বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১২

রুদ্র...


রুদ্র। প্রিয় মানুষ, প্রিয় কবি। পুরো নাম রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। অনেকেই হয়তো তাকে চেনেন না কিংবা একটি বারের জন্যেও তার ছবিটি দেখেন নি কিন্তু রেডিও, টেলিভিশন, ইউটিউব কিংবা আড্ডায় ছেলে-ছোকরাদের গিটারে ঠিকই শুনেছেনঃ

আমার ভেতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে...
...... ...... ...... ...... ......
...... ...... ...... ...... ......
ভালো আছি ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো...

২৯ আশ্বিন, ১৩৬৩ বঙ্গাব্দে (১৬ অক্টোবর, ১৯৫৬) প্রিয় এই কবির জন্ম হয়। বাবার নাম শেখ ওয়ালীউল্লাহ আর মায়ের নাম শিরিয়া বেগম। পৈতৃক নিবাস র্বাতমান বাগেরহাট জেলার মংলার সাহেবের মেঠ গ্রামে হলেও তার জন্মহয় বরিশাল জেলার আমানতগঞ্জের রেডক্রস হাসপাতালে। 

শৈশবের অধিকাংশটাই কেটেছে নানাবাড়িতে যা বাগেরহাটের মংলা থানার মিঠেখালি গ্রামে অবস্থিত। নানাবাড়ির গ্রামের পাঠশালাতেই তার হাতেখড়ি ঘটে। পৌনে আট বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন ঐ গ্রামেই নানার নামে প্রতিষ্ঠিত 'ইসমাঈল মেমোরিয়ার স্কুল' এ। তবে এই স্কুলেও বেশিদিন আর পড়া হয় নি। ১৯৬৬ সালে মংলাতেই 'সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়' এর চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই বয়সেই রুদ্রের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা পড়া ও কবিতা আবৃত্তির প্রতি পবল ঝোঁক প্রকাশ পায়।

সেই শৈশবেই একটা লাইব্রেরির দরকার হয়ে পড়লো রুদ্রের। চারপাশে যখন লাইব্রেরি নেই তখন নিজেই একটা খুলবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু টাকা আসবে কোত্থেকে?! মামাতো ভাইদের দলে ভেড়ালেন। একসাথে নানীর ট্রাঙ্ক থেকে টাকা চুরি করলেন। সেই টাকা দিয়ে গড়ে তোলা হল একটা লাইব্রেরি, নাম দেওয়া হল - বনফুল। 

খেলাধূলায় বেজায় আগ্রহ ছিল। মংলায় প্রথম ক্রিকেট দল তৈরি করেন কিশোর বন্ধুদের নিয়ে। তবে খেলাধূলার চাইতেও অধিক আগ্রহ ছিল লেখা-লেখির প্রতি। তাই ঐ বয়সেই তার কাঁচা হাতে লেখা-লেখি শুরু হয়ে যায়।

১৯৬৯ এ রুদ্রের বয়স মাত্র বারো কি তের। চারদিক উত্তাল গণঅভ্যূত্থানে। ঐ কিশোর বয়সেই তার আর বাড়ি বসে থাকা হল না। যোগ দিলে গণজোয়ারে। ঐ বয়সেই হরতাল-মিছিল-মিটিং এ নিয়মিত যোগ দিতে থাকেন।

এল ১৯৭১ সাল। নবম শ্রেণির ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কিন্তু তার বাবাকে পাকসেনারা উঠিয়ে নিয়ে গেল। মা আর তাকে হারাতে চান নি বলেই যুদ্ধে যেতে দেন নি। কিন্তু যুদ্ধে না যেতে পারার কষ্ট আর চারপাশের হত্যাযজ্ঞ, রক্তের নদী তাকে তীব্রভাবে আন্দোলিত করে, যা আমরা পরবর্তীতে তার বিভিন্ন কবিতায় দেখতে পাই। 

যুদ্ধশেষে ১৯৭২ এ ঢাকা চলে এলেন। উঠলেন লালবাগে সেজ মামার বাসায়। 'ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল' এ দশম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন। বাবার ইচ্ছেতেই মনেমনে ডাক্তার হবার ইচ্ছে জাগে। তাই ঠিক করেন এবার পড়াশোনায় মনযোগ দিবেন। কিন্তু  যার সাহিত্যিক হবার কথা তার কি আর টানা পড়াশোনায় মন বসে! পড়াশোনা থাকলো পড়াশোনার যায়গায় আর তিনি মন দিলেন গল্প, কবিতা, গান আর নাটক লেখায়। ঐ বছরই 'দৈনিক আজাদ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার কবিতাঃ 'আমি ঈশ্বর আমি শয়তান'।

১৯৭৩ সালে একুশের সংকলন 'দুর্বিনীত' এর সহযোগী সম্পাদকের কাজ শুরু করেন। 'দুর্বিনীত' এর সম্পাদক ছিলেন মিয়া মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। সামনে এস,এস,সি, পরীক্ষা থাকায় এত সব কাজের মাঝে পড়াশোনাটাও চলছিল। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম শুধুই মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হলেও নিজ ইচ্ছেতেই এস,এস,সি, রেজিস্ট্রশনে নিজের নামের সাথ যুক্ত করলেন 'রুদ্র', হলেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। পরীক্ষা ভালোই হল।বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চার বিষয়ে লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন। এরপর ঢাকা কলেজে কলা বিভাগে ভর্তি হলেন। এর মাঝেই একদিন বাংলাদেশ বেতারে পাঠ করলেন নিজের লেখা কবিতাঃ 'এখনো বেঁচে আছি'।  

লেখালেখিতেই পুরো ব্যস্ত হয়ে গেলেন। কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গেল। ১৯৭৪ এ প্রকাশ পেল তার সম্পাদিত কবিতাপত্র 'অনামিকার অন্যচোখ এবং চুয়াত্তোরের প্রসব যনন্ত্রনা', '৭৫ এ প্রকাশ পেল তারই সম্পাদিত কবিতাপত্র 'অশ্লীল জোৎস্নায়' যেখানে তিনি সম্পাদকীয়তে 'উপলিকা' নামে 'না-কবিতা, না-গল্প' আঙ্গিকের প্রস্তাব করেন। পুরো কলেজ জীবনে ১৮ দিন ক্লাশে গিয়েছেন আর এইচ,এস,স, তে ফল পেলেন দ্বিতীয় বিভাগ। ১৯৭৬ এ এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আলী রিয়াজ এর সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ১৯৭৮ এ বন্ধু আলী রিয়াজ, মঈলুল আহসান সাবের ও রুদ্র মিলে যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন প্রবন্ধ সংকলনঃ 'স্বরূপ অন্বেষা'।আবিদ রহমান, সলিমুল্লাহ খান সহ আরও অনেকের প্রবন্ধ নিয়ে এই বইটি প্রকাশ করে 'তিতলী প্রকাশনী'। এটি যৌথভাবে সম্পাদিত হলেও 'প্রবেশক' শিরনামে সম্পাদকীয়টি লেখেন রুদ্র নিজেই। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের মনোনীত পরিষদে সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রার্থী হন কিন্তু বন্ধু আলী রিয়াজের কাছে হেরে যান। একই সময়ে তার কবিবন্ধু কামাল চৌধুরী, জাফর ওয়াজেদ, রাজা সেলিম সহ আরো অনেককে নিয়ে গঠন করেন 'রাখাল' নামের সাহিত্য ও প্রকাশনা সংস্থা।

১৯৭৯ তে প্রকাশ পায় রুদ্রের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'উপদ্রুত উপকূল'। এর প্রকাশক ছিলেন আহমদ ছফা, বুক সোসাইটি, বাংলাবাজার। তরূণ পাঠক ও কাব্যপ্রেমীরা এই কাব্যগ্রন্থটিকে রীতিমত লুফেই নেন। এর প্রথম কবিতাটাই হল 'বাতাসে লাশের গন্ধ' যা বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। এই কবিটাটি যেকোন বাঙালিকেই নতুন করে নাড়া দিবে -

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে -
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?

বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে,
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো,
জীর্ন জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর।
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।

এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা – একি তবে নষ্ট জন্ম ?
                    একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?

জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।

বাতাশে লাশের গন্ধ-
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংশের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়।

এ-চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ,
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
                                                         ঘুমুতে পারিনা…

রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে,
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা –  সে-আমার স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন ,
স্বাধীনতা – সে-আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।

ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবিদুর রহমানের সম্পাদনায় প্রকাশ পায়  মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে  গল্প সংকলন 'প্রেক্ষাপট-৭১' যার প্রকাশক ছিলেন রুদ্র। এবছরই স্নাতক (সম্মান)শেষ বর্ষের পরীক্ষা দেবার কথা থাকলেও তার দেওয়া হয় নি। উপস্থিতির হার অনেক কম থাকায় বিভাগীয় প্রধান তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেন নি।

১৯৮০ সালে 'উপদ্রুত উপকূল' কাব্যগ্রন্থের জন্য 'সংস্কৃতি সংসদ' থেকে 'মুনীর চৌধূরী সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করেন। গত বছর না পারলেও এ বছর স্নাতক (সম্মান)শেষ বর্ষের পরীক্ষা দেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। 

১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বিয়ে করেন তসলিমা নাসরীনকে। এবছরই দ্রাবিড় প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'ফিরে পেতে চাই স্বর্নগ্রাম' এবং এটি যুগ্মভাবে 'মুনীর চৌধূরী সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করে। এবছর সফলভাবে স্নাতোকোত্তরের পাঠটা চুকিয়ে ফেলেন।

১৯৮২ সালের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হতে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ৪২ টি সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে গঠিত হয় 'সংগ্রামী সাংস্কৃতিক জোট' যা পরবর্তীকালে 'সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট' নামে আত্মপ্রকাশ করে। রুদ্র এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও আহ্বায়ক ছিলেন। 

১৯৮৪ তে প্রকাশ পায় রুদ্রের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'মানুষের মানচিত্র', প্রকাশ করে সব্যসাচী প্রকাশনী। ১৯৮৬ তে দ্রাবিড় প্রকাশনী পরকাশ করে রুদ্রের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ 'ছোবল' যা ছিল তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের অমানবিক অত্যচারের বীভৎসতা। এই কাব্যগ্রন্থের 'কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প' একটি অসাধারণ কবিতা-

তাঁর চোখ বাঁধা হলো।
বুটের প্রথম লাথি রক্তাক্ত করলো তার মুখ।
থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা-রক্তে একাকার হলো,
জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত ঝরে পড়লো কংক্রিটে।
মা…..মাগো….. চেঁচিয়ে উঠলো সে।

পাঁচশো পঞ্চান্ন মার্কা আধ-খাওয়া একটা সিগারেট
প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক।
পোড়া মাংসের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে।
জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ
তার দেহে টসটসে আঙুরের মতো ফোস্কা তুলতে লাগলো।

দ্বিতীয় লাথিতে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে গেলো দেহ,
এবার সে চিৎকার করতে পারলো না।

তাকে চিৎ করা হলো।
পেটের ওপর উঠে এলো দু’জোড়া বুট, কালো ও কর্কশ।
কারণ সে তার পাকস্থলির কষ্টের কথা বলেছিলো,
বলেছিলো অনাহার ও ক্ষুধার কথা।

সে তার দেহের বস্ত্রহীনতার কথা বলেছিলো-
বুঝি সে-কারনে
ফর ফর করে টেনে ছিঁড়ে নেয়া হলো তার শার্ট।
প্যান্ট খোলা হলো। সে এখন বিবস্ত্র, বীভৎস।

তার দুটো হাত-
মুষ্টিবদ্ধ যে-হাত মিছিলে পতাকার মতো উড়েছে সক্রোধে,
যে-হাতে সে পোস্টার সেঁটেছে, বিলিয়েছে লিফলেট,
লোহার হাতুড়ি দিয়ে সেই হাত ভাঙা হলো।
সেই জীবন্ত হাত, জীবন্ত মানুষের হাত।

তার দশটি আঙুল-
যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে মার মুখ, ভায়ের শরীর,
প্রেয়সীর চিবুকের তিল।
যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে সাম্যমন্ত্রে দীক্ষিত সাথির হাত,
স্বপ্নবান হাতিয়ার,
বাটখারা দিয়ে সে-আঙুল পেষা হলো।
সেই জীবন্ত আঙুল, মানুষের জীবন্ত উপমা।

লোহার সাঁড়াশি দিয়ে,
একটি একটি কোরে উপড়ে নেয়া হলো তার নির্দোষ নোখগুলো।
কী চমৎকার লাল রক্তের রঙ।

সে এখন মৃত।
তার শরীর ঘিরে থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার মতো
ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত, তাজা লাল রক্ত।

তার থ্যাতলানো একখানা হাত
পড়ে আছে এদেশের মানচিত্রের ওপর,
আর সে হাত থেকে ঝরে পড়ছে রক্তের দুর্বিনীত লাভা-

১৯৮৭ এর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় 'প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসব' যার শ্লোগান ছিলঃ 'শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা'। এটি ছিল স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আয়োজন করা 'এশীয় কবিতা উৎসব' এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ বছরই তসলিমার সাথে রুদ্রের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। নিখিল প্রকাশন তার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ 'গল্প' প্রকাশ করে। পরের বছর মুক্তধারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায় তার ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'দিয়েছিলে সকল আকাশ'...

১৯৮৯ সালে আয়োজিত হয় 'তৃতীয় জাতীয় কবিতা উৎসব' কিন্তু কবিতা পরিষদের অনেকের সাথে বিরোধ হওয়ায় রুদ্র এই আয়োজন বর্জণ করেন। তিনি মনে করেন স্বৈরাচার সরকারের মদদে ঐ পরিষদেও স্বৈরাচারী লোকেরা ঢুকে গিয়েছে। তিনি সকল স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে মঞ্চে কবিতা পাঠ করেন। শহর ছেড়ে মংলা চলে যান। গঠন করেন সংগঠন 'অন্তর বাজাও' এবং এখানেই সৃষ্টি করেন বিখ্যাত গান 'ভালো আছি ভালো থেকো' যা পরে তাকে শ্রেষ্ঠ গীতিকারের জাতীয় পুরুস্কার এনে দেন যদিও তা তার মরণের পরেই হয়।

১৯৯০ সালে প্রকাশ পায় তার সপ্তম কাব্যগ্রন্থ 'মৌলিক মুখোশ', এটি প্রকাশ পায় সংযোগ প্রকাশনী থেকে। ১৯৯১ সালে 'বাংলাদেশ সংগীত পরিষদ' এর প্রকাশনা সচিব নির্বাচিত হন এবং এবছরই বাংলাদেশ টেলিভিশনের গীতিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু বেশি দিন আর কাজ করা হয়ে ওঠে না। বয়স ৩৫ না পেরুতেই ১৯৯১ এর ২১ জুন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন।

তিনি শুধু বিদ্রোহ-বিপ্লব-প্রতিবাদেরই কবি ছিলেন না, ছিলেন প্রেমেরও কবি যার প্রমাণ মিলে 'ভালো আছি ভালো থেকো' গানটিতে। তার লেখা একটি বিখ্যাত প্রেম-কবিতা 'দূরে আছো দূরে' -

তোমাকে পারিনি ছুঁতে, তোমার তোমাকে-
উষ্ণ দেহ ছেনে ছেনে কুড়িয়েছি সুখ,
পরস্পর খুড়ে খুড়ে নিভৃতি খুঁজেছি।
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।

যেভাবে ঝিনুক খুলে মুক্ত খোঁজে লোকে
আমাকে খুলেই তুমি পেয়েছো অসুখ,
পেয়েছো কিনারাহীন আগুনের নদী।

শরীরের তীব্রতম গভীর উল্লাসে
তোমার চোখের ভাষা বিস্ময়ে পড়েছি-
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।
জীবনের ’পরে রাখা বিশ্বাসের হাত
কখন শিথিল হয়ে ঝ’রে গেছে পাতা।
কখন হৃদয় ফেলে হৃদপিন্ড ছুঁয়ে
বোসে আছি উদাসীন আনন্দ মেলায়-

তোমাকে পারিনি ছুঁতে-আমার তোমাকে,
ক্ষাপাটে গ্রীবাজ যেন, নীল পটভূমি
তছ নছ কোরে গেছি শান্ত আকাশের।
অঝোর বৃষ্টিতে আমি ভিজিয়েছি হিয়া-

তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন