা খুব কম সময়েই সম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মানুষকে নতুন অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়, নয়তো সে আর টিকে থাকতে পারে না।

কিছুক্ষণ পরই তারিখটা বদলে যাবে, চলে আসবে একটা কালো দিন। ১৯৮৫ এর এই দিনে জগন্নাথ হলের ছাদ ধ্বসে কিছু মেধাবী ছাত্র হারিয়ে গেছেন সময়ের অতল গহ্বরে। জানি, মৃত্যুর সাথে-সাথেই সব শেষ। তারপরও কখনো ভাবতে ইচ্ছে করে অন্যকোন জগতে তারা আছে্ন। সেই মানুষদের জন্য রইলো অনেক শ্রদ্ধা।



মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১২

চুম্বন...

চুম্বন...


মাঝ রাত্তিরে আঁধারের খেলা,
ঘাসের চাদরে আয়েশি ভঙিতে শুয়ে জোছনা,
হাজার জোনাই তারে চুম্বন করে।
সারারাত ধরে চলে সোম-বসুধার সঙ্গম-কলা,
বাতাসে শিস্‌ দেয় অবৈধ প্রেমের কামজ শিৎকার।
শেষ প্রহরে উত্তূঙ্গ মুহূর্তে ঘটে স্বামী রবির আগমন,
বিছানা ছেড়ে ভাগে বসুধা-নাগর সোম।


দেবাশিস্‌ মুখার্জি

৯ অক্টোবর, ২০১২

রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১২

জারবেরা...

জারবেরা...

একদল জারবেরা,
যেন একমুঠো সোনালি রোদ্দু্‌র,
জড়সড় দাঁড়িয়ে আছে কাঁটাবন মোড়ে,
যে কাঁটাবনে নেই কোন কাঁটা-বন!
আছে রঙ করা অর্কিডের স্টিক,
আছে জল ছেটানো গোলাপ, রজনীগন্ধা,
আর আছে ঘেউ-ঘেউ, মিউ-মিউ,
বোবা প্রাণীর নীরব চাউনি।

জারবেরা মুক্তবাতাসে শিস্‌ দিয়ে কথা বলতে চায়,
ওর প্রাণের কথা, ভালোবাসার কথা।
এ যান্ত্রিক শহরে কোন মুক্তবায়ু নেই,
তাই কেউ শোনে না ওদের কথামালা।

একটা ছেলে হাঁটছে,
কিঞ্চিৎ আয়েশি ভঙ্গিতে।
কাঁটাবন এসে জারবেরা খোঁজে,
তাকিয়ে দেখে হলুদ-সোনালির মেলা।
ডাঁটা সহ একটাকে তুলে নেয়
টাকার বিনিময়ে।
মুখে প্রশস্তির ছায়া নিয়ে রিক্‌শা খোঁজে।
দু'চারটা দরাদরির পর মিলে যায়।
রিকশা এগিয়ে চলে, সাথে ছেলে আর জারবেরা।
জারবেরা আকাশ দেখে,
আকাশে কালো কালো মেঘ।
হালকা বাতাসে দোল খায় ও।

খানিকবাদেই রিক্‌শায় ওঠে ছেলেটার বান্ধবী।
ছেলেটা রিক্‌শার হুড তুলে দেয়,
বান্ধবীর হাতে জারবেরাটা তুলে দেয়
আরেক হাতে জড়িয়ে ধরে বান্ধবীর কোমর।
মেয়েটা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে ওঠে, 'থ্যাঙ্কু!'
'থ্যাক্স অ্যা লট মাই সুইটহার্ট ইফতি!'
ছেলেটা অনুযোগের সুর তোলে, 'শুধুই থ্যাক্স??'
মেয়েটা 'ওয়েট' বলে ছেলেটার গালে আলতো ছোঁয়ায়
এঁকে দেয় ঠোঁটের প্রতিচ্ছবি।
জারবেরা ড্যাব ড্যাব চোখে চেয়ে দেখে তাই,
আর মনে মনে ভাবে 'ইশ্‌ পেতাম যদি একটা!'

সময়ের সাথে আকাশের মেঘেরা আরো কালো হয়,
বাড়ে বাতাসের দাপট।
যুগলের ফুরফুরে মনে দোলা দেয় বাদলধারা।
রিক্‌শাওলা এগিয়ে দেয় সামনে গুঁজে রাখা নীল পলিথিন।
ওরা পলিথিনটাকে আটকে নেয় সুবিধে মতন।
শুরু হয়ে যায় ঠোঁটে-ঠোঁটে ঠোকাঠুকি,
ছেলেটার হাত চলে যায় কোমর থেকে আরো ওপরে,
নীরবে চলে নরম ময়দা-পেষণ!
একটু জোরে পড়তেই মেয়েটা অস্ফুট স্বরে বলে 'আস্তে!'
ছেলেটা বলে, 'আস্তে বলো, মামা শোনে তো!'
রিক্‌শাওলা মিটিমিটি হাসে কিন্তু ভুলেও পেছন ফেরে না,
এগিয়ে চলে নীরবে।
কামলীলার নীরব সাক্ষী হয় জারবেরা,
ও তাকিয়ে রয় মেয়েটার ঠোঁটের দিকে,
একটা কামুক দৃষ্টি!


আধঘণ্টাবাদ বাসা কাছে এলে ছেলেটাকে নামিয়ে দেয় মেয়ে,
এর আগে নিয়ে নেয় রিক্‌শাভাড়া।
রিক্‌শা গলিতে ঢোকে,
আর ছেলেটা নামতে-নামতে টিশ্যুপেপারে মোছে গালের লিপ্‌স্টিক!
মেয়েটা পার্স থেকে সেল ফোন বেড় করে দেখে ১২ টা মিসড্‌কল!
কলব্যাক করে বলে ওঠে,
'আদনান, জান আমার, আমি ক্লাশে ছিলাম...
কাল তো দেখা হচ্ছে, এখন রাখছি...',
রিক্‌শা থামিয়ে ভাড়া মিটায়।

বাসার সামনে শুকনো, নোংড়া ড্রেনে বৃষ্টির জল ঢেউ তোলে।
দরজায় মাথা ঠোকানোর আগে মেয়েটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় জারবেরা,
গিয়ে পড়ে ড্রেনের জলে,
বৃষ্টির জলে মেশে জারবেরার নোনা-জল।




দেবাশিস্‌ মুখার্জি
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২