সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

টিকটিকির লেজ আর একটা সনেট লেখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা...


টিকটিকির লেজ সাংঘাতিক এক জিনিস। একবার খেলেই মজাটা টের পাবেন। টিকটিকির লেজ খেয়ে কেউ মরে না, তবে নেশায় চূড় হয়ে আধমরা হয়ে পড়ে থাকে। কোন হুঁশ থাকে না। মাঝে মধ্যে দু-এক বার হাত উঠিয়ে কিছু বললেও আবার ঘুমের রাজ্যে পৃথিবী কাব্যময় হয়ে ওঠে। দু'দিন না কাটলে এই ঘুম আর যাবার নয়।

আমাদের দেশের মানুষের দশাও ঠিক এরকমই। এরা যেন টিকটিকির লেজ খেয়ে পড়ে আছে। লাশের পর লাশ পড়ছে কিন্তু কারো হুঁশ নেই। দু'টো লাশ পড়লে একটু উহু-আহা-অ্যাঁ-ট্যাঁ-চুক্‌চুক্‌, তারপর?? তারপর সব চুপ! জীবন দৌড়ের দুষ্টচক্রে ঘুরপাক খেতে থাকা, মাথা থেকে সব ঝেরে ফেলা। পুরোনো স্মৃতি ঝেরে না ফেললে নতুনের স্থান হবে কোথা??

- আজ ৩রা জুন!! এই দিনে কি কিছু ঘটেছিলো??
- ঠিক মনে নেই। একটু ভেবে নিই।
- নিমতলীর কথা আছে মনে??
- কোন নিমতলী?? ঢাকা?? নাকি বিক্রমপুর??
- পুরোনো ঢাকার নিমতলী।
- (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আজকের দিনেই কি আগুন লেগেছিলো?? ২০০ মানুষ মরেছিলো??
- হুম।
- কী সাংঘাতিক ছিল! এখনো ঐ ছবি চোখে ভাসে, টিভিতে দেখেছিলাম।
- আর কিছু??
- আর কিছু নারে ভাই, ঐ কথা ভাবল্লে খুব কষ্ট হয়।
- আপনার কি কিছুই করার নেই??
- আমার আবার কী করার আছে??
- কেমিকেল ড্রামগুলো কি সরেছে??
- নাহ্‌, ঐনিয়ে তো কত কিছুই হল, ফলাফল সেই বিগ জিরো!
- আপনি কি রাস্তায় নেমেছেন?? আন্দোলন করেছেন??
- আমি আদার ব্যাপারী, জাহাজের আন্দোলনে গিয়ে কী করবো??




সেই স্মৃতি নিয়ে একটা সনেট লেখার ব্যর্থ প্রচেষ্টাঃ
পোড়া লাশ...

চেয়ে দেখো ঐ পোড়া লোক - লাশ হয়ে পড়ে রয়!
ঐ লাশটা আজ আর একা নয়, শ'খানি আছে সাথ।
দুপুর বেলা, সুয্যি আছে, তবু যেন এ রাত!
ঐ লাশেরা হাতছানি দেয়। মনে কি লাগে ভয়?
লাগবে কেন ভয়? ওরা যে আমার আপন মানুষ।
গন্ধ লাগে, গন্ধ শুকিঃ প্রিয়জন পোড়া ঘ্রাণ!
কয়লা-কালি দেহে মেখে জেগে ওঠে এ প্রাণ!
লাশ গোণাতে মনটা যে খুশ। ভাই, নাই কি আমার হুঁশ?

দিন-মাস ঘুরে বছর গেলো, নিমতলীতে নাই ছাই।
দেশের মানুষ সব ভুলে যায় নতুন লাশের আশে।
কেমিকেল ড্রাম আগের মতন; সরাবেটা কে, ভাই?
জাজের কথা চুলোয় পোড়ে, থাকি আজব দেশে!
কত মানুষ পুড়ছে যে রোজ; বিচারের দেখা নাই।
আর কত লোক পুড়লে তবে পৌঁছ্‌বো যে এর শেষে? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন