জারবেরা...
একদল জারবেরা,
যেন একমুঠো সোনালি রোদ্দু্র,
জড়সড় দাঁড়িয়ে আছে কাঁটাবন মোড়ে,
যে কাঁটাবনে নেই কোন কাঁটা-বন!
আছে রঙ করা অর্কিডের স্টিক,
আছে জল ছেটানো গোলাপ, রজনীগন্ধা,
আর আছে ঘেউ-ঘেউ, মিউ-মিউ,
বোবা প্রাণীর নীরব চাউনি।
জারবেরা মুক্তবাতাসে শিস্ দিয়ে কথা বলতে চায়,
ওর প্রাণের কথা, ভালোবাসার কথা।
এ যান্ত্রিক শহরে কোন মুক্তবায়ু নেই,
তাই কেউ শোনে না ওদের কথামালা।
একটা ছেলে হাঁটছে,
কিঞ্চিৎ আয়েশি ভঙ্গিতে।
কাঁটাবন এসে জারবেরা খোঁজে,
তাকিয়ে দেখে হলুদ-সোনালির মেলা।
ডাঁটা সহ একটাকে তুলে নেয়
টাকার বিনিময়ে।
মুখে প্রশস্তির ছায়া নিয়ে রিক্শা খোঁজে।
দু'চারটা দরাদরির পর মিলে যায়।
রিকশা এগিয়ে চলে, সাথে ছেলে আর জারবেরা।
জারবেরা আকাশ দেখে,
আকাশে কালো কালো মেঘ।
হালকা বাতাসে দোল খায় ও।
খানিকবাদেই রিক্শায় ওঠে ছেলেটার বান্ধবী।
ছেলেটা রিক্শার হুড তুলে দেয়,
বান্ধবীর হাতে জারবেরাটা তুলে দেয়
আরেক হাতে জড়িয়ে ধরে বান্ধবীর কোমর।
মেয়েটা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে ওঠে, 'থ্যাঙ্কু!'
'থ্যাক্স অ্যা লট মাই সুইটহার্ট ইফতি!'
ছেলেটা অনুযোগের সুর তোলে, 'শুধুই থ্যাক্স??'
মেয়েটা 'ওয়েট' বলে ছেলেটার গালে আলতো ছোঁয়ায়
এঁকে দেয় ঠোঁটের প্রতিচ্ছবি।
জারবেরা ড্যাব ড্যাব চোখে চেয়ে দেখে তাই,
আর মনে মনে ভাবে 'ইশ্ পেতাম যদি একটা!'
সময়ের সাথে আকাশের মেঘেরা আরো কালো হয়,
বাড়ে বাতাসের দাপট।
যুগলের ফুরফুরে মনে দোলা দেয় বাদলধারা।
রিক্শাওলা এগিয়ে দেয় সামনে গুঁজে রাখা নীল পলিথিন।
ওরা পলিথিনটাকে আটকে নেয় সুবিধে মতন।
শুরু হয়ে যায় ঠোঁটে-ঠোঁটে ঠোকাঠুকি,
ছেলেটার হাত চলে যায় কোমর থেকে আরো ওপরে,
নীরবে চলে নরম ময়দা-পেষণ!
একটু জোরে পড়তেই মেয়েটা অস্ফুট স্বরে বলে 'আস্তে!'
ছেলেটা বলে, 'আস্তে বলো, মামা শোনে তো!'
রিক্শাওলা মিটিমিটি হাসে কিন্তু ভুলেও পেছন ফেরে না,
এগিয়ে চলে নীরবে।
কামলীলার নীরব সাক্ষী হয় জারবেরা,
ও তাকিয়ে রয় মেয়েটার ঠোঁটের দিকে,
একটা কামুক দৃষ্টি!
আধঘণ্টাবাদ বাসা কাছে এলে ছেলেটাকে নামিয়ে দেয় মেয়ে,
এর আগে নিয়ে নেয় রিক্শাভাড়া।
রিক্শা গলিতে ঢোকে,
আর ছেলেটা নামতে-নামতে টিশ্যুপেপারে মোছে গালের লিপ্স্টিক!
মেয়েটা পার্স থেকে সেল ফোন বেড় করে দেখে ১২ টা মিসড্কল!
কলব্যাক করে বলে ওঠে,
'আদনান, জান আমার, আমি ক্লাশে ছিলাম...
কাল তো দেখা হচ্ছে, এখন রাখছি...',
রিক্শা থামিয়ে ভাড়া মিটায়।
বাসার সামনে শুকনো, নোংড়া ড্রেনে বৃষ্টির জল ঢেউ তোলে।
দরজায় মাথা ঠোকানোর আগে মেয়েটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় জারবেরা,
গিয়ে পড়ে ড্রেনের জলে,
বৃষ্টির জলে মেশে জারবেরার নোনা-জল।
দেবাশিস্ মুখার্জি
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২