মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১১

হুমায়ুন আহমেদ ও তার নামাজ সম্পর্কে ধারণা আর কিছু কথা…

হুমায়ুন আহমেদ

আমারব্লগের ব্লগার ধ্রুব তারার লেখা মাসিকাব্য বিতর্কের অবসানের পর খুব বেশি দিন পার হয় নি। ঐ পোস্টে আমি ধ্রুব তারার পক্ষেই ছিলাম। ব্যক্তি হুমায়ুন আহমেদ নিয়ে আমার খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই। ব্যক্তি জীবনে উনি যাই করুক না কেন একজন পাঠক হিসেবে উনার লেখা উপন্যাসগুলোর সাহিত্যমান নিয়ে প্রশ্ন আছে। একসময়ের তারকা লেখক আজ শুধুই খোলস মাত্র। আমরা বাংলাদেশি বাঙালিরা তাই নিয়েই নাচানাচি করি। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে হুমায়ুন আহমেদের 'জোছনা ও জননীর গল্প', 'মধ্যাহ্ন' কিংবা 'শঙ্খনীল কারাগার' সাফল্যের দাবিদার হলেও উনার অধিকাংশ উপন্যাসেই সাহিত্য বলে কিছু নেই। প্রশ্ন চলে আসে তো উনি কেন এত জনপ্রিয়?? এর উত্তরটা এক নির্মম সত্য। আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষজনই সাহিত্য বোঝে না, তারা যা সহজে পড়তে পারে তাই গোগ্রাসে গিলে খায়। আর একজন মানুষ যখন বাজার কাটতির জন্য বছরে গোটা দশেক উপন্যাস লিখে তবে সেই লেখাগুলো স্বভাবতই মানহীন হয়ে পড়ে। এ নিয়ে আমার ধারণা উনি আর বই লেখেন না। উনি বেশ কয়েকজন এসিস্ট্যান্ট রেখে দিয়েছেন। উনার এসিস্ট্যান্টরা উনার দেওয়া ধারণা অনুযায়ী গৎবাধা উপন্যাস লিখে যান আর সেগুলোই বাজারে হুমায়ুন আহমেদের নামে কেটে চলে।

কী নিয়ে লিখতে আসলাম আর কী লিখে চলছি! মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আজ ব্যক্তি হুমায়ুন আহমেদের অজানা সত্যি কিছু গল্প নিয়ে এই পোস্ট সাজালাম।

নামাজঃ
সকলেই জানেন যে হুমায়ুন আহমেদ খুব একটা ধার্মিক না। এমন কী উনাকে মৌলবাদীরা মুরতাদও ঘোষণা করেছে। এই হুমায়ুন আহমেদ আমার এক শিক্ষকের বাল্যকালের বন্ধু। হুমায়ুন আহমেদ আর আমার শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বগুড়ার এক স্কুলে পড়তেন। স্যারের কথা অনুযায়ী এই হুমায়ুন আহমেদ স্কুলের নিচের ক্লাশে খুব একটা ভালো ফলাফল করতো না। এমন কী ক্লাশ সিক্স-সেভেন এ পরীক্ষার হলে স্যারের খাতা দেখেই অঙ্ক করতেন। পরে অবশ্য দেখা গেছে হুমায়ুন আহমেদ অনেক বেশি মেধাবী।

মোহাম্মদ আলী হজ্ব সেরে দেশে ফিরেছেন। গাল ভর্তি দাড়ি রেখেছেন। এই বেশে গেলেন বন্ধু হুমায়ুনের বাসায়। সেখানে কথায় কথায় হুমায়ুন আহমেদ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী মোহাম্মদ আলীর সাথে নামাজ নিয়েই আলোচনা করতে লাগলেন।

- মোহাম্মদ আলী, তুমি তো জানই যে আমি এইসব নামাজ-রোজার মধ্যে নাই। তুমি তো দেখি হজ্ব করে আসলা। তা তুমি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পড়??
- হুম তাই পড়ি। পারত পক্ষে মিস দেই না। আর নামাজ না পরলে পরকালে কী হবে??
- ভালো। তা তুমি কি এইসব বিশ্বাস করো??
- হুম করি এবং মানিও।
- আচ্ছা নামাজে তুমি কী বলো এত??
- নামাজে যা বলতে হয় তাইই বলি। এখন তুমি বোলো না যে তুমি জানো না যে কী বলতে হয়।
- না তা জানি। আর জানি বলেই এই প্রশ্ন করলাম। তা প্রতিবার নামাজে একই কথা বল??
- হুম, তাইই তো বলতে হয়।
- তা আল্লাহ তোমার উপর বিরক্ত হন না??
- হুমায়ুন, এইটা আবার কেমন প্রশ্ন করলা??
- তোমারে বুঝায় বলি। ধর, তোমার এক ছাত্র তোমার প্রশংসা করে একটা কবিতা লেখলো। তুমি তো ঐ কবিতা শুনে অনেক খুশি হবা, তাই না??
- তাইই তো হবার কথা।
- পরদিন সকালে যদি আবারো একই কবিতা শোনায় কেমন লাগবে?? আগের চাইতে কম ভালো লাগবে কি??
- হুম, তাই।
- এখন ঐ ছাত্র যদি সকাল-বিকাল একই কবিতা পড়ে শোনায় তবে তুমি কি ধৈর্য ধরে তাই শুনবা??
- না মেজাজ খারাপ হবে।
- তোমার এত অল্পতেই মেজাজ খারাপ হয়। আর কোটি কোটি মানুষ হাজার হাজার বার একই কথা বলতেছে। আল্লাহ বিরক্ত হন না??
- হুম, হবার কথা।
- তো তুমি নামাজ পড় কেন??
- হুমায়ূন, তোমার কথায় যুক্তি আছে। তবে তুমি যাইই বলো না কেন আমি নামাজ পড়া ছাড়বো না। আল্লাহ বিরক্ত হলে হোক। উনিই যেহেতু পড়তে বলেছেন আমি পড়ে যাবো।
- ঠিক আছে পড়তে থাকো। দেখো মরার পর কী হয়!

কিডনিঃ
হুমায়ুন আহমেদের ৫২তম জন্মদিনের কথা। মোহাম্মদ আলী শাহবাগ থেকে তাজা দেখে ৫২ টা গোলাপ নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের বাড়ি গেলেন। গিয়ে দেখলেন বগুড়া থেকে এক লোক এসেছেন। উনি হুমায়ুন আহমেদকে বলছেন, 'স্যার, আপনি চাইলে আমি আমার জান দিয়ে দিবো! আপনি আপনার নাটকে আমাকে একটা চান্স দেন।' হুমায়ুন আহমেদ তার এসিট্যান্টকে ডেকে বললেন, 'তুমি এর নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার লিখে রাখো তো। এ আমার জন্য জীবন দিতেও রাজি।' এসিস্ট্যান্ট সব টুকে নিলে চলে গেল। এরপর হুমায়ুন আহমেদ ঐ লোককে বললেন, 'তুমি বাড়ি ফিরে যাও। আমার জন্য তোমাকে জীবন দিতে হবে না। যদি কখনো কিডনি লাগে তো তোমাকে ফোন দিবো। চলে এসো।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন