বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১২

রোহিঙ্গা নিয়ে কিছু কথা...

গত বেশ কিছুদিন ধরেই চারিদিকে রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হবার পেছনের কারণটা হল মায়ানমারের সাম্প্রদায়িক দাঙা যা ঘটে চলছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও মুসলমান রোহিঙ্গাদের মাঝে। আমি ঠিক জানি না যে এবার কে এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে, তবে গত বেশ কয়েক দশক ধরেই বার্মিজরা এই রোহিঙ্গাদের আর বার্মিজ বলে মেনে নিচ্ছে না। ওদের দাবি এই রোহিঙ্গারা মূলত বাঙালি। ওরা বাঙালি কিনা তাও নিশ্চিত নই তবে ওদের ভাষা ও সংস্কৃতি প্রমাণ করে ওদের সাথে চাঁটগাইয়াদের যোগসূত্রটা বেশ গাঢ়ই বটে।

বার্মিজ জনগণ ও সামরিক জান্তারা রোহিঙ্গাদের  মায়ানমারের লোক তো ভাবেই না মানুষ ভাবে কি না সন্দেহ। রোহিঙ্গারা তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোকে। এর আগেই বহু রোহিঙ্গা এখানে এসে শরণার্থী হয়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। ওরা নানাভাবে আমাদের জন্য সমস্যা হিসেবেও দেখা দিচ্ছে যা আর আজকে নতুন করে বলতে চাই না। নানাবিধ কারণেই বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের আহ্বান সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের এদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না। সত্যি বলতে এখানে বাঙালিদেরই জায়গা হয় না, পারলে পাহাড়িদের জায়গাটাই দখল করে নেয় এরকম একটা অবস্থায় নতুনদের জায়গা করে দেওয়াটা বিলাসিতারই নামান্তর।

তাই আজ আমরা এই ছবিগুলোকে দেখেও না দেখার ভান করবার চেষ্টা করছিঃ




কিন্তু আজ আমরা ভুলে যাচ্ছি ১৯৪৭ এ  মুসলিম বাঙালিদের  ভারত ছেড়ে পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নেবার কথা। ১৯৪৭, ১৯৬৪-৬৫, ১৯৭১ কিংবা ১৯৯০-১৯৯৯২ ও ২০০১ সালে দলে দলে বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে চলে যাওয়া। আমরা ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নেবার কথা, প্রায় ১ কোটি শরণার্থীর কথা আজ ভুলে যাচ্ছি। নিচের এই ছবিগুলো কি আজ আমাদের অচেনা হয়ে উঠেছে?





তবে সত্যি কথা বলতে এত শরণার্থীদের বছরের বছর পেলে-পুষে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই আমাদেরকে ভাবতে হবে এর সমাধান করা যায় কীভাবে। যেকোন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। একদিন সবাই আমাদের পাশে না দাঁড়ালেও অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো - সেকথা আমরা ভুলে যেতে পারি না, ভুলে যাওয়াটা ঠিক না। কিন্তু আমাদের সাথে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের একটা মৌলিক তফাৎ আছে সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। আর সেই পার্থক্যটা হলঃ ১৯৭১ বাঙালি তার স্বাধীনতার ঘোষণা পেয়েছিল, একত্রিত হয়েছিল। রোহিঙ্গারা কি তা করেছে?? ওরা কি তা আদৌ চায়?? কিংবা আদৌ পারবে?? যদি সেরকমটা হয় তবে ওদের সাহায্য করাটা হবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর ওরা যদি আমাদের সাহায্য নিয়ে ওদের থাকার জায়গাটুকু বার্মিজদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনে আমাদের সাথে যোগ দিতে চায় তবে ওদের গ্রহণ করাটা নিশ্চই ভুল হবে না।

ছবিঃ অন্তর্জাল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন